Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নয়নবুধী

ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   

নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২৫
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ২৫
ইন্দ্রকে চম্পক প্রায়ই বলত, "তিন কালের লক্ষণ অর্থাৎ ভুত-ভবিষ্যৎ ও বর্তমানের বিভিন্ন ঘটনার লক্ষণ আমাদের চারপাশে সদা লুকিয়ে থাকে। সেই সংকেত যদি আমরা বুঝতে পারি তবে আমাদের অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়..."

চম্পকের সেই কথার মানে কিংবা গুরুত্ব সেদিন ইন্দ্র কিছুই বুঝতে পারে নি। আজ এই গভীর জঙ্গলে পদে-পদে বুঝতে পারছে আর অনুভবও করতে পারছে। ফলে পরিস্থিতি আর পরিবেশ যেন অনেক ঘটনার সংকেত দিয়েই দিচ্ছে, হয়তো এটাই দূরদর্শিতা; সংকেত বুঝে ঘটনা দেখার ক্ষমতা।

খাওয়ার পর আগুনের পাশে একটি বড় পাথরের উপর ইন্দ্র কিছুক্ষণ নিশ্চিন্তে শুয়ে রইল। এই বড় আগুনের তাপ এত বেশী যে, সেটি ইন্দ্রের চারিদিকে উষ্ণতার এক সুরক্ষা বলয় তৈরি করে দিল। ইন্দ্র ঘামছে, কিন্তু সুরক্ষিত। বনের ঝরো হাওয়ায় আগুনের দামাল শিখা লক-লক করে এদিক-ওদিক উড়ছে, সেই হাওয়া ইন্দ্রের ঘর্মাক্ত শরীরটাকে ঠাণ্ডা রাখছে। নিস্তব্ধ নিবিড় বনে এমন অলস-সময় পাওয়া খুব দুষ্কর; তবে সুখকর। একাকী গভীর বনে, এই অলস সময়ে ইন্দ্রের মনে আসতে লাগল কত কথা। নয়নবুধীর কথা, চম্পকের কথা, তুলারাম পড়ার কথা, হারানবাসী আর তকিরায়ের কথা। স্মৃতির কত ঘটনা উড়ে যেতে লাগল মনের উপর দিয়ে। স্মৃতি অদৃশ্য কিন্তু কঠিন; এদের ধরা যায় না, ফিরিয়ে আনা যায় না; এরা মনেতে জন্ম নিয়ে মনেতেই মিলিয়ে যায়, লুকিয়ে থাকে আজীবন মানুষের মনে-মনে। বাহিরের বিশাল জঙ্গলের মতই অন্তরের স্মৃতি-বন। বহির্মুখ থেকে অন্তর্মুখী হয়ে ইন্দ্র হারিয়ে যায় নিজের মনে। মনের মাঝে সে ঘুরে বেড়ায় এ-পথ থেকে ও-পথে। সময় বয়ে যায়, কিন্তু ইন্দ্র যেন বাইরে আসার পথ খুঁজে পায় না, সে বাইরে আসতেও চায় না।

এমন সময় হঠাৎ তার চমক ভাঙ্গল। কিছু একটা শোঁ করে তার উপর দিয়ে উড়ে গেল। ধরমরিয়ে উঠে ইন্দ্র শক্ত হাতে তরোয়ালটা এক ঝটকায় নিয়ে সেদিক পানে ফিরে তাকাল। দেখল, বিশাল কুচকুচে কালো এক শকুন শোঁ-শোঁ করে সেই আগুনের চারিদিকে উড়ছে। কিন্তু কেন? সে তরোয়ালটি শক্ত ভাবে ধরে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করল, শকুনটির উপর তীক্ষ্ণ ভাবে নজর রাখল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাঁশ ঝাড়ের উপরে কয়েকটি চক্কর দিয়ে শকুনটি সেই আগুন থেকে বেশ কিছুটা দূরে মাটিতে নেমে এল। ধীরে-ধীরে সেটি আগুনের দিকে এগিয়ে এসে ইন্দ্রের উচ্ছিষ্ট, বনমোরগটির অবশিষ্ট অংশ খাবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু আগুনের তাপে এগোতে পারছে না, উচ্ছিষ্ট মাংসের নাগালও ঠিক-ঠাক পাচ্ছে না। ইন্দ্র বুঝল, সে একটা ভুল করে ফেলেছে। বনের মাঝে এমন ভাবে কোনও খাবার নিজের কাছাকাছি ফেলে রাখা খুব মারাত্মক। উচ্ছিষ্ট-সব আগুনে ছুঁড়ে দিলেই ভাল হতো। এখন এই শকুনদের লক্ষ্য করে খাবারের লোভে শিয়ালেরা, বাঘেরা এপথ ধরবে। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা মানে মৃত্যুর সামনে বসে থাকা। ইন্দ্র ঝটপট পাহারী ক্ষীণ ঝর্ণাটির জলে নিজের জল-চোঙাটি ভরে অতি দ্রুত হাটতে লাগল। বেশ কিছু দূর এগিয়ে আসার পর একবার সে পিছন ফিরে তাকাল আগুনটির দিকে, দেখল অনেক শকুন সেখানে জড়ো হয়েছে, নিজেদের মাঝে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। ইন্দ্র আর পিছন ফিরে তাকাল না, খুব দ্রুতবেগে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল।

সেই সকাল থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত সে অনেক উঁচু-নিচু পথ বেয়ে এসেছে। কিন্তু এবারের পথটি অনেকটাই সমতল। হাঁটতে বেশ ভালই লাগছে। উঁচু-উঁচু গাছ পথের দু'পাশে, তাদের মাঝে সোজা-সমতল লাল বনো মাটির পথ; খুব মনোরম দৃশ্য। এত রূপ কেন লুকিয়ে থেকে বনের ভিতর! মনে হয়, বন সব কিছুরই লোকাবার জায়গা। ইন্দ্র জল-চোঙা মুখে তুলে স্বল্প জল পান করে একটু মনের আনন্দেই হাঁটতে লাগল। সোজা পথটির শেষে একটি বাঁক ছিল। ইন্দ্র সেই বাঁক নিতেই থতমত খেয়ে আচমকা থেমে গেল, "এ কি!! এ কি দেখা যাচ্ছে!!"

ইন্দ্র চোখের সামনে যা দেখছে তা নিজেই বিশ্বাসই করতে পারছে না, এমনটা কখনো সে কল্পনাও করতে পারে নি। কয়েক হাজার বানর সেই পথের মাঝে বসে আছে। ঘাসের মত পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে বানরের দল। তুলারাম পাড়াতে এক চারনকবি একবার রামায়ণ গেয়েছিল। সেই চারনকবি রামায়ণের বানর-সেনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিল, 'মহাসমুদ্রের মত বিশাল বানর সেনা। সমুদ্রের ঢেউ-এর মত তারা দলে-দলে এগিয়ে আসছিল। ঐ সেনার এ-মাথা দেখা যেত, কিন্তু ও-মাথা দেখা যেত না।' ইন্দ্রের সম্মুখের বানরের দল যেন ঠিক তেমনি। রামায়ণের বানর-সেনাকে ইন্দ্র শুধু অনুমান করেছিল। সেই অনুমানের সাথে সামনের ছবি অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। এ অতি ভয়ানক দৃশ্য। এই বানর-সেনা কোনও কারণে কোনোদিকে ছুটলে, সেদিকে প্রলয় ছাড়া আর কিছু বাকী থাকবে না।

যদিও ইন্দ্র এখনো তাদের কাছে থেকে অনেক-অনেক দূরে তবু নিজেকে এই মহাপ্রলয়ের কাছ থেকে আড়াল করতে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসকে খুব চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করতে লাগল। টু-টা, কোনও একটু শব্দ হলেই নিমিষে সব শেষ হয়ে যাবে। সে ভাবতে লাগল, "এদের কাছ থেকে বাঁচতে গাছে উঠেও কোনও লাভ নেই। গাছের মহারাজ তো এদের ভৃত্য।"

অতি ধীরে-ধীরে একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল ইন্দ্র আর বিনা শব্দে চারিদিকে বাঘামল ছড়িয়ে দিল; কোনও সাপ-খোপ যেন কাছে না আসে। তারপর সামনের দিকে এক-টক তাকিয়ে থাকল। সে ভাবতে লাগল, "সারা বনের বানর এখানে কেন জড়ো হল? নিশ্চয় কোনও ব্যাপার আছে! কিছুক্ষণ আগে ছিল শিয়ালের ভয়, এখন বানরের। শিয়াল তো গাছে উঠতে জানত না, তাই ঐ বিপদ ছিল শুধু মাটিতে; গাছে উঠলে হয়তো রক্ষা পাওয়া যেত। কিন্তু এই বিপদ তো আকাশ-মাটি উভয় স্থানেই সমান। আগদুয়ার-পাছদুয়ার, কোনও দুয়ার দিয়েই তো এই বিপদ থেকে পালিয়ে যাবার জো নেই।"

ইন্দ্র পাথরের মত সেই ঝোপে বসে রইল আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখল বানর দলের উপর। সময় যায়, কিন্তু বানরের দল যায় না। সংখ্যায় আরও বাড়তে থাকে ধীরে-ধীরে। কি ব্যাপার, ঘটনাটা কি?

সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে, কিন্তু সামনের পরিস্থিতি যেই-কি সেই। আজ হয়তো এখানে এমন ভাবেই বসে রাত পার করতে হবে। জঙ্গলে আগত বিপদ সদা স্বাগত। জঙ্গল জঙ্গলের নিয়মে চলে, আর এ নিয়ম প্রতিক্ষণ বদলায়। যার যখন সময়, নিজের ভাবে নিজের মতন করে নিয়ম তৈরি করে; ওটাই তখন নিয়ম হয়ে যায়; এটাই জঙ্গলের নিয়ম। তবে জঙ্গলের মাঝেও সবার ক্ষেত্রে এবং সকল ক্ষেত্রে একটি কথা ঠিক থাকে; শক্তি, সাহস, পরাক্রম, ধৈর্য আর বুদ্ধিই হল জঙ্গলের নিয়মের মেরুদণ্ড এবং মাপকাঠি; বিজয়ীর চিহ্ন। আক্রমণ আর প্রতি-আক্রমণের সকল দরজাই সর্বদা এখানে খোলা। সুযোগ এখানে সবারই থাকে, শুধু নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয় নিজ বলে; বন তো আর পৃথিবী থেকে আলাদা নয়।

ইন্দ্র চুপ করে ঝোপের আড়ালে বসে সময়টাকে ছাড়তে লাগল, নিজে থেমে মহাকালকে আগে বাড়িয়ে দিল; এটাও যুদ্ধের এক রণনীতি। সন্ধ্যা নামতে আরও কিছুটা বাকী। ঠিক এমন সময় হঠাৎ চারিদিক জুড়ে সারা বনের হাজার-হাজার পশু-পাখি এক সাথে চীৎকার করে উঠল, যেন আর্তনাদ শুরু করে দিল। এ যেন মহাপ্রলয়ের মহারোল। মুহূর্তে বনটা কেঁপে উঠল। ইন্দ্রের মনে হল কোনও এক বিশালাকায় দৈত্য বা শক্তি সারা বন কাঁপিয়ে তার দিকে ছুটে আসছে। সেই শক্তির দ্বারা বনের গাছপালা ভাঙ্গার শব্দ সে শুনতে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে। ধর-ধর করে ঘামছে সে, এ কি ঘটতে চলছে!! এত সবের মাঝেও সে তার মাথাটাকে খুব ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করতে লাগল। সে এক প্রকার নিশ্চিত যে, ভয়ানক কিছু একটা খুব শীঘ্রই ঘটতে চলেছে। সেজন্য সে নিজেকে অনেকটা প্রস্তুত করেও রাখল।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717