Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নয়নবুধী

ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি বাংলা উপন্যাস

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   

নয়নবুধী
( এক পাঁজালীর প্রেমিকা )
পর্ব ৩০
ত্রিপুরার ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত একটি বাংলা উপন্যাস
লেখক - হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
( এই উপন্যাসের সকল স্বত্ব সরকারি রেজিস্ট্রিকৃত ভাবে লেখক দ্বারা সংরক্ষিত )


নয়নবুধী: সমস্ত পর্বগুলি: All Parts

◕ নয়নবুধী
পর্ব ৩০
গভীর বন। হাঁসেরা উড়ে ছিল আবার কোথায় চলে গেল? আকাশময় এত হাঁসের বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে পুনরায় অতি সাবধানে পথ চলতে শুরু করল ইন্দ্র।

না জানি কেন আজ এই বনে পথ চলতে বারে-বারে গা ছমছম করছে ইন্দ্রের। এত বন পেরিয়ে এসেছে, আগে তো এমনটা হয় নি। ইন্দ্র যেন তার চারিপাশে কারোর উপস্থিতি টের পাচ্ছে। কেউ যেন তাকে লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখছে, অথচ তাদের দেখা যাচ্ছে না। এই গভীর বনে জংলী জন্তু-জানোয়াররা তো থাকবেই, তাদের উপস্থিতি এখানে অতি স্বাভাবিক এবং রহস্যহীন। কিন্তু যারা এখানে উপস্থিত না থেকেও উপস্থিত, ওরাই রহস্যময় এবং ভয়ানক। অদৃশ্যরা সদাই ভয়ানক। না, এটা ইন্দ্রের কোনও মনের ভুল নয়। প্রথমে ইন্দ্র তেমনটা ভাবলেও ক্রমশ ওদের উপস্থিতি ইন্দ্র যেন ঠিক অনুভব করতে পারছে। বনের ভাষাই যেন সেই কথা বলে দিচ্ছে। কিন্তু যেহেতু এই বনে ইন্দ্র নতুন, ফলে এই নবীন পথিক বনের সব কথা পরিষ্কার বুঝতে পারছে না। তাই বলে থেমেও থাকল না ইন্দ্র। বনের রহস্য ভেদ হোক আর না-হোক, সামনে ঘোর বিপদ থাকুক আর না-ই থাকুক, এই মুহূর্তে তাকে তো এগিয়ে যেতেই হবে রাজধানীর অভিমুখে; রাজধানীতে; নয়নবুধীর কাছে। পড়ে থাক বনের রহস্য বনে; কত রহস্যই তো এমন অচল পড়ে থাকে পৃথিবীর বুকে চিরকাল। কিন্তু জীবন আর মানুষ তো থেমে থাকে না। এরা একে অপরের ছায়া হলেও ভিন্ন পথেই চলে দুজন। জীবন, মানুষের পাশে অদৃশ্যই থাকে, কিন্তু টুক-টুক করে সদা এগিয়ে যায় নিজ লক্ষ্যের দিকে।

বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ কিছু একটা দেখে ইন্দ্র চমকে উঠল। সে দেখল, পথটির এক ধারে, পথটি থেকে সামান্য দূরে ঝোপে ঘেরা জায়গায় মাটি খুঁড়ে বানানো সারি-সারি পরিত্যক্ত চুল্লি। গভীর বনে এমন জায়গায় এত উনুন!! খুবই অবাক হল সে। এত উনুন কেন এখানে? কি প্রয়োজন? কার প্রয়োজন? কারা এসব বানিয়েছে? এই উনুন যে মানুষের তৈরি এবং অনেক মানুষের তৈরি তাতে কোনও সন্দেহ নাই। তবে কি পিছনে ফেলে আসা তান্ত্রিকটির মত বিশাল তান্ত্রিকের দল এখানে উপস্থিত? তাহলে? চারিপাশটা ভাল করে দেখে নিতে ইন্দ্র পথের অপর দিকে তাকাল, আর সেদিকে তাকাতেই সে আরও চমকে উঠল। সে দেখল, এই উনুনগুলির ঠিক উল্টো দিকে এক সুবিশাল ঝিল। সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে প্রায় কুড়ি গজ দূরে সুদূর পর্যন্ত লম্বালম্বি বিস্তৃত এক সুবিশাল ঝিল, যার এদিকটা তো দেখা যায়, কিন্তু ওদিকটা দেখা যাচ্ছে না। লম্বালম্বি বিস্তৃত সেই কুচকুচে কালো জলের ঝিলটির এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে ইন্দ্র। পথের এক পাশে এমন বিশাল এক ঝিল এবং অপর পাশে এতগুলি উনুন, এর কিছু একটি গণিত তো নিশ্চয়ই আছে। তবে ঠিক ঐ মুহূর্তে ইন্দ্র কোনও গণিত মিলাতে পারল না। সামনের এত বড় এক সুন্দর ঝিল দেখে তার মনে পড়ে গেল শৈশবে শুনে আসা রূপকথার জলকুমারীদের গল্প। শৈশবে তার মা তাকে প্রায়ই জলকুমারীদের গল্প শোনাতো। মা বলতো, জলকুমারীরা গভীর বনের সুন্দর ঝিলে বাস করে। তুমি তাদের বন্ধু করে নিলে তারা তোমার বন্ধু, আর তুমি তাদের ভয় পেলে তারা অত্যন্ত ভয়ানক; ভাবনাটা তোমার। মা'র কথা শুনে শৈশবে সে ভাবত জলকুমারীরা নিশ্চয়ই আছে, তবে যৌবনে পা দেবার পর জলকুমারীদের গল্পে তার আর বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু আজ যেন সেই কথায় আবার বিশ্বাস হচ্ছে। রূপকথার মতই বিশাল এই ঝিল দেখে সেই বিশ্বাসটি যেন পুনরায় ফিরে এল বুকে; জলকুমারীরা তাহলে নিশ্চয়ই আছে! মা মিছে কথা বলে নি। তবে কি এতক্ষণ তাদেরই উপস্থিতি সে অনুভব করছিল? মনের-তর্ক, বিচার তা মানতে চাইল না। তাহলে রহস্যটা কি? সিদ্ধান্তে পৌঁছতে নিজের কাছেই নিজে সময় চাইল ইন্দ্র।

অন্তর্দন্ধ অনেক থাকলেও ইন্দ্র বাইরের ঝিলটির সৌন্দর্য একবার উপভোগ করতে চাইল মনে-প্রাণে। মন চাইলেও মনের-তর্ক তাকে বাধা দিচ্ছিল। কারণ এমন নির্জন বনে, বন ঠেলে সেই ঝিলের দিকে এগিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? ঝিলের ধারেই সহজ-শিকারের লোভে এবং তেষ্টা নিবারণের তাগিদে হিংস্র জানোয়াররা অহরহ ঘুরে বেড়ায় অথবা বিশ্রাম করে। তাছাড়া এই বিশাল ঝিলের শান্ত জলে শতে-সহস্র অজগর, কিংবা শত-সহস্র বিষাক্ত সাপের পাশাপাশি দলে-দলে কুমীর থাকাও অসম্ভব নয়। সামনের ছবি যতই সুন্দর হোক, এর পিছনেও একটি ভিন্ন বক্তব্য আছে। আর সেই বক্তব্যটিই আসল। ঝিলের দিকে অনেক বিপদ থাকলেও বীরের দল সদা বিপদ এবং লক্ষ্যের মাঝে সমতা রেখে চলে। বিপদ এড়িয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইন্দ্রও তাই করল। সে ঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতেও ছাড়ল না, আবার বিপদের আশঙ্কায় ঝিলের কাছেও গেল না। তাহলে উপায়? ইন্দ্র তর-তর করে একটি খুব উঁচু গাছে উঠে গেল। গাছের উপর থেকে সমগ্র ঝিলটিকে নিশ্চয়ই দেখা যাবে।

গাছের উপর চড়ে বসে ঝিলের দিকে তাকাতেই ঝিলটির রূপ দেখে ইন্দ্র নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠল, "বাহ, এত সুন্দর, এত সুন্দর...!! চমৎকার!! অপূর্ব!!" এ যেন জলকুমারীদের রূপকথা নয় স্বয়ং জলকুমারী শুয়ে আছে কালো ওড়না গায়ে; গভীর বনে লোকচক্ষুর আড়ালে বিশ্রাম করছে যুগ-যুগ ধরে। সমগ্র প্রকৃতি, শুয়ে থাকা তার প্রিয় সখীকে মনের মতন করে নানান অলঙ্কারে সাজিয়ে দিচ্ছে এক-এক করে। ইন্দ্র অপলক তাকিয়ে রইল সেদিকে। এত উপরে উঠেও ঝিলটির অপর প্রান্তটি দেখা গেল না, এতই সুবিশাল এই ঝিল। ঝিলটির কুচকুচে কালো জলের উপরে আপন মনে ডেকে-ডেকে উড়ে-উড়ে বেড়াচ্ছে শত-শত রঙ-বিরঙি পাখি। পাখিদের সুমিষ্ট কুজন যেন নিজের কাছে জমা রাখছে ঝিল। মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে চারিদিকে; ঢেউ তুলে আপন মনে খেলা করে যাচ্ছে ঝিলের জল। ইন্দ্র দেখল অসংখ্য ধব-ধবে সাদা বনো হাঁস ঝিলের জলে খেলা করছে। তাদের ছায়া তাদের সাথে-সাথে সাঁতার কাটে চলছে দিকে-দিকে। ঠিক এমনি সময় সুদূর আকাশ থেকে আসা কোনও এক কলরব শুনে ইন্দ্র চোখ তুলে আকাশ পানে চাইল। দিগন্ত পানে চেয়ে সে যেন নিজেকেই বিশ্বাসই করতে পারছে না। হাজার -হাজার বনো হাঁস দলে-দলে দিগন্ত রেখা থেকে এই ঝিলের পানে উড়ে-উড়ে আসছে। আকাশ মাঝে এ যেন এক স্বর্গীয় ছবি, অতি দুর্লভ দৃশ্য। ইন্দ্র সেদিক থেকে চোখ সরাতে পারল না। সে দেখল সেই বিশাল হাঁসের দল ধীরে-ধীরে নেমে আসছে ঝিলের জলে। আর তখনই ঘটল আরেকটি ঘটনা। ঝিলের মাঝে থাকা শত-সহস্র হাঁসের দল একসাথে উড়াল দিল আকাশ পানে; ঝাঁকে-ঝাঁকে, ঝাঁকে-ঝাঁকে। এ যেন আরেক দৃশ্য , তাদের এক অপূর্ব খেলা; কেউ নামছে, কেউ উড়ছে। ডানা মেলে আকাশ পানে শত-শত হাঁসের এমন উড়াল দেওয়া, এ যেন কোনও শিল্পীর আঁকা চিত্রপটের দুর্লভ ছবি। কিন্তু ছবিটি যেন জীবন্ত, ধীরে-ধীরে চলছে; যেন এক চলন্ত ছবি। ইন্দ্র শুধু তাকিয়েই রইল, তাকিয়েই রইল। নিবিড় বনের এক দুর্গম ঝিলে এমন রূপ সত্যিই যে থাকতে পারে ইন্দ্র তা কখন ভাবেনি। ভবিষ্যতে আর তা কখনো দেখবে বলেও মনে হল না। বন-ঝিলের মায়াবী রূপের মাঝে ইন্দ্র হারিয়ে গেল; চারিপাশের হুঁশ কিন্তু তার রইল না। এটাই কি জলকুমারীদের চাল? কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা সময়ের সাথে এরই মাঝে বয়ে গেল সেই রূপের ফাঁকে। হঠাৎ খুব কাছ থেকে একের-পর এক বিকট হাতির চিঙ্গার কানে যেতেই চমক ভাঙ্গল ইন্দ্রের। সে দেখতে পেল উত্তর দিক থেকে দানবের মত বিশালকায় কিছু একটা যেন গাছপালা-পাহার-পর্বত সব ভেঙ্গে চুরমার করতে-করতে তার দিকে ছুটে আসছে। সামনের বিশালকায় গাছপালাগুলির জন্য বাকি কিছুই আর দেখা যাচ্ছে না। মুহূর্তে তার চেতনা উড়ে এসে সঠিক জায়গায় স্থান নিল। বিপদের গন্ধ পেয়ে ইন্দ্র ক্ষণিকমাত্র দেরী না করে তরোয়ালটা শক্ত হাতে ধরে অগ্নিগর্ভ চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। কিছু বুঝার আগেই সে দেখল বিশালকায় একটি হাতি পাগলের মত ছুটতে-ছুটতে ঊর্ধ্বশ্বাসে সেই জঙ্গলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে। হাতিটির তখন দিকাদিক জ্ঞান কিছুই নাই। ঠিক বুঝা গেল, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হাতিটি ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে, কোনও কিছুর তোয়াক্কা সে করছে না, তাই সে সামনে যা পাচ্ছে তা-ই গুড়িয়ে দিচ্ছে। নিশ্চয়ই কোনও জন্তু-জানোয়ার বা অন্য কিছু তাকে তাড়া করেছে। হাতিটি ইন্দ্রের গাছের নীচ দিয়ে ছুটতে-ছুটতে ক্ষণিকের মধ্যেই গভীর বনে অদৃশ্য হয়ে গেল। গাছের আগায় বসে ইন্দ্র অবাক চোখে নিচের সব কিছু দেখছে। তার মনে হল যেন একটি অতিকায় দানব মুহূর্তে তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। হাতিটি বেড়িয়ে গেলেও, যে জিনিসটি এত বড় হাতিটিকে তাড়া করেছে সে তো এখনো জঙ্গল থেকে বের হল না। বিপদ তো তাহলে এখনো কাটে নি। ইন্দ্র চুপ করে বসে রইল গাছের আগায়, তার তীক্ষ্ণ চোখ লক্ষ্য রাখতে লাগল চারিদিকের পরিস্থিতিতে। কিছু সময় বিনা উপদ্রবে পেড়িয়ে গেল। তবু ইন্দ্র গাছ থেকে নীচে নামল না। কারণ সে নিশ্চিত; তার অভিজ্ঞতা বলছে নিচে কিছু একটা ঘটনা ঘটছে কিংবা এখনো ঘটছে; এবং সেটি আশেপাশেই ঘটছে। কিন্তু সেটি কি? কিছুই জানা যাচ্ছে না। তাই এই মুহূর্তে গাছের আগায় বসে থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ। ইন্দ্র তা-ই করল। গাছের আগায় বসে পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে লাগল। সময়ের দরজা দিয়ে নিজের সাথে এমন একটি হাতিকে প্রবেশ করতে দেখে ধৈর্য সহকারে হাতিটির সাথে-সাথে সময়কেও ধীরে-ধীরে যেতে দিল ইন্দ্র এবং গাছের আগায় বসেই মাপতে লাগল মাটির পরিস্থিতির চাবি-কাঠি। ঠিক এমন সময়, সে যা ভেবেছিল ঠিক তাই হল। শিকারির দল এসে জুটল সেই জায়গায়।
( পরবর্তী পর্ব আগামী বুধবার প্রকাশিত হবে )

গোয়েন্দা গল্প:
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত


All Bengali Stories    44    (45)    46    47    48    49   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717