All Bengali Stories
116
117
118
119
120
121
122
123
(124)
125
126
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৫
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
Writer: - Dr. Ipsita Bhattacharjee, Sahid Nagar, Dhakuria, Kolkata
অন্য পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
পর্ব ৫
পর্ব ৬
পর্ব ৭
পর্ব ৮
পর্ব ৯
পর্ব ১০
পর্ব ১১
পর্ব ১২
##
শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৫
পায়ের শব্দ ধীরে-ধীরে আরও কাছাকাছি আসছে। রজত বারান্দার অন্ধকারের মধ্যে মিশে কান খাড়া করে রইল। আগন্তুক আলো জ্বালল না। কাউকে ডাকা-ডাকিও করল না। অন্ধকারে পায়ের আওয়াজে রজতের মনে হল সে রজতের শোয়ার ঘরের দিকে যাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য রজতের মনে হল যে, সে বাইরে বেড়িয়ে এসে আগন্তুকের মুখোমুখি হবে। বোঝাই যাচ্ছ, যে এসেছে তার উদ্দেশ্য খুব একটা ভাল নয়। খুব সন্তর্পণে রজত নিজেকে বারান্দার দেওয়ালে সাথে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। আগন্তুকের পায়ের শব্দ এবার আবার রজতের কানে এল। এইবার সে রজতের ঠিক পিছনে এসে দাঁড়াল,তফাতে শুধু একটা দেওয়াল। বোঝাই যাচ্ছে তার লক্ষ্য রজতের স্টাডি টেবিল। রজত প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ। এতক্ষণে সে একটা জিনিস বুঝে গেছে,আগন্তুক তার কোনও ক্ষতি করতে চায় না, কিন্তু তার কাজে বাধা দিলে কি করবে, তা ভাবতে পারল না। ডাঃ মুখোপাধ্যায়ের শবদেহের কথা মনে করে এই ঠাণ্ডায় সে ঘামতে শুরু করল। কতক্ষণ কুঁকড়ে প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে সে বসে ছিল খেয়াল নেই। তার চেতনা এল যখন ঐ পায়ের শব্দ আস্তে-আস্তে দূর হতে-হতে দরজার হাতল ঘোরানোর শব্দ হল। ধরে প্রাণ ফিরে পেল রজত। আর তখনই সর্বনাশটা হল। সুরের মূর্ছনায় রজতের মোবাইলটা বেজে উঠল। কিছু করার আগেই রজতের গলায় একটা পিন ফোটার মত যন্ত্রণা হল, তারপর সব অন্ধকার। বিশ্ব মোবাইলটা নিয়ে ফোনটা ধরল-
"রজতবাবু, ফোনে নেটওয়ার্ক ছিল না। আপনার পাড়ায় এসে গেছি, ৫ মিনিট এ ঢুকছি।" বিশ্ব উত্তর দিল না। ফোনটা রেখে ধীরে-ধীরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
#
"বলুন ম্যাডাম, কি হচ্ছে বলুন তো? এই শহরে একটা খুন ও একটা হামলা হল এবং এদের প্রত্যেকেরই আপনার সাথে দেখা করার কথা ছিল। এই ব্যাপারে কি কিছু বলার আছে আপনার?" থানার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ডি এস পি রাঠোর প্রশ্ন করলেন জয়ীকে।
ক্লান্ত চোখে তাকাল জয়ী, "আমি সত্যিই জানি না, আমি ..."
ডি এস পি এক মুহূর্ত শ্যেনদৃষ্টিতে তাকালেন জয়ীর দিকে, "কথা বলতে হবে ম্যাডাম, চুপ করে থাকলে চলবে না। আগের বার শেরগিল স্যারের অনুরোধে আপনাকে বিরক্ত করা হয় নি। এবারের মতো রেহাই দিতে পারব না।" গলার স্বর কঠিন হল তার।
"আমি আজ বিকেলের ট্রেনে মালদায় আসি, নুর ইসলামের সাথে দেখা করি স্টেশনে, এবং তারপর রজতবাবুর বাড়িতে রওনা দিই। পৌছতে একটু দেরী হয়, প্রায় ৭.৪৫ হয়ে যায়। ওনার বাড়িতে পৌঁছে ওনাকে ফোন করি, কিন্তু উনি ফোন তোলেন না। বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে আমরা ওনার বাড়ির এক তলার ভাড়াটে সিদ্ধার্থের বাড়িতে নক করি। ওনার সাথেই উপরে গিয়ে দেখি...রজতবাবুর দরজা খোলা আর উনি...উনি চিৎ হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন। আমি, আমি এতটাই শকড ছিলাম যে...পুলিশকে ফোন আর অ্যাম্বুলেন্স ডাকার কাজটা নুর আর সিদ্ধার্থই করে।" বলল জয়ী।
"আপনি কি জন্য রজতবাবুর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন?"
"ডঃ মুখার্জির যাবতীয় গবেষণার প্রপার্টির দায়িত্বে রজতবাবু রয়েছেন। আমার নিজস্ব কিছু রিসার্চের স্বার্থেই রজতবাবুর সাহায্য চাই। তো তাই আজ দেখা করতে যাচ্ছিলাম।" জয়ী জানত এ প্রশ্ন আসবে। সে ঠিক করে রেখেছিল কি বলবে।
"বিষয়টা কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, আপনাকে আপনার কর্মক্ষেত্রে একটি বিশেষ দায়িত্ব ছেড়ে আসতে হয়.." একটা ক্রুর হাসি দিয়ে জয়ীর দিকে তাকালেন অফিসার, "আপনাদের সংস্থার এইচ আর-কে ফোন করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন যে, শুক্রবার কোন বিশেষ কারণে আপনি সংস্থার আজকের অধিবেশন থেকে ছুটি নেন। উনি এটাও জানিয়েছেন যে, আপনি এই অধিবেশনের অনেকটারই দায়িত্বে ছিলেন। ফলে আপনার অনুপস্থিতিতে তাদের যারপরনাই অসুবিধে হয়।"
"আমার সত্যিই একটু তাড়া ছিল, " বলে জয়ী চোখ নামাল। অফিসার যেন তার সমস্ত চোখ দিয়ে জরিপ করছে জয়ীকে। তারপর বললেন, "ওকে, এখনকার মত এইটুকুই। কিন্তু আবার আপনাকে ডাকা হতে পারে। এবং হয়তো আজ বা কালই। ফলে মালদা ছাড়বেন না। বাই-দি বাই, আপনি কোথায় উঠছেন?"
"ভিলা ডি নর্থ-এ বুকিং ছিল.."
"হুম, দেখুন, তবে আমি সাজেস্ট করব যে কাছাকাছি কোন হোটেল নিন। ইমম... আপনি সার্কিট হাউসে থাকতে পারেন। কাছাকাছি পরবে, কল পেলে আপনি হেঁটেই চলে আসতে পারেন। আপনি রাজি থাকলে একটা কল করে ঘর বুকিং রাখতে বলে দেব। "
জয়ী কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না। সে রাজি জানিয়ে, কেবল একটা ছোট করে মাথা নাড়াল। উঠে পড়লেন অফিসার, একজন বেয়ারাকে ইশারা করে বললেন, " সার্কিট হাউসে একটা ফোন করে দাও, বলো জয়ীতা ম্যাডামের নামে একটা ঘর রেখে দিতে। আর নুরবাবুকে পাঠিয়ে দাও। আমি ওনাকে একা জেরা করতে চাই।"
জয়ী উঠে পড়ল। খুব পরিষ্কার ভাবেই বুঝতে পারছিল যে এই বিষয়টা কতটা জটিল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় জয়ী দেখল যে নুর বেশ চিন্তিত মুখে একজন এস আই-এর সাথে কথা বলছে। সে বেরোতেই ব্যস্তসমস্ত হয়ে বেড়িয়ে এল। "রজতবাবুর কন্ডিশন অনেকটা বেটার। একটা ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তাকে। ঐ সিদ্ধার্থ ছেলেটা রজতবাবুর দাদাকে খবর দিয়েছেন। আপনি বরং..." জয়ী হাত তুলে থামাল নুরকে, "তোমাকে একা অফিসার জেরা করবেন। ভেতরে যাও। আমার হয়ত গবেষণার কাজটা তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই মুশকিল হল, " চোখের ইশারা করল জয়ী। নুর খানিকক্ষণ অবাক হয়ে পাশে এস আই সাহেবকে দেখে সামলে নিয়ে জয়ীর সাথে আলাপ করালো।
এস আই বললেন, "ম্যাডাম, এইটা একটা চাপের কেস, আপনি ঘটনাক্রমে জড়িয়ে গেছেন। তবে স্যার খুবই ভাল অফিসার..."
"আপনি আমায় সার্কিট হাউসের দিক-নির্দেশটা দিতে পারেন?" নরম অথচ স্বচ্ছ গলায় জানাল জয়ী। অফিসারের প্রশংসা এবং একটা দরকারি প্রশ্নের মাঝখানে এস আই যেন একটু হচকচিয়ে গেলেন, তারপর হাত নাড়িয়ে দিক নির্দেশ দিয়ে দিলেন।
#
জারকিনটা টি-শার্টের উপর চড়িয়ে থানার বাইরে বেরোল জয়ী। মেঘহীন আকাশে চাঁদের আলো খেলা করছে। পথে একটাও রিকশা দেখা যাচ্ছে না। দু একজন লোককে সাইকেলে দেখা গেল। ঘড়ি দেখল জয়ী। প্রায় ১১টা বাজে। এস আই বলেছিলেন যে হেঁটে গেলে ১০ মিনিটের বেশী লাগবে না। তাই হ্যালোজেন আলোকিত পথে চলতে শুরু করল জয়ী।
'হেড নর্থ' বলে উঠল গুগল ম্যাপ। হাঁটতে-হাঁটতে আগের কিছুদিনের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল জয়ীর। এই দুটো দুর্ঘটনা কি যুক্ত? কোনভাবে? নিশ্চয়ই তাই! কিন্তু কেন? যদি দুর্গাবাবুর জিনিস চুরি গিয়ে থাকে, সেটা শশাঙ্কের শিলমোহর বা যাই হয়ে থাক, তবে রজতবাবুর উপর হামলা হল কেন? যদি না আততায়ী সঠিক জিনিস না পেয়ে থাকে। আর এখন দুর্গাবাবুর সমস্ত ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির মালিক রজতবাবু। এইসব চিন্তার মধ্যে জয়ীর হঠাৎ মনে হল যে, সে একদম অন্ধকার একটা গলির মুখে এসে পড়েছে। ফোনটার দিকে তাকাল সে, হ্যাঁ ঠিক রাস্তায়ই এসেছে সে। গলিটা সরু, গলির শেষের দিকে টিমটিম করে একটি বাতি জ্বলছে। বাকি রাস্তার আলোগুলো বিকল। জয়ী ভিতু নয়, ভু-ভারতে বহু জায়গায় সে ঘোরাঘুরি করেছে। কিন্তু এই গলিতে পা দিতে খুব অস্বস্তি লাগছে। কেন? রজতবাবুকে ঐ অবস্থায় দেখে, নাকি পরপর ঘটনাগুলোর বিস্তারের কথা চিন্তা করে? নাহ, অযথা চিন্তা করছে সে! গুগল ম্যাপ বলছে আরও ৪ মিনিট, পা বাড়াল জয়ী। এবং ঠিক তখনই তার মনে হল যে, এই গলিতে সে একা নয়। কিন্তু গলির দুদিকে যে দু-তিনটি জীর্ণ প্রায় বাড়ি আছে সেইগুলোয় কোন জনমানব বাস করে বলে তো মনে হয় না। তবে?
এই গলিতে পা দেওয়ার পর থেকেই জয়ীর গা, হাত-পা হিম হয়ে যাচ্ছিল। মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে একটু জোরে-জোরেই হাঁটতে লাগল সে। এবং সেই সঙ্গে জয়ীর মনের কোণে লুকিয়ে থাকা একটা অজানা আতঙ্ক আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। এ গলিতে সে ছাড়া সত্যিই কেউ আছে। এর আগে সে বেড়াল পায়ে কোনও শব্দ না করে অনুসরণ করছিল। কিন্তু জয়ী পা বাড়াতেই তারও পায়ের শব্দ শুনতে পেল। এ লোক যে-ই হোক, এর উদ্দেশ্য নিয়ে জয়ীর মনে কোনও সন্দেহই নেই। গলিটার অন্ধকার যেন তাকে আরও গ্রাস করছে। জোরে হাঁটতে-হাঁটতে জয়ীর মনে হল পায়ের শব্দটা আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রচণ্ড বিপদের আশঙ্কা হলে বোধহয় মাথা ও শরীর খুব দ্রুত কাজ করে। হাঁটা না থামিয়ে, নিজের পকেট থেকে পেপার স্প্রেটা বার করল জয়ী। পায়ের শব্দ প্রায় নাগালের মধ্যে এসে পড়েছে। আচমকাই প্রায় আরও পাঁচ পা এগিয়ে গিয়ে জয়ী দ্রুত ঘুরে মুখে রূমাল চাপা দিয়ে পেপার স্প্রে চালাল। তারপর এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে প্রাণপণে দৌড়ে গলির শেষের একটি মাত্র আলোর কাছে পৌঁছল। গলিটা একটি বড় রাস্তার মুখে এসে পড়েছে, গুগল ম্যাপ বলছে, "হেড এস্ট, অ্যান্ড এউর ডেসটিনেশন উইল বি অন দি রাইট।" ঠিক তখনই একটা অটো থেকে এক পরিচিত কণ্ঠ শোনা গেল, " উঠে পড় কুইক। সার্কিট হাউস এইখান থেকে আরও মিনিট-খানেক।" অতুলবাবুকে দেখে জয়ী খানিকটা অবাক হল।
Next Part
All Bengali Stories
116
117
118
119
120
121
122
123
(124)
125
126
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717