Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৮

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    116    117    118    119    120    121    122    123    (124)     125    126   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৮
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
Writer: - Dr. Ipsita Bhattacharjee, Sahid Nagar, Dhakuria, Kolkata


অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯    পর্ব ১০    পর্ব ১১    পর্ব ১২   

## শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৮
রাত ৮.৩০ বাজে। খুব বেশী নয়, তবে ইতিমধ্যেই কালো অন্ধকার নেমে পড়েছে চারিপাশে। এই দিকটা এমনিতেই একটু নিরিবিলি, তার উপর শীতকাল। দূরে কোথাও থেকে মাইকে গান বাজছে। এইসময় প্রচুর ফাংশান হয়ে থাকে, গেস্ট হাউসেও ব্যবস্থা মন্দ নয়। শেরি নিজের উদ্যোগে, পিছনের ছোট লনটা আলো দিয়ে সাজানোর ব্যবস্থা করেছেন। কেয়ারটেকারকে ধরে স্ন্যাক্স, পানীয়ের ব্যবস্থা করে নুরের সাথে বেরিয়ে পরেছেন খাবার আর বন্ধু নেমন্তন্ন করতে। মিম ও বেশ মজা পেয়েছে এহেন ব্যাপার দেখে, সেও বেশ এঞ্জয় করছে বলে মনে হল। অতুলবাবুর স্ত্রীর সাথে বেশ গল্পে মজেছে সে। শেরির কজন বন্ধুও এসেছেন, সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট ব্যাপার। কিন্তু জয়ীর অশান্ত লাগছে। মনে-মনে সে ঠিক করে নিয়েছিল যে সুযোগ পেলেই সে বেরিয়ে পড়বে। মোটামুটি অনুষ্ঠান যখন তুঙ্গে, তখনই জয়ী আসতে-আসতে সরে পড়ল, নিজের ঘরে। দরজা লাগিয়ে ল্যাপটপটা অন করল। জিপড ফোল্ডারটা খুলে দেখল চারটি ফাইল।

স্নেহের রজত,
তুমি যদি এ চিঠি পেয়ে থাক, তবে ধরে নিতে হবে আমি আর নেই। এবং এটা ধরে নিতে হবে যে তোমার দায়িত্ব এখন অনেকগুণ বেশী। আজ থেকে তিন বছর আগে আমার হাতে একটি মহামূল্যবান জিনিস আসে- একটি সপ্তম শতাব্দীর শিলমোহর -যার যোগ রয়েছে স্বয়ং বাংলার মহারাজ শশাঙ্কের সাথে। ঘটনাচক্রে আসামে পুলিশকে একটি শৈব গোষ্ঠীকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করি- এদের একটা টিপিকল প্যাটার্ন ছিল, এরা মানুষকে খুন করে এদের শরীরের একটি হাড় সংগ্রহ করত, উদ্দেশ্য সেইগুলো দিয়ে ভৈরবের একটি বিগ্রহ তৈরি করে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। তা সে যা হোক- সেই গোষ্ঠী তো ধরা পড়ল। এবং তার সাথে পুলিশের হাতে এল তাদের উপাসনার যাবতীয় সামগ্রী - নানাধরনের তন্ত্র সাধনার জিনিস, বেশ কিছু পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক পুঁথিপত্র ইত্যাদি। আমার ওৎসুক্য সম্বন্ধে তো তুমি জানই- এইরকম একটা বিষয়ের সন্ধান পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই, আমি পুলিশের ইন্সপেক্টরকে রিকোয়েস্ট করি যে তাদের জেরায় অপ্রয়োজন সামগ্রী যেন অবশ্যই আমাকে একটু পরীক্ষা করতে দেন। উনি আপত্তি করেন নি। কারণ পরিষ্কার- ইট ওয়াজ অ্যান ওপেন অ্যান্ড শাট কেস- এই দলের মাথা যে লোকটি ছিল সে সব কথাই স্বীকার করে নেয়। ফলে ইনস্পেক্টর আমায় খুশি হয়ে বেশীর ভাগ সামগ্রীই দিয়ে দেন। আর এইখান থেকেই শুরু হয় গোটা আখ্যানটা। গোষ্ঠীর যে মাথা ছিল তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে অনেক প্রাচীন পুঁথি ও বই খুঁজে পাই। বেশীরভাগ এই তান্ত্রিক শৈবিজিম নিয়ে, কিন্তু এরই মধ্যে একটা জিনিস আমি খুঁজে পাই যার সাথে অন্য কোনও বিষয়ের যোগসাজশ ছিল না। একটা শিলমোহর- খুব চেনা; কিন্তু তখন কিছুতেই মনে করতেই পারছিলাম না। পরে যখন ভাল করে পরীক্ষা করে দেখলাম – তখন বুঝলাম; সেই একইরকম চিহ্ন, অনেকটা শশাঙ্কের রহসগড়ের শিলমোহরের মত। পার্থক্য একটাই- এতে কোনও নাম লেখা নেই- অর্থাৎ 'মহাসামন্ত' বা 'মহারাজা' কিছুই লেখা নেই। আমি প্রথমটা খুবই অবাক হয়েছিলাম। ইন্সপেক্টারকে দিয়ে আমি ঐ দলের পাণ্ডা বিশ্বনাথকে জিজ্ঞেস করাই যে সে এই শিলমোহরটি কোথা থেকে সংগ্রহ করে। বেশ কয়েকবার জেরা করা সত্ত্বেও সে এক কথাই বলে যে, সেইটা বহু যুগ ধরে তার পরিবারে রয়েছে। তারা নাকি জাতে ক্ষত্রীয় এবং এইরকম বহু জিনিসই তাদের পরিবারে ছিল। কিন্তু কালক্রমে দারিদ্রের কবলে পরে এইরকম অনেক জিনিসই বিক্রি করে দেয় তারা। এই প্রসঙ্গে বলি, এই বিশ্ব লোকটির প্রাথমিক মানসিক বিশ্লেষণের পর জানা যায় যে সে ডেলিরিয়াস। ফলে তার কথাবার্তায় খুব বেশী ভরসা না করে নিজেই লেগে পড়ি কাজে। প্রায় এক বছরের উপর এই নিয়ে গবেষণা করি,কোনও সূত্র ছাড়া সপ্তম শতাব্দীর একটা ছোট্ট জিনিস নিয়ে কাহাতক এগোনো যায়। শেষে এই বিশ্বের পরিবারের খোঁজ করতে শুরু করি। এই কাজটা ছিল সবথেকে কঠিন। বিশ্বনাথের কোনও নিকট -আত্মীয়-স্বজন নেই বললেই চলে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তার একটা বংশলতি যোগাড় করে রওনা দিই কোটালপাড়া থেকে ৪০ কিমি দূরে একটি ছোট্ট গ্রামে। গ্রামের নাম ওলাংবাড়ি। এই গ্রামেই থাকতেন বিশ্বের একমাত্র জীবিত আত্মীয় বৃদ্ধ মোয়ণ। ভদ্রলোকের সাথে সাক্ষাৎের পর আমি প্রায় ৮০ শতাংশ নিশ্চিত হই যে, এ শিলমোহর বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসকের। বৃদ্ধ জানান যে শিলমোহরটি তাদের পরিবারে বংশানুক্রমে রয়েছে, এবং শুধু তাই নয় আরও বহু প্রাচীন জিনিস ছিল যা তার জীবনকালে অর্থাভাবে বিক্রি হয়েছে। তবে তিনি ছেলেবেলায় শুনেছিলেন যে তার প্রপিতামহ নিজের ৬ সন্তানকে একটি করে এয়ারলুম দিয়ে গিয়েছিলেন যা নাকি তাদের বংশে প্রায় হাজার বছর ধরে রয়ে গিয়েছে। অত্যন্ত দারিদ্রতেও তারা ঐ একটা জিনিস বিক্রি করেন নি- বিশ্বদের ছিল এই শিলমোহর আর তাদের ছিল একটি প্রাচীন আয়না। আমি সে আয়না দেখেছি রজত, নিঃসন্দেহে সেইটি অতি প্রাচীন। তবে শতাব্দীটা কনফার্ম হই এক ভ্যালুয়ারের কাছ থেকে পরীক্ষা করিয়ে। এই দুটি জিনিসই এক সময়। বৃদ্ধ মোয়ণ বলেছিলেন যে তাদের পূর্বপুরুষ প্রাচ্যের রাজা গোছের ছিল বহু শতাব্দী আগে, এমনটাই নাকি তাদের পরিবারের বড়রা তাকে বলে এসেছেন। স্বভাবতই আমার মনে একটাই প্রশ্নের উদ্রেক হয়, এরা কি তবে মহারাজ শশাঙ্কের বংশের কেউ? শশাঙ্কের পুত্র মানবদেবের পর তাদের বংশের বিষয়ে আর কিছু জানা যায় না। কিন্তু এ ধারণা আমার পাল্টায়, যখন বিশদে আমি শিলমোহরটি পরীক্ষা করি। শিলমোহরের পিছনে কিছু লেখা খোদাই করা আছে। প্রথমে বুঝতে পারি নি। কিন্তু ক্রমে যখন আরও গভীরে যাই, তখন বুঝতে পারি তাতে একটি নির্দেশ গোছের কিছু রয়েছে- তার থেকে একটা থিয়োরি সাজিয়েছি। শিলমোহরের প্রথম দুটি পঙক্তির মধ্যে একটা নির্দেশ রয়েছে- সংস্কৃতে যার অর্থ এই যে,
'মহারাজাধিরাজের সমস্ত বিশ্বস্ত সৈনিকদের আহ্বান করা হচ্ছে। রাজকুলে চরম বিপদ আসন্ন। নিজের পালকপিতা ও দেবাদিদেবের উদ্দেশ্যে নিজেদের দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে। মহারাজের উত্তরসূরি বর্তমান। তাদের বিদেশী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করো।'
তারপরের অংশটার প্রতিলিপি তোমায় পাঠালাম। যদি উদ্ধার করতে পার তবে জানবো একজন যোগ্য শিষ্য রেখে যেতে পেরেছি। এই শিলমোহর আমি মিউজিয়ামে দিয়ে দেব- এ জিনিস আমার জীবনে আসার পর থেকে এক মুহূর্তও শান্তি পাইনি। তবু এর সাথে যে একটা বিরাট ইতিহাসও লুপ্ত হয়ে যাবে, সে সম্ভাবনা একেবারে বাদ দিতে পারি নি। তাই তোমাকে দিয়ে গেলাম। রজত, আমার ধারনা, রাজা মানবদেবের রাজত্বের সময় বা তার কিছু পরে, আনুমানিক ৬৩০-২৫ খ্রিষ্টপূর্বে যখন ভাষ্করবর্মা এবং হর্ষবর্ধন কর্ণসুবর্ণ আক্রমণ করেন তখনই রাজপরিবারের বিশ্বস্ত কেউ এই চিঠিটা লেখেন; হয়তো পলাতক অবস্থাতেই। আমার ধারণা যে, শশাঙ্কের বংশ রক্ষার্থে নিযুক্ত বিশেষ সেনানীদেরই এই নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্বরা এই সেনানীর কোনও একজনেরই উত্তরসূরি; রাজকীয় গুপ্ত ফর্মানটি রয়ে গেছে পরিবার সূত্রে। তবে নির্দেশটি গুপ্ত একটি ভাষায় লেখা। দেখ খুঁজে বার করতে পারো কিনা...
পুনশ্চ: এ শিলমোহরে দেওয়া তথ্যের ঐতিহাসিক মূল্য বিপুল। আমি লোভে পা দিই নি। আশা করি তুমিও দেবে না। এই জিনিসের যারা মূল্যায়ন করতে যায় তারা মূর্খ এবং বিপদজনক।
সাবধানে থেকো এবং আমার বার্তাটি আগলে রেখো।
- স্যার
(ডঃ দুর্গামোহন মুখোপাধ্যায়)

জয়ী এতটাই আনমনে চিঠি পড়ছিল যে সে খেয়ালই করেনি তার পিছনে এক ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়িয়েছে, "খেয়ে নাও জয়ীতা। পরে পড়াশুনো করবে। অনেক রাত হল..." অতুলবাবুর স্ত্রী ঠাণ্ডা গলায় বললেন।

#
■ দুর্গাবাবু তিন বছর আগে শশাঙ্কের শিলমোহর পেয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিন আগে তিনি সেইটা মিউজিয়ামে দিয়ে দেওয়ার নির্ণয় করেন। কেন??
■ এই ৩ বছরে তিনি কি সেই মোহরের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছিলেন। এই জন্যেই কি তাঁকে খুন হতে হল?

■ ধুবরির ঐ ভৈরব দলটাকে দুর্গাবাবু ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পেছনে কি তাদের কারুর হাত রয়েছে? নাকি রয়েছে আন্তর্জাতিক কোনও আর্ট মাফিয়াদের দল?

■ দুর্গাবাবুর নিলামের বাজারে বিস্তর ধার ছিল। তার মৃত্যুর সাথে কি এর কোনও সম্পর্ক আছে?

■ মোহর যদি চুরি গিয়েই থাকে, তবে রজতবাবুকে আক্রান্ত হতে হল কেন? তিনি কি আরও কিছু জানেন?

ডায়েরির মধ্যে এই লেখাগুলো নিয়ে হিজিবিজি কাটছিল জয়ী। হঠাৎই অফিস ঘরের এক্সটেনশন বেজে উঠল।

"হ্যালো, "বলল জয়ী।

"ম্যাডাম,রিসেপশন থেকে বলছিলাম। আপনার নামে একটা চিঠি আছে? রিসিভ করব?"

"হ্যাঁ, হয়ে গেলে ভিতরে পাঠিয়ে দিও।"

মিনিট দু'য়েক বাদে একজন বয় এসে ব্রাউন খামে মোড়া একটি চিঠি টেবিলে রাখল। খামটায় কোনও নাম নেই। কোনরকম পোস্ট বা কুরিয়ারে এসেছে কি? মনে তো হয় না। খাম খুলে একখান চিঠি বার করল জয়ী।

"তুমি আন্তর্জাতিক দুষ্টচক্রের পাল্লায় পড়েছ। সাবধান হও, নয়তো পৰিত্ৰাম ভাল হবে না..."

চিঠিটা দেখল জয়ী। একবার, দুবার, তিনবার, চারবারের বার দেখে একটা হাল্কা হাসি খেলল মুখে। তারপর আবার এক্সটেনশন তুলে বলল, "আমি লাইব্রেরিতে একটা বিশেষ কাজে ঢুকছি; দেরী হবে। একটু দেখ কেউ যেন আমায় বিরক্ত না করে।"

লাইব্রেরিতে ঢোকার আগে শুধু একটা মেসেজ করল নুরকে, "নুর, আমায় হয়তো আসাম যেতে হবে, তোমার একটু সাহায্য চাই।"
Next Part


All Bengali Stories    116    117    118    119    120    121    122    123    (124)     125    126   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717