Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

নূপুর

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    112    113    114    115    116    117    118    119    120    (121)     122    123   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



নূপুর
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
Writer- Susmita shil, C/O- sukamal shil, Kuthipara, Gobardanga, Habra, North 24 parganas


## নূপুর

পর্ব ১

পলাশবনি গ্রামের খুব সাধারণ একটি মেয়ে নূপুর। নূপুরের বাবা দিনমজুর, মা সাধারণ গৃহবধূ। চার বোনের বড় বোন নূপুর। নূপুর এখন ক্লাস নাইনে পড়ে, মেজ বোন রমা ক্লাস সেভেনে, সেজ বোন প্রিয়া ক্লাস ফোরে পড়ে আর ছোট বোনের বয়স মাত্র দুবছর। রমা আর প্রিয়া একই স্কুলে পড়ে, নূপুর আলাদা স্কুলে পড়ে। ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ এর জন্য আলাদা কোয়েড স্কুলে পড়তে হয়। তখন সবে শরৎকাল আরম্ভ হয়েছে। নদীর পাড় জুড়ে কাশফুলের মেলা বসেছে। নূপুর আর ওর বান্ধবীরা সেদিন কাশ ফুল তুলতে নদীর পথ ধরেছে বাড়ি ফেরার সময়। ওদের অজান্তেই স্কুল থেকে একটি ছেলে পিছু নিয়েছে নূপুরদের, ছেলেটি বেশ কিছুদিন ধরে বিরক্ত করছে নূপুরকে। আজও একই উদ্দেশ্যে পিছু নিয়েছে তার। আগে দু'বার নিজের হাত কেটে ভয় দেখিয়ে নূপুরকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছে ছেলেটি, কিন্তু লাভ হয়নি কোনও। নদীর পাড়ে কাশবনের দিকটায় বেশিরভাগ সময়ই লোকজন কেউ থাকে না। নদীর দু'পাড়ে কাশফুলগুলো হাওয়ায় দুলছে, শিউলি ফুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে। নদীর ওপারে ঢাকিপাড়া, মাঝে-মাঝে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে ওপার থেকে। শহর থেকে এই সময়ে ঢাকি ভাড়া করতে অনেক লোক আসে, তারাই বাজনা শুনে তারপর বায়না করে যায় ঢাকি। নদী পারাপার করার জন্য একটা বাঁশের চার বাধা আছে। ঢাকের আওয়াজ শুনে নূপুরের দুই বান্ধবী ওপারে যেতে চাইলো, কিন্তু নূপুর যাবে কাশফুল তুলতে। ঠিক হল ওরা দুজন ওপারে যাবে আর নূপুর কাশফুল তুলে ওদের জন্য অপেক্ষা করবে। সেই মতো ওরা চলে গেলে, কাশবনের ভিতরে গেল নূপুর। কাশবনের ভিতরে যেতেই নূপুরকে ঘিরে ধরল চার পাঁচটা ছেলে। ওখানে বসেই নেশা করছিল ছেলেগুলো। নূপুরকে দেখে তাদের মধ্যে দানবগুলো জেগে ওঠে, ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর মতো থাবা বসায় নূপুরের ওপর, নূপুরের ওড়না আর স্কুল ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দেয় নদীর জলে। দিশেহারা নূপুর হাতজোড় করে কাঁদতে থাকে, তাকে ছেড়ে দেওয়ার ভিক্ষা চাইতে থাকে। কিন্তু পশুদের কালো থাবা ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে তার দিকে। নূপুর হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে পড়ে মাটিতে। এমন সময় পাশে পড়ে থাকা খালি মদের বোতল গুলো দিয়ে দুজনের মাথায় বাড়ি মেরে মুহূর্তের মধ্যে নূপুরের হাত টেনে ধরে দৌড়াতে শুরু করে একটি ছেলে। নূপুর বাঁচার আশা দেখতে পেয়ে প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে ছেলেটির হাত ধরে।

গ্রাম এখান থেকে অনেকটা দূরে। মাঝরাস্তায় যেকোনো সময় ধরে ফেলতেও পারে পশুগুলো তাদের। দানবগুলো তাড়া করতে শুরু করেছে ওদের। বাঁশের চারটা পার হলেই ওপারের গ্রামটা কাছে। ছেলেটি নূপুরকে নিয়ে দ্রুত বাঁশের চার পার হতে থাকে। দুটো মাত্র বাঁশ পায়ের তলায়, নদীর জল বেশ গভীর। অনেক বিষাক্ত সাপ রয়েছে জলে, সাঁতার জানে না ওরা দুজনেই, কিন্তু সব থেকে বিষাক্ত প্রাণী তাড়া করেছে ওদের। দ্রুত পার হতে গিয়ে চারের একটা দড়ি খুলে যায়, এক সেকেন্ডের মধ্যে একটা বাঁশ অর্ধেক ঝুলে যায়। নূপুর পড়ে যাচ্ছিল এমন সময় ছেলেটি ধরে ফেলে, কোনও রকমে নূপুরকে নিয়ে পার হয় চারটি। ততক্ষণে ওই হিংস্র দানবেরা চারের মাঝামাঝি চলে এসেছে। নূপুরের সাথে থাকা ছেলেটি নূপুরকে বলে, "সোজা দৌড়াতে থাক আর চিৎকার করতে-করতে লোক জড়ো কর। দাঁড়াস না আর এক মুহূর্ত। পালা, পালিয়ে যা!"

নূপুর, "আর তুমি?"

"তুই পালা আমি আসছি," বলে ছেলেটি দ্রুত চারের আরেকটি দড়ি খুলে দেয় দানবগুলো পড়ে যায় জলের মধ্যে। সুরক্ষিত স্থানে যাওয়ার পর নূপুর চিনতে পারে ছেলেটিকে, এ সেই ছেলেটা যে রোজ পিছু নেয় তার। ছেলেটি তখন সব কথা খুলে বলে ওকে। ছেলেটির নাম অজয়, এপারেই ওদের বাড়ি। ছেলেটি নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় নূপুরকে, খবর দেওয়া হয় নূপুরের বাড়িতে। নূপুরকে ওর বাবা-মা এসে বাড়ি নিয়ে যায়। গ্রামের পঞ্চায়েতে সভা বসে, পুলিশকে খবর দেয়া হয়। যে পাঁচজন দানব নূপুরের দিকে কালো হাত বাড়িয়েছিল তাদের দু'জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, বাকি তিনজন হাসপাতালে ভর্তি। দুজনের মাথায় অজয় কাচের বোতল মেরেছিল আর নদীর জলে পড়ে যাওয়ায় একজনকে সাপে কেটেছে।

এই ঘটনার পর থেকে নূপুরের বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, সাথে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়া। তার সাথে এই দুর্ঘটনা হওয়ার জন্য তার বান্ধবীরা কেউ তার আর সঙ্গে মিশতে চায় না। নূপুরের বোনেরাও কেমন যেন দূরে সরে গেছে। নূপুর স্কুলে যেতে চাইলে নূপুরের মা তার সমস্ত বই জ্বলন্ত উনুনে ফেলে দেয়। একপ্রকার ঘর বন্দী হয়ে দিন কাটতে শুরু করে নূপুরের। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র অজয় ছিল তার সঙ্গী। নূপুরদের বাড়ির পেছনের আমবাগানে অজয় তার সাথে রোজ দেখা করতে আসত। কোনদিন পেয়ারা-মাখা, কোনদিন কদবেল মাখা, আবার কোনদিন পাকা তেঁতুল নিয়ে আসতো নূপুরের জন্য। নূপুরের দম বন্ধ হওয়া জীবনে এক-বুক প্রশ্বাস ছিল অজয়। তাদের বন্ধুত্ব দিন-দিন গভীর হতে থাকে। একদিন অজয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে-কাঁদতে নূপুর বলে, "আমার খুব বই পড়তে ইচ্ছা করে জানিস, আমাকে একটু বই এনে দিবি অজয়?"

বৈশাখী মেলা থেকে একটা গল্পের বই নূপুরকে এনে দেয় অজয়। তাদের দেখা করার কথা একদিন জেনে যায় নূপুরের বাবা-মা। নূপুরকে প্রচণ্ড মারধোর করে ঘরে তালা বন্ধ করে রাখা হয় এরপর থেকে।

"এক মেয়ের জন্য বাকি মেয়েগুলোকেও আমি বিয়ে দিতে পারব না," বলে নূপুরকে গালিগালাজ করতে থাকে তার বাবা, সাথে তার মাকেও কুকথা বলতে ছাড়ে না নূপুরের বাবা।

একদিন মাঝরাতে মাটির ঘরের জানালায় এসে দাঁড়ায় অজয়। একটা হিমসাগর আম ছুঁড়ে মারে নূপুরের গায়ে।

"তুই এসেছিস অজয়," বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে নূপুর, "আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল অজয়, তুই আমাকে বাঁচা..."

ঘরের জানালার একপাশে নূপুর অন্য পাশে অজয় দাঁড়িয়ে। অজয়ের হাত ধরে নূপুর কাঁদতে থাকে। ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়, তারপর প্রচণ্ড বৃষ্টি, অজয় তেমন ভাবে দাঁড়িয়ে নূপুর সব কথা শুনতে থাকে। এভাবেই অনেক রাত কেটে ভোর হয়। তারপর ওরা ঠিক করে পালিয়ে যাবে। একসাথে থাকবে, ঘর বাঁধবে, সংসার করবে। একরাতে চালের টালি খুলে অজয় নূপুরের ঘরে ঢুকে চালের ওপর থেকে নূপুরকে বার করে পালিয়ে যায়। ওরা কালি মন্দিরে বিয়ে করে অজয়ের বন্ধু রবিনের পিসির বাড়ি গিয়ে ওঠে। অজয় আর রবিন প্রায়ই আসে রবিনের পিসি ইন্দুবালার বাড়ি। রবিনের পিসি নিঃসন্তান, স্বামী বাইরে থাকে মাঝে-মধ্যে আসে। তাই রবিন আর অজয়কে নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন তিনি। তার বাড়িতেই শুরু হল অজয় আর নূপুরের সংসার। রবিন এসে তাদের গ্রামের খবর দিয়ে যায় নূপুর আর অজয়কে। রবিনের পিসির সঙ্গে ঘরের কাজ করে নূপুর, অজয় বিকেলবেলায় ঘুরতে নিয়ে যায় তাকে। দুজনে মিলে ফুচকা খায়, সিনেমা দেখে বেশ সুখেই আছে ওরা। সপ্তাহ খানেক পরেই অজয়কে একটা কাজের জোগাড় করে দেয় রবিন। অনেক কিছু রান্না করতে শিখে গেছে এখন নূপুর। ইন্দুবালা তাই এখন ঘরের দায়িত্ব নূপুরের ওপর দিয়ে নিজে মাঠের কাজে চলে যায়। অজয় মাটিকাটার কাজ করে দিনে 350 টাকা রোজ পায়। নূপুরের জন্য ক্রীম, চুলের ফিতে, কানের দুল পায়ের নূপুর কিনে এনে নিজের হাতে পরিয়ে দেয় তাকে। ইন্দুবালা ইচ্ছে করেই মাঠ থেকে দেরি করে ফেরে, অজয় আর নূপুর আরো কাছাকাছি আসে। এখন ওরা সদ্য যৌবনে পা রাখা যুবক-যুবতি। তাদের চাওয়া-পাওয়া এখন বেড়েছে অনেক। নূপুরের ঠোঁটে-ঠোঁট রেখে অজয় বাঁচার রসদ পায়, নূপুরকে পরিণত করে তোলে তার ভালোবাসা। আলিঙ্গনে নিবদ্ধ হয়ে ওরা হারিয়ে যায় আদিম সুখে।
Next Part


All Bengali Stories    112    113    114    115    116    117    118    119    120    (121)     122    123   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717