Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নয়নবুধী

ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি বাংলা উপন্যাস

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   

নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ২৭
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি বাংলা উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ২৭
বনো পথ দিয়ে ইন্দ্র ধীর পায়ে এগিয়ে চলল সেই টিলার দিকে। কিন্তু সে নিজেকে যে কোনও বিপদের জন্য ঠিক প্রস্তুত করে রাখল। কারণ সে জানে দেখতে যত সাদা-মাটা লাগুক, টিলাটি তত সাদা-মাটা নয়। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও-না কোনও ভয়ানক কারণ আছে। 'বনের মাঝে জঙ্গল নাই' এটা কি কখনো হতে পারে!! এটা তো প্রকৃতির বিরুদ্ধ, আর বিরুদ্ধে গেলেই সংঘাত; এবার দেখার বিষয় হল এই যে, এই সংঘাতের পরিমাণটা কত এবং কত বড়। ইন্দ্র চোখ-কান, হাত-পা খোলা রেখেই এগোতে লাগল।

বনের পথটি প্রায় পঞ্চাশ হাত দূরে উঠে গেছে টিলার উপরে ঠিক এমন সময় ইন্দ্র দেখল পথের পাশে একটি বড় বট গাছের তলে একটি শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের পাদদেশে প্রচুর তেল-সিঁদুর লাগানো। এখানে যে নিয়মিত তেল-সিঁদুর দিয়ে পূজা করা হয়, তা দেখলেই বুঝা যায়। কিন্তু এই গভীর জঙ্গলে নিয়মিত পূজা করে কে? ইন্দ্র খুব অবাক হল। শিবলিঙ্গ দেখে ইন্দ্র যতটুকু অবাক হল, তার থেকে বেশি অবাক হল এই দেখে যে কিছু তেল-সিঁদুর সদ্যই লাগানো, বড় জোর দুই-তিন দিন আগের। ইন্দ্র দূর থেকেই হাত জোর করে প্রণাম করল দেবাদিদেব মহাদেব। তারপর পাশের দুটি বনফুল কুড়িয়ে ভক্তিভরে অঞ্জলি প্রদান করল মহাকালকে। ক্ষুদ্রের কাছেই ক্ষুদ্রকে বড় বলে মনে হয়, আর অনন্ত হল মহাকালের অংশ। এই মহাকাল ক্ষুদ্রকে ত্রিকালের সাথে যুক্ত করতে পারেন, আবার অনন্তকে বিচ্ছিন্ন করে অতি ক্ষুদ্র রূপও প্রদান করতে পারেন। নিষ্ঠা ভরে তন-মন এক করে সেই মহাকালের আশীর্বাদ প্রার্থনা করে ইন্দ্র লালটিলাতে তার প্রথম পা রাখল।

অত্যন্ত অদ্ভুত এই টিলা। এই টিলায় কোথাও কোনও গাছপালা নাই। বলা ভাল, গাছপালাগুলিকে বাড়তেই দেওয়া হচ্ছে না। দূর-দূর পর্যন্ত সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বাঘ কিংবা হিংস্র পশুরা কোনও ভাবেই যাতে এখানে লুকিয়ে থাকতে না পারে, কিংবা লুকিয়ে থেকে আক্রমণ করতে না পারে, দূর থেকেই তাদের যাতে দেখা যায় এই কারণেই সমগ্র টিলাটিকে এত পরিষ্কার করে রাখা হচ্ছে। একটি ছোট ঝোপ পর্যন্ত এখানে বাড়তে পারছেন না। কারণ এই টিলাটি যে নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখা হচ্ছে তা দেখলেই বুঝা যায়। কিন্তু এত বড় টিলা তো একজনের দ্বারা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, তবে কি সামনে অনেক লোক আছে? সামনে কি থাকতে পারে ইন্দ্র অনেকটাই অনুমান করতে পারল।

ইন্দ্র আর এগোলো না। ওখানেই দাঁড়িয়ে টিলার চারিদিকে দেখতে লাগল, কোথাও কাউকে দেখা যায় কি না! কারণ যদি কোনও সঙ্কট দেখা দেয় তখন এত বড় পরিষ্কার টিলাতে লুকিয়ে প্রাণ রক্ষা করার মত একটুও জায়গা নেই। তাই পরিস্থিতিটা বাজিয়ে নিতে, এবং বিপরীত পরিস্থিতিতে পুনরায় জঙ্গলে দৌড়ে পালিয়ে এসে প্রাণ রক্ষা করতে টিলার ওখানেই দাঁড়িয়ে সে পথের পাশের কয়েকটি পাথরের টুকরা কুড়িয়ে নিল। তারপর সজোরে টিলার চারপাশে ঢিল ছুড়তে লাগল; যদি এই ঢিলগুলির কারণে কোনও ঘটনা ঘটে যায়, আর কোনও লুকানো রহস্য সামনে চলে আসে। ঢিল ছুড়ার পর ইন্দ্র চারিদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে লাগল যদি কোনও কিছু দেখা যায়, কিংবা কাউকে দেখা যায়। কিন্তু না, ঢিলের ফলে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হল না। কিন্তু ইন্দ্র ওখান থেকে নড়ল না, তেমনই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। কারণ অনেক সময় কোনও কারণে জলে ঢেউ উঠলেও তা দূরে পৌঁছতে একটু সময় লাগে। ইন্দ্র ধৈর্য ধরে সময়টা দিল তেমনি ওখানে স্থির দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ পরেও যখন পরিবর্তন কিছুই ঘটল না, তখন ইন্দ্র আবার চেষ্টা করল যাতে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া যায়। কারণ সে একপ্রকার নিশ্চিত যে এই টিলাতে কোনও-না কোনও মানুষ থাকে। তাই আগে থেকেই নিজেকে নিরাপদ রাখতে এবং নিজের পথটিকে নিরাপদ রাখতে সে বুদ্ধির সাহায্য নিতে লাগল। সে পুনরায় কিছু পাথর কুড়িয়ে দূর -দূর পর্যন্ত ছুঁড়ে মারল, এবং পরিবেশের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা দেখতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে লাগল চারিদিকে। কিন্তু এবারও কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না, কোথাও কাউকে দেখা গেল না। ইন্দ্র আর দেরী না করে অতি দ্রুত, বলতে গেলে প্রায় দৌড়াতে-দৌড়াতেই এই টিলাটি অতিক্রম করতে লাগল। চড়াই দৌড়ে পার করা এত সহজ নয়, তবু যত তাড়াতাড়ি এই টিলাটিকে অতিক্রম করা যায় ততই মঙ্গল। এর একটা বিশেষ কারণও ছিল, তার মন বারে-বারে তাকে খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছিল। মনে বারে-বারে নানা রকম বীভৎস ছবি ভেসে আসছিল। ইন্দ্র খুব দ্রুত এই টিলাটি অতিক্রম করতে চাইছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে টিলাটির ঠিক উপরে উঠে এল। এখানে একটি বিশাল কাঁঠাল গাছ ঢাল-পালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে এই গাছটিকেই দেখেছিল ইন্দ্র। কিন্তু নিচে থেকে যা দেখতে পারেনি, তা এবার চোখের সামনে দেখে ইন্দ্রের বুক কেঁপে উঠল। সে ভয়ে থর-থর করে কাঁপতে লাগল। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে মানুষের মুণ্ডহীন কঙ্কাল, আর গাছটির এক পাশে শক্ত কাঠের তৈরি নরবলির হাড়িকাঠ। হাড়িকাঠের পাশে সযত্নে রাখা আছে লোহার বিশাল এক খড়্গ। কাঁঠাল গাছের ঠিক নিচে একটি বীভৎস পাথরের নারীমূর্তির নীচে নরমুণ্ডের কঙ্কালগুলি সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো, আর তার সামনে সাজানো পূজার সামগ্রী, ফলমূল, ফুল-বেলপাতা ইত্যাদি। হয়তো এখুনি কোনও পূজা শুরু হবে। এটা যে তান্ত্রিকদের একটি বিশাল বড় কর্মস্থল তা বুঝতে আর বাকি রইল না। কিন্তু তান্ত্রিক বা তান্ত্রিকরা কোথায়? কতজন তান্ত্রিক এখানে? সে যতজনই হোক ওরা নিশ্চয়ই আশে পাশেই আছে। হয়তো যজ্ঞের কোনও সামগ্রী নিতে পাশের জঙ্গলে গেছে, কিংবা নরবলির জন্য মানুষ জোগাড় করতে গেছে। এটাই সুযোগ, এই ফাঁকেই ইন্দ্রকে এখান থেকে পালাতে হবে, এই টিলা ছেড়ে বের হতে হবে। কিন্তু এমনিই তো আর ইন্দ্রের মত এক বীরযোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে পারে না, যাবার আগে অবশ্যই তাকে নিজের পরিচয় এখানে রেখে যেতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, ইন্দ্র চটপট সেই লোহার খড়্গটি হাতে তুলে এক কোপে হাড়িকাঠটি দু-টুকরো করে দিল। তারপর দুই খণ্ড দুদিক অনেক দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। ধ্বংস যখন সে শুরুই করে দিয়েছে তখন আর পিছন তাকিয়ে লাভ নেই, ফলাফল ভেবেও লাভ নেই। সে অতি দ্রুত কয়েকটি ফল নিজের খাবারের জন্য হাতে তুলে নিয়ে তার হাতের লাঠিটি দিয়ে সমস্ত পূজা সামগ্রী লণ্ডভণ্ড করে চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে দিল। আর যাই-ই হোক, যারা নরবলি, নরহত্যা দিয়ে নিজের দেবতাকে তুষ্ট করতে চায় তারা দানব ছাড়া কখনো মানুষ হতে পারে না, আর তাদের পূজা পণ্ড করলেও কোনও পাপ নেই। চোখের নিমিষে সেই জায়গাকে ছিন্নভিন্ন আর তছনছ করে দিয়ে ইন্দ্র ঊর্ধ্বশ্বাসে সামনের ঢালু পথ দিয়ে দৌড়াতে লাগল। কারণ সে জানে, হাতে সময় বেশী নাই। ইন্দ্র এটাও বুঝতে পারল, কেন তান্ত্রিক বা তান্ত্রিকরা এই জঙ্গলকে এত পরিষ্কার করে রাখে। এ শুধু জংলী-জানোয়ারদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য নয়, দূর থেকে পথিকদের দেখে এবং ফাঁদ পেতে তাদের ধরতে গাছপালা-হীন এই টিলাটিকে ব্যবহার করা হয় এবং পরে পূজার সময় তাদেরই এখানে নরবলি দেওয়া হয়।

ইন্দ্র খুব দ্রুত সেই টিলা থেকে নেমে এল, এবং জঙ্গলে কিছুদূর প্রবেশ করেই সে তরতর করে একটি খুব উঁচু গাছের মগডালে চড়ে বসল। এখান থেকে সেই টিলার চুড়াটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইন্দ্র পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে সেদিকে সব দেখতে লাগল। কারণ সে জানে, কিছু-না কিছু এখানে একটা হবেই।
Next Part

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717