Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

আশা থাকলেও আলো পাওয়া যায় না - পর্ব ২

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    111    112    113    114    (115)     116    117    118   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



আশা থাকলেও আলো পাওয়া যায় না - পর্ব ২
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা- অনুশ্রী মাইতি, পিতা- হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর


Previous Part

## আশা থাকলেও আলো পাওয়া যায় না
পর্ব ২
একমাস পর সুব্রত ঘরে বসে গল্পের ব‌ই পড়ছিল তখন তার দিদি তাকে একটা নতুন গল্পের বই এনে বলে, "ভাই এটা পড়ে দেখবি কেমন লাগে," তারপর ছ'শো টাকা দিয়ে বলে, "ভাই একটা টিউশনে দিয়ে দিস। তোর একটা টিউশনের টাকা আমি দিয়ে দেব, মা'কে বলার দরকার নেই।"

সুব্রত বলে, "এই দিদি তুই তোর পড়ানোর টাকা আমায় কেন দিচ্ছিস? আর একটা কথা, তোর রেজাল্টটা আজ হাতে পেলাম, তোর এই গল্প-ব‌ইটা থেকে তোর তো রেজাল্ট ভালো হয়েছে। তুই পড়াশুনা করলি না কেন?"

দিদি বলে, "বাবু তোমার মতো সকলে পড়াশুনাকে ভালোবাসে না। একটা বয়সের পর সকলে পড়াশুনা করতে চায় না, তাই আমিও চাই না, আমি চাই আমার ভাই যেন খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারে, খুব ভালো থাকে।"

এরপর দিন যায়, সুব্রতর রেজাল্ট বের হয়। দেখা যায় সে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। তার পড়াশুনার প্রতি ঝুঁকি আরও বাড়ে, এদিকে তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তার মা ও দিদি হাতের কাজ শুরু করে, যাতে সময়ে-সময়ে টিউশনের ফি মেটাতে পারে। এরপর কেটে যায় আরও তিন চার মাস। একদিন তার দিদি ঘরে ঢুকে দেখে সুব্রত চুপ করে বসে আছে। দিদি প্রশ্ন করে, "ভাই, তোর কী হয়েছে? এভাবে বসে আছিস কেন?"

সুব্রত দিদির দিকে তাকিয়ে বলে, "দিদি এ মাসে কী টিউশনের টাকা দিতে দেরি হবে? আসলে জানিস তো, প্রত্যেকে নয়, কিন্তু দু'জন টিচার আছেন যারা মাস শেষ হয়ে গেলে ডিউর কথা বলে। আমার দু'মাসের টাকা একটা বিষয়ের বাকি রয়েছে। উনি আমাকে বলেছেন, তা শোনার পর আমার কেমন লাগছে। একটা টপিকে ডাউট থাকা শর্তেও sir-কে প্রশ্ন করতে পারলাম না।"

দিদি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "ভাই ঐ সব একটু মেনে নিতে হয় ছাত্র জীবনে। ঐ সব নিয়ে ভাবিস না বাবু। আমি দেখেছি, তোর-না ক্লাস টেস্ট আছে, তা নিয়ে ভাব..."

সেদিন সুব্রত প্রত্যেক দিনের মতো রাত জেগে পড়াশুনা করছিল তারপর ঘুম না আসায় সে রুমের বাইরে এসে পায়চারি করছিল হঠাৎ করে তার চোখে পড়ে রান্না ঘরের আলোটা। তার কী মনে হল, সে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে তার মা ও দিদি হাতের কাজ করছে, কাপড়ের উপর কি-সব কাজ করছে। সে ধীর গতিতে এগিয়ে যায়, শোনে তার দিদি তার মাকে বলছে, "মা আজ রাতেই কাপড়ে পাথর বসানোর কাজ শেষ করতে হবে, কাল আমি কাজটা দিয়ে টাকা নিয়ে আসব। ভাইয়ের টিউশনের টাকা দিয়ে দিতে হবে ভাই এসব নিয়ে খুব চিন্তা করছে। আমি ভাবছি কাল গিয়ে আর দুটো শাড়ি নিয়ে আসব।"

মা বলে, "মা, এ কাজে কষ্ট বেশি। এর থেকে রিনুদের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে যাব ভাবছি। দু'দিন কাজ করলে ওর টিউশনের টাকাটা উঠে যাবে। তোর বাপকে তো টাকার কথা বলা যাবে না। ক'দিন রোজগার প্রায় নেই, কী করে যে সংসার টানবে কে জানে! একদিন তো দুধ ও ডিম বিকোনোর টাকায় আমি সংসার টানছি, এখন মনে হচ্ছে তোর বাপের কথা শুনলেই ভালো হতো। বাবুকে এইসব নিয়ে পড়াশুনা করতে মানা করলেই ভাল হতো। যাই হোক, মা-রে রাত যে অনেক হয়েছে, সকালে বাচ্চাগুলোকে পড়াবি, সারাদিন তো শাড়িটা নিয়ে পড়ে আছিস, আয় চলে আয়, আমি আর এভাবে বসে থাকতে পারছি না।"

এসব দেখে ও শুনে সুব্রতর সব ভাবনাগুলো উলট-পালট হয়ে যায়। সে তার মা'কে বেরিয়ে আসতে দেখে নিজের ঘরে চলে যায়। সে এটা বোঝার চেষ্টা করে সমস্ত কিছু তার স্বপ্ন না বাস্তব। তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ে। ও চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে মা ও দিদির পরিশ্রম ও কথাগুলো। সে উঠে বসে, তৃষ্ণা অনুভব করে, কিন্তু জলের বোতলটা হাতে নিয়ে বসে থাকে, জল আর খেতে পারে না। সে ভাবতে শুরু করে, "বাবা চাইছিল না আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করি, কারণ বাবার রোজগার নেই। দিদি আর মা এত কষ্ট করছে আমার জন্য। কোথায়, দিদি তো আমায় কিছু বলল না! আচ্ছা, আমি পারবো রোজগার করতে? বাবার রোজগার নেই, মা, দিদি কতদিন এভাবে কষ্ট করবে?" এই ভাবতে-ভাবতে কখন যেন তার দুটো চোখে ঘুম চলে আসে। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে টিউশনে বেড়িয়ে যায়। পড়ার শেষে তার এক বন্ধুকে বলে, "চল না sir-কে টাকাটা একটু কম নিতে বলি..."

"বলে তেমন কিছু লাভ হবে না। তার থেকে বাড়ি চল।"

এটা শোনার পর সুব্রতর সাহস পুরোপুরি দমে যায়। তবুও সে গিয়ে বলে টাকাটা একটু কম করুন, কিন্তু sir অদ্ভুত মুখ করে বলে, "যথেষ্ট কম নিচ্ছি, আর কত কম নেব!!" সুব্রতর হাত দুটো কেঁপে উঠে কারণ সে এর আগে কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পারেনি। সে চুপচাপ চলে আসে। বাইরে বেরিয়ে এলে তার বন্ধুরা বলে, "তুই যদি এই অনুরোধটা অন্য কোন ‌sir-দের কাছে করতিস তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও কাজের দিত, কিন্তু উনি তো মুখের ওপর বলবেন,' টাকা নেই তো এই বিষয় নিয়ে পড়ছ কেন?' উনি হয়তো পড়ান ভালো, কিন্তু উনি ও ওনার মতো অনেকে আছেন, টিচার হলেও টাকা অনুযায়ী শিক্ষা দেন।"

এইসব শুনে সুব্রত চুপ করে যায়। বাড়ি ফিরে সে চুপচাপ থাকে। দিদি খাওয়ার দিতে এলে সে ভাবে, দিদিকে কী টাকার কথা বলবো? কিন্তু রাতে দেখা ঘটনা তাকে আটকে দেয়। তার দিদি তার মুখ দেখে বলে, "কাল তোর দুটো টিউশনের টাকা দিয়ে দেব।"

তা শুনে সুব্রত একটু স্বস্তি পায়, কারণ টিউশনের টাকা সময় মতো দিতে না পারলে তার খারাপ লাগতো, sir-দের কে সে কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে পারত না। এমন সময় একটা চিৎকার শুনে সে ও তার দিদি বাইরে দৌড়ে যায়, দেখে তার বাবাকে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে এসেছে। বাড়ি ফেরার সময় তার বাবার একটা ‌accident হয়েছে যার জন্য তার বাবা আর ঠিক মতো চলতে পারছেনা। সে যখন তার দিদি ও বাবাকে কষ্টে ছটফট করতে দেখল তখন সে ছুটে গিয়ে পাড়ার ডাক্তার বাবু কে ডেকে নিয়ে আসে, বাবার চিকিৎসা চালু হয়। ঘটনাটি তার মনটাকে তোলপাড় করে দিল। কিছুটা হলেও সে বাস্তবকে চিনতে পারলো। সেদিন রাতে সে আর ব‌ই নিয়ে বসলো না, উঠনে গিয়ে দিদির পাশে বসে বলে, "দিদি কাঁদিস না।"

দিদি চোখের জল মুছে বলে, "এ মাসে তোর টিউশনের টাকাটা দিতে দেরি হবে, তুই ওগুলো মাথায় নিস না বাবু, শুধু মন দিয়ে পড়। হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে গেলে হয়তো টাকা গুলো বেঁচে যেত। আসলে বাবা তো বাড়ি চলে এসেছে, কষ্ট পাচ্ছে কী করে এতদূর নিয়ে যাই বলতো?"

পরের দিন সকালে সে তার দিদির ঘরে যায়, বলে, "দিদি তুই কিছু কাজ করছিস? আমার খিদে পেয়েছে।"

দিদি হাতের কাজটা আড়ালে রেখে বলে, "আমার সঙ্গে আয় খেতে দিচ্ছি।"

দিদি চলে যাওয়ার পর সুব্রত বিছানার ওপর গিয়ে বসে ও কৌতূহলে দিদি কী করছিল তা দেখার জন্য জিনিসটা টেনে নেয়। সে অবাক হয়ে, সেখানে থাকে ছোট-ছোট পাথরগুলোকে হাতে নিয়ে বলে, "আমি তো দিনের আলোয় এগুলো দেখতেই পারছি না, দিদি রাতের আলোয় এগুলো নিয়ে কাজ করে কী করে?"

দিদি বলে, "তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না, তুই খেতে আয়।"

"দিদি আমি না করলেও, আন্দাজ করতে পারছি ,এটা কতটা কষ্টের কাজ। এসব করিস না। এই কাজের থেকে, আমার থেকে, তোর চোখ তোর জন্য বেশি দামি।"

"দূর বোকা ছেলে, তুই জানিস পাড়ার কত মহিলারা এসব করে সংসার চালায়। গরিবদের এধরনের কাজ করতে হয়। তুই এখন খেতে আয়।"

এরপর কেটে যায় আরও কয়েকটা দিন। সেদিনের পর থেকে সুব্রত আর বাড়িতে টাকার কথা বলল না, বাড়ির পরিস্থিতি দেখে। এদিকে টিউশনেও নিজের ডিউ-গুলো বাড়তে থাকল। সকলে টাকা দিয়ে দিচ্ছে, সে পারছে না, আবার কোন-কোন ‌sir তা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যা দেখে তার প্রচণ্ড খারাপ লাগত। দিদিকে সব বলতে পারত না,কারণ এখন বাবার আয় বন্ধ। দিদি ও মা মিলে সংসার চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিগুলো যত‌ই কঠিন হোক না কেন,তাকে বাস্তবটা বুঝিয়েছিল। কিন্তু হয়তো সুব্রত তৈরি ছিল না তা বোঝার পর বাস্তবটাকে মেনে নিতে। মাঠে গিয়ে বসলে তার ভাবনা-চিন্তাগুলোর মধ্যে ঢুকে পড়তো ঘটে যাওয়া ঘটনা, মনে আসত নানান চিন্তা। এইভাবে কেটে যায় আরও কিছুদিন। সুব্রত পড়াশুনায়ও অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে, সে আর আগের মতো পারে না ‌স্যারদের উলটে প্রশ্ন করতে, টিউশনের exam গুলোতে তার আগ্রহ থাকল না, যে ছেলে রাস্তার চারপাশে কী হচ্ছে তা দেখার প্রয়োজন মনে করত না, এখন সে রাস্তার চারপাশে কী হচ্ছে তা দেখতে ব্যস্ত থাকত, যদি দেখত তার বয়স ছেলের কোথায় কাজ করছে, তাদের কাছে গিয়ে গল্প করতো, তাদের কাজ দেখত। এইভাবে কেটে যায় আর কিছু দিন।

এই কটা দিন তার দিদি গেছে মামা বাড়ি চাষের কাজে হাত লাগাতে, যাতে চাল পায়। বাড়ি ফিরে ভাইয়ের চোখমুখ, আচরণ দেখে অবাক হয়ে যায়। কোনও কারণে দিদি দরজা খোলা মাত্র‌ই দেখে তার ভাই কী একটা খেয়ে দরজার দিকে না তাকিয়ে প্যাকেটটা দিদির দিকে ছুড়ে দিল, সেটা দিদির সামনে এসে পড়ল। তা দেখে দিদি থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু তার মা তা দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে সুব্রতের কান মুড়ে, তার চুল ধরে পিঠে ঠাস-ঠাস করে চড় দিতে শুরু করল। পরে মা তার মাথাটা জড়িয়ে হাত বুলিয়ে বলল, "বাবা, তুই তো আমার সোনা বাবা, তাহলে তুই কেন ঐসব নেশার জিনিস খেলু।"

সুব্রত প্রচণ্ড কাঁদে অসুস্থ হয়ে পড়ে, মা ও দিদি মিলে মাথায় জল দেয়, পর যখন সে সুস্থ অনুভব করে, মা মাথায় হাত বুলাতে থাকে। সুব্রত পাগলের মতো মাথা নেড়ে ওপর দিকে মাথা তুলে নিশ্বাস নিতে থাকে। দিদি ছুটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে আনে। ডাক্তার আসে তার চিকিৎসা হয়। ডাক্তার তাকে ঔষধ দেয় ও বলে, "ও বেশিক্ষণ ঘুমাক, কিন্তু ও খুব ভয়ে ও চাপে আছে। ওর কাউনসিলিং এর প্রয়োজন।"

এভাবে যায় আরও কিছুদিন, সুব্রত আর বাড়ির বাইরে বের হল না। তার বন্ধুরা এসে খোঁজ নেয়, কিন্তু সে কারোর সঙ্গে দেখা করতে চাইল না। সে আর পড়াশুনা করবে না এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। একদিন দিদি এসে বলে, "ভাই সন্ধ্যা হয়ে আসছে মাঠের দিকে চল... যে যাই বলুক বাবু তোকে এগোতে হবে খারাপ লাগাগুলোকে ঐ আকাশে উড়িয়ে দে।"

সুব্রত বলে, "আমি আবার পড়াশুনা শুরু করব। কিন্তু আমি চাই আমি চাই এমন একজন টিচার, যার কাছে আমার ভয়, চাপ, লজ্জা কোনটা থাকবে না, আর আমার সেই টিচার হল তুই।"

"কিন্তু ভাই আমি তোকে সাইন পড়াতে পারবো না, আমি তো সাধারণ ইতিহাস, ভূগোল এইসব নিয়ে পড়েছি।"

"আমি সাইন্স নিয়ে পড়তে যাব কেন, আমি পড়লে তোর মতো বিষয় নিয়ে পড়বো, যাতে তুই আমাকে পড়াতে পারিস... দিদি, সব চিন্তা-ভাবনা, সব স্বপ্ন কি বাস্তব রূপ পায়? পৃথিবীতে প্রত্যেক দিন হাজার-হাজার ভাবনা, চিন্তা, স্বপ্ন নষ্ট হচ্ছ, তাতে কী?"

সুব্রত ‌arts নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে। স্কুলের টিচাররা অবাক হয়, ওর বন্ধুরাও। ও যখন সাইন্সের ক্লাসগুলোর পাশ দিয়ে যেত, একবারও ক্লাসের দিকে ফিরে তাকাত না, যা দেখে তার বন্ধুদের খারাপ লাগত। বন্ধুরা সুব্রতকে সঙ্গ দিত, কিন্তু সুব্রত এড়িয়ে যেত। কারণ সে চাইত না অতীত সঙ্গে থাকুক।

একদিন একজন সাইন্সের টিচার সুব্রত ডেকে বলে, "জীবনে ভালো কিছু পেতে হলে অনেকটা লড়াই করতে হয়। তোমার এভাবে থেমে যাওয়া উচিত হয়নি। তুমি তোমার সমস্যা টিচারদের বলতে পারতে... ওনারা নিশ্চয়ই সমস্যাটা বুঝতেন, কিন্তু এইভাবে তোমার থেমে যাওয়া উচিত হয়নি।"

সুব্রত বলে, "Sir, আমি এতসব জানি না, কিন্তু এটা জেনেছি নিজের সামর্থ্যের মধ্যে নিজের ইচ্ছে গুলো রাখা উচিত।"

এইভাবে দিন কাটতে থাকে, সুব্রত মনের আনন্দে পড়তে থাকে এবং নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যায় দিদির কাছে, যেখানে ছিল না টিউশনের টাকার চিন্তা, ভয় ও লজ্জা। এইভাবে কেটে যায় কয়েকটা মাস, এরপর সে উচ্চমাধ্যমিক দেয়, এবং রেজাল্ট বেরোলে দেখা যায় স্কুলের মধ্য সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে সে, যার জন্য সে সবার কাছ থেকে প্রশংসা পেল, কিন্তু সে কারোর প্রশংসাকে পাত্তা দিল না। বাড়ি ফিরে এসে বলে, "দিদি তুই আর মা খুশি তো। কারণ তোদের জন্য আমি আজ এখানে ।"

দিদি বলে, "তুই খুশি তো।"

আবেগে দিদির হাত দুটো জড়িয়ে ধরে সুব্রত বলে, "দিদি খুব স্বস্তি লাগছে, মনে হচ্ছে আমি হেরে যাইনি, অভাবের কাছে আমি আমার মতো করে জিতেছি।"

সুব্রতর রেজাল্ট দেখে সবাই তার পছন্দের বিষয় নিয়ে কলেজে অনার্স পড়তে অনেক জ্ঞান দিল, কিন্তু সে কারোর কথা শুনল না। কারণ সে এখন বাস্তবকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। সে খুব ভাল জানে, আশা থাকলেই সব সময় আলো পাওয়া যায় না। এভাবে কেটে যায় আরও দু বছর, এখন সুব্রত একটা কাজ পেয়েছে, যার বেতন পনেরো হাজার টাকা।

একদিন সুব্রত ডিউটি করে বাসায় ফিরছিল বন্ধুদের সঙ্গে। আজ, শনিবার তাই বাসায় ফিরে জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ির জন্য বের হবে, এবং তাড়াহুড়ো করে সকলে তাই করল। বাসা থেকে তারা যখন কিছুটা পথ চলে আসে হঠাৎ সুব্রত থমকে যায়, কেউ যেন পাশ থেকে বলছে, "দাদা দশ টাকা দাও না নেশা করি।" ওরা দেখে একজন 16– 17 বছরের ছেলে যার কাঁধে ব্যাগ, গায়ে সাধারণ জামা, পায়ে চটি। ছেলেটি মুখ ঝুঁকে বসে আছে। সুব্রত তার কাছে যায় ও একশো টাকা দিয়ে বলে, "ভাই আমাদের জীবনে আশা থাকলেও কি আর সব সময় আলো পাওয়া যায়, যায় না। তাই জীবনে সেই আলোর জন্য বসে থেকো না, নতুন দিশা খুঁজে নাও, যেখানে তোমার এই চাপগুলো থাকবে না," এই বলে সুব্রত বন্ধুদের কাছে এলে। তারা বলল, "আরে ও নেশা করবে, তুই টাকা দিতে গেলি কেন? এইটুকু বয়সে নেশা করছে..."

সুব্রত মুচকি হেসে বলল, "ওর কী কষ্ট, তা আমি ভালো করে জানি, কারণ আমি কয়েক বছর আগে ওর পরিস্থিতিতে ছিলাম। ওর মতোই নেশা করার জন্য রাস্তায় বসে টাকা চাইতাম, যা এখন‌ও আমার পরিবারের কাছে অজানা।" এই কথা শুনে তার বন্ধুরা অবাক হয়ে যায়, ছেলেটাও তা শুনে মিটিমিটি চোখে চেয়ে থাকে।। সুব্রত পুনরায় হাটতে শুরু করে।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    111    112    113    114    (115)     116    117    118   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717