Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বৃত্তের কেন্দ্রে

বাংলা প্রেমের গল্প

All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    111    (112)     113   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



বৃত্তের কেন্দ্রে
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - শ্রীপর্ণা দে, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, কলকাতা


14 th July, 2021

## বৃত্তের কেন্দ্রে

পর্ব ১
রাধাকান্তপুরের রামলোচন শর্মাকে চেনে না এমন মুষ্টিমেয় লোক খুব কম পাওয়া যাবে। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সকলের কাছেই তিনি সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর নাম-যশ বহুদূর প্রসারী। তাঁর সে নাম-যশ, অর্থ প্রাচুর্যে নয়, লোক দেখানো একটা সারল্যের হাসিতে। তাঁকে গ্রামের লোকে কিছুটা দেবতা জ্ঞানে ভক্তিও করে। অবশ্য দেবতা রূপে ভক্তি করার বেশ কিছু জোরালো কারণ আছে। এই জোরালো কারণগুলোর মধ্যে দুটি কারণ বিশেষভাবে প্রকটিত হয়েছে। প্রথমত, রামলোচন রাধাকান্তপুরের বিখ্যাত বনেদী ধনী ব্যবসায়ী প্রতাপ দত্তের বাড়ির বাধা পুরোহিত। দ্বিতীয়ত, রামলোচন ভবিষ্যতদ্রষ্টা মহাপুরুষ। তাঁর ভবিষ্যৎ বাণী আজ পর্যন্ত বিফলে যায়নি। প্রথম কারণটি খ্যাতি বাড়াতে সুদূরপ্রসারী না হলেও দ্বিতীয় কারণটির জোরেই গত পাঁচ বছরে তাঁর অর্থভাগ্য এবং নাম-যশ গ্রাম ছাড়িয়ে অন্যত্র প্রসারিত হয়েছে।

রামলোচনের সম্প্রতি অর্থভাগ্য পরিবর্তিত হলেও চেহারায় পূর্বের দৈন্যদশা ঘোচে নি। বয়স প্রায় পঞ্চান্নর ঊর্ধ্বে। শ্যামবর্ণ দীর্ঘকায় শীর্ণ শরীর। মুখটা শরীরের তুলনায় মাংসল এবং ভারিক্কী। সারা মুখে পুরনো বসন্তের কালো দাগ। ধারালো নাক। চোখে শিকারী বাজপাখির মতো দৃষ্টি। কপাল চওড়া। মাথায় স্বল্প চুল। সামনে দাঁতগুলো অকালেই পড়ে গিয়ে ঠোঁটটা পাতলা মনে হয়। আড়ম্বরহীন বেশভূষায় রক্তমাংসের শরীরকে তিনি ঢেকে রাখেন। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত একটা ধোপদস্ত সাদা ধুতি, সাদা হাফ-হাতা স্যান্ডো গেঞ্জি আর গলায় সাদা সুতির উওরীয় এতেই তাঁর চলে যায়। তিনি প্রতিদিন সকালে স্নান সেরে পায়ে খড়ম পড়ে, চওড়া কপালে একটা বড় শ্বেতচন্দনের টিকা এঁকে, গলায় তুলসী কাঠের মালা ঝুলিয়ে এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যখন প্রতাপ দত্তের বাড়ি পুজোয় যান চারপাশের লোকজন একাধিক-বার ‘ঠাকুর ঠাকুর" রব তুলে তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়ে দেয়। দেবতাও যে ভক্তদের প্রতি সন্তুষ্ট এই মনোভাব পোষণ করার জন্য গালভরা ফোকলা হাসি হেসে রামলোচন ধীর গতিতে অগ্রসর হন।

রামলোচন শর্মা-র এই যে বাহ্যিক একটা সাধুপুরুষ ভাব, তা তাঁর খানিকটা অনিচ্ছাকৃত। কেবল পেটের দায়ে এই ভেক ধরতে হয়েছে তাঁকে। অভাব অনটনে সংসারের যা চেহারা ছিল বছর পাঁচেক আগে তা রামলোচনের চেহারার চেয়ে ভালো নয়। লোকমুখে শোনা যায় তাঁর ঠাকুরদা রাধাকান্তপুরের জমিদার বীরেন্দ্রনাথ মল্লিকের নায়েব ছিলেন। জমিদারের নয়নমণি হয়ে তিনি বেশ অর্থকড়িও করেছিলেন। কিন্তু ওই কথায় আছে যে অর্থই অনর্থের মূলে। এক্ষেত্রে অনর্থের মূলে ছিলেন অবশ্য রামলোচনের বাবা সাতকড়ি শর্মা। তিনি গণ্ডমূর্খ, গোঁয়ার, বদমেজাজি স্বভাবের ছিলেন। যৌবন বয়সে তিনি উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে মত্ত ছিলেন। রামলোচনের ঠাকুরদার জমানো অর্থ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তিনি ব্যয় করতেন। আয়-ব্যয়ের হিসাবে সামঞ্জস্য না থাকলে রাজার ভাণ্ডারও ফকির হতে বাধ্য। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাতকড়ি শর্মা অধিক বয়সে বিয়ে করা তাঁর বউ এবং এক ছেলেকে ফকির করে দিয়ে চলে গেলেন। তাঁর বউ অকালে হার্টের অসুখে মারা গিয়ে বেঁচে গেলেন। শুধু বাঁচলেন না সাতকড়ি শর্মা-র একমাত্র ছেলে রামলোচন শর্মা। জীবনের লড়াইটা তাঁকে লড়তে হবে এই ভেবেই তিনি অতীত ভুলে এই সাধুপুরুষ ভাবমূর্তি ধারণ করছেন।

রামলোচনের সংসার বলতে স্ত্রী রমলা এবং চার ছেলে। বাবার পথ অনুসরণ করে তাঁর একটি সন্তান নেবারই ইচ্ছা ছিল এই বাজারে। কিন্তু স্ত্রীর কন্যাসন্তানের সখ মেটাতে গিয়ে একটি পুত্রের পর আরও তিনটি পুত্র হয়। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে অনেক ফারাক রমলা দেরিতে হলেও বোঝেন। ফলে অভাবের সংসারে কন্যাসন্তানের আশার তিনটি পুত্রসন্তান পরপর হওয়ার পর আর কন্যাসন্তান নেবার দুঃসাহসিক সাধ রমলার একেবারেই চলে যায়। রমলার শরীরও ভেঙে পড়ে চার ছেলের দেখভাল করতে গিয়ে। বড় ছেলেটি ছাড়া তিনটি ছেলের উপর রামলোচন তাঁর স্বর্গীয় বাবা সাতকড়ি শর্মা-র অল্পবিস্তর ছায়া দেখতে পান। তিনি পাঁচ বছরে বহু কষ্ট করে কিছু টাকাপয়সা করেছেন। শূন্য থেকে শুরু করে তিনটে ছেলের জন্য শূন্যেই বিলীন হয়ে যাবেন না তো! বড় ছেলেটা হাবাগোবা গোছের। তার জন্য রামলোচনবাবুর দু'পয়সা লাভ না হোক ক্ষতি হবে না, এটা তিনি ভালো করেই জানেন। বাকি তিনটি ছেলে যে কখন কি করবে তার কোনও ভরসা নেই। রামলোচনকে সেই ভয় ক্ষুধার্ত বাঘের মতো তাড়া করে বেড়ায় দিনরাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে মগজের কূট বুদ্ধিতে শাণ দিতে-দিতে সুযোগের অপেক্ষা করেন। তিনি ভাবেন যে তার এই তিন ছেলের জন্য তাকে এমন অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তাঁর উপার্জিত অর্থে হাত না পড়ে।

রামলোচন শর্মা নিজেও জানেন না যে তাঁর এই পৌরোহিত্যের জন্য যৎসামান্য উপঢৌকন আর লোক ঠকানো ভবিষ্যৎ বাণী কতদিন চলবে। কতদিন তিনি গ্রামের লোকদের কাছে দেবতা রূপে পূজিত হবেন। মুমূর্ষু ব্যক্তি সপ্তাহ-খানেকের ভিতর মারা যাবে, খরার কারণে এবছর ভালো ফসল হবে না, বন্যায় নিচু অঞ্চলগুলোর বাড়ি ডুবে যাবে, সদানন্দ মণ্ডলের বউয়ের অধিক বয়সের জন্য আর মন্দির মসজিদ ঘুরলেও বাচ্চা হবে না, রতন মিস্ত্রির বড় মেয়ের প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য বিয়ে সম্ভব নয়, হারু পোদ্দারের ভিটেমাটি বাধা পড়বে জুয়ায় হেরে- এইসব তাঁর এযাবৎ করা ভবিষ্যৎ বাণী। এই ভবিষ্যৎ বাণীগুলোই তাঁর ঘরে গত পাঁচ বছরে লক্ষ্মী এনেছে। যাইহোক, চারপাশের পরিস্থিতি দেখে আন্দাজে ছুঁড়া ঢিলগুলো ঠিক জায়গায় আঘাত করেছে। তিনি প্রায়ই ভাবেন যে গ্রামের লোককে এভাবে কতদিন বোকা বানানো যাবে!

রামলোচন শর্মা ভালোভাবে জানেন যে প্রতাপ দত্তর বাড়ি পুজো করে এতগুলো প্রাণীর মুখে খাবার তুলে সঞ্চয় দুরূহ ব্যাপার। প্রতাপ দত্ত ধনী হলেও টাকার কঞ্জুস। সহজে তার হাত থেকে কিছু খসে না। রামলোচন ওনার বাড়ি পুজো করেন শুধুমাত্র নিজের দর বাড়ানোর জন্য। ধনী লোক হিসাবে গ্রামে প্রতাপবাবুর প্রভাব যথেষ্ট। তাঁর বাড়ির পুরোহিত যদি সাধারণ মানুষের বাড়ি পুজো করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পৌরোহিত্যের জন্য রামলোচন বেশি দক্ষিণা দাবি করতে পারেন। তাঁর এই দাবি সাধারণ মানুষও নির্দ্বিধায় মেনে নেয়। তাই প্রতাপ দত্তর বাড়ির পুজোর কাজটা তিনি নিজের স্বার্থেই ধরে রেখেছেন। প্রতাপ দত্তর বাবা বেঁচে থাকতে রামলোচন কাজে এতখানি অসন্তুষ্ট ছিলেন না। ওনার বাবা ব্রাহ্মণের ঘরে এত অভাব দেখেই তাঁকে বাড়ির পুজোর কাজে নিয়োগ করেন। তাঁর অভাব অভিযোগ যতটা পারতেন মেটাতেন প্রতাপ দত্তর বাবা। কিন্তু প্রতাপ দত্তর বাবা বছর দশ আগে মারা যাবার পর রামলোচনের সংসারের হাল খারাপ হয়। ফলে পেটের দায়ে তাঁকে ছলনার আশ্রয় নিয়ে ভবিষ্যতদ্রষ্টা মহাপুরুষ হতেই হয়।

তবে আজ একটা রামলোচন মোক্ষম সুযোগ পেয়েছেন। সকাল থেকে তিনি অনেক মাথাও খাটিয়েছেন। তিনি গিন্নী রমলাকে বলেছেন, "আমার চিন্তা ভাবনার সময়ে সাংসারিক সমস্যা বলে বিব্রত করবে না। আজ বিকালে প্রতাপবাবুর অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী মালাবতী আমাকে কি একটা গুরুত্বপূর্ণ দরকারে ডেকেছেন। তোমাদের মুখে অন্ন জোটাতে কত মাথা খাটাতে হয় জানো!"

রমলা সাদাসিধে মেয়েমানুষ। অত জটিল ভাবনা চিন্তা তার মাথায় আসে না, মাথায় ঢোকেও না। তাই তিনি সারাদিন সংসারে অভাব অভিযোগ, ছেলেদের আচার-আচরণ কিছুই রামলোচনের কানে তুলতে সাহস করেন নি।

সারাদিন রামলোচনের চিন্তার বিভিন্ন বিষয় ছিল। তাঁর মধ্যে প্রধান চিন্তাই ছিল প্রতাপবাবুর স্ত্রী মালাবতীকে কেন্দ্র করে। তিনি কেন তাঁকে আসতে বললেন! দীর্ঘদিন তিনি দত্ত বাড়িতে পুজো করতে যান কখনো মালাবতী তাঁর সামনে আসেন নি, কথা বলা তো বহু দূরের ব্যাপার। অবশ্য মালাবতী বিয়ে হয়ে এসেছে এগারো বছর হল। তবে এগারো বছর সময়টাও তো কম নয়! এতগুলো বছরে হয়তো তিনি রামলোচনের সামনে আসার প্রয়োজন বোধ করেন নি। কিন্তু রামলোচনকে আজ তাঁর কি প্রয়োজন! মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে রামলোচন ওই চিন্তাতেই মগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে গেলেন।

বিকালের নির্দিষ্ট সময়ে রামলোচন শর্মা দত্ত বাড়িতে মালাবতীর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পথে বেরিয়ে গেলেন। তাঁর মেজাজ আজ ফুরফুরে। তাঁর লোভী মন অর্থকড়ি আমদানির ভবিষ্যৎবাণী করছে। পথে যেতে-যেতে তাঁর বেশ কয়েকজন ভক্ত দেবতার উদ্দেশ্যে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সারলেন। ভক্তরা দেবতাকে তুষ্ট করতে উপঢৌকন স্বরূপ চাল, কিছু ফলমূল দিলো। আমদানি নেহাত মন্দ হল না রামলোচনের।

দত্ত বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র রামলোচনকে দেখে বাড়ির চাকর বিজু বলল, "মা আপনার জন্য উপরে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন। ঠাকুরমশাই, তাড়াতাড়ি যান," ঠাকুরমশাইয়ের উদ্দেশ্যে সে দু'তলার সিঁড়ির দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো। বিজুর দেখানো পথে রামলোচন দু'তলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেন। উপরে উঠে তিনি দেখলেন যে মালাবতী সোফায় বসে তারই অপেক্ষা করছেন।
Next Part


All Bengali Stories    104    105    106    107    108    109    110    111    (112)     113   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717