Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

কার্ভস

বাংলা কল্পবিজ্ঞান গল্প

All Bengali Stories    100    101    102    103    104    105    106    107    108    (109)     110    111    112   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



কার্ভস ( পর্ব ২)
(কল্পবিজ্ঞান গল্প)
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখক- দিগন্ত পাল, মা- অনামিকা পাল, বাবা- অচিন্ত্য কুমার পাল, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ


04 th July, 2021

অন্য পর্বঃ পর্ব ১     পর্ব ২

## কার্ভস
পর্ব ২
ল্যাবরেটরির একটি কনফারেন্স রুম:
আমি ছাড়াও ঘরে উপস্থিত ছিলেন তিন জন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার, একজন ভাইরোলজিসট, দিগন্তিকা, ওর ম্যানেজার, দিগন্তিকার পার্সোনাল ডক্টর ও কস্টিউম ডিজাইনার। আমি দিগন্তিকাকে ওর উপর যে জেনেটিক সার্জারি করা হবে তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। প্রোজেক্টর-স্ক্রিনে ভেসে ওঠা প্রেসেনটেশনের প্রথম স্লাইডে লেখা – 'প্রোজেক্ট কার্ভস'।

দিগন্তিকার শরীরে জেনেটিকলি সিনথেসাইজড ভাইরাস ইনজেক্ট করা হবে যা ওর শরীরে প্রবেশ করার পর ওর দেহের কোষ বিভাজনের সাহায্য ছাড়াই মাল্টিপ্লাই বা বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। এরপর ভাইরাসগুলোর প্রতিটি দিগন্তিকার এক একটি কোষে প্রবেশ করে ওর কোষের ডি.এন.এ.-তে উপস্থিত নির্দিষ্ট কিছু জিনকে 'জিন মাসকিং' প্রক্রিয়ায় সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেবে ও নিজের জিনগুলো কোষের ডি.এন.এ.-তে যোগ করবে। ফলে দিগন্তিকার জেনেটিক ইনফরমেশনে পরিবর্তন আসবে। এর ফলে দিগন্তিকার শরীরে একরকম নতুন এনজাইম বা উৎসেচক তৈরি হবে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে 'সি-লাইপেজ'। এই উৎসেচক ওর বুক, কোমর, উরু ও নিতম্ব অংশগুলির মধ্যে নির্দিষ্ট এক বা একাধিক অংশকে বেছে নিয়ে সেখানে সঞ্চিত ফ্যাট অণুগুলোকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করবে ও সেই সমস্ত ফ্যাটি অ্যাসিডকে শরীরের ঐ চারটি অংশের মধ্যে যে গুলিতে ফ্যাটের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম সেই অংশগুলোতে ফ্যাট অণু হিসাবে সঞ্চয় করবে। এইভাবে দেহের বুক, কোমর, উরু ও নিতম্ব অংশগুলির মধ্যে ফ্যাটের দ্রুত পূর্ণ-বণ্টনের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যেই দিগন্তিকার দেহ আশানুরূপ শেইপ বা আকৃতি পাবে। একটি নির্দিষ্ট বডি-শেইপ পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রকার ভাইরাস ইনজেক্ট করা হবে। উদাহরণ স্বরূপ, 'টাইপ'- এই ভাইরাস ইনজেক্ট করা হলে এই ভাইরাস যতগুলো জিন যোগ করবে তাদের নিউক্লিওটাইড নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলগুলোর মোট দৈর্ঘ্য যদি "এক্স" হয় এবং ভাইরাসটি মোট যত সংখ্যক জিন নিষ্ক্রিয় করবে তাদের নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলগুলোর মোট দৈর্ঘ্য যদি "ওয়াই" হয়, তবে "এক্স" ও "ওয়াই"-র মধ্যে গাণিতিক সম্পর্ক হবে: এক্স স্কয়ার স্কয়ার মাইনাস ওয়াই স্কয়ার ইকুয়েলস কার্ভ কনস্টেন্ট; যা কিনা 'হাইপারবোলা' বা 'অধিবৃত্ত'-র সমীকরণ। ফলে দিগন্তিকা 'আওয়ারগ্লাস' বডি-শেইপ পাবে। একই রকম ভাবে 'টাইপ-পি' ভাইরাস ব্যবহার করলে গাণিতিক সম্পর্কটা পাওয়া যাবে: এক্স স্কয়ার প্লাস ওয়াই স্কয়ার ইকুয়েলস কার্ভ কনস্টেন্ট; যা 'সার্কল' বা 'বৃত্ত'-র সমীকরণকে নির্দেশ করে, ফল স্বরূপ তা দিগন্তিকাকে নিজের স্বাভাবিক পিয়র্স শেইপ ফিরে পেতে সাহায্য করবে। বক্তব্য শেষে দিগন্তিকা ডার্ক পার্পল লিপস্টিকে রাঙানো ওর পাফি ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে হাততালি দিয়ে উঠল।

#
বর্তমান সময়...

'মিস ডি'-র নিউইয়র্ক কনসার্ট :
মুগ্ধ সকল শ্রোতা মুহূর্তের স্তব্ধতার পর মেতে উঠেছেন গানে-গানে কারণ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে 'মিস ডি'-র পারফরমেন্স। শ্রোতাদের মধ্যে একজন বত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের মহিলা তাঁর পাশেই আরেকজন প্রায় সমবয়সী মহিলার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে বললেন, "ওয়াও, আই ডোন্ট নো হাও শি অ্যাচিভড দ্যাট বাট শি ইস লুকিং ভেরি সেক্সি ইন 'আওয়ারগ্লাস' শেইপ!"

প্রত্যুত্তরে দ্বিতীয় মহিলাটি এবার প্রথম মহিলার কানে বেশ উত্তেজনার সাথে বললেন, "ইটস হার ওয়ার্ল্ড ট্যুর স্পেশাল স্টান্ট! ডিড ইউ রিড দ্য আর্টিকল 'বডি-শেইপ' পাবলিশড ইয়েস্টারডে ইটসেলফ ইন 'গ্লযাম' ম্যাগাজিন? শি ইস গোয়িং টু অ্যাপিয়র ইন 'ফানেল' বডি-শেইপ ইন হার নেক্সট পারফরমেন্স ইন বার্লিন!"

কয়েক মাস পর...
তখন আমি আমার ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমে বসে টেলিভিশনে 'সংগীত বিশ্ব চ্যানেল দেখছিলাম। "বেশ কয়েক বছর 'মিস ডি' খুব একটা চর্চায় ছিলেন না। সেই সময় তাঁর কোনও মিউজিক ভিডিও মুক্তি পায়নি। তাঁর কোনও লাইভ পারফরমেন্সও সেই সময় দেখা যায়নি। শুধু দু-একটা এনডর্সমেনট-এ তাঁকে দেখা গিয়েছিল। এরপর তিনি হঠাৎ বিশ্ব সফর শুরু করায় তাঁর ফ্যানেরা পুনরায় উচ্ছ্বসিত। তাঁর সেই বিশ্ব সফর চলছে এবং প্রত্যেকটা লাইভ পারফরমেন্সে তাঁর অ্যাপিয়ারেনস পৃথিবীর মানুষকে চমকে দিচ্ছে। মিস ডি, যাকে সারা পৃথিবী 'গ্ল্যামার ফ্রিক' নামে জানে, তাঁকে এখন মানুষ 'ফিগার ফ্রিক' নামে ডাকতে শুরু করেছেন। লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সফরের প্রথম শো-তে 'মিস ডি' তাঁর স্বাভাবিক 'পিয়র্স' বডি-শেইপে পারফর্ম করেছেন। কিন্তু ঠিক এক মাস পর নিউইয়র্ক-এ তাঁর দ্বিতীয় লাইভ পারফরমেন্সে তিনি। নিজেকে 'আওয়ারগ্লাস' শেইপে উপস্থাপন করে তাক লাগিয়ে দেন। তারপর তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল 'ফানেল বডি'-শেইপে এবং পারফর্ম করেছিলেন বার্লিন-এ। সম্প্রতি টোকিও-তে কনসার্টের পর পুরো বিশ্ব মুখিয়ে আছে বিশ্ব সফরের শেষ কনসার্টে 'মিস ডি'-র অ্যাপিয়ারেনস দেখতে। সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে 'মিস ডি'-র একটি মন্তব্য থেকে তাঁর এই ধরনের নতুন ফ্যাশন ভাবনার কারণ আঁচ করা যায়। তিনি লিখেছেন, "আই ডোন্ট লাইক টু ডিসাইড অন মাই ড্রেস বেইসড অন মাই বডি শেইপ দ্যাট নেইচার ডিসাইডেড অন; অ্যান্ড ইটস এক্সাইটিং টু ট্রাই নট অনলি ডিফারেন্ট ক্লদস বাট অলসো ডিফারেন্ট কার্ভস।"

কিছু ফ্যাশন সমালোচকের বক্তব্য যে, 'মিস ডি' হয়ে উঠতে পারেন নিউ ফ্যাশন 'ট্রেন্ড সেটার'। আবার অনেক সমালোচক সেই সম্ভাবনার কথাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন যে, তা সম্ভব নয়। কারণ উইমেন ফ্যাশন জগতে চলতি 'বোল্ড' শব্দটার সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছেন 'মিস ডি'। আকর্ষণীয় হওয়ার খাতিরে জেনেটিক সার্জারির পথ বেছে নিতে হলে একজন মেয়ে বা মহিলাকে আক্ষরিক অর্থেই 'বোল্ড' হতে হবে।

হঠাৎ সামনে টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। কল-টা রিসিভ করে ফোনটা কানে দিতেই একটা বেশ উদ্বিগ্ন পুরুষ-কণ্ঠ শোনা গেল, "স্যার, একটা খারাপ খবর আছে। 'লিপোপ্রোটিন ট্র্যাকিং সিস্টেম' থেকে 'মিস ডি'-র বডি-ফ্যাট ডিস্ট্রিবিউশনের যে রিপোর্ট পেলাম তা ভালো কথা বলছে না। একটা খুব খারাপ সাইড এফেক্ট দেখতে পাচ্ছি। প্রত্যেকবার ভাইরাস ইনজেক্ট করার পর 'মিস ডি'-র শরীরের ব্রেস্ট, ওয়েস্ট, থাই আর হিপ-র ফ্যাট শুধু এই চারটে অংশে সীমাবদ্ধ না থেকে কিছু ফ্যাট ভোকাল কর্ডের পেশীতে গিয়ে জমা হচ্ছে। পুরুষ কণ্ঠটা এবার একটু থেমে-থেমে ইতস্তত করে বলল, 'আসলে স্যার ভাইরাসগুলোর ডি.এন.এ. তো প্রধানত আপনিই ডিজাইন করেছিলেন, তাই আপনাকেই প্রথম জানাচ্ছি। এক মাস পরেই 'মিস ডি'-র বিশ্ব সফরের শেষ কনসার্ট, তাই হিসেব মত পরবর্তী ইনজেকশন-র সময় হয়েছে, কিন্তু এখন একটা ইনজেকশন-ও 'মিস ডি'-র কণ্ঠস্বরের পক্ষে বিপজ্জনক হবে!"

আমি বিচলিত হয়ে বললাম, "সত্যি ভাবতে পারছি না যে নিউক্লিওটাইড সিকোয়েনসিং-এ আমার এত বড় ভুল হয়ে গেল! আমি এক্ষুনি 'মিস ডি'-কে জানিয়ে দিচ্ছি যেন উনি আর একটাও ডোজ না নেন।" এই বলে কল-টা রেখে দিলাম এবং সঙ্গে-সঙ্গে আমার ফোনটা আবার বেজে উঠল। এইবার ফোন-র টাচ স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটা – 'দিগন্তিকা!'

আমি টেলিভিশন বন্ধ করে একবার দু'চোখ বুজে মনকে শান্ত করলাম আর তারপর কল-টা রিসিভ করলাম। দিগন্তিকার গলাটা বেশ ধরা মনে হলো। ফোনের ঐ পাশ থেকে দিগন্তিকা বলল, "কি রে ভি.আই.পি. পাস পাঠিয়েছি, পেয়েছিস তো? আমার বিশ্ব সফরের শেষ কনসার্ট কলকাতায়। আসবি কিন্তু।"

আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, "হ্যাঁ, যাব।"

দিগন্তিকা বলল, "সত্যি তুই আমার খুব উপকার করেছিস। তোর জন্যই 'মিস ডি'-র পুনর্জনম হলো। থ্যাঙ্কস আ লট!"

আমি একটা ছোট ঢোক গিলে বললাম, "ওয়েলকাম।" এবার আমি বললাম, "তোর গলাটা ধরেছে না কি?"

দিগন্তিকা বেশ বিরক্তির সাথে উত্তর দিল, "হ্যাঁ রে, বুঝতে পারছি না কিভাবে ঠাণ্ডা লাগছে। গলাটা যেন ক্রমেই বসে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে কনসার্টের জন্য শুধু লো পিচ-র গানগুলোই বেছে নিতে হবে। আমি মৃদু ধমকের সুরে বললাম, ঠাণ্ডা লাগাস না! তোর গলার এত ভালো রেঞ্জ ! তুই শুধু লো পি-র গান গাইবি তা কখনও মানা যায়? যাই হোক, ইনজেকশন-টা মনে করে নিয়ে নিস কিন্তু।"

ফোনের ঐ পাশ থেকে উত্তর এল, "হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।"

দিগন্তিকার সাথে কথা শেষ করার পর আমার দু'চোখ জলে ভরে গেল, মনে-মনে ভাবলাম, "পপ মিউজিকের আকাশে এক নক্ষত্র উজ্জ্বলতম বিভায় জ্বলে উঠে চিরকালের মত নিভে যাবে। আমায় তুই ক্ষমা করিস দিগন্তিকা! তোকে বাঁচিয়ে রাখতে তোর কণ্ঠের সুরকে আমায় মারতে হলো!"

আমার বিবেক তখন আমায় কুড়ে-কুড়ে খাচ্ছে, সেই সময় হঠাৎ ফোনে আমার টিম-র আরেকজনের কাছ থেকে একটি খবর পেয়ে টেনশন-এ আমি দরদর করে ঘামতে লাগলাম। 'লন্ডন ডেইলি' খবরের কাগজে প্রকাশিত খবর, "...আউট-ব্রেক অফ কনটেজিয়াস ক্যানসার ইন লন্ডন.."

অর্থাৎ, লন্ডনে ছোঁয়াচে ক্যানসার রোগের প্রাদুর্ভাব...

'নিউইয়র্ক টাইমস' সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম, "..আ নিউ কাইন্ড অফ ক্যানসার দ্যাট স্প্রেডস বাই ফিজিক্যাল কন্টাক্ট", বাংলায় বললে, "এক নতুন ধরনের ক্যানসার রোগ যা স্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে।"

বার্লিন-র 'বেলিন হয়টা' সংবাদ পত্রের মুখ্য সংবাদ, "...ওয়ান ঠাওজেন্ড মেনশেন শটাব আন আনশটেকেন্ডেম ফেবস' অর্থাৎ "ছোঁয়াচে ক্যানসার রোগে মৃত হাজার।"

টোকিও শহরের 'মাইনিচি নো নিউস্যু' খবরের কাগজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর, "গাং গা দেনসেনসেদেয়ারো কোতো গা হাজিমেতে হাম্যে"। যার অর্থ হলো, "এই প্রথম ক্যানসার ছোঁয়াচে রোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে।"
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    100    101    102    103    104    105    106    107    108    (109)     110    111    112   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717