All Bengali Stories
81
82
83
84
85
86
87
88
89
(90)
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
যে দিন গেছে চলে
লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০৬
( লেখিকা পরিচিতি:
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।
লেখিকার বিভিন্ন লেখা দেশ, উনিশ কুড়ি, গৃহশোভা, কথাসাহিত্য, প্রসাদ, নন্দন, উদিতা এবং আরও অনেক লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
)
অন্য পর্বঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ১
সমাদৃতার বিবাহিত জীবন দেখতে-দেখতে সাত বছর পেরিয়ে গেল। সে এই সাত বছর জীবন থেকে নানা ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা দু'হাতে কুড়িয়েছে। বাবা-মা'র আদুরে মেয়ে কখন যে বড় হয়ে গেল চোখের নিমেষে
কেউ তার খোঁজও রাখল না। যত দিন যায় মানুষ বদলাতে থাকে; রুচির সঙ্গে স্বাদ বদলের পরিবর্তন হয়। তার বোধ হয় একটা বলিষ্ঠ কারণও আছে। নতুনের প্রতি মানুষের অদম্য আকর্ষণ চিরন্তন।
সমাদৃতাও সময়ের পরিবর্তিত রূপ দেখেছে। সাত বছর আগের চেনা বাড়িটার বহু রঙ বদল হয়েছে। বাড়িতে তার প্রিয়জন বলতে এখন বাবা-মা-ভাই।
এই তিনজনেরই রুচির অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন হয়েছে। সমাদৃতার ঠাকুমা সমাদৃতার বাবা সুজিতবাবুকে প্রায়ই বলতেন, "সমাদৃতা বিয়ে করব না, বলে তাহলে তোকে ছেড়ে থাকতে হবে।
তোকে ছেড়ে ও থাকতে পারবে না। দেখিস বিয়ে করলেও ঘনঘন চলে আসবে তোদের কাছে।"
সমাদৃতা তার বিয়ের আগে তার মা অজন্তাকে প্রায়ই বলতো, "বিয়ের পরে যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে তোমাদের কাছে আসব তখন আমাকে অনেকদিন করে থাকতে বলবে।" অজন্তা মেয়ের কথা শুনে হাসতেন।
সময়ের খরস্রোতে সমাদৃতারও একদিন বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে গেলে তার আজ থাকতে ইচ্ছা হয় না। প্রয়োজনের তাগিদে দু'একদিন সেখানে যাওয়া আর কি!
বাবার বাড়িতে সকলে মিলে চায়ের আড্ডা, হৈ-হুল্লোড়, উইকেন্ডে সিনেমা-থিয়েটার দেখা - এসব আর নেই। যে যার নিজের মতো থাকতে অভ্যস্ত। এক বাড়িতে সকলের না থাকা, সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা,
একে অপরের জন্য সময়ের অভাব - এগুলো একত্রে মিলে তিনজনের মধ্যে দূরত্বের পথ প্রশস্ত করে দিলো। সমাদৃতা অতিথির মতো দু'চারদিনের জন্য বাবার বাড়ি গেলে এই অনুভূতিই হয়।
সমাদৃতার অধ্যাপক বাবার তিন জায়গায় বাড়ি। তিন জায়গায় সংসার সামলাতে গিয়ে হিমসিম খান অজন্তা। সমাদৃতা বিয়ের আগে, ঠাকুমা এবং বাবার সঙ্গে শ্রীরামপুরের ফ্ল্যাটে থাকত।
শ্রীরামপুরের কলেজেই বাবা শিক্ষকতা করেন। অজন্তা থাকেন লেক টাউনের ফ্ল্যাটে ছেলে নীলকে নিয়ে। নীল পড়াশোনা শেষ করে নেভিতে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সমাদৃতাদের আদি বাড়ি বীরভূমে।
সকলে একে অপরের থেকে আলাদা থাকলেও সংসারে শান্তি ছিল। সপ্তাহ শেষে সকলের সঙ্গে সকলের দেখা হতো। সকলে মিলে পুজো-পার্বণে বীরভূমের বাড়িতে যেত। সে এক আনন্দের দিন ছিল।
সুজিতবাবু চিরকাল সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছেন। সন্তানদের ভালোবেসে তাদের যথেচ্ছ স্বাধীনতা দিয়েছেন। জীবনে অভাব কি, কোনোদিন বুঝতে দেননি। অকৃত্রিম স্নেহের বাঁধনে সুজিতবাবু সন্তানদের বেঁধে রেখেছিলেন।
সেইজন্য সমাদৃতা বাবাকে খুব ভালোবাসত। তার ফ্রেন্ড-ফিলোজপার-গাইড বলতে একমাত্র তার বাবা। তার ভাই নীলের, সুজিতবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, ভয় -এই তিনটিই ছিল।
তবে নীল বড় হবার সঙ্গে-সঙ্গে ভয় কিছুটা দূরীভূত হয়েছিল। একসময় এমনও গেছে রাত্রে সুজিতবাবুর পাশে ভাইবোনের মধ্যে কে ঘুমাবে তাই নিয়ে সমাদৃতা-নীলের বিস্তর ঝগড়া।
সুজিতবাবুর একপাশে সমাদৃতা অপর পাশে নীল ঘুমানোর পর সে বিষয়ের একটা মীমাংসা হয়েছে। সে দিনগুলির সাক্ষী ছিল সমাদৃতার ঠাকুমা এবং অজন্তা।
সে সব দিন আজ হয়তো অতীতের শ্যাওলা ধরা পিচ্ছিল রাস্তায় কত অবহেলা কত অযত্নে পড়ে আছে। সমাদৃতার বিয়ে এবং তার বিয়ের দু'বছর না গড়াতেই ঠাকুমার মৃত্যু সংসারের সব বাঁধনকে আলগা করে দিলো।
সংসারের উপর যেন অদৃষ্টের চরম অভিশাপ নেমে এলো। বিয়ে করে সমাদৃতা শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় ঠাকুমাকে প্রণাম করতে গেলে তিনি বলেছিলেন, "বাড়ির লক্ষ্মী অন্যের ঘরে আজ চলে যাচ্ছে
এ বাড়ি অন্ধকার করে অন্য বাড়ি আলো করতে। সকলকে ভালো রাখিস ও বাড়িতে। এখানে সারাদিন ঘরের এক কোণে নিজের মতো সময় কাটাতিস।
তুই চলে যাবার পর আজ ওই ফাঁকা ঘরের দিকে তাকালে মনখারাপ করবে। আমার ছেলেটা যে কি করে থাকবে কে জানে," কথা বলতে বলতে সেদিন ঠাকুমার নিস্তেজ চোখ দুটো জলে ভরে এসেছিল।
ঠাকুমা হয়তো মৃত্যুর আগে বুঝতে পেরেছিলেন সংসারের চিরচেনা ছবিটির আমূল বদল ঘটে যাবে। সমাদৃতা এতটা ভাবেনি। অজন্তা বরাবর স্বাধীনচেতা। ভালো-মন্দ কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে নিজে যেটা ঠিক মনে করেন
সেটাই করেন। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেই তাঁর ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে। সুজিতবাবু ওনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তাই ভালোবাসার মানুষকে একটু আধটু প্রশ্রয় দিতে তাঁর ভালোই লাগে।
একসময় সুজিতবাবু তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রচুর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। সুজিতবাবু তাঁর বিয়ের পরেই আত্মীয়স্বজনদের ঈর্ষা-হিংসার শিকার হন।
সুজিতবাবু এবং ওনার স্ত্রীকে খাবারের সঙ্গে বিষ দেওয়া হয়। বহু ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে কোনোরকমে সেরে ওঠেন দুজন। অসহায় অবস্থায় পড়ে প্রিয়জনদের গালিগালাজ খেয়ে দিন কাটতে থাকে।
সুজিতবাবু পুরোপুরি সেরে উঠলেও মানসিকভাবে সেরে উঠতে পারলেন না অজন্তা। মায়ের ওই রকম অবস্থায় জন্ম হয় সমাদৃতার। সে বহুবার বাবার মুখে শুনেছে, "তোর মা কি এরকম ছিল!
বিয়ের আগে মাকে যদি তুই দেখতিস, কথা বলতে পারতিস না ভয়ে। তোর মায়ের অসম্ভব গ্রাভিটি ছিল। শ্যামলা গায়ের রঙ হলেও দেখতে সুন্দরী, স্মার্ট, বুদ্ধিমতী। ওর এত গুণ ছিল বলেই আমার বাবারও পছন্দ ছিল তোর মাকে।"
সমাদৃতা মাঝেমধ্যেই কল্পনা করে অজন্তার সেই রূপ।
সমাদৃতা সুজিতবাবুর কাছে যত না শুনেছে পুরনো কথা তার থেকে বেশি জেনেছে বাবার লেখা ডায়েরি পড়ে। বাবার আলমারিতে সযত্নে তুলে রাখা ডায়েরির পাতাগুলো সুজাতার জন্মের স্মৃতি বহন করে বেঁচে আছে।
সমাদৃতা লুকিয়ে সে ডায়েরি বেশ কয়েকবার পড়েছে। ডায়েরি থেকেই সে জেনেছে বাবা-মার ভালোবাসার বহু ঘটনা। সুজিতবাবুর অজন্তাকে বন্যার সময় কোলে করে নদী পার করে দেওয়া,
বিয়ের আগে অজন্তার বাড়ি সুজিতবাবু হঠাৎ গেলে ব্রণের কারণে হলুদ মাখা মুখ নিয়ে লজ্জায় ঘর থেকে না বের হওয়া, অজন্তাকে অন্য কোনও পুরুষ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে সুজিতবাবুর বিরক্ত হওয়া,
কোনও কারণে বিয়ের আগে দু'জনের মধ্যে রাগারাগি হলে মাস-খানেকের জন্য কথা বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। সমাদৃতার মনও এই ভালোবাসাকে ভিতরে-ভিতরে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে।
বাবা-মার ভালোবাসার কথা শুনলে মন ভালো হয়ে যায় সমাদৃতার।
দিনেরও ছন্দপতন ঘটে। সুজিতবাবুর পরিবারের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। শারীরিকভাবে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের থেকে দূরে থাকলেও তাদের মধ্যে মানসিক যোগসূত্র ছিল।
অজন্তার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থাও পরিবারের সকলে মেনে নিয়েছিল। কেটে যাচ্ছিল এক-এক করে নতুন দিন। কিন্তু ঝড় উঠল অন্যদিক থেকে। ছিন্ন করে দিতে চাইল মানসিক যোগসূত্রের গ্রন্থিগুলি।
এই ঝড় উঠল সমাদৃতার বাবার হাত ধরে। সমাদৃতার বিয়ের কয়েক মাস আগে সুজিতবাবু বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তাঁর এক প্রিয় ছাত্রী ইরাকে পুত্রবধূ করবেন বলে কথা দিলেন।
তিনি ভাবলেন যে দু'বছরের বড় হলেও ইরা নীলের একমাত্র যোগ্য পাত্রী এবং তাঁর বাড়ির যোগ্য পুত্রবধূ।
সমাদৃতা বাবার প্রতিশ্রুতির কথা জানতে পারে ইরার ঘনঘন তাদের বাড়ি যাতায়াতের সুবাদে। প্রথমে অজন্তাই সেকথা প্রথম জানান সমাদৃতাকে। পরে সুজিতবাবু সমাদৃতাকে সেকথা জানান।
সমাদৃতার বাবা ইরাকে বাড়ির বাইরে মেয়ে বলে পরিচয় দিতে থাকেন। সেভাবেই বেশ কিছুদিন কাটল। কিন্তু নীল যখন সেকথা জানলো তখন সে আবেগহীন গলায় বলল, "এই বিয়ে আমি করব না।
আমার ওকে পছন্দ নয়। আমি ওর ভাইয়ের মতো। আমার থেকে বড় বয়সের মেয়ে আমি কেন বিয়ে করব?" শুরু হল বাবা-ছেলের মধ্যে দ্বন্দ্ব, একে অন্যের প্রতি ঈর্ষা-কাতরতা।
সুজিতবাবু ইরাকে বিয়েতে নীলের অরাজির কথা জানালেন না।
নীলের উপর অধিকার, ব্যক্তিগত জেদ, কথা রাখার দায়বদ্ধতা- এসব মিলিয়ে সুজিতবাবু ছেলের উপর অনুরোধের পরিবর্তে আদেশের বোঝা চাপিয়ে দিলেন।
এর ফল হলো সম্পূর্ণ উল্টো। রক্তের জেদ, দাম্ভিকতা নীলকেও সুজিতবাবুর কাছে হার মানতে দিলো না। সে অজন্তাকে অভিমান-ক্ষুব্ধ গলায় বলল, "তুমি বাবাকে জবাব দিতে বলো মেয়েটাকে।
আমি কোনোমতেই বিয়ে করব না। বাবা কি করে বিয়ে দেয় দেখি! কারো সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করে একা-একা আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। তুমি আমার মা।
আর কাউকে না জানালেও মেয়েটাকে কথা দেবার আগে তোমাকে একবার জানানো উচিত ছিল।"
অজন্তা বিরক্ত হয়ে বললেন, "বিয়ে করিস না। আমি কাউকে কথা দিইনি। তোর বাবা আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেনি।
তাছাড়া আমি কে, যে আমাকে বলবে! আমি তো পাগল-ছাগল। আমার কথার কি মূল্য!" অজন্তার মুখে একথা শুনে সমাদৃতার খারাপই লাগল। অজন্তার মানসিক অসুস্থতার জন্য বাড়ির কেউ তো ‘পাগল’ তকমা দেয়নি।
তবু কেন যে অজন্তার এসব অভিযোগ, আর কার বিরুদ্ধেই বা অভিযোগ, সমাদৃতা বুঝে উঠতে পারে না।
Next part
অন্য পর্বঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
All Bengali Stories
81
82
83
84
85
86
87
88
89
(90)
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717