Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

এখানেই শেষ নয়

স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প

All Bengali Stories    95    96    97    98    99    100    101    102    103    (104)     105    106   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



এখানেই শেষ নয়

লেখিকা - জেবুন্নেছা জেবু, পিতা - এম এ মাজেদ, সতীশ বাবু লেইন, কোতোয়ালী থানা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , 2021) একটি নির্বাচিত গল্প


23 th June, 2021

## এখানেই শেষ নয়

রুমকির মেয়ে রূপার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। হঠাৎ স্ট্রোক করে রুমকির স্বামী মারা যায়। অল্প বয়সে বিধবা রুমকি শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর অবর্তমানে নিগৃহীত, কোনও রকম সম্মান মিলছে না। অথচ তার স্বামীর তিলে-তিলে গড়া সব ধন সম্পদ স্বামীর মা-বাবার নামে করা। শ্বশুর-শাশুড়ির স্পষ্ট কথা, "বাবার বাড়ি চলে যাও। আমার ছোট ছেলের জন্যে বউ আনা লাগবে, বাড়তি খরচ করতে পারবো না। বেশির ভাগ শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর অবর্তমানে এমনই হয়। ছেলেরা বিয়ে করে, বাচ্চা জন্ম দেয়, কিন্তু স্ত্রীর নামে কিছু করে না। স্বামী হারা হওয়া মানেই গৃহহীন হয়ে পড়া, অসহায় হয়ে পড়া। অল্প শিক্ষিত মেয়েদের জন্য এই দৃশ্য এদেশের স্বাভাবিক ব্যাপার। সব স্বামীদের বিয়ের সময় ভাবা উচিত যার দায়িত্ব সে নিলো, তার অবর্তমানে সেই স্ত্রী-সন্তানের কি হবে, তার ব্যবস্থা করা।

একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে রুমকি। রুমকি এক বছর হল বাবার বাড়িতে। এইচ এস সি পরীক্ষার পরেই বিয়েটা হয়েছিলো ছয় বছর আগে, আর পড়া ও হয়নি।

##

বিনু ভাবী একটা বিয়ের প্রস্তাব আনে। লোকটা ধনী, তার দুই ছেলে-মেয়ে। বউ মারা গেছে। সন্তানদের জন্যে বিয়ে করতে চায়। সব শুনে রুমকিও বাধ্য হয় রাজী হতে, কারণ বোঝা হয়ে আর কত দিন! বাবা মারা যাবার পর পেনশনের টাকা দিয়েই সংসার চলে। বাড়িটির কোনও রকমে এক তালা উঠেছে এটা নিয়েই চলা। রুমকির ছোট এক ভাই আছে।

বিয়ের সব ব্যবস্থা বিনু ভাবিই করলো। বিনু রুমকির খালাতো ভাইয়ের বউ। মামুন বিনুর দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই।

তেমন কোন অনুষ্ঠান হয়নি। গাড়ী করে রুমকির নতুন বর ও তার বোন এসে রুমকিকে নিয়ে গেলো। রুমকির মেয়ে নানীর বাড়িতেই রইলো। বিয়ের রাতেই রুমকির নতুন স্বামী 'মামুন সাহেব' বলে দিলো, "আমার দুইটি সন্তানের জন্যে তোমাকে বিয়ে করা।" বুঝা গেলো খুবই গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, খুবই কম কথা বলে। এমন কোনও দিন নেই যেদিন রুমকি তার মেয়ের জন্যে কাঁদে নি, যদিও প্রতিদিনই মেয়ের সাথে কথা হতো।

কিছু দিন কেটে গেলো মামুন সাহেব অনেকটাই স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো। সে কথা কম বললেও সব কিছুর খেয়াল করতো, রুমকির কি লাগবে, কখন কি প্রয়োজন; সবই। রুমকিও দুই ছেলে-মেয়েকে নিজের করে নিলো।

এভাবেই এক বছর কেটে গেল, আগামীকাল বিয়ের এক বছর পূর্ণ হবে। রুমকি কখনো মুখ ফুটে কিছুই চায় নি মামুনের কাছে। সেও খুব কম কথাই বলতো। তারপর দিন খুবই ভোরে বেরিয়ে গেছে মামুন, কিছুই বলল না। শুধু বলল, "আজ বিকেলে এসে চা খাবো এক সাথে আর রাতে এক সাথে বাহিরে খাবো।"

গাড়ী নিয়ে মামুন চলে আসে রুমকির বাবার বাড়ি। শাশুড়িকে বলল, "আজ রুমকিকে একটা সারপ্রাইজ দিবো ...আমি রুপাকে নিয়ে যেতে চাই।"

শাশুড়ি কিছু বলার আগেই মামুন সাহেব বলল, "রুমকি আমার ছেলে-মেয়েকে নিজের ভাবতে পারলো, আমি কেন পারবো না? আমি এতো ছোট মনের নই। রুপাকে আমার মেয়ে ভেবেই নিচ্ছি, আপনারা না করবেন না।"

রূপার সব কাপড়-চোপড় গুছিয়ে দিলো নানী। মামুন সাহেব রুপাকে মার্কেট নিয়ে গেল। রূপার পছন্দ মতো জামা, জুতো, কেক ও ফুল নিয়ে গাড়িতে উঠে মামুন রুপাকে বলল, "তুমি আমারই মেয়ে। এতদিন নিতে আসতে পারি নি। দুঃখিত মা।"

ওরা বিকেলে বাসায় আসতেই রুমকি তো অবাক। মেয়েকে জড়িয়ে ধরতেই মামুন বলল, "রুপাকে আমার দায়িত্বে নিয়ে এলাম চিরদিনের জন্যে। আজ হতে আমাদের তিন ছেলে মেয়ে।"

খুশীতে রুমকির চোখে জল চলে আসে। মামুন লক্ষ্য করলো রুমকির চোখে তার প্রতি সম্মান আর অসম্ভব ভালবাসা।

পৃথিবী তে সুখী হতে খুব বেশী কিছুই লাগে না। একটু বোঝা পড়া আর একটু ছাড় দেয়ার মানসিকতা লাগে। শুধু সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে লোভ, হিংসা বাদ দিয়ে বুঝতে হয়, তখনই প্রিয়জনের চাওয়াটা অতি সহজে বুঝে নেয়া যায়।

রুমকির আর বুঝতে বাকি নেই মামুন কোন ধরনের মানুষ। মামুন ধীরে-ধীরে প্রথম স্ত্রীর স্মৃতি ভুলে রুমকিকে বুঝার চেষ্টা করে।

মামুনের ছেলে টুটুল বয়স বারো আর মেয়ে তিশার বয়স দশ আর রুপার বয়স আট। পরিচয় পর্ব শেষে বিকেলে কেক কাঁটা সব শেষ হলে রাতে সবাই বাহিরে রেস্টুরেন্টে গেল।

##

ড্রয়িং রুম। মামুন তার ছেলে-মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলল, "আজ হতে রুপাও তোমাদের ছোট বোন হয়ে তোমাদের মতো করে, আমার মেয়ে হয়ে এ বাড়িতে থাকবে। আশা করি তোমাদের কোন সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন মতামত থাকলে আমার অফিস রুমে কমেন্টস বক্সে মতামত জমা দিও, সপ্তাহ শেষে আমি পড়ে নিবো।"

অবাক হল রুমকি। মামুনের অফিস রুমে এমন একটা ব্যাপার আছে জানতোই না সে। শুধু জানতো ওখানে লক দেওয়া একটি লেটার বক্স আছে। এবার রুমকির দিকে তাকিয়ে মামুন বলল, "হ্যাঁ, আমি জানি কি ভাবছ তুমি। এ নাও চাবি। লটা খোলে দেখো তোমার ছেলে-মেয়ে তোমার জন্যে কি কি লিখেছে..."

সবাই সবার রুমে চলে গেলে। রুমকি অফিস রুমের বক্স খুলে দেখল ওখানে অনেক গুলো কমেন্টস লিখা চিঠি। টুটুলের লেখা, "আন্টি আমাদের ঠিক মতো সব কিছুই করে দেন, আমাদের ভালবাসেন। কিন্তু উনার মনটা ভীষণ খারাপ থাকে, হয়তো রূপার জন্যে। আব্বু, ভেবে দেখো আমাদের জন্যে উনি দিন-রাত কষ্ট করছে, তবু শুধু কষ্ট পাচ্ছে। উনার জন্য আমরা কিছু করতে চাই ....এই যেমন প্রতি বৃহস্পতিবার তুমি আর আমরা মিলে রান্নার কাজটা করবো।"

তিশা লিখেছে, "রূপাকে আনলে মজাই হতো। আমার একটা সাথী হতো, আমার খেলার জন্য কেউ নেই। আর আন্টির মনটাও ভাল হয়ে যেতো।"

টুটুল ও তিশা অন্যটিতে লিখেছে, "আব্বু, রূপার নিশ্চয় কষ্ট হচ্ছে। ওরও তো মা-বাবা প্রয়োজন! ওকে নিয়ে আসো।"

রুমকি ভাবল, সত্যি টুটুল ও তিশা অনেক লক্ষ্মী ছেলে-মেয়ে। সে তিশার রুমে গিয়ে দেখল রুপা আর তিশা একসাথে ঘুমাচ্ছে। রুমকির আর কোন চিন্তা নেই, নিজেকে অনেক সুখী অনুভব হচ্ছে আজ। মূলত পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা মানুষকে সদাই সুখী করে।"

অনেক ঘুম আসছে রুমকির, কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেই জানে না। ভোরে দেখল মামুন সাহেব নিজের অফিস রুম ছেড়ে ওর পাশে ঘুমিয়ে আছে। কখন লোকটা রুমকির পাশে এসে ঘুমাল, টেরই পায় নি রুমকি। মামুন জেগে দেখল রুমকি কি যেন ভাবছে। গত একটা বছর প্রয়োজন ছাড়া তেমন এই রুমেই আসেনি মামুন। মামুন হুট-হাট করে কিছুই করে না, ধীরে সুস্থিরে করে। কিন্তু রুমকির সব জেনেও বিয়েরা সিদ্ধান্ত হঠাৎই নিয়ে ফেলে। সে ভয়ে ভয়ে ছিল এতো দিন। সে ভাবত, তার ছেলে মেয়েদের মেনে নেবে কিনা রুমকি, রুমকিই বা কেমন হবে? ইত্যাদি।

সকাল বেলা সবাই একসাথে নাস্তা করা, দুপুরে মামুনকে খাবার দিয়ে দেয়া, বিকেলে বাচ্চাদের নিয়ে ছাদে উঠা, বৃহস্পতিবার মামুন ও বাচ্চাদের রান্না করা খাবারের বিচারক হওয়া, প্রতি শুক্রবার বাহিরে ঘুরতে যাওয়া, এভাবেই চলছিল সব। একটাই জীবন; এই জীবনটাকে যতটা মধুর করা যায় ততোই ভালো। তাতে বেশী দিন সুস্থ ভাবে বাঁচা যায়।

মামুন কখনো রুমকির আগের শ্বশুর বাড়ি নিয়ে জানতে চায় নি। একদিন মামুন রুমকির মুখে সব শুনে বলল, "তুমি কোনও চিন্তা করো না। আমি তোমার, রূপার, তিশা ও ছেলের জন্যে আলাদা-আলাদা ব্যবস্থা করবো। যেন পরে সমস্যা না হয়। নিজের সন্তান হলেও ছেলের বউ ভাল না হলে বৃদ্ধ মা-বাবা সম্মান বা অধিকার কোনটাই পায় না শেষ বয়সে। সবার উচিত শেষ বয়সটা কিভাবে কাটাবে তার নিশ্চিত ব্যবস্থা করা। নিজেদের আসল ঠিকানা, কবর ঠিক করে রাখা। কবে মৃত্যু আসে কেউ তো জানে না। তবে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটাতে বন্ধুত্বের খুব প্রয়োজন। রুমকি বলল, "তোমার মতো ভাল মানুষকে পেয়েছি, তাতেই আমি ধন্য। মনের কথা প্রকাশ করতে পারার মতো উদার মানুষ, আর তা মন দিয়ে শোনার মতো মানুষ পেলে কিছুই লাগে না।

মাঝে কেটে গেছে কয়েক বছর। মামুন ভাবছে ব্যাংক-ব্যালেন্স, জায়গা-জমি যা আছে সব সুন্দর ভাবে ভাগ করে রাখা উচিত। উকিলকে কাগজ পত্র বুঝিয়ে দিয়ে ভূমি অফিসে যেতে হবে।

আজ অনেক কাজ ..
কেন যেন মনটাতে একটা ভয় কাজ করছে। ছেলে টুটুলকে ডেকে বলল, "বাবা মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। আমার পর সবার দায়িত্ব তোমার উপর। দায়িত্ব পালনে কখনো অবহেলা করো না। যাও মন দিয়ে পড়াশুনা করো।" রুমকিকে বলল, "শোনো, আমার একটা পারিবারিক উকিল আছে তার মোবাইল নম্বরটা জরুরী, তোমার কাছে রাখো। আমার জমি-জমা সব সে দেখা শুনা করে। দেরী হয়ে যাচ্ছে গেলাম এই বলে বেরিয়ে গেলো মামুন।"

বিকেলে চা-নাস্তা শেষে রুমকি টুটুল, তিশা ও রুপাকে নিয়ে গল্প করতে লাগল। আগের মঙ্গল শোভা যাত্রা কেমন হতো, বৈশাখের মেলা কতো ঘটা করে আয়োজন হতো, মঙ্গল শোভা যাত্রা ছিল দেখার মতো, হরেক রকমের সাজ-সজ্জা, সেকি আনন্দ হতো। আগে বৈশাখী মেলার জন্যে সব বাঙালি সারা বছর ধরেই অপেক্ষায় থাকতো। ছেলে-মেয়ে জোয়ান, বৃদ্ধ সবার প্রিয় বিষয় ছিল বাংলা নববর্ষের মেলা। আর দুইদিন পর বাংলা নববর্ষ, এসব গল্প হচ্ছিল এমনই সময় একটা ফোন আসে। রুমকি রিসিভ করতেই শুনল মামুন সাহেব হাসপাতালে। শুনেই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে যায় সবাই। হাসপাতালে গিয়েই সবাই বাকরুদ্ধ। মামুন ট্রাক আর কারের মুখোমুখি সংঘাতে মাথায় মারাত্মক আঘাতে নিহত হয়েছে। রুমকির আকাশের সুখ তারাটা ঝরে গেলো আবার, হয়তো সবার জীবনে সুন্দর মুহূর্তগুলো কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়ই না। সড়ক দুর্ঘটনায় কেড়ে নিলো ঐ পরিবারের সবার সব স্বপ্ন। সবার কান্নায় যেন হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে আসছিল।
( একটা সড়ক দুর্ঘটনায় কেড়ে নেয় কতো পরিবারের আশা-ভরসা, আশ্রয়, সুখ, স্বপ্ন। তাই সড়ক সাবধানতা অনেক বেশী জরুরী )
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    95    96    97    98    99    100    101    102    103    (104)     105    106   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717