All Bengali Stories
109
110
111
112
113
114
115
116
(117)
118
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
অপরাধী ( পর্ব ১ )
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - জয়িতা সিং মুন্ডা, বাবা- কালিনাথ সিং মুন্ডা, বান্দোয়ান, পুরুলিয়া
28 th July, 2021
অন্যান্য পর্বঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
##
অপরাধী ( পর্ব ১ )
উঠোনে টগবগ করে ফুটতে থাকা মাটির হাঁড়িতে চারটি চাল ফেলে দিলো বিধবা বৃদ্ধা মনিমালা। বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড় হতে বেছে-বেছে তুলে নিয়ে আসা বুনো শাকগুলো ধুতে-ধুতে জোরে হাঁক দিলেন, "বাবু উঠে পড়। কত্তো বেলা
হল বল দিকিনি! ইস্কুলে যাবি তো আবার..."
বৃদ্ধা মনিমালার ডাকে বছর আঠারোর একটি পাতলা, লম্বা ও শ্যামলা মতো ছেলে খড়ের ছাউনির ভেতর হতে আড়মোড়া ভাঙতে-ভাঙতে বেরিয়ে এলো। শান্ত, স্নিগ্ধ চেহারা, তাই হয়তো মা-বাবা আদর করে নাম রেখেছিলো প্রশান্ত।
"যা দিকিনি, পুকুর হতে-মুখ ধুয়ে, স্নান সেরে আয়।"
"হ্যাঁ মা যাই," তেলের শিশি ধরে বেরিয়ে গেলো প্রশান্ত।
বৃদ্ধা এক বাটি গরম ফ্যান ও পাতায় বুনো শাকের ভাজা উদরস্থ করে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়লেন ওবাড়ির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে মনে করে একটা বাটিতে ছেলের জন্য ভাত বেড়ে রাখলেন। বৃদ্ধা মনিমালার রোজকার নিয়ম এটাই। ওবাড়ি
বলতে পাশের গ্ৰামের জমিদার বাড়ি। সোয়ামি সামান্য মাইনেতে মালীর কাজ করতো। কিন্তু এই তো মাস দুয়েক আগে সোয়ামির হঠাৎ করে কঠিন অসুখ হওয়ায় চিকিৎসার অভাবে ইহজগতের মায়া ত্যাগ করলো। তারপর থেকে গরিব
বৃদ্ধা মনিমালার পক্ষে দুইজনের জন্য সংসারে দু'বেলা দু'মুঠো জোগাড় করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিলো। কতদিন একবেলা, আধপেটা হয়ে কেটেছে তার ইয়ত্তা নেই। এহেন অবস্থায় জমিদারবাবু দয়াপরবশ হয়ে পরিচারিকার কাজ
দিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই এই রোজকার আসা-যাওয়া। এই বৃদ্ধ বয়সে শরীর যেন আর সঙ দিতে চায় না, কিন্তু তিনি যে স্বপ্ন দেখেন... প্রশান্ত অনেক- অনেক বড়ো হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে একদিন। আর বৃদ্ধা মনিমালা সেদিন গর্ব
করে বলবেন, "দেখো গো আমাদের প্রশান্ত কত্তো বড়ো হয়েছে।" কিন্তু এই অভাবের সংসারে নুন আনতে যেখানে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা সেখানে পড়াশোনাটা নিছকই অযাচিত স্বপ্ন। এই সব ভাবতে-ভাবতেই জমিদার বাড়িতে
কখন পৌঁছে গেছেন খেয়ালই করেননি। তাড়াতাড়ি সবার অলক্ষ্যে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণাগুলোকে মুছে ভেতরে প্রবেশ করলেন।
#
স্কুল ছুটি হতেই তাড়াতাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় প্রশান্ত। সে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে। এই বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে। আর একমাস পরেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, তাই স্কুল ছুটি থাকবে। প্রশান্ত এই ভেবেই
খুশী হয় মনে-মনে যে, মাকে কিছুদিন সাহায্য করতে পারবে কাজে। মায়ের কিছুটা হলেও পরিশ্রম কম হবে।
উঠোনে পা দিয়ে দেখে মিনু আর মা খোশমেজাজে বসে গল্পে মেতে উঠেছে। পাশের বাড়ির মিনু অর্থাৎ ময়না তারই বয়সী। বাবার ছোট্ট মুদির দোকান। বেশ সচ্ছল অবস্থা কিন্তু দশম শ্রেণী অবধি পড়ার পরেই পড়াশোনার ইতি ঘটিয়ে
দিয়েছে। মায়ের কাছে এটাও শুনছিল, তার নাকি বিয়ের দেখাশোনাও চলছে। কিন্তু সে নাকি জেদ ধরে বসে আছে বিয়ে করবে না। নানা রকমের ছুতো দেখিয়ে বারবার নাকচ করছে। যার কারণে বাড়ির লোকও নাকি অসন্তুষ্ট। যাই
হোক, প্রশান্তের এই সব ভেবে কি লাভ। কি জানি বাপু বড়োলোকের ব্যাপার স্যাপার মাথায় ঢোকে না। নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠে সে।
ময়না একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এই একটুখানি এক পলকের দেখার জন্যই ঘণ্টা খানেক ধরে অপেক্ষা করে থাকে রোজ বিকেলে। মনিমার সঙ্গে এসে আড্ডা দিয়ে যায়। কিন্তু আসল কারণ তো এটাই। সেই ইস্কুলে পড়ার সময়
থেকেই কখন যে আনমনে ...নিজেও জানে না। কৈশোরকাল হতে মনের মধ্যে অজান্তেই সযত্নে লালিত হতে থাকা ভালোবাসার চারাগাছটি যে রোপিত হয়েছে, যা সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা কি কোনোদিন জানাতে
পারবে প্রশান্তকে! জানে না সে ...সত্যিই জানে না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনিমাকে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়ে ময়না।
#
যথারীতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে ফলাফলও দরজায় কড়া নাড়লো। প্রতিবারের মতোই এবারও সবার প্রত্যাশা মতোই প্রশান্ত ভালো ফল করে উত্তীর্ণ হল। বৃদ্ধা মনিমালা ছলছল চোখে খুশীতে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে, "বাবু
তোর বাবা থাকলে খুব খুশী হতো রে...খুউব..."
কিন্তু এরপর কী হবে? ছেলেকে বড়ো করার স্বপ্ন তাহলে এভাবেই কী ধুলোয় মিশে যাবে? সেই রাত্তিরে দুই চোখে ঘুম এলো না বৃদ্ধা মনিমালার। অনেক ভেবে শেষ-মেশ এক সিদ্ধান্ত নিলেন। হ্যাঁ এটাই একমাত্র উপায়,"বাবুর জন্য খোলা
আকাশেও বৃহৎ ইমারতের সমান।"
পরের দিন সকালে জমিদারবাবুর কাছে এ কথা পাড়তেই তিনি শুনে থ!!
"বলিস কী মনিমালা! মাথার উপর ওই একটুখানি মাথা গোঁজার ঠাঁই। তুই সেই ভিটেটুকুও বন্ধক রাখতে চাস?"
জবাবে শুধু হাতজোড় করে মনিমালা বলেছিলেন, "দয়া করুন জমিদারবাবু। আমার চিন্তা আমি করিনে, কিন্তু বাবুর স্বপ্ন এভাবে মাঝপথে.... আর ভিটেমাটি নিয়ে চিন্তা করবেন না। দেখবেন আমার প্রশান্ত অন্নেক বড়ো হবে। শহর হতে
এসে একদিন ঠিক ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে ....সব ঠিক করে দেবে।"
অগত্যা বৃদ্ধা মনিমালার কাতর অনুরোধে জমিদারবাবু মেনে নিয়েছিলেন এই প্রস্তাব।
#
বৃদ্ধা মনিমালার কষ্ট হচ্ছিলো ছেলেকে একাকী শহরে পাঠাতে। অজ পাড়াগাঁ হতে গিয়ে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারবে তো? চোখের জল মুছে ছলছল নয়নে ছেলেকে বিদায় জানালেন তিনি। দুই হাত ভরে আশীর্বাদ করলেন,"দুগ্গা,
দুগ্গা, ছেলেকে দেখো ঠাকুর। অনেক-অনেক বড়ো হ বাবু। নিজের স্বপ্ন পূরণ করে আয়।"
মায়ের চরণ ছুঁয়ে মনে-মনে শপথ করলো প্রশান্ত, "দেখো মা, তোমার প্রশান্ত ঠিক একদিন তোমার আদর্শ ছেলে হয়ে ফিরে আসবে।"
একরাশ আশা ও ভরসা নিয়ে প্রশান্ত পাড়ি দিলো সুদূর গ্ৰাম ছেড়ে শহরে উচ্চশিক্ষার জন্য। ভর্তি হল একটি নামকরা মহাবিদ্যালয়ে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর থাকার জন্য পেয়ে গেলো সস্তার একটি কামরা।
প্রথম কয়েক মাস খুব মন খারাপ হতো মায়ের কথা ভেবে। শহুরে পরিবেশে মানিয়ে নিতেও অসুবিধে হচ্ছিলো, কিন্তু ধীরে-ধীরে সে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিল মায়ের কথা ভেবে। নিজের স্বপ্নের কথা ভেবে।
জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো প্রশান্ত। আকাশে গাঢ় কালো মেঘের ঘনঘটা। এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে হয়তো। আচ্ছা ওদিকেও কী বৃষ্টি হচ্ছে?একছুটে মন চলে যায় শহর ছাড়িয়ে গ্ৰামের এক চিলতে কুঁড়েঘরটিতে। যেখানে বর্ষাকাল
এলেই রাত্তিরেও গড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির জল চালের ফুটো দিয়ে মেঝেয় থাকা ছেঁড়া মাদুরে। আবার শীতকালে সেই ফুটো দিয়েই হু-হু করে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস অবাধে প্রবেশ করে তার প্রবল উপস্থিতি জানান দেয়। অজান্তেই দুই ফোঁটা
চোখের জল গড়িয়ে পড়ে প্রশান্তর।
#
উঠোনের এককোণে এক ছেঁড়া মাদুরে শুয়ে বৃদ্ধা মনিমালা। উফ শরীরে কী অসহ্য যন্ত্রণা। এই বৃদ্ধ বয়সে সারাদিন দ্বিগুণ খাটুনিতে আর কতদিন সঙ দেবে এই শরীর কে জানে? মিনুই গাঁয়ের ডাক্তারবাবুর কাছ হতে ওষুধ-পত্তর এনে দিয়েছে।
দু'বেলা এসে এক বাটি গরম ফ্যান দিয়ে যায়। বড্ডো ভালো মেয়েটা। বাড়ির হাজার বারণ স্বত্বেও তার একবেলা আসা চাই-ই চাই। ভাগ্যিস মেয়েটা আছে, না হলে এই অসুখে ....। মনে-মনে এক সুপ্ত বাসনাও রয়েছে অনেকদিন ধরে। তিনি
জানেন তার এই স্বপ্নও অবাস্তব। তারা কোথায় আর মিনুরা কোথায়! কিন্তু মিনুটাকে কতই না সুন্দর মানাবে আমাদের প্রশান্তর কাছে।
রাস্তায় চোখ যেতেই ডাকঘরের ছেলেটিকে দেখতে পেয়ে হাঁক ছাড়েন মনিমালা, "ও বাবু, এসেছে? দেখো না গো একটু..."
প্রত্যুত্তরে একই জবাব পেয়ে মুখে আবার হতাশার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কত্তোদিন হয়ে গেলো বাবুটার একটাও চিঠি এল না আর। সেই কত্তোদিন আগে এসেছিলো। শরীর-টরীর খারাপ হল না তো? বলছিলো পড়াশোনার নাকি খুব চাপ তাই
বাড়ি আসতেও পারবে না এখন। বলেছিল অযথা বেশী চিঠি না দিতে, তাই বৃদ্ধা মনিমালা আর বিরক্ত করেনি ছেলের কথা ভেবে। প্রশান্তের যাওয়ার মাস দু'য়েক পর চিঠি এসেছিলো ডাকে। মিনুকে দিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিলো চিঠিটা।
প্রত্যুত্তরে মিনুকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলো একটা চিঠি আর সঙ্গে পাঠিয়েছিলো জমিদারবাড়িতে কাজ করে পাওয়া সমস্ত মাইনেটাই। এই যে গত দুই সপ্তাহ ধরে পড়ে আছে এভাবে, মিনু জানাতে চেয়েছিল প্রশান্তকে। কিন্তু তিনিই
বারণ করলেন এই ভেবে, অযথা শুধু-শুধু চিন্তা করবে ছেলেটা। মায়ের অসুখের কথা শুনে হয়তো শশব্যস্ত হয়ে চলেও আসতে পারে, আর এলেই তো পড়াশোনায় ক্ষতি। তাহলে তিনি কীভাবে ছেলের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন জেনে -শুনে।
Next Part
All Bengali Stories
109
110
111
112
113
114
115
116
(117)
118
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717