Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ১৯
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ১৯
কঠিন সিদ্ধান্তেই কঠিন পথ পার হওয়া যায়। হারানবাসী আর তকিরায়কে ছেড়ে জঙ্গলের অন্ধকার পথে ধীরে-ধীরে এগিয়ে চলল ইন্দ্র, কিন্তু একটু দূরে গিয়েই কিছু ভেবে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ভাবতে লাগল, হিংস্র পশুতে ভরা এমন গভীর জঙ্গলে অন্ধকার রাতে একা-একা এগিয়ে চলা মৃত্যুরই নামান্তর। এটা সাহস কিংবা বীরত্ব নয়; বোকামি এবং নির্বুদ্ধিতা। বরং রাতটা গাছের উপর কাটিয়ে সকালবেলায় দেখে-বুঝে পথ চলা অনেক বুদ্ধিমানের কাজ। ডাল ভেঙ্গে না পরলে; বানর, সাপ ছাড়া গাছের ডালে তেমন কিছুর ভয় নেই। ওদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে তরোয়ালটাই যথেষ্ট। এই হাতিয়ারটা আজ পরম বন্ধু। এমনটা ভেবে তরোয়ালের বাঁটটাকে আলতো চুমু দিয়ে চট করে একটি মোটা তমাল গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল ইন্দ্র। তারপর তরতর করে মগ ঢালে উঠে গেল। সেখান থেকে হারানবাসী আর তকিরায়কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছ। ওরা তখনো বটগাছের তলে ঘুমাচ্ছে। ইন্দ্র গাছের ডালে বসে উদাস চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে।

কিছুক্ষণ পরে হারানবাসী আর তকিরায় বটগাছের তলায় ঘুম থেকে জেগে উঠল। ঘুম থেকে জেগে ওরা ইন্দ্রকে পাশে দেখতে না পেয়ে পাগলের মত চীৎকার করে এদিক-ওদিক ডাকতে লাগল, "ইন্দ্র! ইন্দ্র!" কিন্তু কোনও দিক থেকে কোনও সাড়া পেল না। শেষে ওরা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে ভাবল, ইন্দ্রকে নিশ্চয়ই বাঘে খেয়েছে, নয়তো কোনও বনপরি কিংবা জঙ্গলপরি তাকে ধরে নিয়ে গেছে। ইন্দ্র আর বেঁচে নেই, সে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। চোখের জলে গভীর জঙ্গলে ইন্দ্রকে বিসর্জন দিয়ে ওরা পশ্চিমের পথটি ধরে তকমাছড়ার দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগল; এমন ভয়ানক জায়গায় আর এক মুহূর্ত থাকা ঠিক নয়। কুকুরগুলিও ওদের পিছু-পিছু চলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হারানবাসী আর তকিরায় হারিয়ে গেল পশ্চিমের জঙ্গলে। ইন্দ্র গাছের ডালে বসে অত্যন্ত উদাস চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। একটু আগেই সে স্বেচ্ছায় তাদের ছেড়ে চলে এসেছিল, এখন ওরাই তাকে চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে গেছে। সময়ের কী পরিহাস? এটাই প্রতিটি জীবনের কথা।

নিদারুণ শোকে গগন ভেদী একটি কান্না তার বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে, কিন্তু পারল না? যখন বুকের ভাষা মুখে না আসে তখন কথা বলে চোখ। তেমনি চোখ বেয়ে ঝড়ের মত জল গড়িয়ে পড়তে লাগল ইন্দ্রর। আজ বুঝি চিরকালের জন্য সকল সম্পর্ক ছিন্ন হল তুলারাম পাড়ার সাথে। মা-বাপ গেল, ভাই-বন্ধু, আত্মীয়স্বজন সব গেল, নয়নবুধী আর চম্পকও গেল, এখন হারানবাসী আর তকিরায়ও যাচ্ছে...গাছের ঢালে বসে কাঁদতে লাগল ইন্দ্র। আজ নিজেকে বড় অসহায়, একা-বড়ই একা মনে হল। কিন্তু তাকে যে যেতেই হবে রাজধানীতে, নয়নবুধীর কাছে। কেন যেন বারে-বারে মনে হচ্ছে, নয়নবুধী তাকে খুব করে ডাকছে, খুব ডাকছে; কোনও বিপদ হয়নি তো তার?

পায়ে-পায়ে রাত গভীর হতে লাগল, সাথে পাল্টে যেতে লাগল জঙ্গলের পরিবেশ। বুকের রক্ত হিম করা নানা রকম ভয়ানক-ভয়ানক শব্দ ভেসে আসছে চারিদিক থেকে। সেই সব শব্দ বাঘ-ভাল্লুকের ঝগড়ার, ভুত-পেত্নীর নাচা-নাচির, নাকি জঙ্গলপরিদের ডাকা-ডাকির, ইন্দ্র জানে না। এমন ভয়ানক শব্দগুলি জীবনে প্রথমবার সে শুনতে পাচ্ছে; ভয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে।

চোখে ঘুম নেই, মনের সাহস দোদুল্যমান, পরবর্তী পরিকল্পনা অনিশ্চিত, ভবিষ্যতের পথ অন্ধকার। এমন অবস্থায় বারে-বারে কিছু প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে তার মনে আসছে, "এখন কী করি? এখন কী হবে? রাজধানীতে যাবার যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি সেটি ঠিক তো, নাকি ভুল? এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব ভুল নয় তো?"

জবাব কিছু নেই। কে দেবে জবাব? তবে সব প্রশ্নই যেন নয়নবুধীর সাথে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যেতে লাগল, একে-একে। অলখে থেকেও নয়নবুধী যেন সব কিছুকে নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। মনের ভাঙা-ভাঙা প্রশ্নগুলি ধরে আর এগোতে পারে না ইন্দ্র, হারিয়ে যায় নয়নবুধীর গোলক ধাঁধায়, নয়নবুধীর প্রেমে। জঙ্গলের ভয়ের সাথে একটি সামাজিক ভয়ও তখন তার মাথায় চড়ে বসে। এটি তাকে আরও দুচিন্তায় ফেলে দেয়। নয়নবুধীর টানেই তো সব ছেড়ে আজ সে এই গভীর বনে একলা পড়ে আছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও কী লাভ? নয়না তো অন্যের বৌ। এক রাজকর্মচারীর বৌ। যার জন্য সব কিছু ছেড়ে নিজের জীবনকে বাজি রাখল ইন্দ্র, সেই নয়না তো অপরের বিবাহিত স্ত্রী। যার জন্য মৃত্যুকেও মাথা পেতে নিল ইন্দ্র, পাগলের মত ছুটে চলল রাজধানীর দিকে, সেই নয়না তো এক রাজকর্মচারীর পত্নী। হাজার চেষ্টা করেও তুলারাম পাড়ার সেই বান্ধবীকে সে আর কোনোদিন নিজের করে ফিরে পাবে না। নয়নবুধীও এক রাজকর্মচারীর এমন সুখের সংসার ছেড়ে তার কাছে কেন ছুটে আসবে বনে-জঙ্গলে কষ্ট পেতে? নয়নাই যদি হাতে নাই, তাহলে আর জীবন-মরণ বাজি রেখে শুধু-শুধু যমরাজকে ঘাড়ে নিয়ে কী লাভ? এত কষ্ট করার কী দরকার? বাইরের অন্ধকারের চেয়ে মনের অন্ধকারটি ঢের বেশী গভীর মনে হতে লাগল তার। বাইরের অন্ধকার তো প্রহরে-প্রহরে বদলায়, কিন্তু মনের অন্ধকার সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত অন্ধকার হয়েই থাকে। ইন্দ্রও সেই অন্ধকার থেকে বের হবার পথ জানে না।

ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে পারি না, কিন্তু চলতে-চলতে আমরা ভবিষ্যতেই গিয়ে পড়ি। 'সময়' অতীত ও ভবিষ্যতের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানের আড়ালে 'সময়' লুকাতে জানে না। এই তিন কালে সময় সদা স্বধর্মে চলে। আমাদের চোখে আজ যা বিপর্যয়, সময়ের চোখে সেটিই সঠিক পথ। ইন্দ্রর এত-শত বিপর্যয়ও বুঝি কোনও কিছুর প্রস্তুতি! কিন্তু এ প্রস্তুতি কার? ইন্দ্রের, সময়ের, নয়নবুধীর, না-কি তাদের প্রেমের?

সব দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা মাথায় নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে ইন্দ্র তমাল গাছের মাথায় বসে রইল। মনের মাঝে বারে-বারে ভেসে উঠতে লাগল নয়নবুধীর অবয়ব। নয়নবুধীকে দেখার তীব্র ইচ্ছাটাকে কোনও ভাবেই আর সে বশে আনতে পারছে না। অবুঝ মন বারে-বারে কেঁদে-কেঁদে বলছে, "চল রাজধানীতে চল, নয়নার কাছে চল, নয়না হয়তো তোর পথ চেয়ে বসে আছে.." নয়নবুধীর প্রতি প্রেম-ভালবাসার এক উত্তাল বন্যা বয়ে এল ইন্দ্রের মনে। নয়নার প্রেম ইন্দ্রের প্রাণের ক্ষুদ্র আকাশে আর সমাহিত রইল না। তা উপচে পড়তে লাগল অসীম-অসীমায়; তাকে দেখা গেল না, ধরা গেল না, কিন্তু থামানোও গেল না। ইন্দ্র আর ইন্দ্রের বশে রইল না, নিজের প্রেমকেও নিজের বশে রাখতে পারল না। উপরন্তু ভেসে গেল নয়নবুধীর প্রেমে অসীম থেকে অসীমে। সেই অসীমে পাড়ে দাঁড়িয়ে এই জঙ্গল আর তার ভয়কে অতি ক্ষুদ্র মনে হল তার। নয়নবুধীকে শুধু একবার দেখার তীব্র বাসনা ছাড়া আর কোনও কিছুই ভাবতে চাইলো না সে। আর এই তীব্র বাসনাই তাকে মুক্ত করে দিল মনের সকল অন্ধকার থেকে।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717