All Bengali Stories
124
125
126
127
128
129
(130)
131
132
133
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
বোধিবৃক্ষ
বাংলা গল্প
লেখক - দীপ্তেশ মাজী, চেতলা রোড, কলকাতা
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
অন্য পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
##
বোধিবৃক্ষ
পর্ব ১
ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এন্ড ফটোগ্রাফির দ্বাদশ-তম সম্মেলন আয়োজিত হল "বোধিধার্মা বিড়লা আকাদেমিতে"। আকাদেমির অন্যতম সৌন্দর্য হল বিশালায়তন শেয়াল দেবতার মূর্তি। হ্যাঁ, এটা ইজিপ্টের একটি মূর্তির অনুরূপ । তৎকালীন ভারত সরকার তাঁর ইজিপ্ট ভ্রমণকে সাধারণের কাছে যথেষ্ট অর্থবহ করে তুলতেই এই উদ্যোগ। বর্তমানে এক আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে বৌদ্ধ পুঁথি, মূল্যবান নথিপত্র, বিভিন্ন আঞ্চলিক স্তরের দেবদেবীর মূর্তি ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন কর হয়।
ব্রজদুলাল কস্তুরি হলেন সংস্থার চেয়ারম্যান। এই সবেমাত্র উনি কোর্ট ছেড়ে একটা শার্ট পরিধান করেছেন। তাছাড়া আরও কিছুক্ষণ এখানে থাকতে হবে। কালকে প্রদর্শনী শুরু হবে। সব একবার ফাইনাল করেই তারপর সিকান্দারকে বলে যাবেন।
সিকান্দারকে ডেকে বললেন, "হামনে সাব কুচ দেখ লিয়া হ্যায়। অব তুম ভি দেখ লো। লেকিন ধ্যায়ান রহে, কুচ ভি ইধার সে উধার না হো। ওকে সিকান্দার!"
সিকান্দার হল সিকিউরিটি ইনচার্জ। মন্ত্রমুগ্ধের মত মাথা নিচু করে দুদিকে ঘাড় বাঁকাল সিকান্দার। তারপর, "জি সাব" বলে দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল। মি. কস্তুরি সময় মেনে চলেন। ষাটোর্ধ হলেও, উনি আজও কর্ম সহিষ্ণু। বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বাকি কাজ নিয়ে বসলেন। কাল একাধারে দু-দুটো বড় কাজ। কাল পোল্যান্ডের প্রতিনিধি আসছেন, সাথে তাঁর বিদেশ-সচিব। অপরটি হল বোধিধর্মা আকাদেমির একটি চিত্র প্রদর্শনী। সেখানেও দেশি বিদেশি শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকলা নিয়ে হাজির হবেন।
ফোনটা এল একেবারে মাঝ রাতে। ব্রজদুলাল কস্তুরি ভয়ে প্রায় কইমাছের মত ছটফট করতে লাগলেন। কপালের ঘাম মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে লাগল চতুর্দিকে। পাশের টেবিলে রাখা জলের গ্লাসটা শতবর্ষ দূর মনে হচ্ছে। অথচ জল না খেলে পরিস্থিতি থেকে আপাতত নিস্তার লাভ সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত এক গেলাস জল খেয়েই রাতটা কাটিয়ে ফেললেন। সকালে লেক কালীবাড়ির কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছুটলেন মি.কস্তুরি। সিকান্দার গেটেই ছিল। সদ্য চা পান করে একটা বিড়ি ধরিয়েছে। টান না দিতে-দিতেই সাহেব এসে হাজির। বললেন, "দরওয়াজা সাব খোল দো। ঐ মূর্তি আমি এখুনি দেখব সিকান্দার। এখুনি।"
সিকান্দার দরজা খুলে দেয়। কস্তুরি সাহেব ভেতরে ঢুকলেন। ফ্লোরের সামনেই সারি-সারি মূর্তি বসানো আছে। ডান বাম ছেড়ে একেবারে পেছনের দিকে গেলেন। বামদিকে একটি জানালা। সেটাকে সর্বপ্রথম বন্ধ করলেন। তারপর একটার পর একটা দেবদেবীর মূর্তিকে ভালো করে দেখে নিলেন। মনে-মনেই বললেন, "উফ ভগবান, সব ঠিকই আছে।" তারপর সিকান্দারের হাতে চাবি দিয়ে বেরিয়ে আসলেন।
আজ বিকেল থেকেই প্রদর্শনীতে ভিড় উপচে পড়ছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরের জিনিসগুলো ভারতীয় ইতিহাসের পাতা থেকে যেন বেরিয়ে এসেছে। ভারতীয় ইতিহাসের নিখুঁত কারুকার্য, দেবদেবীদের অতীব আশ্চর্যের রূপ মানুষকে সত্যি ভাবায়। এরই পাশাপাশি নিজ সংস্কৃতির একটি মহান দিককেও তুলে ধরে। ওপরের ফ্লোরে যারা এসেছেন তাঁরা বেশিরভাগ বিদেশি। তথাপি নিজ দেশকে বাইরে থেকে দেখার যে ভাবাবেগ, সেটাই কেউ কেউ প্রজ্বলিত চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। প্রায় দেড়শো জনের চিত্রকলাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। ধার্য হয়েছে তাদের মূল্য। ব্রজলাল কস্তুরি ছাড়াও চিত্রশিল্পীরা নিজ-নিজ চিন্তাধারায় সবাইকে বিদ্ধ করছে।
আন্দাজ সাড়ে আটটায় গ্রেগারী টেরেন্টেভ গাড়ি থেকে নামলেন। ব্রজদুলাল কস্তুরিকে দেখেই বললেন, "হ্যালো, মি. কতুরি হাউ আর ইউ?"
ব্রজদুলালও তাঁর সাথে সখ্যতা আদান প্রদান করলেন। গ্রেগারী টেরেন্টেভ বেশ উপভোগ করছেন এই প্রদর্শনী। ছবি তুলছেন নিজের ক্যামেরায়। ব্রজদুলালকে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, "আমি কিন্টু বেশ আনন্দিত মি.কতুরি।" তবে, মিনিট পাঁচেক পরেই হলঘরের সবাইকেই চমকে দিলেন বিদেশি এই ভদ্রলোক। ব্রজদুলাল চমকে উঠে বললেন, "নো স্যর, দিস ইস নট দ্য গুড টাইমিং!" সবাই ততক্ষণে দেখে ফেলেছেন সেই আশ্চর্য জিনিস। পোল্যান্ডের প্রতিনিধি মি. টেরেন্টেভ এনেছেন একটি দামী হীরের নেকলেস। কারোর চোখের পলক সরছে না সেটা দেখে। সারা ঘর জুড়ে এক আলোড়ন সৃষ্টি হল। অগত্যা, ব্রজদুলাল কস্তুরি তাড়াতাড়ি বিষয়টি ঘোষণা করে; হীরের নেকলেসটি পরিয়ে দেওয়া হল একটি নটরাজের মূর্তির ওপর। শৈব নৃত্যের ভঙ্গিতে নেকলেসের জেল্লা ঠিকরে বার হচ্ছে। ব্রজদুলাল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁচের ফ্রেমে সেটিকে বন্ধ করলেন। সিলমোহর বসানো হল চার-চারটে। আজ থেকে এটি বোধিধর্মা আর্ট আকাদেমির এক অমূল্য রতনে রূপান্তরিত হল।
#
শ্রীজাত কপালে দুটো হাত জড়ো করে, পা গুলোকে নৌকার পালের মত সিদে করে শায়িত অবস্থায় রয়েছে। আমি, একটি ভ্রমণকাহিনী এবং একইসাথে
উপন্যাসে মনোনিবেশ করেছি। একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের প্রখর তাপ ধুয়ে না গেলেও ধীর-স্থির মৃদু হাওয়ায় শরীরের চঞ্চলতা আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। দেখলাম, শ্রীজাত উঠে একটা সিগারেট ধরাল এবং সেটাকে নেড়েচেড়ে আবার যথাস্থানে শুয়ে পড়ল।শ্রীজাত সম্প্রতি একটা কলেজে জয়েন করেছে। ঠিক যতটা তাড়াতাড়ি ও কাজটা পেয়েছিল, তেমনই আবার কলেজ মেরামতির হিড়িক উঠে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছে।
এই সময় নিচের তলায় নগেন যেন কার সাথে কি-সব আওরাচ্ছে, "বাবু তো ওপরে... উঠবেন না দাঁড়ান! দাঁড়ান বলছি!!"
শ্রীজাত সামান্য চিবুক উঁচিয়ে জানলা দিয়ে নিচে ডাক ছাড়ল, "নগেন, আসতে দাও," বলার মিনিট তিনেকের মধ্যে সিঁড়িতে একটা কম্পন বোধ হল। সিঁড়ির অবস্থা শোচনীয়। শ্রীজাত উঠে বসল। আমরা দেখলাম, খোলা দরজার ওপারে এসে দাঁড়িয়েছেন একজন কোর্ট প্যান্ট পরিহিত ভদ্রলোক। দেখে বেশ বিচলিত মনে হচ্ছে। আগন্তুককে চেয়ারে বসতে বলে শ্রীজাত একবার প্রদক্ষিণ করে নিল। আমিও দেখলাম, মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন ভদ্রলোক। গায়ে বাদামী রঙের কোর্ট, কুমীরের মুখের মত জুতো, বাঁ হাতে একাধিক আংটি এবং চশমাটা নাসিকার মধ্য গগনে উপনীত হয়েছে। শ্রীজাত বলল, "বলুন, মি. কস্তুরি।" এক্ষেত্রে আমি আশ্চর্য না হলেও কস্তুরি হয়েছেন। উনি একবার নিজের বুকের দিকে চেয়ে বললেন, "ও আচ্ছা বুঝেছি। এই কার্ডটা দেখে..."
শ্রীজাত হেসে বলল, "না না, আপনার ছবি আজই কাগজে দিয়েছে। বোধিধার্মা আকাদেমি তো! বলুন..."
ভদ্রলোক এইবার চশমাটা খুলে বললেন, "এসব অহেতুক জিনিস আমি বিশেষ পছন্দ করি না, তবুও বলি, আমি হলাম ব্রজদুলাল কস্তুরি। লেক কালীবাড়ির কাছে আমার তত্ত্বাবধানে একটি প্রদর্শনী চলছে। কয়েকশো হাজার কোটি টাকার লেনদেন সেখানে," কথাগুলো বলতে গিয়েই ওনার মুখে অহেতুক একটা হাসির ঝিলিক খেলে গেল। হাসি কোনো রকমে চেপে বললেন, "দেখুন, লেক-থানার ইনচার্জ পুরকায়স্থ বলল বলেই আপনাদের এখানে এলাম। আপনারা কি আদেও পারবেন!"
আমি বইয়ের পাতায় আঙুল রেখে ওনার কথা শুনছিলাম। দেখলাম, শ্রীজাত-র মুখে একটা হাসির ঝিলিক। তবে এর অর্থ বোধ হয় আমি জানি। কিন্তু ও শুধু বলল, "ঠিক আছে মি.কস্তুরি, আপনার যখন মনে হবে আমরা তখনই এই কাজের ভার নেব। তার আগে নয়। আর, লেক-থানার পুরকায়স্থ তো, আমি এখুনি ফোন করে নিচ্ছি।" এই বলে শ্রীজাত সবে ফোনটা নেবে বলে হাত বাড়িয়েছে মি.কস্তুরি থামতে বললেন। মুখে একবার, "আহা..." বলেই নিজ জামার পকেটে হাত দিলেন। একটি কার্ড বার করে শ্রীজাতকে দিয়ে বললেন, "এতে সমস্ত কিছু আপনি পেয়ে যাবেন। তার আগে আমি আমার মনের অসন্তোষটিকে আপনার সামনে তুলে ধরছি। আপনি এটাকে পাগলামিও ভেবে থাকতে পারেন, কিন্তু ফর মি, ইটস আ সিরিয়াস থ্রেট।"
আমি বললাম, "থ্রেট!! এমন বলার কারণ কি মি.কস্তুরি?"
এবার উনি একটা সিগারেট ধরালেন। সিগারেট পেপারটা গোল্ডেন। তারপর পায়চারি করে জানলার কাছে গেলেন। বাইরে রাস্তার দিকে চেয়ে থেকে বললেন, "শ্রীজতবাবু, আপনি অবচেতন মনের কথা বিশ্বাস করেন?"
শ্রীজাত একটু ভেবে বলল, "ভোরের দিকটা ইদানীং ভালো ঘুম হচ্ছে না। কলেজ জীবনে ইতিহাসের বিকট প্রশ্নগুলো মাথায় দুমদাম শব্দ করে পড়ে। আমার কাছে এই 'অবচেতন মন' নামক জিনিসটার অস্তিত্ব আপাতত এইটুকুই।"
মি.কস্তুরির মুখ দেখে মনে হল যেন অকস্মাৎ কাঁচা তেঁতুল চিবিয়ে ফেলেছেন। এরপর উনি বলতে আরম্ভ করলেন। মাঝে-মাঝে ইংরেজি, মাঝে বাংলা, এভাবেই উনি অভ্যস্ত। পুরোপুরি বাংলা করলে এইরকম দাঁড়ায়, "বেশ কিছুদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না। মনে কেমন একটা ভয়। একটা চুরি আমায় পিছু করে বেড়াচ্ছে। বোধিবৃক্ষ আকাদেমি আমার কাছে শিক্ষা-প্রাঙ্গণ কিংবা তীর্থস্থানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বলতে গেলে আমি এই চারতলা বিল্ডিং-এর কর্তা। তারপর পরশু থেকে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। পোল্যান্ডের গ্রেগারী সাহেব এসেছেন, সাথে আনলেন হীরের মহামূল্যবান নেকলেস। দাম তাও প্রায় লক্ষাধিক বা কোটিতে যাবে। সেদিনের ঐ ফোনটা যেন ভবিতব্য ছিল। এক একটা কথা যেন পেটের ভেতর থেকে সমস্ত নাড়ীভুঁড়ি বের করে আনবে। বলল, চুরি করব তুমার নাকের ডগা দিয়ে। দেখি, আপ কি করে সামলাও।"
শ্রীজাত এবার একটু নড়ে বসল। বলল, "ফোনটা কথন এসেছিল?"
"ধরুন, ঐ ভোর চারটে কি সাড়ে চারটে।"
Next Part
All Bengali Stories
124
125
126
127
128
129
(130)
131
132
133
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717