Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ডাকবাক্স

Bengali Novel

All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90    91    92   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



ডাকবাক্স ( পর্ব ৫ )

লেখক - রাজকুমার মাহাতো, মহেশতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, কলিকাতা

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬   

◕ প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেল। অনুর মনের অবস্থাটা একমাত্র অদিতিই জানে। সে না পারছে ঠিকমত খেতে, না পারছে পড়াশোনায় মন দিতে।

প্রতিদিনের মত কলেজে এসে আগে ইউনিয়ন রুমে গেল অনু, আর প্রতিদিনের মত আজও অরিন্দমকে না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে এসে ক্লাসরুমে বসল। মেনে নিয়েছে অনু, তার মনকে এভাবেই বোঝাতে হবে যে, ওই মানুষটাকে এত সহজে পাবে না সে।

ক্লাস চালু হল। স্যারের লেকচারের মাঝে হঠাৎ অরিন্দম এসে হাজির। সাথে আরও দু-তিনজন ছেলে-মেয়ে। অনু একেবারে চমকে উঠল। বুকের ভেতরটায় যেন হাজার ওয়াটের একটা বাল্ব দুপ করে জ্বলে উঠলো। অনুর চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে গেল। অরিন্দম স্যারকে প্রশ্ন করলো, "স্যার আমি কিছু বলতে চাই। অনুমতি দিন প্লিজ।"

স্যার অরিন্দমের পিঠটা চাপড়ে বলল, "তোমার কিছু বলাতে আমাদের কলজের কোন শিক্ষক-শিক্ষিকার কোনও দিন কোনও আপত্তি হয়েছে অরি? বল কি বলবে।"

অরিন্দম চেঁচিয়ে বলল, "ক্লাস, আমরা ইউনিয়ন থেকে একটা পথ-সভার আয়োজন করেছি কাল দুপুর তিনটের সময়। যাদের ইচ্ছে তারা ওই সভাতে অংশগ্রহণ করতে পারে। গরিবদের শিক্ষা বিনামূল্যে করার লক্ষ্যে আমাদের এই পথ-সভা। কারোর উপর কোন জোর নেই, তবে সবাই উপস্থিত থাকলে আমরা সাহস পাব।"

অরিন্দম বেড়িয়ে যাওয়ার সময় অনুর দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে যায়, আর সেটা অনুর চোখ এড়ায় না। এদিকে যে সেটা অদিতিও দেখেছে সেই ব্যাপারে অনু অবগত নয়।

"কি রে, চোখের তৃষ্ণা মিটল তাহলে?" অদিতি প্রশ্ন করল অনুকে।

অনু মুখটা নিচু করে বাধ্য মেয়ের মত ক্লাসে মন দিল। ক্লাস শেষে অনু আর অদিতি যায় ইউনিয়ন রুমে। সেখানে তখন অরিন্দম'রা পোস্টার লেখার কাজ করছে। অদিতি অরিন্দমকে বলে, "অরিদা অনু কিছু বলতে চায় তোমাকে।"

অনুর দিকে তাকিয়ে অরিন্দম বলে, "হ্যাঁ অনু বল।"

অনু মুখটা নিচের দিকেই করে থাকে। কিছু বলতে যাবে এমন সময়ে অদিতিই বলে দেয়, "অরিদা, ও ইউনিয়ন জয়েন করতে চায়। আমাদের সাথে কাজ করতে চায়।"

অরিন্দম পোস্টার তৈরির কাজ ছেড়ে অনুকে বলে, "এদিকে আয়।"

অনুর বুকটা এবার ফেটে যাবে মনে হয়। আবার একবার কি তাকে ছোঁবে অরিদা, নাকি কিছু একটা নেগেটিভ বলবে, কিছু ভেবে পায়না অনু। তারা গিয়ে বসে পাশের চেয়ারে। একটা কাঠের চেয়ারের হেলান দেওয়ার দিকটা সামনে করে বসে অরিন্দম, "অনু, সত্যি ইউনিয়ন জয়েন করতে চাস?" প্রশ্ন করে অরিন্দম।

মুখটা নিচু করেই উত্তর দেয় অনু, "হ্যাঁ।"

"কেন?"

"তোমাদের মত খারাপের বিরুদ্ধে লড়তে চাই।" এবার বাঘিনীর মত উত্তর দেয় অনু, মুখটা আর নিচের দিকে নেই তার; সোজাসুজি অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে সে।

"সবে তোর ফার্স্ট ইয়ার। সবে-তো শুরু তোর। শুনেছি তোর পড়াশোনাও খুব ভালো। ইউনিয়নে একবার ঢুকলে আর সেভাবে পড়াশোনা করতে পারবি না। এই রুমটার, এই ইউনিয়ন শব্দটার নেশা খুব খারাপ অনু।"

"না, আমি পড়াশোনা ঠিক করব অরিদা। কিন্তু আমি দেখতে চাই তোমরা কাদের জন্য কাজ করো, কিভাবে করো।"

"আচ্ছা ঠিক আছে। আজ যা, কাল তাহলে দেখা হবে রঙ্গমঞ্চে।"

অনু আর অদিতি উঠে চলে গেল। একবার অনু পিছনে ফিরে তাকাল, দেখল অরিন্দম এখনও তাদের দিকে তাকিয়ে। পরের দিন অনুরা কলেজে এসে ডিরেক্ট গেল ইউনিয়ন রুমে। ক্লাস না করে পোস্টার বানানোর কাজে লেগে পড়ল। মাঝে-মাঝেই অনু অরিন্দমের দিকে আড় চোখে দেখতে থাকল। কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দিল না। বিকেল তিনটের সময় শুরু হল পথ-সভা। কলেজের প্রায় ষাট শতাংশ ছেলেমেয়ে অংশ নিল এই পথ-সভায়। অনু আর অদিতি মেয়েদের লাইনের নেতৃত্বে থাকল। অরিন্দম আর অর্ণব ছেলেদের লাইনের। হাজরা মোড় থেকে রাসবিহারী হয়ে দেশপ্রিয় পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসার কথা ছিল।

কলেজের এই ইউনিয়নের দিনগুলো সত্যিই সবার কাছে অদ্ভুত। আলাদা জগতের সাথে পরিচয় করায় এই রুম। একটা অজানা জেদ চেপে বসে কিছু করার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার। পুলিসের অনুমতি থাকা স্বত্বেও যেকোনো কারণে পুলিশ রাসবিহারী থেকে সভাটিকে শেষ করতে বলে, কিন্তু তাতে কেউই রাজি হয় না। এই নিয়ে পুলিশ আর ছাত্র দলের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারপর শুরু হয় ধ্বস্তাধস্তি। পুলিশ দেশপ্রিয় যাওয়ার রাস্তাটাই বন্ধ করে দেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তার উপরেই বসে পড়ে। পথ-সভা পরিণত হয় পথ-বন্ধের বিক্ষোভে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। অরিন্দম অদিতিকে বলে, "তুই অনুকে নিয়ে চলে যা। আর যারা-যারা যেতে চায় তাদের নিয়ে বেড়িয়ে যা। এখানে থাকাটা তোদের রিস্ক হয়ে যাবে।"

অনু প্রশ্ন করে, "তুমিও কি পালাবে অরিদা? জানি তুমি পালাবে না। তাহলে আমাদেরও বোলো না। এসেছি পালাবার জন্য নয়।"

অনুর দিকে একবার তাকিয়ে নেয় অরিন্দম। শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের উপর পুলিসের লাঠিচার্জ। বেশীরভাগ পিছু হটে পালিয়ে যায়, কিন্তু অনু পালায় না। অরিন্দমের মাথার উপর এসে পড়ে লাঠি। অণুরও চোট লাগে। শেষ পর্যন্ত শেষ হয় খণ্ডযুদ্ধ। হাসপাতাল প্রাথমিক চিকিৎসার পর অণুকে ছেড়ে দেয়। অর্ণব আর অদিতি সমেত প্রায় জনা দশেক ছেলে-মেয়ে একটু চোট পেয়েছিল। কিন্তু সব থেকে বেশি চোট ছিল অরিন্দমের। তাই তাকে হাসপাতালে আরও দু'দিন থাকতে হবে বলে জানান ডাক্তার। পরদিন অনু কলেজে যায় না। ঘর থেকে বেড়িয়ে সোজা হাসপাতালের ছয় নম্বর বেডের কাছে যায়। অরিন্দম অনুকে দেখে উঠে বসে, "আরে তুই! আয়। হাত ঠিক আছে এখন ? কিছুদিন একটু ব্যথা হয়ত থাকবে।"

"তুমি কেমন আছো?" অনু প্রশ্ন করে।

"একদম ঠিক," মুচকি হেসে বলে অরিন্দম।

"হ্যাঁ, সে তো দেখতেই পাচ্ছি। হাতে ব্যান্ডেজ, মাথায় ব্যান্ডেজ অথচ ঠিক আছো তুমি! বেশ! বেশ!"

"এগুলো আমার জীবনের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা অনু। তাই তো তোকে বলছিলাম পড়াশোনা কর। এসবে মাথা লাগালে মাথায়, হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ঘুরতে হবে। এসব করে লাভ নেই বুঝলি?"

"তুমি কি লাভ পাও অরিদা?" অরিন্দমের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল অনু।

অরিন্দম একবার অনুর দিকে তাকিয়ে মুখটা নিচু করে বলল, "সব জিনিসে কি আর লাভ-ক্ষতি থাকে রে পাগলী? আমি শান্তি পাই। কারোর জন্য কিছু করে, আবার কারোর অধিকারের জন্য লড়ে যে শান্তি, তেমন শান্তি আজও কোথাও খুঁজে পেলাম না রে।"

অনু একইভাবে অরিন্দমের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমিও সেই শান্তিটাই পেতে চাই অরিদা।"

অরি আর কিছু বলল না, খালি একবার অনুর চোখের দিকে তাকাল। তার চোখে কারোর জন্য কিছু করার তাগিদটা তখন মশালের মত জ্বলছিল। অনু হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে গেল। অরিন্দম বুঝল, এ বোঝার মেয়ে নয়।
Next Part

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬   


All Bengali Stories    82    83    84    85    86    87    88    (89)     90    91    92   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717