Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)     33      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
০২-০৩-২০১৮ ইং



আগের পর্ব গুলি: ১ ম পর্ব    ২ য় পর্ব   


◕ প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
৩ য় পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

রাজবংশীর ডাক শুনে পটভবেশ দাঁড়িয়ে পড়ল। পটভবেশের কাঁধে হাত রেখে রাজবংশী বলল, "দেখ ভাই, আমার মনে এখনো তোর জন্য অনেক আদর সম্মান আছে। আমাদের সকল বন্ধুদের মধ্যে সব থেকে ব্রিলিয়ান্ট ছিলি তুই। আমিও তোর মত এত শার্প বুদ্ধির মালিক নই। তোর প্রতিভার সামনে আমি কিছুই নই। তাই আজো আমি তোকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। কিন্তু ভাই, তুই তোর সেই প্রতিভাকে, সেই ক্ষমতাকে প্রথম থেকেই ভুল পথে চালিয়ে গেছিস।আজো ভুল পথেই চলছিস। যে পথে চলছিস, সে পথ থেকে ফিরে আয় ভাই। আমার এই কথাটি মনে মনে একবার ভাবিস। এবার সত্যি করে বল তো, তোরা এখানে কী করছিলি?"

ঘোর অবহেলায় "হুঁ" একটা শব্দ করে পটভবেশ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল টানা-পথের দিকে। রাজবংশী পেছন থেকে ডাকল, "একটা কথা মনে রাখিস পটাস, আমি এখানে চকোর চোখে জোছনা পান করতে আসিনি! পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আমার হাতে একবার যখন পড়েছিস তখন সব খবরাখবর নিজেরাই ঝরা তারার মত দৌড়ে আমার হাতে চলে আসবে। সেই সময় কিন্তু আমি অমাবস্যাকেও ছেড়ে কথা বলব না। সেটা তুই খুব ভাল করে জেনে রাখিস।" হন-হন পায় জোর হাটা দিল পটভবেশ। পটভবেশ চলে যেতেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাজবংশী। নবদ্বীপ চক্রবর্তী এগিয়ে এসে তার দু'টি হাত ধরে ছলছল চোখে বলতে লাগলেন, "বাবা, আমি জানি না তুমি কে? কেন, কীভাবে এখানে এসেছ, কে তোমাকে এই বেলায় এখানে পাঠিয়েছে, কিছুই জানি না। কিন্তু তুমি যে-ই হও, এই ক্ষণে তুমি আমার কাছে এক ঈশ্বরের দূত, আমার ত্রাণ কর্তা। আজকের ঘটনার জন্য আমি আর আমার পরিবার চিরদিন তোমার কাছে ঋণী থাকবে। বহুদিন পরে মনে হল আজ যেন একটু প্রাণ ভরে শ্বাস ফেলতে পারছি, নিজের মত করে হাত-পা নাড়তে পারছি। তা না হলে ওরা তো আমাদের জীবনটাকে নরক করে রেখে দিয়েছিল। এই যন্ত্রণা আমি কী দিয়ে সামলাই! বৌ-ছেলেকে এই নরকে একলা রেখে না পারছিলাম মরতে, আবার তাদের যন্ত্রণা দেখে না পারছিলাম বাঁচতে। আজ তুমি এক পলকেই আমার সকল দুঃখ যেন হরণ করে নিলে। বয়সে তুমি আমার থেকে অনেক ছোট, তবু মনে হচ্ছে তোমাকে একবার প্রণাম করে এই ঋণ কিছুটা শোধ করি।"

বিনয়ে অবনত বৃদ্ধ'র দু'টি হাত খপ করে ধরে ফেলল রাজবংশী। ছলছল চোখে বলল, "আরে! আরে! এ কী করছেন আপনি! আপনি তো আমার কাকা। আমার গুরুজন। আমার প্রিয়জন। আপনাকে সম্মান করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি আপনার সম্মান রক্ষা করাও আমার দায়িত্ব। আপনি শুধু-শুধুই আমাকে বড় বলে ভাবছেন। আসলে আমি তো বড় কিছু নই, অতি সাধারণ একজন মানুষ। সত্যের খুঁজ করে বেড়াই মাত্র। এখানে এসে আমি তাই-ই করছি যা আমার করা উচিত ছিল। আপনি যে নির্দোষ এবং নিরপরাধী তা বুঝতে আমার এক বিন্দুও সময় লাগেনি। মনের দেখা চোখের দেখা থেকে অনেক-অনেক বড়। আমার অভিজ্ঞতা বলে, যারা বিনম্র ভাবে নিজের মান-অভিমান, নিজের অহং ত্যাগ করে সততার সাথে অপরকে তার যোগ্য সম্মান দিতে পারে, তারা সহজে অপরাধী স্বভাবের হয় না। হ্যাঁ, ভুল সবার মধ্য দিয়েই কম বেশী হয়ে থাকে। তবে সেটা সাময়িক। রাত-দিন অপরাধী, নিরপরাধী নিয়ে কাজ করি তো, তাই জানি, কিছু মানুষের সরলতা, সততা তার চেহারায় লেখা থাকে। আপনাকে চিনতেও আমার ভুল হয়নি। এই কারণেই তো আপনাকে দেখা মাত্রই আপনার পক্ষ টেনে যুদ্ধে নেমে পড়লাম। আর একবার যখন নেমে পড়েছি তখন বুঝবেন, আপনাকে একলা ফেলে আর চলে যাচ্ছি না, শেষটা তো অবশ্যই দেখে নিতে হবে। কিছু ভাববেন না। আপনার কোন ভয় নেই, আমি আপনার সাথে আছি। আর যতক্ষণ সাথে আছি ,সব ঝড় ঝাপটার খবর আমিই নেব। তবে সবার আগে আসল ঘটনাটি আমার জানতে হবে। আমাকে সব কিছু খুলে বলতে হবে। ভাল কিবা মন্দ, কোন কিছুই কিন্তু গোপন করা চলবে না।"

রাজবংশীর কথায় বেশ অবাক হলেন নবদ্বীপ চক্রবর্তী। কথাগুলি বেশ ভালও লাগল উনার। কত দিন হল এমন ভরসাটাই কেউ দেয়নি। খারাপ কথা শুনতে শুনতে মনের জোরটাই হারিয়ে গিয়েছিল। আজ কী যে ভাল লাগছে! খুশীর চোখে তিনি বললেন, "তুমি কে বাবা? তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি? কে-ই-বা তোমাকে এখানে পাঠাল?"

রাজবংশী এক ফালি হেসে বলল, "আমার পরিচয় দিচ্ছি, সবাই আমাকে রাজবংশী বলে ডাকে। ভাল নাম অনুব্রত রাজবংশী। ধলেশ্বর-১৩ নম্বর রোডে থাকি। পেশায় সত্যের খোঁজ করি। বলতে পারেন, সত্যকে খুঁজে বের করি। আর আমি কীভাবে এখানে এলাম, সেই কথা নয় এখন আর আপনাকে নাই-ই বললাম। পরে সব জানতে পারবেন। আচ্ছা, এই হল আমার ভাই, বন্ধু, সহকারী সব, সদানন্দ বসাক।" সদানন্দ হাত জোর করে নমস্কার জানাল। নবদ্বীপ চক্রবর্তীও প্রতি নমস্কার জানালেন।

ততক্ষণে ঘোমটা টেনে দরজার আড়াল থেকে বের হলেন নবদ্বীপ চক্রবর্তী'র বৌ ললিতা-দেবী। একটি হাতল ভাঙা কাঠের চেয়ার আর দুটি মুড়া উঠানে রেখে গেলেন। ঘরে ঢুকেই তিনি আবার চুপচাপ দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলেন, উঠানের মানুষগুলির কথা শোনার জন্য। রাজবংশীর পীড়াপীড়িতে কাঠের চেয়ারটিতে বসলেন নবদ্বীপ চক্রবর্তী। তারপর আসল ঘটনাটি সবিস্তার বলতে লাগলেন, "আমার ছেলে রাম কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে তারই কলেজের সহপাঠী, কাশীপুরের বনশ্রী ঘোষালের প্রেম হয়। এই প্রেম কিভাবে এবং কখন হয় তা আমি জানি না। তবে পরে শুনেছি তাদের এই প্রেম দীর্ঘদিন ধরেই নাকি ছিল। কিন্তু আমরা যেমন তা জানতে পারিনি, ঠিক তেমনি বৌমা'র বাড়ির লোকজনও এই প্রেমের কোন কিছুই টের পান নি। আমরা সবাই এই খবর জানতে পারি ওদের বিয়ের পর। আজ থেকে প্রায় আট মাস আগে আমার ছেলে রাম আর কাশীপুর নিবাসী স্বর্গীয় ক্ষেত্র ঘোষালের একমাত্র মেয়ে বনশ্রী ঘোষাল, গোপনে আগরতলায় কোর্ট-ম্যারেজ করে। তারপর ওরা লক্ষ্মীনারায়ণ ঠাকুর বাড়িতে যায়। সেখানে ঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে সোজা চলে আসে আমাদের বাড়িতে। আমি তো ওদের দেখে আকাশ থেকে পড়লাম। বিয়ের কথা জানতে পেরে রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি। কিন্তু বৌমা যখন এগিয়ে এসে পা ছুঁয়ে প্রণাম করল, 'বাবা' বলে ডাক দিল তখন আর রাগ ধরে রাখতে পারিনি। সব রাগ গলে জল হয়ে গেল। কেমন যেন মায়া পড়ে গেল ওর উপর। মনে হচ্ছিল এত দিন ফুল-বেলপাতায় যে মা লক্ষ্মীর পূজা করে আসছি, এ তো সেই মা লক্ষ্মী, আমার মা। আমার বৌমা'র চেহারায় সেই ছাপ, সেই ভাব। মনে হচ্ছিল স্বয়ং মা লক্ষ্মী মাটির মূর্তি থেকে বের হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, ঘরে তুলতে দু-হাত বাড়িয়ে আছেন। আমি কী আর চোখ বুঝে থাকতে পারি? পারি নি। ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার সকল রাগ জল হয়ে গেল। পরের যা হবে দেখা যাবে, এই ভেবে মা লক্ষ্মীকে নিজের মেয়ে করে ঘরে তুলে নিলাম। কিছুক্ষণ পর বৌমা ওর এক আত্মীয়কে ফোন করে ওদের বিয়ের ঘটনাটি জানাল। এই হল আমার ছেলের বিয়ের কথা।

    "তারপর!"

    "সেই আত্মীয়, যাকে বৌমা ফোন করেছিল, সে গিয়ে বৌমা'র বাড়িতে খবরটি দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দশ-বারোজন লোক মোটর সাইকেলে আমাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত। এক-একজনকে দেখলে যমদূত বলে মনে হয়, তার উপর আবার মাতাল অবস্থা। মদের গন্ধে সামনেই দাঁড়ানো যায় না। কী টেনে এসেছে কে জানে? ওরা এসেই আমাদের খুব গালা-গাল শুরু করল, প্রচণ্ড ধমকাতে লাগল। জীবনে কোনদিন এমন বেকায়দা অবস্থার মধ্যে পড়েনি। ওরা তো আমাদের কোনও কথাই শুনছে না। বারে বারে ক্ষমা চাইছি কিন্তু লোকগুলির রাগ কিছুতেই কমছে না। উল্টো একসময় ওরা আমাকেই মারতে এল। ঠিক এমন সময় আমাকে বাঁচাতে, বলতে পারো আমাদের সবাইকে বাঁচাতে হাতে লাঠি নিয়ে আমাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল বৌমা। বৌমা'র এই অবস্থা দেখে ওরা ঘাবড়াবে কী, আমি নিজেই ঘাবড়ে গেলাম। কিন্তু না, বৌমা হয়তো ঐ সময় ঠিক কাজটিই করেছিল। সে তাদের কী-কী বলেছিল তার মাথা মুণ্ড তো আমি বুঝতে পারিনি, কারণ আধুনিক বিজ্ঞানের মোবাইল ফোনের ব্যাপার-সেপার আমি কিছুই জানি না। তবে এতটুকু মনে আছে আমার বৌমা বলেছিল, 'এই টপ্পা, খবরদার বলে দিচ্ছি! আমি এখন এই বাড়ির বৌ, এই বাড়ির মেয়ে। এই বাড়ির সম্মান আমার সম্মান। এই বাড়ির অপমান, আমার অপমান। তাই আমার স্বামী, আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে একটি কথাও যেন আর না হয়। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এই বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। সব আমার কথা মতই হয়েছে। তাই তোদের যা বলার আমাকে বল। আমিও দেখে নেব, কোন নরে কয়টি কঙ্কাল আছে! তাই ভালই-ভালই বলছি, এখুনি আমার এই বাড়ি ছেড়ে চলে যা। তা না হলে এই দেখ, এতক্ষণ তোরা যে টাল খেয়ে পড়ছিস আর হুমকি-ধমকি দিয়েছিস, সব কিছুর সিনেমা থানায় চলে যাবে, হাজার হাজার মানুষের কাছে চলে যাবে। তখন কী হবে ভেবে দেখ?' বৌমা'র ঐ কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটা এক পলকেই আমাদের এত আপন করে নিল? আমাদের বাঁচাতে এতগুলি দানবের সামনে একাই হাতিয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল? মনে হল, তাকে তো মা লক্ষ্মী করে ঘরে তুলে ছিলাম, কিন্তু এ যে আমার মা দুর্গা। ওকে আমার মা করে ঘরে তুলে বিন্দু মাত্র ভুল করিনি। তার প্রতি স্নেহ মমতা আরও বেড়ে গেল। বুকটা আদর-ভালবাসায় ভরে উঠল। মনে হল, আমার মা দুর্গার সামনে এই মহিষাসুরের দল কি আর টিকবে? আসল মহিষাসুরই যখন টিকল না তখন ওরা কোন ছাড়! হলও তাই। বৌমা'র কথা শুনে সেই মহিষাসুরের দল হঠাৎ যেন শুকনো মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়ল। একটি কথাও আর বলল না তারা। গুঁই-গুঁই করতে-করতে লেজ গুটিয়ে চুপচাপ টানা পথে হাটা দিল। শুধু দু'জন গুণ্ডার মত লোক দাঁড়িয়ে রইল। পরে জানলাম ওরা নাকি বৌমা'র বড় দুই ভাই। এক ভাইয়ের নাম মহিষাসুর ঘোষাল। সবাই ওকে দাদা-লঙ্কা বলেই জানে। আর আরেক ভাইয়ের নাম কংসহরন। সবাই ওকে কালা-ব্যাঙ বলে জানে। ওরা বৌমাকে বলল, 'কাজটি তুই কিন্তু ভাল করলি না বনা! এর ফল কিন্তু ভাল হবে না!' উত্তরে বৌমা বলল, 'দাদা, আমি আমার স্বামীর সাথে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি। আমার স্বামীর এই ঘর এখন আমার ঘর। আমার এই গরিব ঘরে তোদের স্বাগত জানানোর মত আজ কিছুই নেই, এটা ঠিক। তবু ছোট বোনের ভালবাসার টানে আশীর্বাদ করতে যদি আসিস তবে স্বাগতম জানাতে কোন ত্রুটি করব না। আর যদি বোনের এই গরিব ঘর ভেঙে দেবার চেষ্টা করিস তবে মনে রাখবি, সেই সংঘর্ষে বড় বড় রাজপ্রসাদ ধুলায় মিশে যাবে, কিন্তু আমার এই ভালবাসার কুঠিরে কেউ স্পর্শটিও করতে পারবে না। এই দুর্গের পাহারাদার আমি, স্বর্গীয় ক্ষেত্র ঘোষালের মেয়ে আর মহিষাসুর ঘোষালের বোন। আমার বুকে আঘাত হানা ছাড়া কোন হাতিয়ার এই দুর্গের ত্রিসীমানা টাচ করতে পারবে না। তাই বলছি, বিবাদ এখানেই শেষ করে নেওয়া ভাল।'
উত্তরে এক ভাই বলল, 'তুই যে এত বড়-বড় কথা বলছিস বনা, আমরা কী ভাল পাত্র দেখে ভাল জায়গায় তোর বিয়ে দিতাম না? ভাল জায়গায় কি তোর সম্বন্ধ করতাম না? কেন তুই এমন কাজ করলি? একটি রাজার ঘরের রাজকুমারী হয়ে এক ভিখারিকে বিয়ে করে ভিখারির ঘরে চলে এলি?'
বৌমা জবাব দিল, 'জানি দাদা, তোরা নিশ্চয়ই আমাকে ভাল জায়গায় বিয়ে দিতি। বড় ঘর, ধনী বাড়ি দেখে বিয়ে দিতি। সেই বাড়িতে আমি সুখী হতেও পারতাম আবার দুখীও হতে পারতাম। কিন্তু আমি জানি এই গরিব ঘরটিতে আমি কখনোই দুখী হব না। আমার রাম আমাকে দুখী হতে দেবে না। তোদের খোঁজে আনা হাজার মানুষ কি আর কখনো এক রামের মত হবে? তোরা শুধু ওর বাইরের দিকটাই দেখলি, টাকা পয়সাটাই দেখলি, ভিতরটা আর দেখলি না। ভগবান তাকে টাকা দিয়ে সাজায়নি ঠিকই, তবে বুকের মাঝে যা দিয়েছে তা পৃথিবীতে দুর্লভ। আমি অনেক ব্যাপারেই আমার রামের কাছে ঋণী। রাম আমাকে খোঁজে নেয়নি, আমিই রামকে খুঁজে নিয়েছি। রাম আমাকে ভালবাসে নি, আমিই রামকে ভালবেসেছি। সত্যি কথা হল, রাম আমাকে বিয়ে করেনি, আমিই রামকে বিয়ে করেছি। আমার রাম গরীব ঠিকই, আমি তাকে গরীব থাকতে দেব না। একটা সত্যি কথা বলছি জেনে রাখ, এই বিয়েতে আমার রামের কোন মত ছিল না। সে চেয়েছিল নিজের মা-বাবা আর তোদের বলে-কয়েই বিয়ে করতে। আমিই রাজি হইনি। কারণ আমি জানি তোরা কেমন? তোদের সব কথা বলে-কয়ে আমি আমার রামকে হারাতে চাইনি। তাই গোপনে কোর্ট-ম্যারেজ করেছি। আমি মনে প্রাণে রামকে ভালবেসেছি আর চিরদিন ভালবেসে যাব। এখন রামই আমার সব, এই বাড়িই আমার সব। তাই পরের বার থেকে আমার শ্বশুর বাড়ির বিরুদ্ধে যদি কোন ষড়যন্ত্র হয়, তবে সেই ষড়যন্ত্রের কিন্তু আমি মুখ ভেঙে দেব। এই বাড়ির দিকে তোদের পথের বাধা এখন আমি। এই কথাটি যেন ভুলিস না।' ঐ ঘটনার কিছুদিন পর থেকেই শুরু হল থানায় আমাদের নামে মিথ্যা কেস। নারী অপহরণ, বধূ নির্যাতন আরও কত কী! কিন্তু প্রতিবারই আমার বৌমা আমাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। নিজের সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সকল অপপ্রচারের মুকাবিলা করেছে। একের পর এক মিথ্যা কেস থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। তাই শেষে আমার বৌমাকেই ওরা সরিয়ে দিল। খুন করে ফেলল আমার বৌমাকে আর খুনের অপরাধ ঢেলে দিল আমাদের মাথায়! আমার বৌমা'র লাস আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল না। সেই মহিষাসুরের দল যে আমাদের কী সর্বনাশ করে গেল তা কেউ জানে না! আমার বৌমাকে খুন করে ওরা একের পর এক কতগুলি লোককে মারতে চলেছে, সে খবরও ওরা জানে না! ঘরে ভিতর গিয়ে দেখ, আমার রাম, মৃত্যুর সব হাতিয়ার হাতের কাছে জমা করে রেখেছে। সে শুধু ১৬ই জানুয়ারির অপেক্ষায় আছে। ঐ দিনটি পার হলেই নাকি সে আর এই পৃথিবীতে থাকবে না। এই ১৬ই জানুয়ারি কী, তা আমি জানি না। বৌমা চলে যাওয়ায় এমনিই আমরা মরে গেছি, তার উপরে রামও যদি চলে যায় তবে আর কী নিয়ে থাকব? বৌমা'র পিছন পিছন রাম, আর রামের পিছন পিছন আমরা দু'জনও চলে যাব। কলি যুগের এই ইতিহাসে বেঁচে থেকে আর কী লাভ? তবে কোনও দিন আবার জীবন পেলে যেন সত্য যুগেই জীবন পাই, সেখানে যেন এই মহিষাসুরদের দর্শন করতে না হয়। আমাদের যেন রামের মতই একটি ছেলে হয় আর বৌমা'র মত ছেলে-বৌ।"

কথা শেষ হতে না হতেই বৃদ্ধর চোখ বেয়ে ঝড়ের মত জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। ঘরের ভিতর থেকে ললিতা-দেবীর কান্নার শব্দও স্পষ্ট কানে আসতে লাগল। পাথরের মত নীরব হয়ে বসে রইলেন নবদ্বীপ চক্রবর্তী। বৃদ্ধ'র চোখ দিয়ে গঙ্গার ধারা নীরবে বয়ে যেতে লাগল। রাজবংশীর চোখেও জল টল-মল করছে। এই অবস্থায় বৃদ্ধকে কী দিয়ে সান্ত্বনা দেবে, সেই ভাষাও সে খুঁজে পেল না। চুপচাপ বসে রইল সে। তবে তার মন-মস্তিষ্ক নীরবে বসে থাকল না। সেখানে চলতে লাগল এই ঝড়ের দিক-গতির হিসাব। হঠাৎ রাজবংশী মেরুদণ্ড সোজা করে বসল। তার চোখের জল পলকেই শুকিয়ে গেল। নয়ন-তারা চক-মক করে উঠল। ধীরে নবদ্বীপ চক্রবর্তীর হাতে হাত রেখে অতি শান্ত স্বরে সে বলল, "আপনি শান্ত হওন কাকা! সব ঠিক হয়ে হবে। আপনার বৌমা'র কিচ্ছু হয়নি, সে জীবিতই আছে। আমি তাকে ফিরিয়ে আনব। আনব ত আনবই। কথা দিলাম।"
পরবর্তী পর্ব   

আগের পর্ব গুলি: ১ম পর্ব    ২ য় পর্ব   

অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   



All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)    

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717