Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সিঁদুর - পর্ব ১

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    125    126    (127)     128    129   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



সিঁদুর - পর্ব ১
বাংলা গল্প
লেখিকা – সংঘমিত্রা রায়, করিমগঞ্জ, আসাম


অন্যান্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩   

## সিঁদুর
পর্ব ১
"তোকে একেবারে নব বিবাহিত বাঙ্গালী বধূর মতো লাগছে রে এমিলা, কে সাজিয়ে দিল তোকে?"

"মিথিলা দিদি সাজিয়ে দিয়েছে মম। নাটকে আমি বউ সেজেছি আর সোমদা বর সেজেছে, তুমি তো সবই জানো। সবাই বলেছে আমাদের অভিনয় নাকি খুব ভালো হয়েছে। কত হাততালি দিল দর্শকরা! তুমি, পাপা কেউ তো গেলে না; তাই আমি সেজে-গুজে চলে এসেছি তোমাদের দেখাব বলে!"

"কি করে যাব বল, এমন সময় পায়ে ব্যথা পেলাম; না হলে তোর বাবা না গেলেও আমি যেতাম। বাবাও যেত, কিন্তু তার হঠাৎ কাজ পড়ে গেল তাই যেতে পারেনি। কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে!"

"সবাই তাই বলছিল, আমাকে নাকি খুব সুন্দর লাগছে। দেখ লাল রঙের আবীর সিঁথিতে দিয়েছি, ওটা নাকি অভিনয়ের সিঁদুর। আর বড় লাল টিপ দেওয়ায় আমাকে নাকি অসাধারণ লাগছিল। তুমিও তো কত সুন্দর, তাহলে সিঁথিতে সিঁদুর পড় না কেন, তোমাকেও খুব সুন্দর লাগত!"

"কি করে সিঁদুর পড়ি বল, আমরা যে ক্রিশ্চান!"

"ও ক্রিশ্চানরা তো সিঁদুর পড়ে না, কিন্তু আমি পড়ব! তোমার ভাইয়ের বউ, উনি তো সিঁদুর পড়েন; কি সুন্দর লাগে উনাকে দেখতে।"

"ওরা হিন্দু তাই সিঁদুর পড়ে। সব জেনে কেন একথা বলিস বুঝি না। ছাড় এসব কথা, তুই কি করে পড়বি? তোর ক্রিশ্চান বর কি তোকে পড়তে দেবে?"

"কি করে পড়ব সময় এলেই দেখতে পাবে!"

"পাগলী কোথাকার, যা মুখে আসে তাই বলে।"

এমিলা একটা মিষ্টি হাসি হেসে নিজের ঘরে চলে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বার-বার দেখতে থাকে। সত্যি লাল পাড় শাড়ি, সিঁথিতে লাল আবীর, নকল শাঁখা,পলা,গয়না এসবে দারুণ লাগছিল তাকে। নাটকে সোমরাজ তার বর সেজেছিল, তাকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছে। সোমরাজকেও ধুতি,পাঞ্জাবীতে দারুণ লাগছিল। চোদ্দ বছরের কিশোরী এমিলার এসব খুলে ফেলতে মন চাইছিল না। মনে-মনে ঠিক করল সে এভাবেই বউ সেজে থাকবে সারা জীবন।

#
দার্জিলিং-এর চা বাগানের কেরানী ডেভিড গোমেজ। ডেভিডের আদি নিবাস গোয়াতে ছিল। তার পূর্ব পুরুষেরা ওখানেই থাকতেন। কিন্তু ডেভিডকে দত্তক নিয়েছিলেন তার মাসি এরিনা গোমেজ। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন আর তার স্বামী এই চা বাগানেই চাকরী করতেন। ডেভিড এখানেই বড় হন, লেখাপড়া করে চা বাগানেই চাকরী পান। ভালোবেসে বিয়ে করেন বাঙালি মেয়ে অনামিকা দত্তকে। অনামিকার বাবাও চা বাগানেই চাকরি করতেন, কিন্তু ঐ বিয়েটা অনামিকার বাপের বাড়ীর লোকেরা মেনে নেন নি। তাই এখনও অনামিকা বাপের বাড়ীর যেতে পারে না। তার বাবা বেঁচে নেই, কিন্তু মা আর ভাই, একটা ক্রিশ্চান ছেলেকে বিয়ে করাটা এত বছরেও মেনে নিতে পারেনি। সেই কারণে এমিলা কখনও মামার বাড়ি যেতে পারেনি। তবে একই জায়গায় সবাই থাকে তাই দেখা হয়, কিন্তু কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না। এমিলা মাঝে-মাঝে ভাবে বাবা যদি ক্রিশ্চান না হয়ে হিন্দু হত তাহলে হয়ত মামাবাড়ি যেতে কোন বাঁধাই থাকত না।

অনামিকা একসময় খুব সুন্দরী ছিল, এখনও তার রূপ একটুও কমেনি বরং আরও ফুটে উঠেছে। ডেভিড তাঁকে খুব যত্নে রেখেছে। এমিলা মায়ের মতোই সুন্দরী হয়েছে। ক্লাস এইটে পড়া কিশোরী এমিলা বয়সের তুলনায় একটু বেশী বড়-সড় দেখে মনে হয় পূর্ণ যুবতী। কাঁচা হলুদের মতো গায়ের রং, ভরাট লম্বাটে মুখ,ভাসা-ভাসা চোখ, টিকালো নাক, লম্বা ঘন চুল কোমর অবধি গেছে। কখনও খোলা চুলে কখনও দুটো বেণী বেঁধে থাকত। এমিলা খুব চটপটে আর প্রাণবন্ত মেয়ে, সব সময় হাসিখুশি থাকত, তবে সহজ সরল মেয়ে; ওর মন যখন যা চাইত তাই করত। ওর দিকে অনেকের চোখ যেত, কিন্তু এমিলার মন প্রাণ জুড়ে একজনই ছিল সোমরাজ বসু। সোম লম্বা শরীর, চেহারাটা মন্দ নয়, গায়ের রং শ্যামলা। পাশাপাশি কোয়াটারে দুজনেই থাকে। সোমরাজ এমিলার চাইতে দুই বছরের বড়। সে ক্লাস টেনে পড়ে। সোমরাজের বাবা সুব্রত বসু চা বাগানের বড়বাবু ছিলেন। মা সূচনা দেবী গৃহবধূ। সোমরাজ তাদের একমাত্র সন্তান।

#
"এই সোমদা, আমার সিঁথিতে সুন্দর করে সিঁদুর পরিয়ে দেবে গো!"

"পাগলী কোথাকার কি বলছিস এসব তুই! এমনি-এমনি কেউ কাউকে সিঁদুর পড়াতে পারে না। সিঁদুর পরাতে হলে বিয়ে করতে হয়!"

"তাহলে চল আমরা বিয়ে করি। আমি লাল বেনারসি পড়ব,অনেক গয়না পড়ে খুব সুন্দর করে সাজব। কপালে চন্দন, লাল টিপ পড়ব হিন্দু বাঙালি বউরা যেমন করে বিয়েতে সাজে। আর তুমি ধুতি, পাঞ্জাবি, টুপুর পরে বর সাজবে। তারপর আমরা সাতপাকে ঘুরব, তারপর তুমি আমাকে সুন্দর করে সিঁদুর পরিয়ে দেবে। আমার খুব সাধ তোমার বউ হয়ে সিঁদুর পরে সেজে-গুজে থাকব। যেভাবে তোমার মা, মানে কাকিমা থাকেন। আমার মা তো এসব কিছু পরে না, আমার একটুও ভালো লাগে না।"

"এখন আমরা কি করে বিয়ে করব এমিলা, আমরা এখনও স্কুলে পড়ছি। আমাদের আরও অনেক পড়াশোনা করতে হবে, রোজগার করতে হবে, তারপর বিয়ের কথা ভাবতে হবে রে পাগলী!"

"ইস তাহলে তো অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমি পড়াশোনায় খুব একটা ভালো নই। তুমি তো খুব ভালো ছাত্র। যখন বাইরে পড়তে যাবে সুন্দরী মেয়েদের পাবে, তখন আমাকে ভুলে যাবে না তো?"

"তোর মতো মিষ্টি মেয়েকে কি ভুলা যায়! তুই আমার মন-প্রাণ জুড়ে রয়েছিস। যখন আমি রোজগার করতে শুরু করব তারপরই আমরা বিয়ে করব।"

"তাও ঠিক, রোজগার না করলে খাব কি? কিন্তু আমার বেশী কিছু চাই না, অল্প রোজগার হলেই চলবে। শুধু তোমার সঙ্গে সারা জীবন কাটাতে চাই। তুমি আমাকে খুব ভালবাসবে তো, যেভাবে বাবা মাকে ভালবাসে..."

"বাসবো রে পাগলী! এখন চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।"

"চল..."

শরৎ কালের বিকেল। স্কুল ছুটির পর খাওয়া-দাওয়া সেরে এমিলা, সোম দুজনেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এমিলা খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারে। ধীরে-ধীরে ওরা চলে যায় চা বাগানের পিছনের ছোট পাহাড়ি নদীটার পাড়ে। এসময় এদিকে লোকজন খুব একটা আসে না। নদীটার দুই পাড়েই ছোট বড় পাথর ঘেরা। শরৎকালে নদীতে জল কম থাকে। দুজনে সাইকেল রেখে বসল গিয়ে পাথরের উপর। ওখানে বসেই এমিলা, সোম এসব কথা বলছিল।

সেই ছোট থেকে যখনই সময় পেত দার্জিলিং-এর চা বাগানের আশেপাশে ছুটে বেড়াত এমিলা আর সোম। দুজনে খুব ভালো বন্ধু, সেই সঙ্গে দুজন দুজনকে ভালোবাসে। প্রতি বছর ওদের বাগানে বিশ্বকর্মা পূজা খুব বড় করে হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় দুদিন ব্যাপী। এবার ওখানে যে নাটকটা হবে বলে সিলেক্ট হয়েছিল ওটাতে নব বিবাহিত বর বউয়ের পাট ছিল। কেউ করতে রাজী হচ্ছিল না। শেষে মিথিলা সোম, এমিলাকে সিলেক্ট করল। মিথিলা সোমের জ্যাঠতুতো দিদি কলেজে পড়ে। খুব সুন্দর গান গায়। কোনও ফাংশন হলে সে-ই সব দেখাশোনা করে। এমিলা, সোমকে মিথিলা খুব ভালবাসে। আর সে জানত এমিলা,সোমই এই চরিত্রগুলো ভালো ফুটাতে পারবে। দুজনে অভিনয় করছিল খুব ভালো। সবাই ওদের অভিনয় দেখে হাততালি দিয়েছিল। মিথিলা দিদি ওদের বলেছিল, "তোরা অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা কর, মনে হচ্ছে অনেক নাম করতে পারবি।"

"অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা হয় নাকি মিথিলা দিদি?" এমিলা বলল।

"কেন হবে না। কলকাতায় অভিনয় শেখার স্কুল আছে।"

"বেশ তাহলে আমি তাই করব। এই সোমদা তুমিও শিখবে নাকি অভিনয়?"

"না আমার তেমন ইচ্ছে নেই। আমি ডাক্তার হতে চাই, বাবা-মায়ের তাই ইচ্ছে!"

"তুমি ভালো ছাত্র ডাক্তার হতে পারবে। আমার অভিনয় করাই ভালো।"

"বড় অভিনেত্রী হয়ে গেলে আমাদের ভুলে যাবি না তো!"

এমিলা হেসে বলেছিল," তোমাদের আমি ভুলতে পারি? তোমরা আমার মনের ভিতরে বসে আছো। সেখান থেকে কেউ তোমাদের বের করতে পারবে না।"

"ঠিক আছে দেখা যাবে।"
Next Part


All Bengali Stories    119    120    121    122    123    124    125    126    (127)     128    129   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717