Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর-১৩, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১৮
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১৮
ইন্দ্র আর তকিরায় মিলে কিছু জংলী ফল-মুল এবং বেশ কয়েকটি বন-মোরগ নিয়ে সেখানে হাজির হল। ফল-মুলগুলি হারানবাসীর দিকে এগিয়ে দিয়ে ওরা নির্জন পাহাড়ি ঝর্নার পাড়ে বসে বন-মোরগের মাংস সেঁকে নিজেদের খাবার প্রস্তুত করতে লাগল। বন-মরিচ আর জলপাই দিয়ে আগুনে পুরা মাংস নিজেরা পেট ভরে খেল, কুকুরগুলিকেও পেট ভরে খাওয়াল। তারপর কিছুক্ষণ ওখানে বিশ্রাম নিয়ে আবার পশ্চিম দিকে চলতে শুরু করল ওরা।

দিনের আলো ক্রমশ বাড়তে লাগল। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল ইন্দ্রের মনের উত্তাপ, নয়নবুধীর কথা খুব মনে পড়তে লাগল তার। নয়নবুধীর প্রতি প্রেম, নয়নবুধীকে একবার দেখার তীব্র ইচ্ছা ইন্দ্রের মনে ভয়ানক ভাবে চেপে বসতে লাগল। চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা বনফুলগুলি ইন্দ্রকে সেই তোড়াটির কথা মনে করিয়ে দিতে লাগল, যা চম্পক আর সে মিলে বিদায় বেলায় নয়নবুধীকে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু নয়নবুধী নেয় নি, ফিরেও তাকায় নি তাদের দিকে। নয়নবুধীর প্রতি খুব অভিমান হয়েছিল সেদিন, কিন্তু আজ? আজ পদে-পদে নয়নবুধীকে ভালবাসতে লাগল সে। কারণ সাধের তুলারাম পাড়াকে চিরদিনের জন্য ছেড়ে যাবার সময় ইন্দ্রের বুকের মাঝেও নয়নবুধীর ঐ ব্যথাটিই যেন বার-বার জেগে উঠছিল। এই গভীর বনের চরম নিস্তব্ধতা যেন চীৎকার করে বলছে, "নয়না তোমাকে ভালবাসে ইন্দ্র! নয়না তোমাকে ভালবাসে!" কেন এমন মনে হতে লাগল তার, সে জানে না। তবে সে জানে, মন কখনো মিছে বলে না। এমন গভীর বনে নিজেকে নতুন করে নতুন ভাবে ফিরে পেল ইন্দ্র, সাথে নয়নবুধীকে আর তার প্রেমকে। স্বপ্নের মত হঠাৎ করে যে নিষ্ঠুর, ভয়ানক পরিস্থিতি তাদের সামনে এসেছিল, সেই নির্মম, কঠিন, কঠোর পরিস্থিতিকে সহ্য করতেই হোক কিংবা ভুলে যেতেই হোক ইন্দ্র মনে প্রাণে আঁকড়ে ধরল নিজের স্মৃতিগুলিকে, নিজের প্রেমকে, এক কথায় নয়নবুধীকে। দিন শেষ হতে-হতে ইন্দ্রের মনে নয়নবুধী ছাড়া আর কিছুই বাকী রইল না। এক রাতে এক তুফান ধ্বংস করে দিয়েছিল তুলারাম পাড়াকে আর আজ দিনের আলোতে এক ফাগুন পুনরায় গড়ে দিল ইন্দ্রকে। প্রেম মানুষকে গড়ে না ধ্বংস করে কে জানে? তবে ইন্দ্র আজ আর ইন্দ্রতে নেই, নয়নবুধীতে পাল্টে গেছে। সব কিছুই যেন তাকে টেনে-টেনে নয়নবুধীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নাহ, এই টান এড়ানো আর সম্ভব নয়। প্রেমের টান এড়ানো যায় না। ইন্দ্রও পারল না। "না না যে করেই হোক নয়নার সাথে দেখা করতেই হবে; হ্যাঁ দেখা করতেই হবে।" কিন্তু কী ভাবে? জবাবটা যেন আজো লুকিয়ে রইল ঐ বনের মাঝে, যে তোমাকে এদিকে টেনে এনেছে, পথও সেই-ই করে দেবে।

সারাদিন পথ চলার পর সন্ধ্যার ঠিক আগে ওরা একটি বিশাল বটগাছের পাসে এসে দাঁড়াল। জঙ্গলের এই স্থানটি বেশ পরিষ্কার, এতটা ঘন নয়। মনে হল, এটি কোনও বনোপথের তেমাথা। বটগাছটিকে মাঝে রেখে তিন দিকে তিনটি জঙ্গলি পথ চলে গেছে। নিয়মিত না হলেও এই পথ ধরে যে বছর, ছ'মাসে কোনও-না কোনও লোকজন চলাফেরা করে তা স্পষ্ট। ওরা তিনজন গা এলিয়ে দিল বটগাছটির তলে। গা এলিয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হারানবাসী খুব ক্লান্ত-স্বরে বলল, "আমরা প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় এসে গেছি। কাল দুপুরের আগেই আমরা তকমাছড়া পৌঁছে যাব। এখন কিছুক্ষণ এখানে বিশ্রাম করে তারপর আবার আমরা চলতে শুরু করব, চলতে হবে সারা রাত।"

তকিরায় জবাব দিল, "দেখতে-দেখতে কী থেকে কী হয়ে গেল? সময় কী ভাবে এমন বদলে যায় তা নিজের চোখে দেখলাম। দু'দিন আগে সবই ছিল, সবাই ছিল; এক রাতেই সব শেষ, কেউ নেই, কিছু নেই। আমি বেঁচে আছি কি মরে গেছি, নাকি স্বপ্ন দেখছি; তাই-ই এখনো বুঝতে পারছি না, বিশ্বাস করতে পারছি না। ওফ্, কী ভয়ানক রাত!" কিছুক্ষণ সবাই চুপ। একটু পরে তকিরায় আবার বলল, "হারান রে, এই জায়গাটাকে তো বেশ ভালই মনে হচ্ছে। অনেকটা নিরাপদ লাগছে। মনে হচ্ছে কোনও পথের তেমাথা?"

হারানবাসী তেমনি ক্লান্তভাবে উত্তর দিল, "তুই ঠিকই বলেছিস তকিরায়। এটি একটি পথের তেমাথা। পশ্চিমদিকের ঐ পথটি সোজা চলে গেছে তকমাছড়ায়।"

"আর ডান দিকের এই পথটি?"

"এটি সোজা চলে গেছে রাজধানী রাঙামাটিতে।"

কথাগুলি কানে যেতেই ইন্দ্র ধরমর করে উঠে বসল, "হারান কাকা, কোন পথটি? এই পথটি? একেবারে সোজা রাঙামাটিতে? এখানে থেকে কত দুর?"

"হ্যাঁ, এই পথটি, একেবারে সোজা রাঙামাটিতে। তবে এখান থেকে রাঙামাটি কত দূর, সে জানি না; কোনোদিন যাই নি। তবে শুনেছি প্রায় পাঁচ-ছ'দিনের পথ। তবে পথটি অতি ভয়ানক। হিংস্র বাঘ আর জঙ্গলি হাতিতে পরিপূর্ণ। তাছাড়া অজগর, শিয়াল আর ভাল্লুকের দল তো আছেই। লোকে বলে এটি পথ নয়; জমের দুয়ার।"

ইন্দ্র একটু রস মাখিয়ে বলল, "পশ্চিম দিকে আর না গিয়ে এই পথ ধরে সোজা রাঙামাটিতে উঠলে হয় না?"

জীবনের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে, সন্ধ্যার এমন আলো-আঁধার পরিবেশে ইন্দ্র এমন ফুর্তির কথাও বলবে, সেটা কেউ ভাবেনি। এটা একটা ফুর্তি ছিল না কি ঠাট্টা ছিল, ওরা বুঝার চেষ্টা করল। তবে ওর কথাতে হারানবাসী আর তকিরায় হাসবে না কি ধমক দেবে, ভেবে পেল না। শেষমেশ ওরা হেসেই উঠল। হারানবাসী বলল, "তুই ঠিক বলেছিস ইন্দ্র। অনেক পথ হেটে এসেছি তো। তাই পরিশ্রমটা একটু বেশী হয়ে গেছে, ভাল-মন্দ বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। একটু সময় ঘুমিয়ে নে, সব ঠিক হয়ে যাবে। সব আবার জায়গায় আসবে। নে ঘুমিয়ে পড়। "

তকিরায় কাত হয়ে শুতে-শুতে বলল, "ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে রাঙামাটির স্বপ্ন দেখ, মনটা ভাল লাগবে, মনের চাপটা কিছুটা কমবে, ক্লান্তিটা দুর হবে। যা চাপ গেছে না গত ক'দিন! নে শুয়ে পড়, একটু পরেই তো আবার জোরে হাটতে হবে; সারারাত। এই আমি শুয়ে পড়লাম। চলার সময় আমাকে জাগিয়ে দিস, ফেলে রেখে যাস না যেন। আমিও একটু ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে রাঙামাটির স্বপ্ন দেখি।" পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল তকিরায়। ইন্দ্রও কিছু না বলে শুয়ে পড়ল। কিন্তু চোখে ঘুম এল না। সে পাশ ফিরে তাকিয়ে রইল সেই পথটির দিকে। পথটি যেন তাকে বারে-বারে ডাকছে। নয়নবুধী যেন দাঁড়িয়ে আছে এই পথটি ওপারে। নয়নবুধীর এই টান ইন্দ্র আর সহ্য করতে পারল না। সে মনে-মনে বলে উঠল, "বেঁচে থাকলে তকমাছড়ায় নয়, রাজধানীতেই বেঁচে থাকব। তোমরা যাও, আমি চললাম। জীবনে তোমাদের সাথে আর দেখা হবে কি-না জানি না। তবে তোমাদের আমি মন-প্রাণ থেকে অসংখ্য-অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তোমাদের কথা আমি চিরদিন মনে রাখব। তোমরা ভাল থাক, সুখে থাক। তোমারা আমায় কখনো ভুল বুঝো না। আমি চললাম আমার প্রাণের কাছে, আমার প্রেমের কাছে, আমার নয়নবুধীর কাছে। আমার জন্য তোমরা কিছু ভেবো না। প্রেমের স্বর্ণময় চলার পথে কোনও বাধার কোনও দাম নেই। প্রেমের পথে বন, জঙ্গল, হিংস্র পশু-পাখি, জানোয়ার সব মিছে, সব মিছে। আমি চললাম, বিদায়।"

সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে গেছে অনেক আগেই। হারানবাসী আর তকিরায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কুকুরগুলিও ওদের ঘিরে এদিক-ওদিক শুয়ে আছে। ইন্দ্রের চোখে সেই তখন থেকে কণা মাত্র ঘুম নেই। এক সময় সে একটু নড়ে চড়ে উঠল। সে লক্ষ্য করল কয়েকটি কুকুর ছাড়া আর কেউ তার সে নড়াচড়ায় কোনও সাড়া দিল না, প্রতিক্রিয়াও দেখাল না। ধীরে-ধীরে উঠে বসল ইন্দ্র। হাতের তরোয়ালটি শক্ত করে ধরে, গামছাটি কাঁধে ঝুলিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেই অন্ধকারময় পথের দিকে। কুকুরগুলি মুখ তুলে চাইলেও কোনও শব্দ করল না, স্থান ত্যাগও করল না। কেন? ওরা কী জানে, এটাই ইন্দ্রের ঠিক পথ? ওরা কী জানে নয়নবুধী কোথায়? ওরা কী ইন্দ্রকে ঐ পথে যেতে দিতে চায়? ভালোর জন্য না কি ধ্বসের জন্য? কে জানে! ইন্দ্র একবারও আর পিছন ফিরে তাকাল না। দেখতে-দেখতে সে সেই গভীর জঙ্গলময় অন্ধকার পথে একা ধীরে-ধীরে হারিয়ে যেতে লাগল। একসময় মিশে গেল মিশমিশে অন্ধকার পথে। শুধু সবগুলি কুকুর অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। আবার এক চিরবিদায়, কিন্তু এই অশ্রুর মাঝেও কুকুরগুলির চোখ যেন এক সফলতার হাসি হাসছে। কেন?
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717