রুমকির বাড়ি, স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার একটি নির্বাচিত গল্প, বাংলা গল্প, bangla story, bangla story writing

All Bengali Stories 95 96 97 98 99 100 101 (102) 103 104

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------

◕ রুমকির বাড়ি

লেখিকা - কাজী তৃনা লায়লা (রুমকি), পিতার নাম- কাজী গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেট, ঢাকা

স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , 2021) একটি নির্বাচিত গল্প

16 th June, 2021

## রুমকির বাড়ি
ছোটবেলায় বাড়ি আর বাসার মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক বুঝে উঠতে পারতো না রুমকি। আশে-পাশের মানুষগুলো রুমকিকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো কোনটা বাসা আর কোনটা বাড়ি? রুমকিকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করতো, তোমার বাড়ি কোথায়? মেয়েটা ঠিকানা বললেই সবাই প্রতিত্তোরে বলতো, এটা তো বাড়ি নয়, বাসা। ধীরে-ধীরে মেয়েটা বুঝল, আসলে মানুষ যে আবাসস্থল থাকে তা যদি বাবা, দাদা, শ্বশুর, স্বামী বা নিজের নামে হয় তবেই তা বাড়ি। আর ভাড়া থাকলে তাকে বাসা বলে। ভাড়া বাসাকে বাড়ি বললে যেন কোনও গুনাহ হয়!!

মা খুব অসুস্থ ছিল, বাবা যে কাজ করতো তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করা সম্ভব ছিল না। শেষ-মেষ বাড়িটা বিক্রি করে দিল রুমকির বাবা। শেষ রক্ষা হল না। মা চলে গেলেন। রুমকিও সবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। বাবাকে একা রেখে রুমকি ঢাকা চলে গেল। কিছুদিন পর খবর এল বাবাও মায়ের টানে পর-পাড়ে চলে গিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আবাসিক হল। সবাই বলে হলের পরিবেশ ভালো না। হলের খাবার নাকি খুব খারাপ, মুখে তোলা যায় না। কিন্তু রুমকির মত বাপ-মা মরা এতিম একটি মেয়ের জন্য ঐ নোংরা হলই স্বর্গের মত। রুমকির হলের নাম 'বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল'। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবস্থানটা একটু দূরে হওয়ায় বন্ধুরা মজা করে বলতো ও নাকি সিট মহলে থাকে। হা: হা: হা:। যে-যাই বলুক মেয়েটা বড় ভালোবেসে ফেলেছিল মৈত্রী হলের ৩১৫ নং রুমটাকে। ও মনে করতো এটাই ওর বাড়ি, রুমমেটরাই ওর পরিবার। রুমকির খুব কষ্ট হতো যখন দেখত বড় আপুরা লেখাপড়া শেষ করে হল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওকেও যে একদিন নিজের প্রিয় জায়গাটির সব মায়া ত্যাগ করে জায়গাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে। ও জানতো, ক্ষণস্থায়ী কিছুকে এত ভালোবাসা ঠিক নয়, জেনেও ভালোবাসাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। কখনো রং-তুলি দিয়ে রুমের দেওয়াল রাঙ্গিয়েছে, কখনো বা সাধ্যমত টুকিটাকি জিনিস কিনে নিজের বাড়ির মত সাজিয়েছে। হঠাৎ তাদের ভালোবাসার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো করোনা ভাইরাস। ১৭ই মার্চ ২০২০ পার্শ্ববর্তী বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ৩ সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করল। গুঞ্জন শোনা গেল খুব শীঘ্রই বাংলাদেশেও লকডাউন ঘোষণা করা হবে। দুদিনের মধ্যেই হল ত্যাগ করতে হবে সবাইকে। রুমকি ছিল একদমই অপ্রস্তুত। কোথায় যাবে? কি করবে? কিছুই বুঝতে পারছিল না। বাবা-মা নেই। বাড়ি-ঘর নেই। কোথায় যাবে সে? একে-একে রুমমেটরা সবাই হল ত্যাগ করলো। শেষ-মেষ এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে উঠল অসহায় মেয়েটা। আত্মীয়ের স্ত্রী প্রায়ই ওকে নিজেদের অভাব-অনটনের গল্প শোনাত। সেখানে কিছুদিন থাকার পর বুঝল, আত্মীয়ের স্ত্রী ওর থাকাটা ঠিক পছন্দ করছেন না। কিছুদিন পর রুমকি চলে গেলাম অন্য এক আত্মীয়ের বাড়ি। তারাও ওর অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকাটা ঠিক পছন্দ করলো না। প্রায় দেড় বছর যাবৎ এভাবেই বানরের মত এক ডাল থেকে অন্য ডালে ঘুরে বেড়াতে লাগল মেয়েটা। ও জানে না কবে হল খুলবে; আর কতদিন অন্যের বাড়িতে এভাবেই কাটাতে হবে? মেয়েটি প্রতি রাতে ঘুমাতে গেলে ভাবে, "ইশ! যদি আমার নিজের একটা বাড়ি থাকতো!"

রুমকির চোখে ঘুম নেই; আছে শুধু স্বপ্ন, বাংলাদেশের বুকে নিজের নামে একটি বাড়ি করার স্বপ্ন। রুমকির জন্য ওর এক আত্মীয় পাত্র খুঁজছে। হয়তো খুব শীঘ্রই রুমকির বিয়ে হবে। ও শ্বশুরবাড়ি যাবে। ঘর কন্যা করবে। ছেলে-পুলে হবে। ছেলেরা বড় হয়ে মাকে রেখে আসবে কোন এক বৃদ্ধাশ্রমে। রুমকির তারুণ্যের বাড়ি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। কে জানে হয়তো বৃদ্ধ বয়সের বাড়ি হবে বৃদ্ধাশ্রম!
( সমাপ্ত )

Next Bangla Story

রুমকির বাড়ি

স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প