Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১৫
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১৫

যত ভয়ানকই হোক না কেন, দুঃস্বপ্নের রাত পার হয়েই যায়। গত রাতে যে বীভৎস আর অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে গেল তুলারাম পাড়াতে, তারও শেষ হল পরদিন নতুন ভোরে। কিন্তু এই ভোর দেখার জন্য বেঁচে রইল না কেউ; না নারী, না পুরুষ, না শিশু, না বৃদ্ধ; কেউ না। অপরদিকে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আকাশে চক্কর খেতে লাগল শকুনের দল, বাড়তে লাগল তাদের সংখ্যা। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল, চক্কর কাটতে-কাটতে একটি শকুন শাঁ করে নেমে এল একটি মৃতদেহের উপর। পিছু-পিছু একের পর-এক কয়েক'শ শকুন ঝাঁপিয়ে পড়ল মৃতদেহগুলির উপর।

এই যখন অবস্থা তখন একটি সুবৃহৎ গাছের মাথায় জ্ঞান ফিরল তকিরার। সে অজ্ঞান অবস্থায় গাছের আগায় ছিল। গাছের মগ-ডালটির সাথে নিজের পরনের কাপড়টি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা ছিল সে। জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে গাছের আগায় পেয়ে চমকে উঠল, "এ কী? আমি এখানে? আমি গাছের আগায় কেন?" সে কিছু বুঝতে পারল না। কে তাকে গাছের আগায় তুলে এমন ভাবে শক্ত করে কাপড় দিয়ে গাছের ডালে বেঁধে রেখেছে! তার মনে হল যেন এই মাত্র সে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। অজ্ঞান অবস্থায় যে গাছের ডালে সারা রাত পার হয়ে গেছে, এ খবর তার নেই।

জ্ঞান ফিরতেই মাথায় খুব যন্ত্রণা অনুভব হল। হাত দিয়ে দেখল রক্ত। রক্ত দেখে সে আঁতকে উঠল। "এ কী? আমার মাথায় এত রক্ত কেন?" মুহূর্তে তার চেতন ফিরে এল। মনে পড়ে গেল গত রাতের ঘটনা। ততক্ষণে সব ঘোর কেটে গেছে তার। তড়িৎ সে নিচের দিকে তাকাল। আর যা দেখল তাতে বুকের রক্ত হিম। ভয়ে-আতঙ্কে কাঁপতে লাগল সে। চারিদিকে গ্রামবাসীদের, আত্মীয় পরিজনদের ক্ষত-বিক্ষত, অঙ্গহীন-মুণ্ডহীন দেহ। তাদের ঘিরে অসংখ্য শিয়াল-শিয়ালি। কয়েক হাজার শকুন মৃতদেহগুলির উপর বসে টেনে-টেনে মাংস আর নাড়ীভুঁড়ি ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খাচ্ছে। রক্ত লাল হয়ে আছে মাটি। টং ঘর গুলি তখনো জ্বলছে, ধোঁয়া উঠছে চারিদিকে। গ্রামের আট-দশটি জীবিত কুকুর তখনো কিছু শিয়াল আর শকুনকে বারে-বারে তাড়া করে তাদের মৃত প্রভুর দেহকে রক্ষা করে যাচ্ছে। কী ভয়ানক দৃশ্য! যেন কোনও বিষাক্ত নাগ তার মরণ বীণ বাজিয়ে গেছে। সেই মরণ বীণের ছোঁয়ায় ধরণী লেপে গেছে অসংখ্য মৃতদেহে। মৃত্যুর উল্লাসা যৌবন-নৃত্যে প্রাণের সকল চিহ্ন এখানে নিচিহ্ন। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না তকিরায়। গাছের ডালে পাথরের মতন বসে রইল সে। বেদনা আর কান্না তার বুক চিরে বজ্রের মত বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু সে চীৎকার করে কাঁদতে পারছে না, পাছে দস্যুরা তার উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। দস্যুরা যে গত রাতেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ খবর সে জানে না। তার গাল বেয়ে তপ্ত অশ্রু জ্বোয়ালামুখীর লাভার মত গড়িয়ে পড়তে লাগল। ঝরা পাতার মত থর-থরে কাঁপতে-কাঁপতে সারা শরীর ঘামে ভিজে গেল, আবার জ্ঞান হারাবার অবস্থা হল। গাছের ডালে শক্ত করে বাঁধা না থাকলে এবারও সে অজ্ঞান হয়ে নির্ঘাত নীচে পড়ে যেত। গাছের ঢালটাকে শক্ত করে ধরে বসে রইল সে।

মনে পড়ল, গতরাতে তুলারাম পাড়ার নিয়মিত পাহারাদার সোনালক্ষ্মী আর সে যখন একটি টং ঘরের সামনে মাটিতে বসে কিছু আগুন জ্বালিয়ে, সেই আগুনে একটি মুরগী সেঁকে মদের সাথে খাচ্ছিল, তখন আচানক অন্ধকার জঙ্গলের মাঝ থেকে একটি শিষের শব্দ ভেসে এল। নেশার চোখে তকিরায় তাকাল সেদিকে। তার মনে হল, সেদিকের জঙ্গলটা যেন ধীরে-ধীরে কাঁপছে। নেশার ঘোর কাটাবার চেষ্টা করল সে, বড়-বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল সেই দিকে। না, জঙ্গলটা সত্যিই কাঁপছে সেখানে, শুধু সেখানে নয় আরও অনেক জায়গায়। কথাটি সে সোনালক্ষ্মীকে বলল। সোনালক্ষ্মী ততক্ষণে নেশায় ধুত। তকিরার কথা শুনে সে ধমক দিয়ে বলল, "কী বললি? জঙ্গল কাঁপছে? জঙ্গল আবার কাঁপে নাকি? আধ পাগলের দশ লেজ! তোকে সব সময় বলি, এত নেশা করিস না। এত নেশা ভাল না। এই দেখ, আমি কী এত নেশা করি? বলদ কোথাকার? উল্টা-পাল্টা নেশা করবি আর নেশার ঘোরে যা খুশি তা বলবি। ভীতু! এই দেখ, আমি জঙ্গলের সব কাঁপ-কাঁপুনি থামিয়ে দিচ্ছি, এখুনি থামিয়ে দিচ্ছি," এই বলে সে একটি বড় পাথরের টুকরা হাতে নিয়ে বীরদর্পে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে গেল। অমনি আবার একটি তীক্ষ্ণ শিষ বেজে উঠল, আর অপর পাশ থেকে 'কুক-কুক' শব্দে কী যেন ডেকে উঠল। দাদাগিরী দেখিয়ে জঙ্গলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সোনালক্ষ্মী তার চোখের সামনে যা দেখল তাতে তার হৃদ-স্পন্দন থেমে গেল, নেশার ঘোর একেবারে কেটে গেল; মুহূর্তে সে ঘেমে উঠল। সে দেখল, তার দু'হাত দূরে, তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে কুকি দস্যুর দল। হাতের দা-গুলি চাঁদের আলোয় চিক-চিক করছে। সোনালক্ষ্মী বুঝতে পারল, আর কিচ্ছু করার নেই। এখানেই সব শেষ, এখুনি সব শেষ। করাল-নাগ হাজার বিষ-ফণ তুলে দাঁড়িয়ে গেছে। সোনালক্ষ্মীর সামনে এই অবস্থা দেখে আতঙ্কে তকিরায় চীৎকার করতেই ভুলে গেল। ধুপ-ধুপ পায়ে সে টং ঘরের পাশ দিয়ে জঙ্গলের দিকে দৌড় মারল। সাথে-সাথেই ধরাম করে সোনালক্ষ্মীর মুণ্ডহীন দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। প্রাণ বাঁচাতে তরিকার কাছে আর কোনও রাস্তা ছিল না। হাতের কাছে একটি উঁচু গাছ পেয়ে সে তাতেই লাফিয়ে-লাফিয়ে চড়তে লাগল। দস্যুরা তীর-ধনুক, দা, বল্লম নিয়ে তাকে ধাওয়া করে, তীর আর পাথর ছুঁড়ে মারতে লাগল। তকিরার গায়ে কিছু না লাগলেও গুলতির ছোট্ট একটি পাথর উড়ে এসে সজোরে তার মাথায় লাগল। চোট বেশী না, তবে রক্ত বের হয়ে এল আর অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। দেরী না করে প্রাণপণে নিজেকে টেনে গাছের মগ ডালে নিয়ে গেল তকিরায়। সে বুঝতে পারল, তার মাথায় এত যন্ত্রণা হচ্ছে যে এখুনি সে জ্ঞান হারাবে। প্রাণের দায়ে পালাতে গিয়ে মরণ-দ্বারে উপস্থিত। এমন উঁচু গাছ থেকে পড়লে, শেষ। চট করে নিজের পরনের কাপড়টি খুলে নিজেকে শক্ত করে গাছের ডালে বেঁধে দিল সে। ততক্ষণে চারিদিকে তীব্র আর্তনাদ, হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে গাছের ডালে ঝুলে রইল তকিরায়।

চোখের জলে ভাসতে-ভাসতে গাছের ডালে বসে এসব ভাবছিল তকিরায়, এমন সময় হঠাৎ তার কানে 'খুক-খুক' একটি কাশির শব্দ ভেসে এল। পাগলের মত এক ঝটকায় সেই শব্দের অভিমুখে তাকাল সে। ঐ তো রক্তাক্ত ইন্দ্র প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় আবার দু'বার কাশি দিয়ে উঠল, আর তাতেই তার বুকের উপর বসে থাকা একটি শকুন ভয় পেয়ে উড়ে গেল। তকিয়ায় গায়ের জোরে চীৎকার করে উঠল, তার গায়ের রক্ত গরম হয়ে গেল, "ইন্দ্র! ইন্দ্র, আমি আসছি! ইন্দ্র! আমি আসছি!" ঐ মুহূর্তে তার কাছে ইন্দ্রের বেঁচে থাকাটা, নরকলোকে স্বর্গলোক হাতে পাওয়ার অবস্থা মনে হল। "ইন্দ্র! ইন্দ্র!" চীৎকার করতে-করতে পাগলের মত হাত-পা চালিয়ে গাছ থেকে নেমে আসতে লাগল তকিরায়। মনে-মনে ভাবতে লাগল, "আজ দস্যুদের হাতে মরতে হয় মরবো, কিন্তু আমাকে ইন্দ্রের কাছে যেতেই হবে, হ্যাঁ, যে করেই হোক যেতেই হবে। ইন্দ্র, আমি আসছি! ইন্দ্র, আমি আসছি!"
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717