Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

রাজকুমারী

স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প

All Bengali Stories    100    101    102    103    104    105    106    (107)     108    109   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



রাজকুমারী

লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, Masjid Road [ Near chanter bazer], karimganj bazer, karimganj, Assam


27 th June, 2021

## রাজকুমারী
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, Masjid Road [ Near chanter bazer], karimganj bazer, karimganj, Assam

# এক

বর্ষাকালের পড়ন্ত বিকেল। বিশু গোপালগঞ্জের হাট থেকে বেরিয়ে আস্তে-আস্তে হাটতে-হাটতে বিলটার পাশে এসে দাঁড়াল। পাড়ে একটাই নৌকা বাঁধা। তবে মাঝিও নেই আর কোন যাত্রীও নেই। বিশু একবার ভাবছিল নৌকায় গিয়ে বসবে কিন্তু আবার ভাবল একা-একা বসে কি করবে, তাই বিলের পাড়ের বটগাছটার নীচে গিয়ে বসল। টাকাগুলো একটু সাবধানে রাখল কেউ যদি বুঝে তার সঙ্গে টাকা আছে তাহলে হয়ত পিছু নেবে।

একটু পরেই মাঝি বিড়ি টানতে-টানতে এল। বিশু বলল, "যাইবা মাঝি ইশানপুর?"

"হ যামু নৌকায় বস গিয়া। আর কয়েকজন পাইলে ছাইড়া দিমু, তয় ভাড়া চল্লিশ টাকা লাগব।"

"ত্রিশ টাকায় হইব না?"

"না রাইত হইয়া যাইতাছে একটু পরে সন্ধ্যা নামব, বৃষ্টিও নামতে পারে, তাই চল্লিশ টাকার কম হইব না।"

"ঠিক আছে তাই দিমু।"

বিশু নৌকায় গিয়ে বসল। ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে ভাবছে তার জীবনের সূর্য কি এভাবেই ডুবে যাবে, না সকালের সূর্যের মতো সুন্দরভাবে উদয় হবে, বিশু তা বুঝতে পারছে না। তার চোখ পড়ল নয়ন মোদক, সঙ্গে আরও দুজন দ্রুত হেটে নৌকার দিকে আসছে। ওরা নৌকায় উঠে বলল, "তাড়াতাড়ি চল মাঝি।"

"কই যাইবেন?"

"ইশানপুর।"

মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল। বিশুকে দেখে নয়ন বলল, "কই গেছিলি বিশু?"

"গরু হাটে গেছিলাম।"

"আমরাও ওইখানে গেছিলাম। দুইটা দুধের গরু কিনছি। দুইজন লোক গরু লইয়া ভিতরের রাস্তা দিয়া হাইটা যাইতাছে। তুই কেনে গেছিলি?"

"ধবলীরে বেইচা আইলাম গো দাদা!"

"ধবলী মানে তোর দুধের গরুটা! এইটা বেচনের আগে আমারে কইলি না! ভালো দাম দিতাম। কি ভালো দুধ ধবলীর! হঠাৎ এইটা বেইচা দিলি কেন?"

"রাজকুমারীর লাইগা মা মনসার পূজা দিতে হইব। বিলাসপুরের মনসার থানে গেছিলাম তারে লইয়া, হেইখানে জবাব উঠছে তার উপরে নাকি মা মনসার কোপ পড়ছে। তিনদিনের পূজা দিলে হে ভালা হইয়া যাইব। কিন্তু আমার অত টাকা কই, হের লাইগা ধবলীরে বেইচা দিলাম।"

"এখন কেমনে দুধের ব্যবসা করবি?"

"ধবলীর বাচ্চাটা বড় হউক তারপর যা করার করুম। কিন্তু আগে আমার রাজকুমারীরে বাচাই।"

"কিছু মনে করিস না বিশু! মাইয়া একখান তোর যেন বাঁদর। এত বড় হইয়া গেল তবুও বেটা ছেলের মতো উঁচু গাছে চড়ে। আমি আগেই কইছিলাম তার উপরে ভূত, পেত্নী না হয় দেপতার কোপ পড়ব। মিলল তো আমার কথা! এখন ভালা হইয়া গেলে লেখাপড়া বন্ধ করাইয়া তাড়াতাড়ি বিয়া দিয়া দে। তাইলেই ওর মাথা ঠাণ্ডা হইব।"

সন্ধ্যা হয়ে গেছে, মাঝি মশাল জ্বালিয়ে দিয়েছে। নয়নের কথা শুনে বিশুর বুকটা মোচর দিয়ে উঠল তার চোখে জল এসে গেল। নৌকায় বাকীরা চুপচাপ বসে-বসে তাদের কথা শুনছিল। বিশু হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল বলল, "দাদা আমার রাজকুমারী ভালা হইব তো!"

"কান্দিস না বিশু। মা মনসার পূজা হইলে তোর মাইয়া ভালা হইব। খালি মাইয়ার চিন্তায় বইসা থাকিস না পুলাডার লাইগা একটু চিন্তা করিস!"

বিশু সে কথা শুনতে পায়নি। মশালের আলো বিলের জলে পড়েছে সেদিকে তাকিয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে থাকে।

বিশু গোয়ালার বাড়ি বর্ধমানের ইশানপুর গ্রামে। সে গোপালগজ্ঞের হাটে তার সবচেয়ে প্রিয় গরু ধবলীকে বিক্রি করতে গেছিল। ওই হাটে গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগী এসবই বিক্রি হয়। বিশু যাবার সময় ধবলীকে নিয়ে জঙ্গলের পথ দিয়ে হেটে গেছিল। এখন সে একা সঙ্গে টাকা আছে আর একটু পরে রাত হয়ে যাবে। তাই যাবার জন্য অন্য রাস্তা ধরছে। এদিকে বর্ষাকালে গাড়ী চলে না একটা বড় বিল পাড়ি দিয়ে নৌকাতেই যেতে হয়। নয়ন মোদক তার প্রতিবেশী। নয়নের অবস্থা ভালো। তার দুটো মিষ্টির দোকান, চাষের অনেক জমি আছে, কয়েকটা ফলের বাগান ও আছে। ইশানপুরে যে কয়েকটা অবস্থাপন্ন ঘর আছে তার মধ্যে নয়ন মোদক একজন।

ইশানপুর কৃষিনির্ভর গ্রাম এখানকার বেশীর ভাগ লোকই চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করে, কয়েকজনের ব্যবসা আছে। বিশু গোয়ালার দুধের ব্যবসা আছে কিন্তু তা খুব বড় নয়। বিশুর ঠাকুরদা একটা গাভী এনে দুধের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই গাভীর বংশধরেরাই তাদের বাড়ীর দুধের ব্যবসায় সাথ দিয়ে আসছে বছর ধরে। ধবলী সেই গাভীর বংশধর। ধবলী চলে গেছে তার বাচ্চারা রয়েছে। আর সামান্য কিছু জমি আছে, তাতে চাষবাস করেই সংসার চলে বিশুর। সংসারে ছয়জন মানুষ। তার বিবাহিত তিন বোনের যাতায়াত সবসময় আছে। তাদের সামান্য আয়েই সবকিছু চলে।

বিশুর সংসারে তার বাবা বনমালী, মা শশীবালা, স্ত্রী রানী, ছেলে বরুণ আর মেয়ে রাজকুমারী থাকে। তবে বনমালী অসুস্থ, চলাফেরা করতে পারে না; সারাদিন শুয়ে, বসেই কাটিয়ে দেয়। বিশুর আয়েই সংসার চলে।

গরীবের ঘরের মেয়ের নাম রাজকুমারী; কেমন যেন হাস্যকর মনে হয়! কিন্তু বিশু মেয়েদের খুব ভালবাসে। লেখাপড়া না জানলেও বিশু মেয়েদের সম্মান করতে জানে। সে বুঝে মেয়েরা ছাড়া সংসার অচল, তাই মেয়েদেরও ছেলেদের মতো এগিয়ে যাওয়ার দরকার আছে।

তার তিন বোনকেও সে খুব ভালবাসে, বাড়ীতে মা এবং বউকে ও যথেষ্ট সম্মান করে। তাই প্রথমে যখন তার মেয়ে হয়েছিল বিশু আনন্দে বলেছিল, তার ঘরে নাকি রাজকুমারী এসেছে। তার কথা শুনে অনেকেই হেসেছিল। টিপ্পনী কেটে বলেছিল, "তোর বউ রানী, হে তো রাজকুমারীর জন্ম দিবই, পুলা হইলে কি কইতিস, ‘রাজকুমার আইছে!’"

"বিশুর রাজকুমারী হইব কালা পেত্নীর মতো। তা বিশু তুই তার লাইগা রাজমহল, সিংহাসন, সোনা দানা রাখছত তো!"

বিশু হেসে বলেছিল, " ওইসব তোমরা বুঝবা না। শুধু সোনা -দানা পড়লেই কি রাজকুমারী হয়। আরে হগল মাইয়াই তার বাপের কাছে রাজকুমারী, আমারও তাই হইছে!"

কিন্তু বাধ সাধল বিশু যখন গো ধরে বসল তার মেয়ের নাম রাজকুমারী রাখবে। রানী, শশীবালা দুজনেই রেগে গেল। শশীবালা বললেন, "রাজকুমারী আবার কেমন নাম! গরীবের ঘরের মাইয়া অমন নাম রাখলে লোকে তারে নানা কথা কইব।"

"ঠিক কইছেন মা। উনি যেন আর নাম পাইলেন না! আমরা না হয় মাইয়ার নাম লক্ষ্মী, না হয় দুর্গা রাখি," রানী বলল।

"হ বউ, ঠাকুর দেপতার নামই রাখমু আমার নাতনীর।"

"না হইব না। দেপতার নাম রাখলে আমার মেয়ে কি দেপতা হইয়া যাইব? তোমাগোর যত আজগুবি কথা! আমি অমন নাম রাখুম না। আমি মাইয়ার নাম রাজকুমারীই রাখুম।"

"রাজকুমারী রাখলে কি তোর মাইয়া রাজকুমারী হইয়া যাইব বিশু?"

"তারে আমি অন্যরকম রাজকুমারী বানামু। তোমরা যদি আমার কথা না শুন তাইলে আমি ওরে লইয়া বাড়ী থাইকা চইলা যামু।"

"ঠিক আছে, রাখ। তোর যা নাম খুশী রাখ। কিন্তু লোকে হাসব আমি কইলাম।"

"তাতে আমার কিছু যায় আসে না। লোকের কামই হইল অন্যের দোষ খুইজা বাইর করা।"

বিশু মেয়ের নাম রাখল রাজকুমারী। তবে ওকে সবাই কুমারী বলে ডাকে। কেউ-কেউ আবার বিদ্রূপ করে বলে, "কুমারীর যখন বিয়া হইব তখন হে তো আর কুমারী থাকব না। তারে তখন অ-কুমারী কইয়া ডাকতে হইব। খাওয়া জোটে না, আর মাইয়ার নামের কি বাহার!"
Next Part


All Bengali Stories    100    101    102    103    104    105    106    (107)     108    109   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717