Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ডাক্তারবাবু

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    (125)     126    127    128   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



ডাক্তারবাবু ( পর্ব ১ )
বাংলা গল্প
লেখক - অনিন্দ্য রক্ষিত, পিতা- কমনীয় কুমার রক্ষিত, তালবাগান মেইন রোড, নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর


## ডাক্তারবাবু

পর্ব ১
"বুঝলি হরে, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো উচিৎ নয়," হরিহরদার দিকে চেয়ে বললেন দামুদা, "সমাজে নানারকমের মানুষ আছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ প্রতারক হতেই পারে, তা বলে বেশির ভাগ মানুষই খারাপ বা প্রবঞ্চক, এরকম ভেবে নিলে ভুল করবি।"

সেই সন্ধ্যায়, 'বঙ্গীয় আড্ডাধারী পরিষদ'-এর আড্ডাঘরে তখন হরিহরদা গুম হয়ে মেঝেতে পাতা গদির ওপরে বসেছিলেন। ওনার পাশে রথীনদা, সুপ্রকাশদা আর, পরিষদের প্রবীণতম আড্ডাধারী এবং আড্ডাধারীদের মধ্যমণি, দামোদর রায়, যিনি সকলের কাছে দামুদা নামে পরিচিত, তিনিও ছিলেন। অন্যান্য সদস্যদের কেউ-কেউ টিভি দেখছিল। নিখিলেশ আর বিকাশ দাবা খেলছিল। বিলাল আর নারদ, ওদের দাবা খেলা দেখছিল। জুলু আর পুঁটে চায়ের আয়োজন করছিল। নাদু আর সরফরাজ বেরিয়েছিল, যোগীপাড়ার নারাণ যোগীর 'জয়গুরু ফ্রাই সেন্টার'-এর স্পেশ্যাল তেলেভাজা কিনে আনতে।

দিন চারেক আগে, হরিদার স্ত্রী হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলেন। হরিহরদা ডাক্তার ডেকেছিলেন। ডাক্তারবাবু বৌদিকে পরীক্ষা করেই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নার্সিংহোমে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নার্সিংহোমের নামও তিনি বলে দিয়েছিলেন। হরিদা নার্ভাস হয়ে তৎক্ষণাৎ বৌদিকে সেই নার্সিংহোমেই ভর্তি করে দিয়েছিলেন। তিনদিন আই সি ইউ-তে রাখা হয়েছিল রোগীকে। নার্সিংহোম থেকে বৌদিকে ছাড়ানোর সময়, ওরা হরিহরদাকে আটত্রিশ হাজার চারশো পঞ্চাশ টাকার একটা বিল ধরিয়ে দিয়েছে। তার থেকে চারশো পঞ্চাশ টাকা ডিস্কাউন্ট দিয়েছে। সেই বিল-এ, ডাক্তারের ভিজিটিং-ফীজ ছাড়াও এগারো রকম টেস্ট, আর সাতাশটা ওষুধ এবং ইঞ্জেকশনের তালিকা ছিল। এছাড়া, নার্সিংহোমের রোজকার ভাড়া তো ছিলই। বৌদিকে বাড়িতে আনার পর, গতকাল হরিদা আর একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে ডেকেছিলেন, একটা 'সেকেন্ড ওপিনিয়ন' নেওয়ার জন্যে। সেই ডাক্তারবাবু বৌদিকে পরীক্ষা করে বলেছেন, "এটা নেহাতই একটা মামুলি অসুখ ছিল। গ্যাসের কারণে হয়েছিল। তবে, বৌদির সামান্য রক্তাল্পতা আছে। সেটা অবশ্য আয়রন ট্যাবলেট আর প্রপার ডায়েট খাইয়েই ঠিক করা যায়। সেই সঙ্গে, কুলেখাড়া শাকের রসও খাওয়ানো যেতে পারে," এই কথা শোনার পর থেকে হরিহরদা গুম মেরে আছেন আর, সব ডাক্তারকেই তিনি 'কসাই' ভাবতে শুরু করেছেন।

দামুদা বললেন, "মন খারাপ করিস নে হরে; অপ্রিয় সত্যি কথা বললে সকলেরই শুনতে খারাপ লাগে। কিন্তু তবুও বলছি, তুই আটত্রিশ বছর আবগারি দপ্তরে চাকরি করছিস, ঘুষ তো কম খাস নি; তারই কিছুটা না হয় ডাক্তার আর নার্সিংহোম খেয়েছে। এখন, 'সবাই খচ্চর' এ-কথা ভেবে দুঃখ পাচ্ছিস কেন? তুই নিজেও কি চাকরি-জীবনে কম দুর্নীতি করেছিস? অবশ্য, তোকে একাই বা দোষ দিয়ে কী লাভ, তোদের দপ্তরে তো শুনেছি, ঘুষ না নেওয়াটাই অপরাধ। আর শুধু তোদের দপ্তর কেন, ঘুষ আর দুর্নীতির কারবার তো এখন সর্বত্রই...তবে সবাই বদ লোক, এ-কথা ভাবলে ভুল করবি। জানবি, বাঁশ থেকে লাঠি হয়, আবার, বাঁশ থেকে বাঁশিও হয়। আমার নিজের চোখে দেখা এক ডাক্তারের কথা তোকে শোনাই, তাহলেই বুঝতে পারবি।"

মুড়ির সঙ্গে জয়গুরু ফ্রাই সেন্টার থেকে আনা গরমাগরম মোচার চপ চিবোতে-চিবোতে রথীনদা হরিহরদাকে বললেন, "দামুদায় ঠিকোই কইছেন হরিদা। সব ডাক্তার তো আর বদ হয় না, আপনের কপাল মন্দ, তাই বদ ডাক্তারের খপ্পরে পড়ছিলেন। কী আর করা যাইব... যা হইছে, মাইন্যা লন।"

হরিদা রক্তচক্ষু মেলে রথীনদার দিকে চাইলেন। রথীনদা মন দিয়ে মুড়ি আর মোচার চপ চিবোতে লাগলেন। বাগদা-চিংড়ির চপ-এ কামড় দিয়ে দামুদা বললেন, "মাস ছ'য়েক আগের কথা। তোদের বৌদি তখন বেজায় সর্দি-কাশিতে ভুগছে। এরমধ্যে একদিন সুধীরের সঙ্গে বাজারে দেখা হল। আমাদের এল আই সি অফিসের ক্যান্টিন-এ কাজ করে। আমার থেকে অনেক জুনিয়ার। আমি চাকরিতে থাকাকালীন আমাকে খুব শ্রদ্ধা-ভক্তি করত। এখনও অবশ্য করে... যাহোক, ওর খোঁজখবর নিলাম। ও বলল – কি আর বলব স্যার, আমার মেয়েটা গত তিন মাস ধরে ভুগছে। ইলেভেন-এ পড়ে। পড়াশোনায় বেশ ভালো কিন্তু স্কুলে যেতে পারছে না আজ কতদিন হয়ে গেল শরীরে জোর পায় না। দিন-দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। মাঝে-মাঝে জ্বরও আসে। কী যে হয়েছে, কিছু বুঝতে পারছি না। একজন বড় ডাক্তারকে দেখিয়েছি। একগাদা টেস্ট করাতে দিলেন। কোথা থেকে টেস্ট করাব, সেটাও বলে দিলেন। শুধু টেস্ট-এর খরচই লাগল আট হাজার টাকার ওপরে। এখন ডাক্তারবাবু বলছেন, পেশেন্টকে নার্সিংহোমে দাও। কোন্ নার্সিংহোমে ভর্তি করাব, সেটাও বলে দিলেন। কিন্তু মেয়েটার যে কী হয়েছে সেটা খুলে বলছেন না। নার্সিংহোমে দিলে কত টাকা লাগবে কে জানে, আমার তো অত টাকাও নেই। কী যে করবো...
আমি বললাম – সুধীর, এক কাজ কর। নার্সিংহোমে দেওয়ার আগে তুই একবার অমিতাভ ডাক্তারকে দেখিয়ে নে। খুব ভালো ডাক্তার। আমাদের বাড়িতে কারও কোনো অসুখ হলে আমরা তো ওর কাছেই যাই। আজ সন্ধ্যেবেলাতেই তো ওর চেম্বারে তোর বৌদিকে নিয়ে যাব ঠিক করেছি। ও কদিন ধরে সর্দি-কাশিতে ভুগছে। আমি বরং তোর মেয়ের কথা ডাক্তারকে বলব। তুই চিন্তা করিস না। তোর ফোন নম্বরটা আমাকে দে। আমি দেখছি, কিছু করা যায় কি না।
সুধীর বলল – অমিতাভ ডাক্তার? তিনি কোথায় বসেন?
আমি বললাম – অমিতাভ ঘোষাল। এম ডি মেডিসিন। রাসমণি রোড-এ কালিপদ সেনের বাড়ির একতলায় চেম্বার। তোর বাড়ি থেকে একটু দূর হয় বটে; আর, ওর চেম্বারে খুব ভিড়ও হয়, তবুও বলছি, একদিন মেয়েকে নিয়ে গিয়ে অমিতাভ ডাক্তারকে দেখিয়ে নে; তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নিবি।
সুধীর কয়েকবার অমিতাভ ঘোষাল নামটা বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে আমাকে বলল – আচ্ছা, উনি কি 'অভয়চরণ উচ্চ মাধ্যমিক' স্কুলের ছাত্র ছিলেন?
আমি বললাম – তা তো আমি জানি না। আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। তোর বয়সীই হবে। আমি তো ওকে 'তুমি' করে বলি। আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে। আর, ছেলেটা শুধু দারুণ। শুধু একজন ভালো ডাক্তারই নয়, একজন ভালো প্রকৃতির মানুষও। আর, ওর সেন্স অফ হিউমারও দারুণ ভালো! সেদিন আমাকে বলল, ওর নাকি এক পেশেন্ট আছে, সে এতই মোটা যে তার লুঙ্গিতে গিঁট মারতে হয় না। মাথা দিয়ে গলিয়ে দিলে পেটে এসে টাইট হয়ে আটকে যায়।
আমার কথা শুনে সুধীর হা হা করে হেসে উঠল। তারপর বলল – অভয়চরণ স্কুলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল অমিতাভ ঘোষাল নামের একটা ছেলে। আপনার কাছে বাড়িয়ে বলছি না স্যার, ক্লাস ফাইভ থেকে এইট পর্যন্ত আমি ছিলাম ক্লাসের ফার্স্ট বয়। আর অমিতাভ ছিল সেকেন্ড বয়। তারপর, নাইনে ওঠার আগেই আমার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। বাবা তো একটা শাড়ির দোকানে কাজ করতেন। সুতরাং, আমাদের আর্থিক অবস্থা কিরকম ছিল বুঝতেই পারছেন। বাবা হঠাৎ করে চলে যাওয়ার পর, বড় ছেলে হিসেবে, মা আর ছোট দুই ভাই-বোনের দায়িত্ব এসে পড়ল আমার কাঁধে। পরিবার চালানোর তাগিদে আমি পড়াশোনা ছেড়ে খবরের কাগজ ফিরির কাজ, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে সব্জি বিক্রির কাজ, রাজমিস্ত্রির যোগাড়ের কাজ ইত্যাদি কি-না করেছি! তারপর, শেষে আপনাদের অফিসের ক্যান্টিনে কাজ পেলাম। স্কুলের বন্ধুদের খোঁজখবর রাখা আর হয়ে ওঠে নি। জানি না কে কেমন আছে, কী করছে... আপনার মুখে অমিতাভ ঘোষাল নামটা শুনে মনে হল, ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেই অমিতাভ নয় তো?
আমি বললাম – সে যাহোক, আমি ত আজ সন্ধ্যেতেই ওর চেম্বারে যাব, তখন অমিতাভকে তোর মেয়ের কথা বলব। ও কী বলে জেনে, তোকে জানাব। দরকার হলে আমি তোর সঙ্গে যাব।
সুধীর ছলোছলো চোখে আমার দিকে চেয়ে হাত কচলে বলল – আপনি যা বলেন স্যার..."

চায়ে চুমুক মেরে আবার বলতে শুরু করলেন দামুদা, "তো, সেদিন সন্ধ্যেয় তোদের বৌদিকে নিয়ে আমি অমিতাভ ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম। রোগীকে দেখে, ওষুধ-টষুধ লিখে দেওয়ার পর আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম – সুধীর বসু বলে কাওকে তুমি চেনো নাকি হে ডাক্তার? তোমার সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছে ... একটু মনে করে দেখ তো ...
অমিতাভ ডাক্তার আমার কথা শুনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল – সুধীর বসু ... সুধীর... লম্বু সুধীর... তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল – খুব লম্বা? চুল কোঁকড়ানো? ডান গালে একটা আঁচিল আছে?
আমি বললাম – হ্যাঁ, ছ' ফুটের বেশিই হবে কিন্তু বেজায় রোগা। চুল লম্বা আর কোঁকড়ানোই বটে। আর হ্যাঁ, সুধীরের ডান গালে একটা আঁচিলও আছে বটে। সে তোমার পরিচিত না কি?
ডাক্তারের স্মৃতিশক্তি প্রখর। সঙ্গে-সঙ্গে বলল – অভয়চরণ স্কুলে, আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল। আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন ছিল সুধীর। পড়াশোনায় দারুণ ভালো ছিল। পরীক্ষার সময় ওর থেকে কত হেল্প পেয়েছি ... কিন্তু এইট-এ পড়ার সময় ওর বাবা হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় ও স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর থেকে আর ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয় নি। অবশ্য, স্কুলের বন্ধুদের ক'জনের সঙ্গেই বা যোগাযোগ আছে এখন ... সকলেই যে-যার কাজে ব্যস্ত। যাই হোক, আপনি সুধীরকে চেনেন নাকি?
আমি তখন সুধীরের মেয়ের সমস্যার কথা ডাক্তারকে খুলে বললাম। ওর আর্থিক অবস্থার কথাও জানালাম।
অমিতাভ ডাক্তার আমার কথা শুনে বলল – আপনি ওর ঠিকানা আর ফোন নম্বরটা আমাকে দিতে পারেন? উফ্! কতদিন পরে একজন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে। এ-কথা ভাবতেই আমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে! আপনি ওকে কিছু বলবেন না। আমি ওকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।
আমি – বেশ, তাই হবে – বলে, সুধীরের বাড়ির ঠিকানা আর ওর ফোন নম্বর অমিতাভ ডাক্তারকে দিয়ে এলাম। তারপর প্রায় দু মাস কেটে গেছে। একদিন হঠাৎ বাজারের রাস্তায় সুধীরের সঙ্গে দেখা। আমাকে দেখেই ঢিপ করে একটা প্রণাম করল। আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললাম – আরে, আরে, করিস কী! আজ তো পয়লা বোশেখ বা বিজয়া দশমী নয়। হঠাৎ করে পেন্নাম ঠুকলি কেন? ব্যাপারটা কী?
Next Part


All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    (125)     126    127    128   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717