All Bengali Stories
119
120
121
122
123
124
125
126
(127)
128
129
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
সিঁদুর - পর্ব ৩
বাংলা গল্প
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, করিমগঞ্জ, আসাম
অন্যান্য পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
##
সিঁদুর
পর্ব ৩
সোম চলে যাবার পর মনের দিক থেকে এমিলা একেবারে একা হয়ে গিয়েছিল, মিথিলারও বিয়ে হয়ে গেছে। এমনিতে সে সবার সঙ্গেই মিশে কিন্তু তখন খুব একটা বাইরে বের হত না। কলেজে যেত আর ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করত। আর মনে-মনে অপেক্ষা করত সোম কবে আসবে। অনেকটা ঘর-কুনো হয়ে গিয়েছিল সে। তখন ফোন ছিল না, সোম একটা চিঠি লিখেছিল এমিলাকে। কিন্তু সুব্রতবাবু পিওনকে বলে রেখেছিলেন সোমের কোন চিঠি আসলে আগে উনার হাতে দিতে। কারণ তিনি জানতেন সোম এমিলাকে চিঠি লিখবেই। ছোট বেলায় তিনি এমিলাকে পছন্দ করলেও বড় হওয়ার পর লোকের নানা কথা শুনে এমিলাকে তিনি সহ্য করতেন না। তিনি কিছুতেই চাইতেন না এমিলা সোমের ধারে কাছে যাক। তার ডাক্তার ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ... সে রকম কাউকে তার ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ নয়। তিনি সোমকে পড়াশোনা ছেড়ে দার্জিলিং না আসারও কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সোম যাবার কয়েক মাস পর হঠাৎ মারা যান ডেভিড। অনামিকাকে তার জায়গায় বাগানে একটা চাকরি দেওয়া হয়। অনামিকার বাপের বাড়ীর লোকেরা তখনও তার খোঁজ নেয়নি। কিন্তু ডেভিড মারা যাবার পর তার তার এক দূর সম্পর্কের ভাই মাইকেল আসে অনামিকার জীবনে। অবশ্য সে অনেক আগে থেকেই ডেভিডের বাড়ি আসত, খুব ভালো বাংলা বলতে পারে সে। মিষ্টি স্বভাবের মাইকেল খুব সহজেই অনামিকার মন জয় করে ফেলে আর অনামিকাও চাইছিল তার শূন্য জীবনে কেউ আসুক। মাইকেল ডিভোর্সি, তার নানা ধরনের ব্যবসা আছে। মাইকেল অনামিকাকে বলে, "এখানে থেকে কি হবে অনামিকা, এমিলাকে নিয়ে আমার সঙ্গে মুম্বাই চল। আমার বিজনেস পার্টনার হবে রানীর মতো থাকবে!"
"আমারও এখানে থাকতে মন চায় না, কিন্তু এমিলা কি দার্জিলিং ছেড়ে যেতে রাজী হবে!"
"ওকে আসল কথা বলার দরকার নেই। বল কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছ..."
অনামিকা সেই কথাই বলল এমিলাকে। সোমের জন্য এমিলার মন ভালো ছিল না, তার উপর বাবাকে হারিয়েছে। সেও চাইছিল ক'দিন ঘুরে এলে ভালো হয়। তাই মায়ের প্রস্তাবে সে রাজী হয়ে গেল।
#
দার্জিলিং থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জীবন বদলে যায় এমিলা, অনামিকা দুজনের। মাইকেলের অনেক ধরনের ব্যবসার মধ্যে হোটেল ব্যবসা ছিল। মুম্বাইতে গিয়ে বিয়ে করে অনামিকা আর মাইকেল। তারপর হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে অনামিকা। রাতভর পার্টী, মাতাল হয়ে নাচানাচি কিছুদিনের মধ্যে এরকম জীবনে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলে অনামিকা। বরং ডেভিডকে বিয়ে করে একঘেয়ে ঘরোয়া জীবনের চাইতে এরকম জীবন ভালো লাগছিল তার। এমিলা বুঝতে পেরেছিল সে আর দার্জিলিং আসতে পারবে না, আর এসেই কি করবে... সোম হয়ত তাকে ভুলেই গেছে। মেডিকেল কলেজে সুন্দরীদের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সোম, তাই একবারও তার খোঁজ নেয়নি।
মাইকেল এমিলাকে কলেজে ভর্তি করে দিলেও সে আর অনামিকা দুজনেই চাইত এমিলা হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ুক। মাইকেলের আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক, আর ওদের নিয়েই তার জগত।
এমিলা কলেজে ভর্তি হলেও তার পড়াশোনায় একটুও মন ছিল না। আস্তে-আস্তে সে নিজে থেকেই হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। রাতভর পার্টি করত, সোমকে ভুলে থাকার জন্য নেশা করতে শুরু করে সে, আর সেই কারণেই তার গ্রেজুয়েশন হয়নি। এই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অনেকে তার সুযোগ নিয়েছে। অবশ্য তাকে ব্যবহার করে লাভবান হয়েছে মাইকেল আর অনামিকা। মাইকেলের সঙ্গে থেকে-থেকে অনামিকা একটা অন্য জগতে চলে গিয়েছিল।
সোম বেশ কিছুদিন পর বাড়ি এসে এমিলার দেখা না পেয়ে মনে-মনে খুব কষ্ট পেয়েছিল। কাউকে কিছু বলতে পারছিল না, আর কেউ এমিলাদের ঠিকানাও জানে না। এরপর সোম লেখাপড়ায় নিজেকে ডুবিয়ে দেয়; বড় ডাক্তার হয় ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট। ডাক্তার হবার পরপরই কয়েকদিনের ব্যবধানে তার বাবা মা দুজনেই চলে যান।এরপর সোম মুম্বাইতে চলে যায়, আর পশ্চিমবঙ্গে আসেনি। কিন্তু এমিলার জায়গায় কাউকে বসাতে পারেনি সোম। তাই ছয়ত্রিশ বয়সেও অবিবাহিত।
#
হাসপাতালে এসে একটু বিশ্রাম নিয়েই রোগী দেখতে বেরুলেন ডাঃ সোমরাজ বসু। তিনি আসবেন শুনে অনেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছে। তার ছোঁয়া পেলেই নাকি অনেকে সুস্থ হয়ে যায়। ডাঃ বসু ও খুব আন্তরিক ভাবে রোগী দেখতে থাকেন। তার কথা আর আন্তরিক ব্যবহারে খুব ভালো লাগে রোগীদের। কয়েকজন দেখার পর ডাঃ পিনাকী সেনগুপ্ত বললেন," ডাঃ বসু মহিলার একেবারে লাস্ট ষ্টেজ যদি একবার দেখতেন ওকে..."
"কোন মহিলার কথা বলছেন?"
"কেবিনে আছে একজন, ওকে দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।"
"আপনার পরিচিত কেউ?"
"না, পরিচিত নয়, তবে বেশ কিছুদিন থেকে এখানে আছে। তাই ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর যেমন সম্পর্ক তেমন আর কি!"
"ঠিক আছে চলুন, দেখে আসি। কোথায় ক্যান্সার উনার?"
"লিভারে। শুনেছি খুব নেশা করতেন, তাই এমনটা হয়েছে।"
"কত বয়স হবে মহিলার?"
"চৌত্রিশ, রিপোর্টে তাই লেখা আছে।"
"বেশ, চলুন।"
ডাঃ বসু কেবিনে ঢুকে যাকে দেখলেন সে 'এমিলা!!' নিজের চোখকেই তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। এতো বছর পর তিনি এখানে এমিলার দেখা পাবেন ভাবতেই পারেন নি। কিন্তু এমিলার একি অবস্থা হয়েছে!!
গায়ের টুকটুকে ফর্সা রং তামাটে হয়ে গেছে, রুগ্ন শরীর, চোখ দুটো ভিতরে ঢুকে গেছে। মাথার এত সুন্দর চুল একটাও নেই ন্যাড়া মাথা। ব্যাডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সোমরাজ মুহূর্তেই ডাক্তার থেকে প্রেমিকে পরিণত হয়ে গেলেন। এগিয়ে গিয়ে বললেন, "এমিলা!"
"কে?" চোখ খুলে তাকাল এমিলা। প্রথমে চিনতে একটু কষ্ট হচ্ছিল তার। সোমরাজের চেহারা অনেকটা বদলে গেছে, শরীর অনেকটা ভারী হয়ে গেছে, মাথার চুল অনেকটা কমে গেছে। একটু তাকানোর পর এমিলা তাকে চিনতে পেরে বলল," সোমদা তুমি এসেছ। যাই হোক মৃত্যুর আগে তোমাকে দেখতে পেলাম। এবার শান্তিতে মরতে পারব।"
"কি বলছিস এমিলা! কে বলছে তুই মরবি? কি করে তোর এমন অবস্থা হল। আমি কত খুঁজেছি তোকে। কোথায় ছিলি এতদিন?"
এমিলা উঠে বসতে চাইল। সোমরাজ তাকে উঠে বসালেন। এমিলা ধীরে-ধীরে বলতে থাকে,"মুম্বাইতে ছিলাম অনেকদিন। মা আর মাইকেল আঙ্কেলের সঙ্গে হোটেল ব্যবসায় নেমে পড়ি। নেশা করতে শুরু করি আর ধীরে নর্দমায় নেমে যাই। আমি শুনেছিলাম তুমি বড় ডাক্তার হয়েছ, আমার মতো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাবে না আমি জানতাম। এ জীবনে দু'বার বিয়ে হয়েছে, কিন্তু কারোর সঙ্গে ছয় মাসও ঘর করতে পারি নি। তোমার জায়গায় আমি কাউকে বসাতে পারিনি।"
"এখানে কি করে এলি?"
"মা আর মাইকেল আঙ্কেল দুজনেই মারা যাবার পর আর ওখানে থাকতে ভালো লাগছিল না, একেবারে একা হয়ে পড়ি। ভাবলাম এ জীবনে তো কোন সাধ পূরণ হল না, বাকী জীবনটা একটু অন্য ভাবে বাঁচি। তাই ওখানকার সবকিছু বিক্রি করে কলকাতায় চলে আসি। একটা অনাথ আশ্রমে টাকা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করি। বেশ ভালো লাগছিল ওদের সঙ্গে থাকতে। নেশা করা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিলাম। কয়েক বছর ওখানে থাকি আর ভাবছিলাম বাকি জীবনটা ওদের সঙ্গেই কাটিয়ে দেব। কিন্তু আমার কপালে অন্য কিছু লেখা ছিল। বছর খানেক আগে লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়েছে, চিকিৎসা করাতে সর্বস্বান্ত হয়ে যাই। এখন একেবারে লাস্ট ষ্টেজ, কদিন বাঁচব জানি না!"
"তোর কিছু হবে না এমিলা... আমি এসে গেছি... যেমন করেই হোক আমি তোকে বাঁচাব।"
"তুমি কিছুতেই আমাকে বাঁচাতে পারবে না। আমি জানি আমার সময় ফুরিয়ে আসছে সোমদা। আমার একটা শেষ ইচ্ছে পূরণ করবে, তোমার স্ত্রী শুনলে হয়ত রেগে যাবে..."
"আমি এখনও বিয়ে করিনি রে পাগলী! কি তোর ইচ্ছে বল?"
"আমার খুব সাধ ছিল তোমার হাতে সিঁথিতে সিঁদুর পরব। আমার মাথায় একটুও চূল নেই ,তাই তুমি আমার সিঁথি বিহীন মাথাতেই সুন্দর করে সিঁদুর পরিয়ে দাও না গো... তাহলে একটু শান্তিতে মরতে পারব।
বিয়ে দুবার হলেও আমি সিঁদুর পড়তে পারি নি, কারণ ওরা দুজনেই ক্রিশ্চান ছিল।"
"আমিও যে তোকে সিঁদুর পড়াব বলে এতদিন থেকে বসে আছি রে... তুই ছাড়া আর কাউকে মনে জায়গা দিতে পারিনি," বলে পিনাকিবাবুর দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, "আমি সব বুঝেছি ডাঃ বসু। এখনই সিঁদুর আনার ব্যবস্থা করছি। আপনাদের ভালোবাসা দেখে আমার চোখে জল এসে গেল।"
পিনাকিবাবু একটু পরেই সিঁদুর নিয়ে এলেন। সোম এমিলার সিঁথি বিহীন মাথায় সুন্দর করে সিঁদুর পড়িয়ে দিল। দুজনের চোখ বেয়ে জল পড়ছে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন, পিনাকিবাবু চোখ মুছতে-মুছতে বেরিয়ে গেলেন। সোমরাজের বুকে মাথা রেখে এমিলা ধীরে ধীরে বলল," খুব শান্তি পেলাম!"
সোমরাজের সিঁদুর মাথায় নিয়ে এমিলার বাঁচার সাধ পুনরায় জেগে উঠেছে, সে এখন বাঁচতে চায়। এমিলা পেয়ে ডাঃ সোমরাজ বসু মনে-মনে ঠিক করে নিয়েছেন যেমন করেই হোক এমিলাকে তিনি বাঁচাবেনই!!
( সমাপ্ত )
All Bengali Stories
119
120
121
122
123
124
125
126
(127)
128
129
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717