Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

লুকানো চিঠির রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

লুকানো চিঠির রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের চতুর্থ গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা
২৪-১০-২০১৮ ইং।

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

◕ লুকানো চিঠির রহস্য
৩ য় পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

উগ্র ভাবে ঝটপট গাড়ি থেকে পুলিশের ইউনিফর্মে নেমে এল মিঠুনের দাদা কানুগোপাল ও তার সঙ্গী-সাথীরা। মিঠুনের ফোন পেয়ে সোজা থানা থেকে চলে এসেছে ওরা। আসার সময় বাড়ির অন্য পুলিশদের ফোন করে ঘটনাটি জানিয়ে দিয়েছিল কানুগোপাল। ফলস্বরূপ বাড়ির অন্য পুলিশরা বাইক নিয়ে তার পিছু-পিছু হাজির। গাড়ি থেকে নামতেই কানুগোপালের চোখে পড়ল পাশের মোটর সাইকেলটি, নম্বর D-13 । চমকে উঠল কানুগোপাল, "রাজবংশী! এখানে! এত সকালে?" দুরে দেখা গেল রাজবংশী আর সদানন্দকে। চোখা-চোখি হয়ে গেল ওদের।

দাদাকে দেখে কাঁদা মাখা শরীরে দৌড়ে গেল মিঠুন। কাঁদতে - কাঁদতে বলল, "দাদা, ঐ দেখ, ঐ লোকটা আমাকে খুব মারছে। জীবনে কেউ আমাকে এত মার মারেনি। আর ঐ বরিদ্দা -! সেও ঐ লোকটির তালে পড়ে -"

কিন্তু এ কী? মিঠুনের কোনও কথার কোনও গুরুত্ব না দিয়ে কানুগোপাল এগিয়ে যেতে লাগল রাজবংশীর দিকে। কানুগোপালের পিছন-পিছন নিজের দুঃখের কথা বৃথা বর-বর করতে লাগল মিঠুন। কিন্তু দাদা এ কী করল, সোজা ঐ লোকটিকে পরম আনন্দে জড়িয়ে ধরল, "রাজ, তুই এখানে? এত সকাল-সকাল? কী ব্যাপার?"

রাজবংশী হেসে বলল, "আরে, একটু কাজে বামুটিয়া যাচ্ছিলাম। পথে তোর ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। শালবাগানের সেই নতুন গ্যাং, যাদের সম্পর্কে ঐ দিন IG সাহেব আমাদের বলছিলেন; এই তো নায়ক দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশের ভয় দেখিয়ে গরিবদের কাছ থেকে ছিনতাই, লুট সবই আজ নিজের চোখেই দেখলাম। তাই কষিয়ে-কষিয়ে কয়েকটা দিয়েছি আর-কি।"

নিজের উপর দোষ এসে পড়ছে দেখে, নিজের কৃতকর্ম সব দিনের আলোর মত দাদার কাছে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে দেখে, মিঠুন দ্রুত এগিয়ে এল, খুব গুসসা দেখিয়ে বলল, "সব মিথ্যা কথা দাদা। ও সব ঝুট বলছে। ও-ই আমাকে বিনা কারণে শুধু-শুধু মেরেছে। তুই ওর কথা বিশ্বাস করবি না। ওকে তুই আচ্ছা করে -"

ওর কথা শেষ হতে না হতেই ধুপ-ধুপ কিছু একটা ঘটে গেল। মিঠুন-ওস্তাদের গাল দুটি তীব্র ভাবে জ্বলে উঠল। ছেবরা খেয়ে উঠল মিঠুন। একি চলছে আজ, সকাল থেকে মিঠুন শুধু মার খেয়েই যাচ্ছে! ঐ সময় রাজবংশী, এখন নিজের বড় ভাই। তবে রাজবংশীর চড়গুলির চেয়ে নিজের ভাইয়ের চড়গুলি ছিল আরও বেশী কড়ক, খুব টাটকা-টাইট। বুঝা গেল, রাজবংশী তবু কিছু দয়া-মায়া করে মেরেছিল; দাদা তো আর দয়া-মায়া কিছুই বাকি রাখল না। এই অবস্থা দেখে বরিদের অবস্থা খারাপ। সে অবাক, হতভম্ব, খুব ভয়-ভীত। মনে-মনে ভাবছে, "কোনও হাই-প্রোফাইল কেসে ফেঁসে গেলাম না তো? চারিদিকে এত বড়-বড় পুলিশের অফিসারের ছড়া-ছড়ি।"

ওদিকে ভাইকে কষিয়ে চড় মেরে কানুগোপাল চীৎকার করে বলতে লাগল, "মূর্খ কোথাকার! তুই জানিস, কার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস? কার সামনে দাঁড়িয়ে কী কথা বলছিস? ওর মত এক তিমিঙ্গিল, তোর মত দশটা ঠনঠনিয়া-মিঠুনকে এক সাথে গিলে ফেলতে পারে। জানিস ও কে? ত্রিপুরার বিখ্যাত গোয়েন্দা, অনুব্রত রাজবংশী। পুলিশও যেখানে কোনও কূলকিনারা পায় না, সেখান থেকেই সে তার কাজ শুরু করে। বিপদে-আপদে, জটিল সমস্যা সমাধানে আমরা তার কাছেই ছুটে যাই। রাজবংশী পাশে ছিল বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলি। তুই, মূর্খ-ত্রি-জন্তু, বুঝতে পারিস-নি, রাজবংশী তোকে চড় মেরে বাঁচিয়ে দিয়েছে। দাদাগিরি দেখাতে এসেছিস ওর সামনে? উল্টা লটকায়ে টেংরি-দুটি ভেঙ্গে দেব। জানিস, তোর মুর্গি মার্কা গ্যাংকে ধরতে IG সাহেব আমাদের অর্ডার দিয়েছেন; প্রয়োজনে শুট এট সাইট, দেখা মাত্রই গুলি। ঠিক ভাবে এখনো হাটতেই শিখিস-নি আবার মস্তানি দেখাতে এসেছিস? লাথি মেরে-মেরে সব তিড়িং-বিড়িং আমি বন্ধ করে দেব, শয়তান কোথাকার। যা:, সবার সামনে ওর পা ধরে ক্ষমা চা। কোনও কথা নেই।"

সাত-সকালে এমন ভাবে চরম অপমানিত হয়ে কাঁদতে লাগল মিঠুন। কিন্তু হায়-রে সে জানে না, এই অপমান মুক্তির অপমান, দুঃখের শেষ সীমানা। এই অপমানের ওপারেই তো দাঁড়িয়ে আছে তার স্বর্ণময় জীবন। সব মানুষের বুঝি এক ইতিহাস।

কাঁদতে-কাঁদতে মিঠুন এগিয়ে চলল রাজবংশীর দিকে। রাজবংশী মিঠুনের কাঁধ ধরে তাকে আটকে দিল। বলল, "থাক ভাই, থাক। আমার পা ছুঁয়ে আর প্রণাম করতে হবে না। তোমার জায়গা আমার পায়ে নয়, বুকে। তুমি জান না, কলেজে কানু আর আমি সব সময় এক বেঞ্চে বসতাম। ক্যান্টিনে এক কাপে চা খেতাম। কানু আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, প্রাণের বন্ধু। তোমাকে দেখেই, তোমার চেহারাতে আমি আমার বন্ধুর ছবি দেখতে পাই। কিন্তু তুমিই আমাকে চিনতে পারনি। যদিও অনেক বছর আগে বহুবার তোমাদের বাড়িতে গেছি, তখন তুমি খুব ছোট। কিন্তু আজ তোমার এই পতন দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। এ রকম তো হওয়ার কথা ছিল না? তুমি যে-রকম ছেলে, তাতে আমি তো ভেবেছিলাম তুমি একজন দুর্দান্ত পুলিশ অফিসার হবে; বড় ভাইয়ের মত, কিংবা তার চেয়েও অনেক বড় পুলিশ অফিসার। তোমার হাতে হাতকড়ি নয়, মাথায় বিজয়ী অশোক স্তম্ভ দেখতে চাই আমরা, বুকে রাষ্ট্রপতির মেডেল। তোমার মাঝে এমন এক জাবাজ, নিডর, জাঁদরেল পুলিশ অফিসারকে দেখতে চাই, যে আকাশের বিজলীকে হাতের মুঠায় ধরে ঝড়ের গতিতে সমাজদ্রোহীদের দিকে এগিয়ে যাবে। যার নাম শুনলে সমাজদ্রোহী, চোর, ডাকাত, থর-থর করে কাঁপবে। আমি জানি তুমি চাইলেই তা পারবে, পারবেই-পারবে। সে যাক, মন বলছে তোমাকে খুব করে জড়িয়ে ধরে আদর করি; কিন্তু তোমার শরীরে এত কাঁদা লেগে আছে যে জড়িয়ে আর ধরতে পারছি না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে বামুটিয়া যাচ্ছি তো, সেখানে কাঁদা মাখা পোষাকে ভিজে-তিতে গেলে ভদ্রতার খেলাপ হবে। তাই কথা দিলাম আসার সময় তোমাদের বাড়ি হয়ে আসব, শুধু তোমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য।"

চোখের জলে ভাসতে-ভাসতে মাথা হেট করে মিঠুন মিন-মিন করে বলল, "ঐ যে অর্ডার হয়েছে; গুলির। এবার কী হবে?"

হা-হা করে হেসে উঠল রাজবংশী। বলল, "সে নিয়ে তোমাকে আর কিছু ভাবতে হবে না; আমরা দেখছি। তবে তোমাকেও একটা কথা দিতে হবে। দিন-রাত পড়াশুনা করবে, TPS পরীক্ষা দিয়ে খুব বড় পুলিশ অফিসার হবে। কী, কথা দিলে তো?"

নীরবে মাথা নাড়ল মিঠুন। ঐ স্বর্নালী সকালে, ঐ অল্প সময়ের মধ্যেই রাজবংশী যেন তার অন্তরে ছেয়ে গেল। মনের আকাশ জুড়ে শুধু রাজবংশী আর রাজবংশী। এমন সময় একটি ঘটনা ঘটল। কথা নেই, বার্তা নেই, হুট করে বরিদ্দা রাজবংশীর দুটি পা বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বলতে লাগল, "দাদা আমাকে দুটি কথা দিতে হবে। যতক্ষণ আপনি আমাকে কথা না দেবেন, আমিও আপনাকে ছাড়ব না।"

প্রেমের আলিঙ্গনে, ভক্তের আলিঙ্গনে গুরুদেব খুব মজা পান। রাজবংশীও নিজের এক ভক্তের আলিঙ্গনে খুব মজা পেয়ে প্রাণ খুলে হেসে উঠল। বলল, "যাও বরিদ, কথা দিলাম। বলো।"

বরিদ তন্ময় ভাবে বলতে লাগল, "আপনি কখনো আমাকে ভুলবেন না, এই বরিদ্দাকে ভুলবেন না। সব সময় আমাকে মনে রাখবেন।"

হাসতে হাসতে রাজবংশী বলল, "যাও কথা দিলাম। তোমাকে আমি মনে রাখব, ভুলব না। হয়েছে, ব্যাস।"

"না হয়নি! আমার দ্বিতীয় শর্তটি হল, ফেরার সময় আপনাকে অবশ্যই আমার রিক্সাতে বসতে হবে, আপনি বসে থাকবেন, আমি রিক্সা চালাব।"

আবার হা-হা করে হেসে উঠল রাজবংশী। বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি তোমার দুটি কথাই রাখলাম। এবার যাও, রিক্সাটা তুলে আনো। দেখো সব ঠিক-ঠাক আছে কি-না? কানু, তোর দুটি লোক দে তো, ওর রিক্সাটাকে কুচি থেকে তুলে আনুক। বরিদের রিক্সা চালাতে গিয়েই তো মিঠুন রিক্সা সমেত কুচিতে পড়ল।"

D-13 বাইকটি নিয়ে রাজবংশী আর সদানন্দ বামুটিয়ার দিকে চলে যাবার পর, ধরা-ধরি করে বরিদের রিক্সাটি কুচি থেকে তোলে আনা হল। বরিদ, রিক্সাটিকে পুকুরের জলে ধুয়ে-মুছে সাফ করে, স্বল্প মেরামতের পর গান্ধীগ্রাম বাজারে বসে রইল রাজবংশীর জন্য। কথা রাখল রাজবংশী। বামুটিয়া থেকে ফেরার পথে বরিদের রিক্সাতে চড়ে মিঠুনের বাড়িতে গেল। মিঠুনদের বাড়িতে গিয়ে দেখল, মিঠুন চাতক পাখির মত পথ চেয়ে বসে আছে। রাজবংশীকে দেখে এক শিশুর মত দৌড়ে এল আর খুব করে জড়িয়ে ধরল রাজবংশীকে। তখন মিঠুনের সে-কি কান্না, চীৎকার করে কাঁদতে লাগল মিঠুন। এই কান্না তার নিজেকে ফিরে পাওয়ার কান্না, নতুন পথ খুঁজে পাওয়ার কান্না, জীবনের লক্ষ্য স্থির করার কান্না। গ্রামের গরিব মানুষদের টাকা-পয়সা লুট-পাট করে তাদের কষ্ট দেওয়ার সেই দুঃখ, তার বুক থেকে ঝড়ের মত বের হতে লাগল। মনে-মনে সে নিজের কাছেই নিজে প্রতিজ্ঞা করল, সব ভুলের প্রতিদান তাকে দিতেই হবে, খুব বড় পুলিশ অফিসার হয়ে এই গরিব মানুষদের জন্য কাজ করতে হবে, করতেই হবে। এক দুর্বার ঝর্ণা ফিরে পেল সাগরের ঠিকানা আর ঝড়ের গতিতে স্রোতস্বিনী নদী হয়ে ছুটে চলল সব কিছু পিছনে ফেলে, নিজের জীবনের লক্ষ্যে, মানুষের সেবার লক্ষ্যে, ভারতমাতার ডাকে। আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি মিঠুনকে। কিছুদিনের মধ্যেই 'ত্রিপুরা পুলিশ সার্ভিস ( TPS )' পরীক্ষা হল। ঐ দিনের সেই মিঠুন-ওস্তাদ, যে দাদাগিরি দেখাতে গিয়ে রিক্সা নিয়ে কাঁদায় পড়ে গিয়েছিল, ভাইয়ের হাতে খুব মার খেয়েছিল, প্রচণ্ড রাগে কথা বলতে না পেরে বলেছিল, "আমার বাপ পুলি, আমার জেঠ পুলি," ফোনে আজ সে নিজের পরিচয় দিয়ে বলছে, "DSP কিশোর বলছি।"

Next part

সমগ্র পর্বগুলি: সমগ্র পর্বগুলি

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
গোয়েন্দা গল্পের সম্পূর্ণ তালিকা

All Bengali Stories    30    31    32    33    34    35    (36)     37   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717