Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

তাণ্ডব

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    116    117    118    119    120    121    122    123    124    125    (126)    

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



তাণ্ডব( পর্ব ১)
বাংলা গল্প
লেখক - দীপ্তেশ মাজী, বাবা- শ্রী শশধর মাজী, চেতলা রোড, আলিপুর, কলকাতা


## তাণ্ডব
পর্ব ১
উনানে ভাত চাপিয়ে বাইরে বৃষ্টি দেখছিল গোপা। হঠাৎ শোঁ শোঁ শব্দে ঘুরে দেখে, সর্বনাশ! ওপাশের দরজার তলা দিয়ে হালকা একটা স্রোত এসে আগুন নিভিয়ে দিয়েছে। দরজা খোলার আর সাহস হল না। শীতল ময়রার তেলেভাজার দোকানে ভূষণ তামাক মুখে আড্ডা দিচ্ছিল, সব শুনে সেও ছুটল লুঙ্গীর কাছা তুলে। শীতলের দোকান মুহূর্তের মধ্যে শ্মশানে পরিণত হল। আকাশ-ভাঙা বৃষ্টির প্রকোপ বেড়েছে তখন। উঠোন দিয়ে বিদ্যেধরীর গলা পাওয়া যাচ্ছে, "খেপী কোথাকার! বোধবুদ্ধি চুলোয় দিয়েছু নাকি!"

পাশে দাঁড়িয়ে গোপা ফোঁপাচ্ছে। ভূষণ গিয়ে খাটের তলা হতে হাতি-মার্কা টর্চটা নিয়ে গোপাকে বাইরে আসতে বলল। একটা উঁচু টিলার মত জায়গা। সেখানে দাঁড়িয়ে সামনে টর্চের আলো ফেলতেই গা-টা কেমন শিউরে উঠল। কম্পিত বুকে দুটো শব্দ বেরিয়ে এল, 'সব যাবে!' ঐ বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে গোপা ওর বাপের হাত শক্ত করে ধরে রইল। বলল, "বাবা, এবারে জল আসবে না বলেছিল যে!"

ভূষণ আর সময় নষ্ট করল না। এখনই অন্যত্র গেলে হয়তো বিপদ কিছুটা এড়ানো যাবে; গোপা আর বিদ্যেধরীকে নিয়ে ঘর ছাড়ল। যাওয়ার আগে আর একবার টর্চের আলো ফেলে দেখল; ফিরে এসে আর কি কিছু পাবে!

যাই হোক, ঝড়ের তাণ্ডব এবারে কম হলেও জল হয়েছে তার চার গুণ। আরও এক ঘণ্টার তাণ্ডবে ঘোড়ামারা ব্লকের আশপাশের গ্রাম জলমগ্ন। আকাশের অবস্থা একইরকম। ভূষণদের গ্রামটা দিকে-দিকে নদীবেষ্টিত। সমীক্ষা সূত্রে খবর, ঘোড়ামারা জায়গাটা নদীর জলতলের নিচে নেমে গেছে। সুতরাং এলোপাথাড়ি জল না ঢোকার কোনও কারণই নেই!

#
'মন্দিরতলা বিদ্যানিকেতন' গ্রামের দ্বিতীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরেকটা আছে পাশের গ্রামে। ভূষণ দেখল, ইতিমধ্যেই শয়ে-শয়ে এসে হাজির হয়েছে। স্কুলের পাঁচিলের সামান্য নিচে জলস্তর। সন্ধ্যেও হয়ে এসছে। স্কুলটাকে অন্ধকারে প্রেতাত্মাদের বাসা বলেই মনে হয়। অবশ্য যারা ভিটেমাটি চাটি করে এসেছেন তারা তো ভূতই! কারোর চালাঘর উড়ে গেছে, বাগান জলে নিমগ্ন, গবাদি পশুকে ছেড়ে দিতে হয়েছে, মাছের ব্যবসা লাটে উঠেছে। শুধু তো জল খেয়ে বেঁচে থাকা যায় না! নিকষ কালো লোকগুলো নিষ্পাপ, প্রকৃতির শান্ত অত্যাচারে মুখ বুজিয়ে থাকে। তাণ্ডব তখনও চলছে। গোপা, ওর মা এক স্থানে এসে হুড়মুড়িয়ে বসল। স্কুল ঘর অন্ধকার। আরও অনেকে এসছে। কারোর হায় হতাশ, কারোর আর্তনাদ, শিশুদের কলরবে পরিবেশ আচ্ছন্ন।

"কে, গোপার মা নাকি!" কারোর মুখই স্পষ্ট নয়। আবার স্বর ভেসে আসল, "গোপা! গোপার মা বিদ্যেধরী না!"

বিদ্যেধরী চোখের জল মুছে বলল, "কে গা, মোগলা বাক্স!"

ক্ষণিকের জন্য দেশলাই জ্বালল মোগলা বাক্স। লম্বা দাড়ি বুক অব্দি নেমে এসছে। গোপা দেখে বলল, "দাদু তোমাদেরও! জল যে আসবে না বলছিল!" বিড়ি ধরিয়ে খানিক টানলেন মোগলা। তারপর বললেন, "আল্লার কৃপা আর নাই! আমরা সব অপয়া। আসার আগে এই তাবিজ খানি নিলুম। লক্ষীকেও ছাইরা দিমু। হায় রে লক্ষী, ভালো থাক..." লক্ষী হল বৃদ্ধ-র পোষা পাঁঠি। "ভূষণ যে কয়েছিল এবারে কিস্যু হবে না। বউমা, তা কি হল গা!"

বৃদ্ধ-র কথায় চুপ করে থাকে বিদ্যেধরী। সে জানে, তার স্বামীকে এখন এমন হাজার কৈফিয়ত দিতে হবে। পঞ্চায়েতের সাথে গায়ে গা ঠেকিয়েছে কিনা! তবে, এবার আসল পরীক্ষা। আগের ঝড়ে খাবার দাবার কিছুই অবশিষ্ট ছিল না, উপরন্তু পানীয় জল আর দু'হাতা খিচুরির জন্য মারপিট লেগে গেছিল। বিদ্যাধরী, কালনাগিনী, মাতলা, রায়মঙ্গল সবই ফুঁসছে। অচিরেই গ্রামের সীমানাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঠ ঘাট সমান করে দিয়েছে।

একটু আগে বসন্ত এসে জানিয়ে গেল, "কয়েকজন এসো নি৷ সামনে যদি কেউ থাকে নিয়ে পালিয়ে আসি.." ভূষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। ওর সাথে আরও কয়েকজন জলে সাঁতার দিয়ে পাঁচিলের কাছে আসল। একটা মাঝারি সাইজের ভেলা জোগাড় করা হল৷ দু-তিনজন মিলে তাতেই জল ঠেঙিয়ে চলল। জমাট বাঁধা অন্ধকার চতুর্দিকে। সমানে বৃষ্টি হচ্ছে। গাম্বাট টর্চের আলোয় একটা নীল সাদা দোকানের সামনে এল। তার ঝাঁপ ফেলা৷ টিনে ঠকঠক শব্দ করতেই ভেতর দিয়ে হাঁক এল, "ওপাশ দিয়ে আসো। এখানে কোমর জল।"

#
গ্রীল সরিয়ে আর যাওয়া গেল না। বসন্ত আর হাবু জল-সাঁতরে ভেতরে গেল। এটা মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ি। ওর বউ আর মেয়ে ঘরে ছিল। ও গেছিল শহরে, আর ফেরবার উপায় নেই। ভেলায় বসে ভূষণ দূরে তাকাল। মাঝে-মাঝে বাজ পড়ছে। আলো ছিটকে যতটুকু দেখা যায় তাতেই কপালে ঢেউয়ের মত হাত দিয়ে দেখল। বটতাল-আশুতের ত্রয়ী ভিটেটা একটা দ্বীপের মত মনে হচ্ছে। কি জানি কত জল আছে ওখানে! ওর দখিনেই ভূষণ ও আরো অনেকের ইউক্যালিপটাসের বাগান ছিল। আরো অনেক কিছুই ছিল বাগানে। ঘরের পেছনেই সবে পরশুদিনে ঝিঙে বিচি, ঢ্যাঁড়শ বিচি ছড়িয়ে ছিল। সব গেল! ভেলা ভর্তি করে তাতে মৃত্যুঞ্জয়ের বউ বাচ্চা, বসন্তের বুড়ি মা এবং আরও কয়েকজনকে নিয়ে ওরা মাঠে থামল। দূরে স্কুলের মাথাটা ক্ষীণ দেখা যাচ্ছে। বসন্ত হেসে বলল, "হাই! সে কি জল গো কত্তা!" ভূষণ একটা বিড়ি ধরিয়ে বলল, "দাঁত কেলাচ্ছ কেনে! জলে নাব।"

ঝপাং করে কয়েকজন জলে নেমে পড়ল। ভালো সাঁতার না জানলে এই জলে বেগ পাওয়া মুশকিল, বাকিরা ভেলায় যেতে লাগল। স্কুলের যে মাঠে বাচ্চারা ফুটবল আর ধরাধরি খেলত, সেই মাঠ এখন স্তরে-স্তরে কাদা-জলের গোঙানি আওরাচ্ছে। বিদ্যালয়ের সিঁড়ি বেয়ে সবাই ওপরে উঠেছে। নিচের তলাতেও জল ঢুকেছে। এখন সবে ছ'টা কি সাড়ে ছ'টা হবে। সারা রাত বৃষ্টি হবে বলেছে। কালকের সকাল হয়তো সবার কাছে দিবাস্বপ্ন! এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গত দু'রাত এভাবেই কেটেছে ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দাদের। পোড়া হাঁড়ির মত আকাশের রূপ। যেন সাক্ষাৎ যমপুরী, জোর জবরদস্তি সবাইকে তুলে নিয়ে যাবে। গোপা একবার জানলায় উঁকি মারল। বোধগম্য হল না কিছুই। পরনের নাইটিও ভিজে গেছে। এবছর উচ্চ-মাধ্যমিক হলেও ওর হয়তো দেওয়া হবে না। খাতা বই সব গেছে। দু'বারের তাণ্ডবে পড়াশুনা শিকেয় উঠেছে, বাকিদেরও একই অবস্থা। রাতটা কোনও রকমে ওরা কাটিয়ে দিল। বিদ্যেধরী বুদ্ধিমতী। আসার সময় ভাতের হাঁড়িতে দুটো কলা নিয়ে এসছে। গোপা ও আর কয়েকজন শিশু ক'গাল খেল। ভূষণের দেখা নেই। গোপা একবার হেঁকে বলল, "দাদু খাবে নাকি গা দু'মুঠো!" অমনি বিদ্যেধরী ওর উরুর কাছে চিমটি কেটে ফিসফিস করল, "মরণ ও হয়নি! ও তো মোসলমান!" কিন্তু ততক্ষণে মোগলা বুড়ো থরথরিয়ে এসে বলে, "কই, দে দেখি..." গোপা, ভাত লুকিয়ে একটা আধখানা কলা দেয়। মাঝে-মাঝে দু-একজন এসে উঠছে। তাতেই সবাই কেঁপে-কেঁপে উঠছে। সিঁড়িতে বসেই কয়েকজন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। শুধু ঘুম নেই ভূষণের চোখে। খালি চোখেই সে যেন গোটা গ্রাম ভেসে যেতে দেখছে। আসলে মেয়ে, বউকে নিয়ে সে অন্যত্র যাবে ঠিক করেছিল, সেটা সবাই জানে। ঝড়ের আগে শীতলের দোকানেও বলেছে, "চিন্তের কিছু নেই। ওরা বলেছে সব সামাল দেবে।" কিন্তু কোথাও কারুর পাত্তা নেই। আসবেও কি করে!
Next Part


All Bengali Stories    116    117    118    119    120    121    122    123    124    125    (126)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717