Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নয়নবুধী

ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   

নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২৩
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ২৩
কিছু দুর এগিয়ে যাওয়ার পর সে দেখল সামনে একটি বিশাল বটগাছ, তার ডালপালাগুলি যেন আকাশ ছেয়ে আছে। বনে গাছ থাকাই স্বাভাবিক, কিন্তু এমন গাছ বনেও কম দেখা যায়। কখনো-কখনো বন্য-রূপ স্ব-মহিমায় সুন্দর-রূপকেও হার মানায়। ইন্দ্র অবাক চোখে গাছটির দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থাকল। সে দেখল গাছটির নীচে এই বড়-বড় বেশ কয়েকটি পাথর আছে। গাছটির আরও একটু কাছে এগোতেই ইন্দ্র এক প্রকার চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে দেখল, গাছটির নীচে একটি বড় পাথরের উপর দুটি কুড়াল পাশা-পাশি রাখা। অবাক কাণ্ড!! এই জন-মানবহীন স্থানে কার এখানে কুড়ালের দরকার? কে রাখল এই কুড়াল এখানে? কুড়ালগুলি দেখে তো মনে হচ্ছে এগুলি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। কে এই কুড়াল চালায়? তার মানে আসে-পাশে নিশ্চয়ই কেউ আছে; দস্যু, দানব না মানব?

ইন্দ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। যেন আসন্ন সংগ্রামের পূর্বাভাষ সে পেয়ে গেছে। দৃঢ় মুষ্টিতে তরোয়ালটি ধরে সে গগন ভেদী হুঙ্কার দিয়ে উঠল, "কে? কে আছে ওখানে? সামনে আসো?"

তার চীৎকার যেন বনের গভীরে প্রবেশ করে খবর নিয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার তার কাছেই ফিরে এল, "কে? কে আছে ওখানে? সামনে আসো?" এই প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কোনও দিক থেকে কোনও উত্তর এল না। ইন্দ্রও আর এগোল না, ঐ জায়গায় দাঁড়িয়েই পুনরায় সে বজ্রকন্ঠে হুঙ্কার দিয়ে উঠল, "কেউ কি আছে? সামনে আসো?"

এবারও কোনও উত্তর এল না। নীরব বন কথা কইল না, যেন আরও নীরব হয়ে গেল। এই নীরবতা ভাষা এক কঠিন ভাষা। ইন্দ্র এই নীরবতাকেই বুঝতে চেষ্টা করল। সে চারিদিকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে লাগল। সে লক্ষ্য করল বটগাছটিকে বেষ্টন করে প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ হাত পর্যন্ত বৃত্তাকার জায়গাটি অন্য জায়গার তুলনায় বেশ পরিষ্কার। এই স্থানে কোনও বড় গাছপালা নেই, আর যা ছিল সব কেটে ফেলা হয়েছে। গাছের মৃত গোড়াগুলি যেন অভিশপ্ত এক দল পরির মত পাথর হয়ে মাটির মাঝে গেঁড়ে আছে মুক্তির আশায়। ইন্দ্র আরও লক্ষ্য করল বটগাছটির নীচে যে বড়-বড় পাথর ছড়িয়ে আছে তার উপর কিছু লোক খুব অনায়াসেই বসতে পারবে। ধীরে-ধীরে বনের নীরব ভাষা যেন হাল্কা-হাল্কা ধরা দিতে লাগল ইন্দ্রের মনে। সমগ্র পরিবেশটি যেন একটি সংকেত পাঠাতে লাগল তাকে। নিজের বিচার-বুদ্ধি ভাষা-সংকেত বুঝে নিয়ে ইন্দ্র অনুমান করতে পারল এই কুড়ালের রহস্য। ওর সামনে বিচার-বুদ্ধির একটি নতুন দিগন্ত আচমকাই উন্মোচিত হল। এক কণা হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। মনে-মনেই সে বলে উঠল, "বাহ! বাহ! সত্যিই তো এটি একটি দারুণ বিষয়। তাই তো বলে, মনের প্রতিটি বিচার একটি শক্তি। প্রতিটি বিচার একটি পরিবর্তন। একটি বিচার একটি সংস্কার। একটি বিচার একটি সংস্কৃতি। একটি বিচার একটি পথ।"

কয়েক মুহূর্তের জন্য ইন্দ্র যেন হারিয়ে গেল এই বন ছেড়ে নিজের গভীরে। কিন্তু ভালই হোক কিংবা মন্দ, মানবের এই সূক্ষ্ম ভাব-অবস্থা দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকে না, খুব শীঘ্রই মানব তার স্থূল রূপে ফিরে আসে। ইন্দ্রেরও তাই হল। সহসাই সে আবার নিজের ভিতর থেকে নিজের মাঝে ফিরে এল। সে মনে-মনে হেসে উঠে বলল, "এই দুটি কুড়ালের বিচার যার মাথায় এসেছিল, তাকে তো 'ধন্য-ধন্য' দিতেই হবে। তার দূরদর্শিতার গুন গাইতেই হবে। সে এই স্থানটি দেখে ঠিক বুঝতে পেরেছিল যে, এই বটবৃক্ষের তলটি পথিকদের জন্য একটি সুন্দর ও সুরক্ষিত বিশ্রাম-স্থল হতে পারে। জায়গাটি পরিষ্কার রাখলে এ স্থানে বন্য-জন্তুরা সহজে লুকিয়ে থাকতে পারবে না, কিংবা লুকিয়ে পথিকদের আক্রমণ করতে পারবে না। আর যদি সামনা-সামনি আক্রমণ করেই বসে তাহলে তো আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে এই দুটি কুড়াল রইলই। বাহ! কত সুন্দর পরিকল্পনা, কত সুন্দর রণনীতি। এই কারণেই এই জায়গাটিকে পরম্পরাগত ভাবে সুন্দর, পরিষ্কার ও সুরক্ষিত রাখতে সে একটি বুদ্ধি করল। সে নিজে কয়েকটি গাছ কেটে এই কুড়াল দুটি এখানে রেখে যায় পরবর্তী পথিকের জন্য। পরবর্তী পথিক আসবে, এখানে বিশ্রাম করবে, কুড়াল দুটি দেখে, কাটা গাছগুলি দেখে, সংকেত বুঝতে পারবে আর নিজেও জায়গাটিকে একটু পরিষ্কার করে কুড়াল দুটি আবার এখানেই রেখে দেবে পরবর্তী পথিকের জন্য। এ প্রথা চলতেই থাকবে, হয়তো অনন্তকাল।"

এ ভাবেই একটি বিচার তিলে-তিলে ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম-নগরে, সমাজ-সাম্রাজ্যে। এভাবেই কোনও এক অচেনা মানুষের একটি বিচার রাখা থাকে গভীর জঙ্গলে একটি বটবৃক্ষের ছায়ায়, একটি বড় পাথরের উপরে দুটি কুড়াল রূপে। যুগ পাল্টায়, সময় পাল্টায়; কিন্তু প্রয়াস, পদ্ধতি একই থাকে প্রকৃতি মাঝে; আর তা চির সত্য। তেমনি সংকেত মেনে সেই বিচারটিকেও একের পর এক বয়ে নিয়ে যায়, পথিকের পর পথিক, দিনের-পর দিন। এমনি ভাবে পড়ে থাকে একটি বিচার এক গভীর জঙ্গলে বিন্দুমাত্র পুরাতন না হয়ে।

ইন্দ্রের চোখের সামনে যেন ছবির মত ভাসতে লাগল এই স্থানে ঘটে যাওয়া পূর্ববর্তী সমস্ত ঘটনাগুলি। সে দেখল যারাই এখানে বিশ্রাম করছে, যাবার আগে তারা এই কুড়াল দিয়ে কয়েকটি গাছ কেটে এই জায়গাটিকে সুন্দর, সুরক্ষিত এক বিশ্রামাগার বানিয়ে রাখছে পরবর্তী পথিকের জন্য। ইন্দ্রও পিছু হটল না, সে একটি কুড়াল হাতে এগিয়ে গেল আর নিজের কুড়াল চালিয়ে দিল বৃত্তের জঙ্গল পরিষ্কার করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জায়গাটি পুনরায় বেশ পরিষ্কার হয়ে গেল। বিশ্রামের আগে পরিশ্রম; তাই পরিশ্রমের কাজটি আগে শেষ করে ইন্দ্র বেশ খুশি মনে কুড়ালটি যথাস্থানে রেখে বটের ছায়ায় একটি পাথরের উপর কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে গা এলিয়ে দিল। এমন সময় সে দেখল কয়েকটি শিয়াল একটি কাঠবিড়ালির ছানাকে মাটির উপর তাড়া করে সেই পরিষ্কার বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। কাঠবিড়ালির ছানাটি নিজের প্রাণ বাঁচাতে দিশ-জ্ঞান হারিয়ে বটগাছটির দিকেই ছুটে আসছে, বলতে গেলে ইন্দ্রের দিকে। শিয়ালগুলিও দুরন্ত বেগে ছানাটিকে ধরতে তার পিছনে ছুটছে। কাঠবিড়ালিটি যদি সোজা ইন্দ্রের দিকে ছুটে আসে তাহলে শিয়ালগুলিও সোজা এদিকে এসে ইন্দ্রকে আক্রমণ করতে পারে। এক মুহূর্ত দেরী না করে ইন্দ্র দুটি সুপারি বিদ্যুৎ বেগে ছুড়ে মারল শিয়ালগুলির দিকে। রাজধানীর পথে এটাই ইন্দ্রের প্রথম আক্রমণ। সেই আক্রমণে প্রথম শিয়ালটি দুই সুপারির আঘাতে উড়ন্ত পাখির মত চার-পাঁচটি পাল্টি খেয়ে হুমরী খেয়ে পড়ল শক্ত লাল মাটিতে। আর তার পর-পরেই এক চাইট দিয়ে উঠে ঝড়ের মতন ছুটে পালিয়ে গেল বনের মাঝে, যেন তাড়া করতে এসে উল্টো নিজেই তাড়াতে পড়ে গেল; প্রাণের তাড়া। পালাতে-পালাতে সেই শিয়ালটি 'ও-ও' করতে-করতে বাকী শিয়ালগুলিকে কি বলে গেল কেউ বুঝতে পারল না; নিশ্চয়ই নিজের দুঃখের কাহিনী। নিশ্চিত শিকারের সময় চোখের সামনে আচমকা এমন একটি ঘটনা দেখে বাকী শিয়ালগুলিও ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল। ওরা ইন্দ্রকে দেখে ইন্দ্রকে ওদের আরেকটি বড় শিকার বলে ভাবতে লাগল, আর খুশিতে তীব্র স্বরে 'হুক্কা-হুয়া' ডাকতে লাগল। আর সাথে-সাথে জঙ্গলময় সেই ডাক শুরু হয়ে এল। গভীর জঙ্গলে শিয়ালদের এই ভয়ানক রব যেকোনো শত্রু আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে যথেষ্ট। সেই ডাকের সাথে-সাথেই কোথা থেকে আরও একদল শিয়াল ওখানে এসে হাজির হল। ওরাও তার-স্বরে 'হুক্কা-হুয়া' শুরু করে দিল। এমন ভয়ানক রব, শিকারের পূর্বে শিকারকে বিচলিত আর হতবুদ্ধি করে দেবার এক সুনির্দিষ্ট জংলী কৌশল। শিয়ালেরা তাদের তীক্ষ্ণ দাঁত বের করে গর্জন দিয়ে-দিয়ে পরিবেশটাকে ভয়ানক থেকে আরও বেশী ভয়ানক করে দিল। এ যেন ইন্দ্রের প্রতি শিয়ালদের অবহেলার হাসি। কিন্তু ইন্দ্র বিন্দুমাত্র ঘাবড়াল না, সে মাথা একদম ঠাণ্ডা রেখে ধৈর্য ধরে উচিত সময়ের প্রতীক্ষা করতে লাগল। তুলারাম পাড়াতেও এমন বহু শিয়ালদের মেরে-মেরে তাড়িয়েছে চম্পক আর ইন্দ্র। শিয়ালদের স্বভাব, আর শিয়াল তাড়ানোর সেই অভিজ্ঞতা তার আছে। ওখানকার শিয়ালগুলি তাকে খুব ভাল চেনে, দেখা মাত্রই পালায়। কিন্তু এখানকারগুলি এখনো তাকে চেনে নাই। পরিচয়টা সময় থাকতেই দিতে হবে। তাই শিয়াল-পালের সর্দার, একটি হৃষ্টপুষ্ট শিয়ালের মুখ লক্ষ্য করে একটি শক্ত বড় সুপারি ইন্দ্র এত জোরে ছুড়ে মারল যে, সেই সুপারিটি শিয়ালটির মুখে লাগতেই 'ক্যাঁক' করে একটি জোড়ালো শব্দ শোনা গেল আর সাথে-সাথেই শিয়ালটির মুখ থেকে কয়েকটি দাঁত ছিটকে এদিক-ওদিক বেরিয়ে গেল, থুতনিটা ঝুলে পড়ল। একেতেই ওর যথেষ্ট হল। পালাতে চেয়েও পারল না, হাত-পা ছুড়ে ওখানেই থুপুর করে পড়ে গেল, আর উঠল না। হুঁশ হারাতে হারাতে প্রাণটাই হারাল সে। পরের উড়ন্ত-সুপারি বিজলীর মত পড়ল গিয়ে আরেক শিয়ালের পিঠে, পরেরটি আরেকটির গলায়, পরেরটি আরেকটির পায়ে। পা, পিঠ, থুতি, মাথা চুরমার হয়ে যেতে লাগল একে-একে। শিয়ালদের মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে গেল। ভয়ঙ্কর শিয়ালের দলটি এখন সত্যিকারের লেংড়া শিয়ালের দল হয়ে গেল। সুযোগ বুঝে ইন্দ্র গর্জে উঠে হাতের কচি বাঁশের লাঠিটি ঘুড়িয়ে শুকনো মাটিতে খালি-খালি এমন জোরে বাড়ি দিতে লাগল যে, শিয়ালের দল পড়ি-কি মরি হয়ে একের-পিঠে দুই পালাতে লাগল। ভেলকির মত ফুস করে বনের শিয়াল বনেই মিলিয়ে গেল।

একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইন্দ্র চারিদিকে তাকালো, বেশ কয়েকটি শিয়ালের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে মাটিতে। ইন্দ্র ঠিক বুঝল, আর এ স্থানে এক মুহূর্ত থাকা ঠিক হবে না, কারণ জঙ্গলে কোনও কিছুই ফেলনা নয়। এই মৃত শিয়ালগুলিও আবার কারোর আহার। বাঘ কিংবা এ জাতীয় হিংস্র পশু খুব সহসাই এখানে চলে আসবে তাজা মাংসের লোভে, তাই দ্রুত এই স্থান ছেড়ে চলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ইন্দ্র এক মুহূর্তও আর ওখানে দাঁড়াল না, দ্রুত উত্তরের পথ ধরল।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717