Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২০
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব 20
সত্যিকারের প্রেম বীর হতে শেখায়, বুকে সাহস জোগায়, এগিয়ে যাবার প্রেরনা দেয়। ইন্দ্রের বেলাতেও তা-ই হল। এই গভীর জঙ্গলে জীবনের পথ খুঁজতে-খুঁজতে শেষে পথ পেল সে, নিজেরই মাঝে, নিজের মনে। পরিপাশ্বিক নীরবতার সাথে একাকীত্বের যোগ কখনো-কখনো অসাধারণ লক্ষ্য সিদ্ধি এনে দেয়। ইন্দ্রের বেলাতেও তাই হল। তার মনের আয়নায় প্রাণের ইচ্ছাটা একেবারে পরিস্কার হয়ে উঠল, জ্বলজ্বল করতে লাগল। এবার সেখানে ঠিক-ভুলের কোনও দন্ধ নেই, ভয়-ভাল্লুকের কোনও দুঃচিন্তা নেই। ইন্দের মনে ভেসে উঠতে লাগল কিছু কথা, "ক্ষতি কী যদি আমি নয়নাকে চিরকাল গোপনে দূর হতেই ভালবেসে যাই। আমার ভালবাসা আমারই থাকল। না পাওয়ার মাঝেই তো নিখাদ প্রেম চির বিরাজমান থাকে।" মনে-মনে হাসতে-হাসতে ইন্দ্র আবার ভাবতে লাগল, "আমি যখন রাজধানীতে গিয়ে তার সামনে দাঁড়াব, তখন সে তো আকাশ থেকে পড়বে? কিছুক্ষণ নিজেকে বিশ্বাসই করতে পাড়বে না। হয়তো খুব লজ্জাও পেতে পারে... না, সেই দস্যু মেয়ে লজ্জা পাবার মত মেয়ে নয়। তবে নিশ্চয়ই আমাকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করবে, তার বাপ-মায়ের কথা, চম্পকের কথা ... কি উত্তর দেব তখন আমি...সব শুনে সে হয়তো খুব কাঁদবে। কাদুক... কিন্তু আমি তাকে এত বড় রাজধানীতে খুঁজে পাব কোথায়?" কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেই আবার বিড়বিড় করে বলেতে লাগল,"যাঃ, আগে রাজধানীটা তো খুঁজে পাই..."

নয়নবুধীর প্রতি অকৃত্তিম এই গভীর ভালবাসা মুহুর্তে এনে দিল ইন্দ্রের অর্ধমৃত জীবনে নতুন উদ্যাম, নতুন উত্থান, মিনলের এক সাড়া জাগানো আবেশ। মন স্থির হতেই গায়ে ও মনে আগের জোর আবার ফিরে এল। স্বস্তির একটি লম্বা শ্বাস বেরিয়ে এল বুকের গভীর থেকে, বহুক্ষণ সেটা আটকে ছিল অদৃশ্য জালে বুকের ভিতর। নিজেকে বেশ ফুরফুরে, ঝরঝরে, সতেজ আর প্রাণবন্ত মনে হল। চোখের সামনে থেকে একে-একে মিলিয়ে যেতে লাগল সকল অদেখা আঁধার। এখন সব কিছু একেবারে পরিস্কার; বন, ভবিষ্যত, লক্ষ্য। মুখের মধুর হাসিটিও ফিরে এল। পরম আনন্দে দুই হাত তুলে এই নির্জন জঙ্গলের নির্মল বায়ু গভীর ভাবে বার-কতক নিজের বুকের ভিতর ভরে নিল সে। মনের এই দন্ধহীন আর শব্দহীন বিজয় বাইরের যুদ্ধকে সদাই প্রভাবিত করে; বলতে গেলে যুদ্ধটাই কমিয়ে দেয়।

যে জঙ্গলটা এতক্ষণ ইন্দ্রের চোখে অতি ভয়ানক মনে হচ্ছিল, তা-ই এবার রাতের কালো পর্দায় অসাধারণ রূপে ঝিলমিলিয়ে উঠল। আবছা আলোয় বনদেবীকে হঠাৎ রূপসী হয়ে উঠল। চারিদিকে মনমুগ্ধ শোভা, রূপের হাট। প্রতিক্ষণেই বনদেবী আধারের গাঢ়ত্ব নিয়ে নতুন রূপ ধারন করছে নতুন আলোয়। শত-সহস্ত্র জোনাকী হীরের-প্রদীপের মত উড়ে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। যেন কোনও স্বর্ণকার স্বর্ণধূলি ছড়িয়ে দিয়েছে আধারের বুকে। এ এক বিরল দৃশ্য। যেন বন কিছুক্ষণ আগেও ছিল ভয়ানক, তা-ই যেন এখন এক মায়াময় রূপতীর্থ। যেন বহু যত্নে গড়া কোনও এক চতুরা, নির্বাক, প্রিয়ভাষিণী অরূপ নারী। কে জানে, কে এই নারীর শিল্পকার, রচনাকার? আর তাকে গোপনে বাঁচিয়ে রাখতেই বুঝি তাকে ঘিরে অরন্যের এই হিংস্র, নির্দয়-নিষ্ঠুর, কঠোর আভরণ, বনদেবীর এই নিষ্ঠুরতা। এখানে সংগ্রাম দিয়েই জানানো হয় অতিথিকে সংবর্ধনা আর অর্ভ্যথনা। আপনভোলা, উদাসীন, দুর্বল এখানে মুল্যহীন, নিস্প্রয়োজন। জীবন সংগ্রামে এখানে বাপ-মর্যাদা নেই। এখানে সে-ই বিপন্ন, যে রুচিসম্পন্ন এবং বাছ-বিচার করে। এখানে সৃষ্টি আর ধ্বংসের দেবতা দু'জন পাশা-পাশি হাত ধরে চলাচল করে।

ইন্দ্র মুদ্ধ নয়নে উপভোগ করতে লাগল বনের শোভা। এই ক্ষনে প্রাণের বন্ধু চম্পকের কথা খুব মনে পড়তে লাগল তার। সে কল্পনা করতে লাগল, চম্পক আজ সাথে থাকলে কী করত, কী বলত? চম্পকের কথা ভাবতে-ভাবতেই হঠাৎ চম্পকের কিছু কথা মনে পড়ল তার। চম্পক প্রায়ই বলত, "মরে গিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। বেঁচে থেকেই যুদ্ধ জিততে হয়। কঠিন-তে কঠিন যুদ্ধ হলেও বুদ্ধি ও পরাক্রমের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, জয়ী হতে হবে এবং অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। এর মাঝে আর কোনও প্রশ্ন নেই।" হঠাৎ চম্পকের ঐ কথাগুলি মনে হতেই ইন্দ্র যেন একটি ঝটকা খেয়ে উঠল; তার মেরুদন্ড সোজা হয়ে গেল। সে নিজের মনেই দৃঢ় ভাবে বলতে লাগল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, চম্পকের কথাই ঠিক, চম্পকের কথাই ঠিক। আমাকে আমার বন্ধুর কথা মানতেই হবে... মানতেই হবে। এই যুদ্ধটা আমাকে জীততেই হবে। কঠিন-তে কঠিন পরিস্থিতি হলেও আমাকে বেঁচে থাকতেই হবে, বেঁচে থাকতেই হবে। বেঁচে আমি থাকবই... বেঁচে আমি থাকবই।" প্রচণ্ড উদ্দীপনায় আর অসীম আত্মবিশ্বাসে ইন্দ্র গগনভেদী চীৎকার করে উঠল, "আমি জিতবই..."

অসময়ে অভাবনীয় এই বিকট চীৎকারে রাতের গভীর অরন্য হঠাৎ চমকে উঠে চুপ হয়ে গেল, যেন ঝুপ করে যেন জলে পড়ে গেল। চমকিত বন্যপ্রাণীরা বুঝার চেষ্টা করছে, এ কিসের হুঙ্কার? এ কার গর্জনা? টগবগে আত্মবিশ্বাস আর সাহসে ইন্দ্র ফুটছে তখন। যেন গাছের ঢালে নতুন করে ঘুম থেকে জেগে উঠল একটি বীর-ফুলের কুড়ি। ইন্দ্র উদ্যত তলোয়ারটি হাতে নিয়ে গাছে ঢালে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে ঘোষণা দিতে লাগল, "হোক না একের-পর এক যুদ্ধ, ইন্দ্র তৈরী... ইন্দ্র তৈরী। যা কিছু আমার পথ আটকাবে আমি সব তছনছ করে দেব, ছাড়খার করে দেব। যে করেই হোক এই যুদ্ধ আমাকে জীততেই হবে... জীততেই হবে..."

একা-একা এই বিশাল এবং গভীর জঙ্গল পেরিয়ে রাজধানী রাঙামাটিতে পৌছানো কোনও যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। জামাই আদর করতে এখানে কেউ বসে নেই, এ কথা ইন্দ্র খুব জানে। অশরীরী কোনো শক্তি ছাড়া যেকোনও শরীরী শক্তির সাথে সকল লড়াই হবে তীব্র। খুব ঠান্ডা মাথায় সমনের যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে লাগল ইন্দ্র। আজ তার সকল বিদ্যার পূর্ণ ব্যবহারই প্রাণ-সুরক্ষা বজায় রাখতে পারে। আজ শুধু গায়ের জোরে যুদ্ধ জেতা যাবে না; সাথে বুদ্ধিরও প্রয়োজন হবে। আর চাই ধৈয্য ও সতর্কতা। সাহস ও দুরদৃষ্টির সাথে অতি সর্তকতায় বুদ্ধি খাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে পদে-পদে। লক্ষ্য স্থির রেখে নিজের চরিত্র মিশিয়ে দিতে হবে বনের চরিত্রের সাথে। অদ্ভুত উপায়ে মানুষকে নিজের রূপে মোহাবিস্ট করে বশীভূত করার এক মায়াবী রূপ আছে বনের। তাই বিন্দু মাত্র আবেগ এখানে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। দ্বিতীয় সুযোগের এখানে কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু যেতে হবে এই পথেই, এরই নাম বিজয়।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717