Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

নয়নবুধী


ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   

লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------


নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২১
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ২১
ইন্দ্রের মুখে এক বীরের হাসি ফুটে উঠল। সে এখন মানসিক ও শারীরিক ভাবে এগিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত। সে ভাল জানে, এই বনে যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি চলে আসতে পারে তার সামনে, আর এটাই সকল যুদ্ধের নিয়ম।

ইন্দ্র গাছের ডালে বসে একাগ্র চিত্তে পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল আর অদৃশ্য হাতিয়ার ধার দিয়ে-দিয়ে খাপে-খাপে রাখছিল। ঠিক এমন সময় হঠাৎ উত্তর দিকে অনেক দূরে আগুন দেখে সে চমকে উঠল। খানে-খানে অনেক আগুন জ্বলছে সেখানে। ঠিক কত দূরে, ঐ আধারে বুঝা গেল না। তবে আগুন আছে মানেই ওখানে লোকজন আছে এবং বড়-বড় আগুনের বহর দেখে বুঝা যাচ্ছে, সংখ্যাতে ওরা দুই-কুড়ির কম হবে না।

ইন্দ্র অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, "এই গভীর রাতে ওটা কীসের আগুন? এমন গভীর জঙ্গলে ওরা কারা? কোনও শ্মশান, না তান্ত্রিক? নাহ, এত রাতে এমন গভীর জঙ্গলে কেউ কী শব নিয়ে আসবে? নিশ্চয়ই না। আর তান্ত্রিকের এত আগুন জ্বালবে কেন? ব্যাপার কী? তবে কী ওখানে কোনও গ্রাম আছে? যদি গ্রাম থাকে তবে এত আগুন কেন? এত রাতে তো সবার ঘুমিয়ে থাকার কথা! কিন্তু গ্রামে যদি কোনও ভোজ বা অনুষ্ঠান হয়? ভোজ বা অনুষ্ঠান হলে তো আগুন এক-দুই জায়গায় জ্বলবে, চারিদিকে এমন ভাবে এত বড়-বড় আগুন জ্বলবে কেন? তবে কী ওখানে দস্যুরা তুলারাম পাড়ার মত কোনও গ্রামটিকে আক্রমণ করেছে? ঘর-বাড়ি সব জ্বালিয়ে দিয়েছে?"

দস্যুদের কথা মনে হতেই একটা গরম স্রোত সুড়সুড় করে তার মেরুদণ্ড বেয়ে মাথায় গিয়ে উঠল। হঠাৎ শক্ত করে তরোয়ালটা ধরল সে, আর অপলক দৃষ্টিতে সেই আগুনের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণের পর সে বুঝল, এটা কোনও দস্যুদল কিংবা ডাকাতদলের আক্রমণ নয়, কারণ আগুন খুব নিয়ন্ত্রণে আছে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে না। দস্যুদের আগুন হলে তা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত। তাহলে ওখানে দস্যুরা নেই, তবে এত আগুন জ্বাললো কারা? কারা আছে ওখানে?

তুলারাম পাড়াতে বহুবার সে শুনেছে, দস্যু কিংবা ডাকাতের দল প্রায়ই রাজসৈন্যের তাড়া খেয়ে এমন গভীর জঙ্গলে গা ডাকা দিয়ে থাকে। তারপর ওখান থেকেই এখানে-ওখানে হামলা চালায়। দস্যু কিংবা ডাকাত, যা-ই হোক না কেন, ওখানে মানুষ আছে এটা নিশ্চিত। হতে পারে দস্যু কিংবা ডাকাত দল; আবার হতে পারে কোনও সিপাহি-ছাউনি।

এই আগুনটা ইন্দ্রকে নতুন করে ভাবনায় ফেলে দিল। কারণ, আগুনটা উত্তর দিকেই দেখা যাচ্ছে আর ওদিকেই রাজধানী রাঙামাটিতে যাওয়ার পথ। তাই এই আগুনের কথা মাথা থেকে নিভিয়ে দিলে চলবে না, মাথায় রাখতে হবে।

রাত প্রায় শেষ, ভোর হতে অল্প বাকি, সারা বন পাখিদের ডাকা-ডাকিতে মুখর হয়ে উঠল। এমন মধুর কোলাহল ইন্দ্র আর কখনো শোনেনি। রাত যত ভয়ানক, বনের ভোরটি ততই সুন্দর। পাখিদের এমন প্রাণখোলা গান শুধু নিবিড় বনেই সম্ভব। ওরা নিজেদের ভাষায় কত কথাই না বলে যাচ্ছে একে অপরের সাথে...দেখতো সই, কে এই অতিথি এসেছে বনে! অতিথি বুঝি পথ হারিয়েছে, তা না হলে এমন গভীর বনে কেন? আহা! তার তো আর আমাদের মত ডানা নেই, থাকলে এখুনি উড়ে যেতে পারতো নিজ ঠিকানায়!

পাখিরা আরও কত কি বলে গেল কে জানে, ইন্দ্র শুধু বোবার মত 'হা' করে তাকিয়ে থাকল তাদের দিকে। সুন্দর মানেই তো মুক্ত, আর মুক্ত মানেই তো সুন্দর। বনে ওরা স্বাধীন, মুক্ত, সুন্দর; তাই বুঝি বনে-বনে ঘুরে এত সুন্দর গান গায়? কোন শর্তে বনের পাখিরা এখানে এমন ভাবে বনের ভোরকে জাগায় কে জানে? বনের ভোর পৃথিবীর এক রত্নভাণ্ডার।

গাছের উপর থেকে ইন্দ্র দেখল, তার চারিদিকে অন্তহীন সুবিস্তৃত বন ছড়িয়ে আছে। একটু-একটু করে সেই সবুজ বনের ভিতর থেকে লাল গোল সূর্যটা আকাশের দিকে উঠে আসছে, যেন কোনও জাদুকর উড়ন্ত লাল গোলাটাকে ছুড়ে দিয়েছে আকাশ পানে। হাওয়ায় ভাসতে-ভাসতে লাল সূর্যটা চারিদিকে আলো ছড়িয়ে উড়ে যাচ্ছে। তার কোমল আলো আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে প্রতিটি তৃণ, লতা, গুল্ম, বৃক্ষ আর প্রাণ, অন্তর। অনন্ত আকাশ সহ ভুবন-মৃত্তিকায় ছড়িয়ে পড়ছে সোনালী সৌরভ। এ-যেন রাতের রূপের উপর আরেক রূপের বড়াই। চারিদিকে সোনালী আলোর বন্যা। সেই আলোর বিছানায় ধীরে-ধীরে ঘুমিয়ে যাচ্ছে রাতের বনপরি, কুড়ি-মুড়ি দিয়ে জেগে উঠছে দিনের বনদেবী। তাকে স্বাগত জানাতে হাজার-হাজার বন-পুষ্প, চম্পা, চামেলি, বেলি, টগর, করবী, যুঁই, মালতী ফুটে আছে চারিদিকে। সুমিষ্ট সৌরভে ম-ম করছে সারা বন। শুধুই কি ফুল, এই বন যেন ফলের ভাণ্ডার; দিকে-দিকে ফল-ফুলের মহাযজ্ঞ। দিনের শৈশব প্রতিদিন এমন জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই এখানে প্রবেশ করে।

ইন্দ্র অবাক হয়ে ভাবছে আর মনে-প্রাণে উপভোগ করে যাচ্ছে ত্রিপুরার বনের এমন শোভা। ইন্দ্রের মনে পড়ল তুলারাম পাড়াতে বাল-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই মিলে সকল উৎসবে একটি গান গাইত —
'বনের ভাণ্ড বড় ভাণ্ড কখনো ফুরায় না,
বন হল মাতা-পিতা, অতি আপনজনা।
হেথায় আছে ঔষধাদি, ফল-মুল রত্নাদি, বন আমাদের প্রাণ,
জাগ্রত বন, এক জাগ্রত ভগবান।।'

সারা রাত গাছের ডালে প্রায় সজাগ বসে নিজেকেই নিজে পাহারা দিল ইন্দ্র। এ এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। আজ সে অনেক বেশী মুক্ত, অনেক বেশী স্বাধীন, অনেক নির্মল, স্বচ্ছ, তাজা আর প্রাণবন্ত। তার মনে ভেসে আসছে শুধু সুদূর থেকে ভেসে আসা অদৃশ্য প্রেমের অনুভূতি, বুকের মাঝে নিজ প্রেমিকার প্রতি এক দুর্বার টান অনুভব করল ইন্দ্র।

ভোরের আলো যখন একটু শক্ত হল, তেজ ধরল তখন চারিদিকটা একবার ভাল করে দেখে নিয়ে ধীরে-ধীরে গাছ থেকে নামতে লাগল ইন্দ্র। সে জানে, বনের এই সৌন্দর্য যতই অপরূপ হোক না কেন, নক্সাদার বনের এই সবুজ গালিচা মরণ ফাঁদে পূর্ণ, মায়াবী ভেলকিতে ভরা। নিজের মনকে সাহস জোগাতেই হোক, কিংবা নিজের ভারী মনের পরিস্থিতিকে একটু হাল্কা করতেই হোক, গাছ থেকে নামার সময় বনের পশু-পাখিদের উদ্দেশ্যে ইন্দ্র চীৎকার করে বলে উঠল, "ভাই সব, আমি আজ তোমাদেরই মতো তোমাদের স্বজাতীয় লোক। তাই একটু দেখে-শুনে ভাই... কাছে আসলে, যেমন আসবে তেমনই পাবে, এটা ঠিক। তাই সাবধান; সাবধান তুমিও, সাবধান আমিও...হে বনমাতা তুমি আমাকে পথ দিও, তেজ, শক্তি আর বুদ্ধি দিও," বলতে-বলতে ইন্দ্র তমাল গাছটি থেকে নেমে এক দৌড়ে আবার পাশের একটি উঁচু সুপারি গাছে তর-তর করে উঠে গেল।

সুপারি গাছটিকে সে অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য রেখেছিল। কারণ, এই সুপারি গাছটিতে অনেকগুলি কাঁচা-পাকা বড়-বড় সুপারি ছিল। গাছ থেকে দুই ছড়ি সুপারি নামিয়ে ঝটপট শক্ত বনো লতা দিয়ে নিজের কমরের দুই পাশে ঝুলিয়ে নিল ইন্দ্র। ইন্দ্রের কাছে আসার পর এই সুপারিগুলি এখন আর সুপারি নেই, এখন এগুলি এক-একটি তীব্র গতি সম্পন্ন গদাবাণ। এই গদাবাণ এক-একটি যার উপর পড়বে উড়ন্ত বজ্রের মত আঘাত করবে। তুলারাম পাড়াতে ইন্দ্র আর চম্পক, দুজনে মিলে এই গদাবাণে অনেক বানর, শিয়াল, শূয়র ইত্যাদি তাড়িয়েছে কখনো মেরেও ফেলেছে। দুই বন্ধু এই সুপারির নাম দিয়েছিল 'গদাবাণ'। এই গদাবাণ আজ ইন্দ্রের মোক্ষম হাতিয়ার; আর সামনা-সামনি যুদ্ধের জন্য তরোয়ালটা তো আছেই। তারপরেও যেন কিছু একটি জিনিসের অভাব অনুভব করল সে; লাঠি!! একটি শক্ত লাঠি দরকার।

ইন্দ্র মনে-মনে বলতে লাগল,
"একটি কাঠি যদিও লাঠি-
শিয়াল-কুকুর ভয়ে মাটি।
অসি কাটে, লাঠি ভাঙে-
কোমর, মাথা, চোয়াল-চাটি।।
তাই বেশ মজবুত একটি লাঠি দরকার..."

খুব দ্রুত সে পাশের বাঁশ-ঝাড় থেকে বেশ শক্ত-পোক্ত একটি কাঁচা বাঁশ কেটে মজবুত একটি লাঠি জোগাড় করল। সেটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ খুব জোরে-জোরে চারিপাশে ঘুরিয়ে পরখ করে নিল।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49    50    51    52   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717