Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

রংতা দেবীর জোগাড়

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    (111)     112    113   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



রংতা দেবীর জোগাড়
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখক - রাজকুমার মাহাতো, সম্পা মির্জানগর, সরকারপুল, মহেশতলা, কলকাতা


11 th July, 2021

## রংতা দেবীর জোগাড়

পর্ব ১
স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাজল। পড়ুয়াদের ভিড়ে ঢেকে গেল স্কুল প্রাঙ্গণ। কার ক্লাসে আজ কে বেতের কতগুলো ঘা খেয়েছে, কে পুরো ক্লাস কান ধরে বেঞ্চির উপর দাঁড়িয়ে ছিল, কোন স্যার পড়া ধরা-কালীন কতবার হাঁচি করেছে অথবা আগামী কালের পড়া একদিনে কিভাবে হবে সেই নিয়ে গভীর আলোচনা করতে-করতে সবাই বাইরে আসছে। পাবক বড় বট গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে শিবুর অন্য অপেক্ষা করছিল। পাবক সবেমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এগারো ক্লাসে উঠেছে। ফর্সা, টিকালো নাক মাথা ভর্তি কালো চুল, বেশ লম্বা চেহারায় পাবককে একজন সুপুরুষ বলা চলে। যদিও সে এখন কিশোর। বাবা বন-দফতরের উচ্চপদে কর্মরত। দু-মাস আগে বদলি হয়ে এসেছে পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দূরে পারদি গ্রাম। অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জের জঙ্গলের শুরুতেই এই গ্রাম। সমতলের শেষ আর পাহাড়ের শুরু এই মধ্যস্থলের ছোট্ট গ্রাম পারদি। যাতায়াতের জন্য পিচের শক্তপোক্ত রাস্তা থাকলেও যানবাহন একেবারেই নেই বলল, েই চলে। বীরেন বাবুর নিজস্ব গাড়ি থাকায় অসুবিধা হয়ত হত না কিন্তু তিনি বিলাস-বহুল জীবনযাত্রায় একেবারে অভ্যস্ত নয়। আর নিজের একমাত্র ছেলে পাবককেও বিলাসিতা থেকে কয়েকশ ক্রোশ দূরে রেখেই মানুষ করেছেন চৌধুরী দম্পতি। পাবকের মা লীলা দেবী একেবারে সাধারণ ঘরের মেয়ে। তাই বীরেন বাবুর এরূপ অভ্যাস মেনে নিতে তার কোন অসুবিধা হয়নি। পাবক গ্রামের সাধারণ সরকারি স্কুলেই ভর্তি হয়েছে, গ্রামের আর পাঁচটা ছেলেদের মতই সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। এই দুই মাসে সাইকেলটা নিয়ে সে এই পলাশ পাহাড়ের অনেক উপরে পর্যন্ত ঘুরে এসেছে। ক্লান্তি লাগে না তার। এই অপরূপ পাহাড়ের সবুজ গাছপালা গুলো তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। ছোট-ছোট নাম না জানা ঝর্ণা আবিষ্কার করে সে তার মিষ্টি জল পান করে, বোতলে ভরে নিয়ে আসে। বীরেন বাবু আর লীলা দেবীও সানন্দে সেই জল পান করে। কোনও কাজেই কোনদিন পাবককে বাঁধা দেয়নি চৌধুরী দম্পতি। তার যখন যা মন চায় সে তাই করে। এখন তো তার কৈশোর কাল, ছোটবেলাতেও খুব একটা বাধা-বিপত্তি আসেনি তার কোন ইচ্ছেয়। গতবছর কলকাতায় থাকাকালীন পুজোতে বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে এক ঢোক বিয়ার গলায় ঢেলেছিল পাবক। তারপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠাকুর দেখা শিকেয় তুলে বন্ধুরা ক্যাবে করে যখন বাড়িতে পৌঁছাতে এল তখন প্রায় রাত দুটো। লীলা দেবী দরজা খুলেই কয়েকটা ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া মুখ আর নেতিয়ে পরা পাবককে তাদের কোলে দেখে চমকে গিয়েছিল। ভিতরে এসে সোফায় পাবককে শুইয়েই একজন হাত জোড় করে বলে উঠল, "ক্ষমা করে দিন কাকিমা, আসলে আমরা জানতাম না। এক ঢোক বিয়ার খেয়ে ওর এই অবস্থা হবে। খুব লজ্জিত আমরা।"

প্রথমটা মুখটা গম্ভীর করে থাকলেও মিনিট দুই পরেই হাসিটাকে আর চেপে রাখতে পারেননি লীলা দেবী। খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিলেন আর সবাইকে অবাক করে বলেছিলেন, "তোমরা পেরেছ তাহলে ওঁকে টেস্ট করাতে, সেটাই বা কম কি?"

অবাক হয়ে বন্ধুরা তাকিয়ে ছিল পাবকের মায়ের দিকে। তারপর থেকে ওসব নেশার জিনিস আর ছুঁয়েও দেখেনি পাবক।

#
শিবু এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলল, "চল, আজকে একটু পাহাড়ে ঘুরে আসি। তোদের কলকাতায় পলাশ হয়? আমরা এই সময় পলাশে ঢেকে থাকি।"

পাবক মুচকি হেসে হালকা করে সাইকেলে প্যাডেল মারে। সাইকেল গড়াতে শুরু করে। পাহাড়ি রাস্তায় এই তপ্ত রোদের দুপুরে লাল মাটিতে সাইকেল চালিয়ে পাবকের নিজেকে এখানের সেই কঠিন পাহাড়ি মানুষই মনে হয়। শিবুর দিকে তাকিয়ে বলে, "এখন পলাশ আর তোর একার নয়; আমারও।"

শিবু হেসে বলে, " ঠিক ঠিক।"

এখানে আসার পর স্কুলে পাবকের অনেক বন্ধু হয়েছে, যাদের মধ্যে শিবু একটু বেশিই ভালো। এখানের গ্রামের ছেলে। তবে দেখলে মনে হয় না। বেঁটে-খাটো গাঁট্টা-গোট্টা চেহারা, গায়ের রং শ্যাম বর্ণ। টিকালো নাক আর মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুলে শিবুকে শহুরে বলেই মনে হয়। পাবক হেসে মুখটা সামনের দিকে করে জোড়ে প্যাডেল মেরে এগিয়ে গেল। সবুজ পাহাড় ডাকছে তাদের। সারা বিকেলটা চষে বেরাল তারা এই সবুজের জঙ্গলে। শাল-পিয়াল-পলাশের সাথে আরও ভালো করে পরিচয় হল পাবকের।

#
দুধেল কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে আছে। শীত চলে গিয়ে এই সময়টায় এক-দু দিন এখানে দারুণ কুয়াশা থাকে ভোরের দিকে। অনেক বেলা অবধি সেই কুয়াশা উড়ে বেরায় পাহাড়ের এক চূড়া থেকে আর এক চূড়ায়। আজ রবিবার। টিউশন, স্কুল সব ছুটি। একেবারে ভোর বেলা সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে পাবক। কয়েকটা পাহাড়ি রাস্তার মোড় পেরিয়ে, হাওয়ার বিপক্ষে গিয়ে এগিয়ে এসেছে বেশ অনেকটা পথ জংগলের ভিতরে, পাহাড়ের উপরে। এই স্নিগ্ধ ভোরের হালকা হাওয়া, মাঝে-মাঝে কোকিলের ডাক, পাতা ঝরার খসখস আওয়াজ সব মিলে ক্লান্ত হতে দেয়নি তাকে। এগোতে-এগোতে সে একটা জায়গায় গিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। কয়লার আঁচের শেষ ধোঁয়ার মত কুয়াশায় কিছুটা দূরে একটা গ্রাম দেখতে পেল। ঠিক লেখকের গ্রাম বাংলার বর্ণনার সেই স্বপ্নের গাঁয়ের মত। ধীরে-ধীরে এগিয়ে গেল পাবক। লাল মাটির রাস্তার ধারে কিছুটা ছাড়া-ছাড়া বেশ কয়েকটি বাড়ি। মাটির মোটা দেওয়াল গুলোতে সাদা ও লাল রং দিয়ে আঁকা কলকা ডিজাইন। গ্লাস টালির ছাউনি আর উঠানে ঝড়ে পড়া পাতার মোটা প্রলেপ দেখে বুঝতে পারল এই গ্রামে বহু দিন হয়ত কেউ আসেনি। বাড়িগুলোতে গোবরের ন্যাতা দেওয়া হয়নি তাই মাটির দেওয়াল গুলো ফেটে-ফেটে গেছে। দেখতে-দেখতে যেন হারিয়ে গিয়েছিল পাবক, এগিয়ে যাচ্ছিল সামনের দিকে। এই পরিত্যক্ত গ্রামে যদি কোন মানুষের দেখা পায়। সেই আশা নিয়েই এগিয়ে গেল বেশ কয়েক পা। হঠাৎ একজনের গলার স্বরে হুশ ফিরল তার-
"কার ছিলা র্যা তুই?"

পিছন ফিরে পাবক দেখল একজন বৃদ্ধা তাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করেছে। বৃদ্ধার সাদা চুলে জটা পরে গেছে, পরনে একটা সাদা শাড়ি। সেটাও হাঁটুর উপর তোলা। গায়ের রং কালো কুচকুচে, মাথার চুলগুলো একেবারে সাদা। গলায় বেশ মোটা একখানা চকচকে হার। রুপোর কিনা বুঝতে পারে না পাবক। সারা শরীরের চামড়া ঝুলে গেছে। ঝোলা চামড়ার হাতে একখানা লাঠি। সেই লাঠিটাই এখন বৃদ্ধার পা। জীর্ণ শরীরের সম্পূর্ণ ভরটাই সেই লাঠির উপর। পাবক একটু চমকে উঠে, ভয় পেয়েই উত্তর দিল, "আসলে আমি, আমি..."

বুড়ি মুড়ে আসা চোখে তাকিয়ে বলল, " আমার পিঙ্গল লাকি র্যা তুই? ও পিঙ্গল আমারে দেখতি এয়েছিস লাকি বাপ?"

কে পিঙ্গল? আর কেই-বা এই বৃদ্ধা? আর কেনই-বা পাবক এখানে? এখানে যদি সেন্টিমেন্টাল দ্বীপের মত সেই আদিবাসী গোষ্ঠী থাকে। যদি তাকে তীর ছুঁড়ে মেরে ফেলে। অথবা এরা যদি মাওবাদী হয়? যদি তাকে বন্দি করে মুক্তিপণ চায়? এইসব সাত-পাঁচ ভেবে সাইকেলটা ঘুরিয়ে আবার ফিরে আসতে যায় পাবক। কিন্তু বুড়ি সামনে দাঁড়িয়ে আবার বলে ওঠে, "ও পিঙ্গল তুর জন্য চালভাজা রেখিচি। আয়না বাপ, একমুঠো খেয়ে যা। কবে থেকে আসিস নি এই বুড়ির কাছে। সব্বাই আসে তুই আসিস নি। ক্যান র্যা? আর একটু পরেই হয়ত কোন লোক চলে আসবে তখন তো আর আমায় পাবিনি তুই। ও পিঙ্গল, আয় না বাপ আমার..."

পাবক কিছু ভাবার আগেই বুড়ি সামনের দিকে এগিয়ে চলে। পাবকও তাকে অনুসরণ করে তার পিছনে যায়, যদিও ইচ্ছে হয়েছিল একবার সাইকেলটা জোড়ে চালিয়ে পালিয়ে আসুক কিন্তু মন মানে না তার। বুড়িকে কেমন যেন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় হয়ত বুড়ি তারই খোঁজে ছিল এতদিন। গ্রামটার এক কোনে একটা টালির ছাদের মন্দির। তাতে একটা মা-কালির মূর্তি। তবে সেই মূর্তিটা একটু অন্যরকম। মানে যেমন অঞ্চল ভিত্তিক ভাষার তারতম্য দেখা যায়, ঠিক তেমনি অঞ্চল ভিত্তিক মায়ের রূপের তারতম্যও দেখা যায়। মা-কালী তো সেই একটাই, কোথাও তিনি শ্যামা, কোথাও চামুণ্ডা আবার কোথাও দক্ষিণা নামে পূজিত। মূর্তির পাশে রাখা একটা পাথরের খালি বেদি। মন্দিরের বারান্দায় একটা কাঠের চৌকি পাতা। তাতে বেশ মোটা করে বিছানা করে রাখা। পাশে একটা মাটির কলসি তার উপর উপুড় করা একটা কাঁসার গ্লাস। সেই কলশীর পাশে রাখা একটা কাঁসার বাটি চকচকে একটা কাঁসার থালা দিয়ে ঢাকা। আশে-পাশে তাকিয়ে দেখল পাবক। গভীর শাল, পিয়াল আর পলাশ গাছ বেষ্টন করে রেখেছে মন্দিরটাকে। কাছাকাছি হয়ত কোন ঝর্ণাও আছে, স্পষ্ট জলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটা আলাদা নীরবতা ঘিরে আছে চারিদিকে। একটা ছেঁড়া আসনে পাবককে বসতে দিল বুড়ি। কাঁপা-কাঁপা হাতে কাঁসার থালাটা তুলে বাটিটা নিয়ে পাবকের দিকে এগিয়ে বলল, " একজন পুজো দিতে এসে এই চালভাজাটুকু দিয়ে গেচিল। রেখে দেছিলুম তুর জন্য। চিব্বে নে দিকি কড়মড় করে..."

পাবক বাটিটা হাতে নিয়ে একমুঠো চালভাজা হাতে তুলে মুখে দিল। বেশ খেতে, একেবারে কুড়কুড়ে। বুড়ি সেই তক্তার উপর বসে পাবকের দিকে তাকিয়ে বলল, " আবার আসিস কিন্তু পিঙ্গল, আমি তুর অপেক্ষা করব বাপ।"

পাবক নিজের পরিচয় দিল না। মনে-মনে ভাবল, বোধহয় পিঙ্গল বুড়ির কোন আপনজন হবে। বুড়ি যদি তাকে আপন ভেবে ক্ষণিকের সুখ পায়, ক্ষতি কি। এই কয়েক মুহূর্তে বুড়ি যেন পাবকের অনেকটা অংশ দখল করে নিল। কেন, কিভাবে.. পাবকের কাছে তা অজানা।
Next Part


All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    (111)     112    113   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717