All Bengali Stories
119
120
121
122
123
124
125
126
(127)
128
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
সিঁদুর - পর্ব ২
বাংলা গল্প
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, করিমগঞ্জ, আসাম
অন্যান্য পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
##
সিঁদুর
পর্ব ২
সময় বয়ে যায়। সোম মাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করে সায়েন্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এমিলা মাধ্যমিক দেবে, পড়ার চাপ দুজনেরই। কিন্তু তার মধ্যে একটু সময় পেলেই দুজনে সাইকেল নিয়ে কোথা থেকে কোথা চলে যায়। কখনও পাহাড়ি নদীর ধারে, চা বাগানের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে ছুটে বেড়াত দুজনে; আর ওদের কত কথা,কত গল্প, কত পরিকল্পনা। এমনিতে দুজনের কোয়াটার পাশাপাশি, দুজন-দুজনের ঘরে অবাধ যাতায়াত। এমিলার পরিবার ক্রিশ্চান হলেও ওরা সব পূজো পার্বণে অংশ গ্রহণ করত। আর সোমের ঘরে কোন পূজো হলে সবার আগে ছুটে যেত এমিলা, দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে সূচনা দেবীর পূজোর আয়োজন করা দেখত। মাঝে-মাঝে এটা ওটা প্রশ্ন করত, "কাকিমা এটা কি? ওটা কি? এটা করলে কি হয়?"
সূচনা দেবী কাজ করতে-করতেই ওর প্রশ্নের উত্তর দিতেন। এমিলা মনে-মনে ভাবত, সেও একসময় কাকিমার মতো লাল পাড় শাড়ি পড়ে পূজোর আয়োজন করবে ভক্তি ভরে। কারণ সোমের বউ হয়ে সে-ই এই ঘরে আসবে।
ওরা যখন ছোট বেলায় ঘুরে বেড়াত তখন ওদের কেউ কিছু না বললেও বড় হওয়ার পর ওদের নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলে। ডেভিড, অনামিকা এসব কথা খুব একটা পাত্তা দেন না, কিন্তু সুব্রতবাবুর সম্মানে লাগে আজেবাজে কথা শুনে। অনেকে বলছে এমিলার কারণে নাকি সোমের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। সোম লেখাপড়ায় বেশি দূর এগোতে পারবে না।
সুব্রতবাবু ঘরে এসে সোমকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, "ক্রিশ্চান মেয়েটার সঙ্গে এবার ঘুরে বেড়ান বন্ধ করে একটু লেখাপড়ায় মন দাও সোম। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট না করলে তোমার আর ডাক্তারি পড়া হবে না।"
সোমের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক ভালো। বাবাকে সে একটু-একটু ভয় পায়, আবার নানা আবদারও করে বাবার কাছে। বলল, "একথা কেন বলছ বাবা? আমি তো ছোট থেকেই এমিলার সঙ্গে ঘুরে বেড়াই। আমরা দুজনে খুব ভালো বন্ধু।"
"আগের কথা বাদ দাও, এখন তোমরা বড় হয়েছ। পড়াশোনার চাপ বেড়েছে তাছাড়া লোকে নানা কথা বলছে তোমাদের নামে।"
"যার যা খুশী বলুক, আমার এমিলার সঙ্গে কথা না বললে পড়াশোনায় মন বসে না। ও হচ্ছে আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন!"
"কি বললি তুই বেঁচে থাকার অক্সিজেন!!" খুব রেগে যান সুব্রতবাবু। উনার চীৎকার শুনে ছুটে আসেন সূচনা দেবী, "কি হয়েছে ছেলেটার উপর এতো রেগে আছ কেন?"
"বুঝাও তোমার ছেলেকে। এটা লন্ডন আমেরিকা নয়। এমিলার সাথে ঘোরাফেরা, কথা বলা যাতে বন্ধ রাখে।"
"ঠিক আছে তুমি যাও আমি ওকে বুঝিয়ে বলব। মানুষের কোন কাজ নেই ওদের নিন্দে করা ছাড়া!"
"ওরা যেমন খুশী ভাবে চলাফেরা করবে আর কেউ কিছু বলবে না, তা কি করে হয়!" রেগে বেরিয়ে যান সুব্রতবাবু।
সূচনা দেবী ছেলেকে বলেন, "আমি জানি সোম, তোরা একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসিস।"
"এমিলাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না মা, সে যে-যাই বলুক না কেন!"
"বেশ তো তুই নিজের পায়ে দাঁড়ালেই আমি তোদের বিয়ে দিয়ে দেব।"
"কথা দিলে তো! তখন আবার বলো না যেন, ক্রিশ্চান মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবে না। তাহলে কিন্তু আমি সন্ন্যাসী হয়ে হিমালয়ে চলে যাব।"
"ওরে পাগলা সে সব কিছু করতে হবে না তোকে, আমি তো আছি।"
খুশীতে মাকে জড়িয়ে ধরেছিল সোম।
#
মাঝখানে কেটে গেছে অনেক গুলো বছর। ঘটে গেছে কত ঘটনা...সবকিছু বদলে গেছে। ছয়ত্রিশ বছরের ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট ডাঃ সোমরাজ বসু কলকাতায় এসেছেন কয়েকদিনের জন্য। চারদিকে তার খুব নামডাক হয়েছে। তার বাবা মায়ের ইচ্ছে মতো সোমরাজ বড় ডাক্তার হয়েছেন। তিনি এখন মুম্বাইতে বড় হাসপাতালে কর্মরত। তবে মাঝে-মাঝে তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয় অনুরোধ করে কিছু সময়ের জন্য। তিনি চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় গেলেও কলকাতার ক্যান্সার হাসপাতালে এই প্রথমবার এলেন। ছয়ত্রিশ বছর বয়সেও ডাঃ বসু আবিবাহিত। বাবা, মা বেচে নেই, তিনি একাই থাকেন। প্রচুর রোজগার করেন, কিন্তু তার অনেকটাই দান করে দেন অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, অসহায় মানুষের উন্নয়নমূলক কাজে। এত বড় ডাক্তার একেবারে সাধারণভাবে চলাফেরা করেন, নিরামিষ খান, কেমন একটা বৈরাগ্য ভাব রয়েছে তার মধ্যে।
এয়ারপোর্ট থেকে নেমে গাড়ীতে বসে ফেলে-আসা দিনগুলোর নানা কথা ভাবছিলেন ডাঃ বসু। মায়ের কথা, বাবার কথা, এমিলার কথা, দার্জিলিং-এর চা বাগানের কথা। আজ তার প্রচুর নামডাক, অর্থ হয়েছে, কিন্তু অতীতের সবকিছু হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে। ডাক্তারি পড়তে কলকাতায় আসার আগে শেষ বারের মতো দেখা হয়েছিল এমিলার সঙ্গে। তারপর যখন বাড়ীতে যান এমিলাকে আর দেখতে পাননি। চলে গিয়েছিল এমিলা দার্জিলিং থেকে। কেটে গেছে অনেক বছর তিনি এমিলার খোঁজ পাননি। হয়ত এমিলা অন্য কাউকে বিয়ে করে ছেলে-মেয়ে স্বামীকে নিয়ে সুখে সংসার করছে। কিন্তু তিনি এমিলার জায়গায় কাউকে বসাতে পারেন নি, তাই বিয়ে করেন নি। সূচনা দেবী বলেছিলেন তিনি সোম আর এমিলার বিয়ে দেবেন; আর এমিলা বলেছিল, সে সোমের হাতে সিঁদুর পরে তার বউ হয়ে তার সঙ্গেই সংসার করবে। কিন্তু দুজনের কেউ কথা রাখেনি। এসব কথা যখন তার মনে হয় একটা চাপা অভিমান অনুভব করেন তিনি। আবার মনে হয় যাদের উপর অভিমান করবেন তারা দুজনের কেউ তার কাছে কখনও আর আসবে না।
#
সোমরাজ উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করার পর জয়েন্ট এন্ট্রান্সে বসে প্রথম বারেই ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করে ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে যায়। খুব খুশী সুব্রতবাবু, সূচনা দেবী, দার্জিলিং-এর লোকজন। এমিলার পরিবারের সবাই খুব খুশী আর সবচেয়ে খুশী এমিলা। সে ভবিষ্যতে ডাক্তারের বউ হবে এটা ভেবেই তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। মেডিকেল কলেজে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে সোম বাড়ীতে যখন আসে দুজনে সাইকেল নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে চলে যায় পাহাড়ি নদীটার ধারে। এমিলা তখন আনন্দের সাগরে ভাসছে আবার মনে-মনে একটু অভিমানও আছে।
সেদিন সে হলুদ রঙ্গের চুড়িদার পড়েছিল, লম্বা চুলগুলো খোলা ছিল, পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলো তার শরীরে এসে পড়ায় অপূর্ব লাগছিল তাকে। সোম তার উপর থেকে চোখ সরাতেই পারছিল না।
"এই সোমদা কি দেখছ অমন করে?"
"তোকে দেখছি রে পাগলী!"
"আমাকে কি এই প্রথম দেখলে?"
"না আগেও দেখেছি তবে আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে। এত সুন্দর আগে কখনও লাগেনি।"
"সুন্দর না ছাই! কলকাতায় মেডিকেল কলেজে আরও কত সুন্দরী পাবে, তখন কি তোমার আর এই পাগলীর কথা মনে থাকবে!"
সোম মুচকি হেসে বলল, "হতেও পারে এমনটা; কলকাতার সুন্দরীদের ঠ্যালায় হয়ত আমি তোকে ভুলে যেতেই পারি..."
এমিলা অভিমানের সুরে বলল, "বেশ তাহলে ওদের কাউকে বিয়ে করে তার সঙ্গেই থেকো। আমি আর তোমার সঙ্গে কথা বলব না। আমি এখন যাই।"
এমিলা উঠে চলে যাচ্ছিল সোম তাকে টেনে বসাল। বলল, "তোকে কি আমি এমনি পাগলী বলি? যত বড়ই হোস না কেন এখনও ছোটদের মতো ঝগড়া করার স্বভাব গেল না। আচ্ছা আমি যদি অন্য কাউকে ভালোবাসি তাহলে তোর কেমন লাগবে?"
"আমি তাকে মেরে ফেলব।"
"কেন?"
"কারণ আমি ছাড়া তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। আর যদি তা-ই কর তাহলে আমি মরে যাব।"
"চুপ কর পাগলী!" বলে এমিলার মুখটা আলতো ভাবে চেপে ধরেছিল সোম। দুজন -দুজনের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর এমিলার ঠোঁটে প্রথমবার চুমু খায় সোম, আর প্রজাপতির মতো চটপটে মেয়েটা জীবনে প্রথমবার লজ্জা পেয়েছিল। ওরা একজন আরেকজনকে ভালবাসলেও শরীর নিয়ে খেলেনি কখনও। সোম বলল, "এই চুমুটা ঠোঁটে রেখে দিলাম। যখনই অন্য মেয়েরা আমার কাছে আসতে চাইবে তখনই চুমুটা আমাকে তোর কথা মনে করিয়ে দেবে।"
"ধ্যাত তুমি যে কি!" বলে এমিলা সাইকেল নিয়ে ছুটে চলে গিয়েছিল। সোম তাকে অনেক ডাকতে থাকে, কিন্তু এমিলা এতো লজ্জা পেয়েছিল যে আর ফিরে তাকায়নি। এটাই অদের শেষ দেখা ছিল।
সোম ঘরে এসে নিজের কীর্তির জন্য মনে-মনে হাসছিল। এমিলার মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়া লেগেছে তার ঠোঁটে। হঠাৎ তার কি যে হয়েছিল মনে হচ্ছে দুজনেই বড় হয়ে গেছে। ভাবতে থাকে কবে সে ডাক্তার হবে আর কবে এমিলাকে কাছে পাবে। না সে মেডিকেল কলেজে পড়তে গেলেও অন্য কোন মেয়ের সঙ্গে সে কোন সম্পর্ক গড়ে তুলবে না। এমিলার সঙ্গে সে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।
এদিকে নিজের ঘরে এসে বার-বার নিজের ঠোঁটে সোমের স্পর্শ অনুভব করে বিছানায় শুয়ে একা-একা হাসছিল এমিলা। অনামিকা দেবী ওর এভাবে হাসি দেখে বললেন, "কি হয়েছে এমিলা, এভাবে হাসছিস কেন?"
"কিছু না মম, এমনি..."
"এমনি আবার কেউ হাসে নাকি? লোকে তোকে পাগল বলবে। আচ্ছা ছাড়, সোম কাল সকালে চলে যাবে। দিদিও সঙ্গে যাবেন। চল একবার দেখা করে আসি।"
এমিলার তখন সোমের সামনে যেতেই লজ্জা হচ্ছিল। বলল, "না, তুমি যাও। আমি যাব না।"
"বাব্বাঃ, এমনিতে তো দুটিতে গলায়-গলায় ভাব, আর এখন ওর সঙ্গে দেখা করতে যাবি না! দেখিস কাল আবার সোম চলে গেলে পা ছড়িয়ে আবার কাঁদতে বসিস না যেন!"
পরদিন খুব সকালে সোম চলে গিয়েছিল। বার-বার এমিলার ঘরের দিকে তাকিয়েছিল, কিন্তু এমিলা সারারাত সোমের কথা ভাবতে-ভাবতে ভোরবেলা ঘুমিয়েছে তাই তখন সে ঘুমেই ছিল।
Next Part
All Bengali Stories
119
120
121
122
123
124
125
126
(127)
128
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717