Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নয়নবুধী

ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   

নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২৪
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ২৪
সেই সকাল থেকে ইন্দ্র শুধু হেটেই চলছে, শক্ত কিছু তখনো পেটে পড়েনি। খিদেটা খুব জমেছে।

বন এক বিশাল খাদ্য ভাণ্ডার। এখানে হাত বাড়ালেই খাওয়ার পাওয়া যায়। তবে সাবধান; একটু অসাবধান হলেই নিজে খাদ্যে পরিনত হতে এখানে সময় লাগে না।

ইন্দ্র দেখল পাশের একটি উঁচু জায়গায় একটি বেলগাছের তলায় দল বেঁধে কিছু লাল ঝুঁটির বনমোরগ-মুরগী ঘুরঘুর করছে। মোরগরা উড়ে-উড়ে গাছের মগডালে বসছে, যেন পদ্মফুলের পাপড়ির মত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ওরা কোনও বন-সিদ্ধির অভ্যাস করছে। এ দৃশ্য অতি মনোরম, অতি সুন্দর। কিন্তু পেটের খিদে বনের সৌন্দর্যকেও হারা মানায়।

ইন্দ্র তাগড়া একটি মোরগকে লক্ষ্য করে সঠিক নিশানা সেধে তুফান বেগে একটি সুপারি ছুড়ে মারল। হাওয়া-কেটে শুঁ করে কিছু একটা যেন বিদ্যুৎ বেগে নিচ থেকে গাছের উপরে উড়ে গেল আর 'ঠোপ' করে একটি শব্দ হল। শব্দ হতেই কিছু পালক বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে পড়ল হাওয়ার মাঝে, আর একটি মোরগ সজোরে গাছের নিচে শক্ত মাটিতে 'ধুপ' করে আছড়ে পড়ল। এতে খুব হাল-চাল শুরু হয়ে গেল সেই মোরগ-মুরগীর মধ্যে। শোর-গোল করে কেউ উড়ে পালিয়ে যেতে লাগল, কেউ আবার দৌড়ে ঢুকে গেল জঙ্গলের ভিতর। প্রলয়কর্তার প্রলয় মাঝে স্থির দাঁড়িয়ে রইল।

একটু সময় স্থির দাঁড়িয়ে বেশ খুশী মনে ইন্দ্র মোরগটির দিকে যেই কয়েক পা এগিয়েছে অমনি জঙ্গলের ভিতর থেকে একটি লম্বা কুচকুচে কালো জাত সাপ বিশাল ফণা তুলে ইন্দ্রের পথ আটকে দাঁড়াল। সেটি প্রচন্ড রাগে বাতাসের মধ্যে খুব জোরে-জোরে ফুঁৎ-ফাৎ করে ছোবল মারতে লাগল। হাওয়ার মাঝে ছোবল মারার এমন ভয়ানক শব্দ হল যে ইন্দ্র এক লাফে কয়েক পা পিছিয়ে এল; এই সাপের এক ছোবলেই সব শেষ। সে খুব বুঝতে পারল যে এই জায়গাটা সাপদের অবাদ বিরচন ভুমি। শুধু একটি নয়, এখানে অনেকগুলি সাপ নিশ্চয়ই ঘাপটি মেরে আছে। কারণ এখানে এত বনোমুরগ-মুরগী আছে যে মুরগীর ডিম এবং মুরগীর ছানা খুব সহজেই সাপরা খাদ্য রূপে পেয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের টানে দলে-দলে সাপ এখানে এসে বাসা বেঁধেছে। ইন্দ্রের জন্য যেন একটি সীমারেখা টেনে দিল সাপটি।

খাদ্য পাওয়ার আশায় খাদ্য হওয়ার সম্ভাবনা এখানে খুব প্রবল; কিন্তু তাই বলে কি পথ ছেড়ে দিতে হবে? এখানে সাপের ভয়, তো অন্য জায়গায় বাঘের ভয় থাকবে। এভাবে ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে পথ ছেড়ে দিতে থাকলে তো এ জঙ্গলে থাকাই যাবে না। থাকুক সামনে বাধা; এগিয়ে গিয়ে এই সমস্যার সন্মুখিন হয়ে সমাধান করলেই তবে পথ। আর সমস্যার সন্মুখিন না হলে এই দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ। এ কথা ইন্দ্র খুব জানে, তাই ইন্দ্র করলও তা-ই। যদিও সামনে জাত সাপ; কামড় দিলে চোখের-পলকে বুকের পাখি নাই, তাই বলে তার ফুঁৎ-ফাতে ভয় পেয়ে এত সহজে হাল ছেড়ে দিতে বিন্দু মাত্র রাজি নয় ইন্দ্র। বনের মাঝে পদে-পদে পথ বানাতে হয়, তা যত কঠিন বাঁধাই আসুক; পথ একটা বের করতেই হবে। দ্বিতীয়, তৃতীয় পরিকল্পনা মাথাতে থাকাই চাই, সম্ভাবনা একটা ওদিকে লুকানোই থাকে। টিকে থাকতে হলে ইন্দ্রের পাশাপাশি এই সাপকেও প্রমান করতে হবে যে সে শ্রেষ্ট, সে যোগ্য।

হাতের লাঠিটি সামনের দিকে শক্ত করে ধরে রেখে দূর থেকে সাপটিকে ভালোভাবে লক্ষ করতে লাগল ইন্দ্র। সাপটি তখনো মহাক্রোধে ঐ এক জায়গায় থেকে ইন্দ্রের দিকে প্রচণ্ড জোরে ফুঁৎ-ফাৎ করে যাচ্ছে। ইন্দ্র নিজেকে বেশ শান্ত রেখে মনে-মনে নিজের রণনীতি সাজিয়ে নিল। তারপর হাওয়ার মাঝে কয়েকবার নিজের কাঁচা বাঁশের লাঠিটা শাঁ-শাঁ করে ঘুড়িয়ে চোখের পলকে একটি কাঁচা সুপারী জাদুমনির ফণা লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারল। ইন্দ্র দেখাল এক, করল আরেক; যুদ্ধের আরেক হাতিয়ার। ফণার এক ধার থেঁতলে সাপটি কয়েকটি পাল্টি খেয়ে ছিটকে পড়ল বেশ কিছুটা দূরে, তারপর আঁকা-বাঁকা বিজলীর মত চোখের নিমিষে মিলিয়ে গেল ঘন জঙ্গলে।

ইন্দ্র আর দেরী না করে আশে-পাশের ঝোপ-ঝাড়ে ধুম-ধাম করে কাঁচা বাশের লাঠিটি চালাতে-চালাতে বেলতলার অভিমুখে শীঘ্র এগোতে লাগল। বেলতলাতে গিয়ে মোরগটিকে পিঠে ঝুলিয়ে সে তাড়িত সেই স্থান ত্যাগ করল।

সে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল, কিন্তু উপযুক্ত নিরাপদ স্থান পেল না যেখানে বসে সে শান্তিতে মোরগটি খেতে পারে। পথ চলতে-চলতে সে এমন একটি স্থানে এল যেখানে দুটি পাথরের ফাঁক দিয়ে খুব ক্ষীণ একটি জলধারা টুক-টুক করে লাফাতে-লাফাতে নীচের দিকে বয়ে যাচ্ছে। জলটি খুবই সচ্ছ আর পরিস্কার। পাশে আছে একটি বাঁশ ঝাড়। সেই বাঁশ ঝাড়ের ইতি-উতি ছড়িয়ে আছে অনেক ছাই-ভষ্ম। ইন্দ্র বুঝল, আগেও কোনও-না কোনও পথিক কিংবা পথিকের দল এই স্থানে আগুন জ্বলে গেছে। জায়গাটি ইন্দ্রের পছন্দ হল।

হাতের কাছে পরিস্কার জলের এমন সুবিধা! জল, আগুন, আহার সকল রসদই যখন একসাথে উপস্থিত, তখন এটাই উপযুক্ত স্থান, উপযুক্ত সময়। তবে একটা ব্যাপারে এখানে খুব সতর্ক থাকতে হবে; বন-জঙ্গলে যেখানেই জলের সুব্যবস্থা সেখানেই পশু-পাখির আনাগোনা বেশী। সবচেয়ে বেশি আনাগোনা বাঘের। তাই আত্মরক্ষার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আগুন জ্বালাতে হবে। একমাত্র আগুনই পারে অসতর্কতার সময় প্রাণ বাঁচাতে।

ইন্দ্র বিকট এক চীৎকার করে বেশ কিছুবার শাঁ-শাঁ করে হাতের লাঠিটি হাওয়ার মাঝে চালিয়ে দ্রুত বাঁশ ঝাড়ের কাছে ছুটে গেল। আগুন জ্বালানোর জন্য ঝটপট একটি শুকনো বাঁশের টুকরো একটি পাথরে আছাড় মেরে আধা-আধি চিড়ে ফেলল। তারপর তার একটি অংশে বেশ কিছু শুকনো বাঁশের আঁশ রেখে টুকরাটি একটি বড় পাথরের উপর আড়াআড়ি জোরে-জোরে ঘষতে লাগল। কয়েক ঘষাতেই শুকনো বাঁশটি ক্ষয়ে গিয়ে তাতে একটি ফুটো হল, আর ক্রম-ঘর্ষণের উত্তাপে শুকনো বাঁশের আঁশে আগুন লেগে ধোঁয়া উঠতে শুরু করল। দ্রুত ফু দিয়ে-দিয়ে সেই আগুন ইন্দ্র বড় করতে লাগল। আগুন একটু বড় হতেই ইন্দ্র সেই আগুনে শুকনো বাঁশের কঞ্চি এবং খটখটে শুকনো বাঁশ ফেলে দিতে লাগল একে-একে। দেখতে-দেখতে আগুন বেশ বড় হয়ে দাউ-দাউ করে জ্বলতে লাগল। আগুন খুব বড় হয়ে জ্বলতেই একটি তৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উৎফুল্ল চোখে ইন্দ্র আকাশের দিকে তাকাল।

আগুন জ্বলে উঠার ফলে আপাতত এই স্থানটি জংলী-জানোয়ার ভয় থেকে অনেকটা মুক্ত। বেশ ফুরফুরে মেজাজে ইন্দ্র বনমোরগটিকে ছুলিয়ে আগুনে সেঁকে নিল। এক ফাঁকে অতি সাবধানে পাশের জঙ্গল থেকে কয়েকটি বনো-আমড়া, আর কয়েকটি বনো-মরিচ জোগাড় করে নিল সে আর পাথরের মধ্যে সেগুলি একসাথে ছেঁচে টক-ঝালের এক রসদার মশলা বানিয়ে ফেলল। আগুনের মধ্যে বড়-বড় দুটি শুকনো বাঁশ গুঁজে দিয়ে আগুনটাকে তেমনই বড় রেখে তার পাশে বসে কলা পাতায় বনমুরগের ছেকা-মাংসে টক-ঝাল মসলা মেখে বেশ তৃপ্তি ভরে খাওয়া শুরু করে দিল ইন্দ্র।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717