Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

দত্তক-কন্যা - পর্ব ২

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    124    125    126    127    128    129    130    (131)     132    133   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



দত্তক-কন্যা - পর্ব ২
বাংলা গল্প
লেখিকা - ডাঃ অনামিকা সরকার, বাবা - রামনাথ নস্কর, রামকৃষ্ণ পল্লী, নরেন্দ্রপুর, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প


অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   

## দত্তক-কন্যা - পর্ব ২
ট্রেন ছুটে চলেছে হু হু করে। একটা বড় স্টেশনে এসে থামল। সৌমী জানালা দিয়ে মুখ বের করে স্টেশনের নামটা পড়ল - পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন ( মুঘলসরাই)। ট্রেনটা বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াবে এখানে। লোকজন ওঠা-নামা করছে। খানিক বাদে ট্রেন ছাড়তে সবাই যে-যার আসনে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সৌমীও জানালার ধার থেকে উঠে একটা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। দু'চোখে ঘুম নেই। নিদ্রা-দেবী আজ কয়েকদিন হল সৌমীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নানারকম কথাবার্তা ওর মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

মামণি খুব ভেঙে পড়েছেন। একেই হার্টের অসুখ, প্রতিদিন গাদা-গাদা ওষুধ খান। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আগে মামণির দুচোখে বাঁধভাঙা প্লাবন দেখেছিল সৌমী। দু'হাত দিয়ে সৌমীর কোমরটা জড়িয়ে ধরেছিলেন মামণি। বলেছিলেন, "সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি মা? আমরা কি তোর কেউ নই?"

মামণির হাতদুটো ছাড়িয়ে দিতেও বাঁধো-বাঁধো ঠেকছিল, কিন্তু তবু মনকে শক্ত করেছিল ও। বলেছিল, "যেতে যে আমাকে হবেই মামণি। আমার শিকড়ের সন্ধানে আমাকে যেতেই হবে।"

"পারবি তো আমাদের ছেড়ে থাকতে?"

কোনও উত্তর দিতে পারেনি সৌমী। নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল।

বারান্দার চেয়ারে বসেছিলেন পাপা, পাঁচ হাজার বছরের পুরনো মমির মতো। সৌমীকে বলেছিলেন, "সাবধানে যাস মা, কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে-সঙ্গে আমাকে ফোন করবি। ফোনটা নিয়েছিস তো?"

"না," সৌমী দুদিকে মাথা নেড়েছিল।

লক্ষ্ণৌয়ের কোনও জিনিসই ও সাথে করে নিয়ে যেতে চায় নি, শুধুমাত্র পরনের সালোয়ারটা ছাড়া। যেমন খালি হাতে এসেছিল, তেমনই খালি হাতে বিদায় নিতে চায়।

"ফোন নম্বর মনে আছে?"

"হুঁ" মনটা বোধহয় এখনো অতটা শক্ত হয়নি যে সবকিছু ভুলে যাবে। সৌমী আর দাঁড়ায় নি, পিছন ঘুরে তাকায়ও নি, সোজা অটো স্ট্যান্ডে এসে একটা অটোতে চেপে বসেছিল। তারপর লক্ষ্ণৌ স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। অপেক্ষা নতুন জীবনের জন্যও।

#
ভোর হয়ে এলো, চায়ে-ওয়ালারা "গরমা-গরম চায়ে" নিয়ে কম্পার্টমেন্টের মধ্যে হাঁকাহাঁকি শুরু করে দিয়েছে। লোকজনও একে-একে ঘুম থেকে উঠে পড়ছে। সৌমী উঠে বসলো। এক কাপ চা নিয়ে জানালা দিয়ে নতুন ভোরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

বেশ বেলাবেলি ট্রেনটা হাওড়া স্টেশনে ঢুকল। এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এলো ও, এবং সম্পূর্ণ একা। যদিও বাড়িতে বাংলায় কথা বলার সুবাদে স্টেশনের পরিবেশটা খুব বেশি অপরিচিত ঠেকছিল না ওর কাছে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে মেদিনীপুর লোকালের খোঁজ পেয়ে তাতে চেপে বসলো সৌমী। ঘাটাল স্টেশনে যখন নামলো তখন স্টেশনের ঘড়িতে প্রায় দুপুর দুটো বাজে।

গোলমালটা বাধল এখানেই। স্টেশনের বাইরের দোকানগুলোতে খোঁজ করতে দুটো কালীতলার খোঁজ পাওয়া গেল; সে দুটো আবার সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পরে ও পুবদিকের কালীতলায় যাওয়াই স্থির করলো। জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয়, স্টেশন থেকে অটোতে মিনিট পনেরো। কালীতলা অটো স্ট্যান্ডে নেমে ও জনে-জনে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, "মহাদেব জানা নামে কাউকে চেনেন? তার স্ত্রীর নাম সবিতা জানা। তিন চারটি বড়-বড় মেয়ে।"

কিন্তু বৃথা চেষ্টা, কেউই খোঁজ দিতে পারলো না। আসলে জায়গাটা একটা মফস্বল শহর, তার উপর বেশ বড়, অনেক লোকজনের বাস। স্কুল, বাজার, হোটেল সবই রয়েছে। এখানে সবাই সবাইকে চেনে না। সৌমী কি করবে ভেবে পেলো না। গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। প্রথমেই মনে পড়ল পাপার কথা। পাপাকে কি ফোন করে জিজ্ঞাসা করবে, "এখন কি করবো পাপা?'

"না!!" মনকে শক্ত করে নিলো সৌমী। নিজের কর্তব্য স্থির করে আবার অটো স্ট্যান্ডের দিকে চলল। ঘাটাল স্টেশন চত্বরে ফিরে গিয়ে যখন পশ্চিম দিকের কালীতলায় যাবার বাস ধরল সৌমী তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে তিনটে বাজে। দু'ঘণ্টা বাস জার্নি করার পর কনট্রাকটর ওকে যেখানে নামিয়ে দিল সেটা একটা ফাঁকা মাঠের মতো। বড় রাস্তার দুদিক থেকে দুটো মাটির রাস্তা চলে গেছে দূরের দিকে। তিনটে ছোট-ছোট মাটির দোকান; দুটো বন্ধ একটা খোলা। খোলা দোকানটায় জিজ্ঞাসা করতে একজন দেহাতি গোছের বুড়ো লোক বাঁদিকের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়ে বলল, "একান থেয়ে সোজা তিন কিলোমিটার গেলি ডানদিকি পেরায়মারি ইস্কুল দেকবে। ওটাই কালীতলা। খবরদার কোনোদিকি বেঁকুনি যেন, একদম নাক বরাবর যাবে।"

তাকে বিদায় জানিয়ে মাটির রাস্তা ধরে এগোতে লাগলো সৌমী। গ্রীষ্মকালের বিকাল। মৃদু হাওয়া বইছে। চাষের জমিতে নানা বয়সী পুরুষ ও মহিলারা কাজ করছে। মাঠে-মাঠে বাচ্চারা ফুটবল খেলছে। কয়েকটা সাইকেল আর বাইক পাশ দিয়ে ধুলো উড়িয়ে ছুটে গেল। প্রায় আধঘণ্টা হাঁটার পর স্কুলটা চোখে পড়ল সৌমীর; কালীতলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আঃ, অবশেষে পাওয়া গেল।

স্কুলের পাশের টিউবওয়েল থেকে কয়েকজন মেয়ে, বউ জল ভরছিল। তারা একজন সম্ভ্রান্ত চেহারার যুবতীকে এগিয়ে আসতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সৌমী কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে, "মহাদেব জানা নামে কাউকে চেনেন? তার স্ত্রীর নাম সবিতা জানা। তিন চারটি বড়-বড় মেয়ে।"

ওর হিন্দি মিশ্রিত বাংলা শুনে তারা সঠিক অর্থ বুঝতে কয়েক মিনিট সময় নেয়। তারপর ওদের মধ্যে থেকে একজন বউ বলে ওঠে, "মহাদেব জানা? জয়িতার বাবা?"

"তাতো বলতে পারবো না। তবে অনেক বছর আগে ওনারা একটি বাচ্চাকে দত্তক দিয়েছিলেন। দু'মাসের বাচ্চা।"

এবার একজন বৃদ্ধা বলে ওঠেন, "দত্তক দেবে ক্যান? ওদের দু'মাসের মেয়ে তো মরে গেছেলো , তারাপিটি গে।"

মনে-মনে খুশি হল সৌমী, বোধহয় এতক্ষণে সন্ধান পাওয়া গেল। মুখে বলল, "ওনাদের বাড়িটা একটু দেখিয়ে দেবেন?"

দু'বার বলতে হল না। একটি অল্পবয়সী মেয়ে ওকে সাথে করে নিয়ে চলল মহাদেব জানার বাড়ির দিকে।

মাটির রাস্তাটা ছেড়ে সরু আলপথ দিয়ে চলল মেয়েটি, পিছন-পিছন সৌমী। আলপথটি ভীষণ সরু আর এবড়ো-খেবড়ো। হিল জুতো পরে হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল ওর। তবে সেদিকে ওর খেয়াল ছিল না। প্রথমবার নিজের গর্ভধারিণী মা ও জন্মদাতা বাবাকে চাক্ষুষ করার আনন্দে ও বিভোর ছিল।

মেয়েটি গিয়ে থামল একটি গাছপালা-ঘেরা টালির চালের ভাঙাচোরা মাটির বাড়ির সামনে। গলা তুলে ডাকল, "জেঠি, ও জেঠি, তোমাদের বাড়িতে কে এয়েচে দেখো।"

মহাদেব জানার স্ত্রী সবেমাত্র দুটি ছাগলকে মাঠ থেকে নিয়ে পিছনের পুকুরপাড় দিয়ে বাড়ি ঢুকছিলেন। তিনি ছগল সমেত এগিয়ে এসে বললেন, "কে এয়েচে?"

সৌমী পলকহীন তাকিয়ে থাকে মহিলার দিকে। এই তার গর্ভধারিণী মা? এনার পেটের নিরাপদ আশ্রয়েই কেটেছে তার দশ-দশটি মাস? এনার দয়াতেই সে দেখেছে পৃথিবীর আলো? 'মা, মাগো, এতদিন কেন ভুলেছিলে আমায়?'

মহিলার পরণে একটি আধময়লা শাড়ি, গায়ে ব্লাউজের বালাই নেই। হঠাৎ চোখের সামনে একজন শহুরে তরুণীকে দেখে তিনি তাড়াতাড়ি শাড়ির আঁচলটি দিয়ে উন্মুক্ত বাহু দুটি ঢাকার চেষ্টা করলেন।"তুমি কে মা?"

"আমি জবা।"

"কোন্ জবা?"

"তোমার মেয়ে। দু'মাস বয়সে যাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলে।"

মহিলার হাতে ধরা ছাগল-বাঁধা দড়িটি খসে পড়ল। ঠোঁট দুটি সামান্য কেঁপে উঠল।

"মা..." আবেগ মাখানো কণ্ঠে 'মা' ডাক উচ্চারণ করে জবা ওরফে সৌমী মায়ের দুই চরণ স্পর্শ করলো। পরম মমতায় মা ওকে বুকে টেনে নিলেন, তারপর দু'জনে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন।

#
সন্ধ্যাবেলা মহাদেব জানার মাটির ঘরে পরিবারের অনেক সদস্যই উপস্থিত। বৃদ্ধ মহাদেব জানা ও তার স্ত্রী সবিতাদেবী ছাড়াও তাদের দুই অবিবাহিতা মেয়ে জয়া আর জয়িতাও সেখানে উপস্থিত। মহাদেববাবু বেশ কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে বসে থাকার পর ধীরে-ধীরে মাথা তুললেন। তারপর সৌমীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "দেখো মা, তোমার অভিযোগগুলো সবই শুনলাম। সব মেনে নিয়েও বলছি, তোমাকে কিন্তু আমরা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করিনি। আমার কথাগুলো একটু মন দিয়ে শুনলেই তুমি বুঝতে পারবে, কেন তোমাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে হয়েছিল। আমি সামান্য চাষী। নিজস্ব জমি যেটুকু আছে, তাতে দু'মাসের মতো ধান হয়। তাই বাধ্য হয়েই অন্যের জমিতে মজুর খাটি। বছরের যে সময়টায় চাষের কাজ থাকে না, ঠাকুরের নাম-গান করি। একটা হরিনাম সংকীর্তন দলে করতাল বাজাই। যাহোক দু'চারটি পয়সা হাতে আসে। বড় আশা ছিল একটি পুত্র সন্তান হবে, বড় হয়ে সংসারের হাল ধরলে একটু সচ্ছলতা আসবে। কিন্তু ভগবান আমার সে আশায় ছাই ঢেলে দিয়েছিল। পরপর তিনটি মেয়ের পরে সবিতা যখন চতুর্থ বারের জন্য গর্ভবতী হল, ভেবেছিলাম ভগবান বোধহয় এবারে মুখ তুলে চাইবেন। কিন্তু ভগবানের দয়া হল না, আবার মেয়ে জন্মালো। এদিকে সংসারে অভাব। সেবারে কীর্তন দলের সঙ্গে গেলাম নদীয়া। যে বাড়িতে কীর্তন হয়েছিল, তাদের বড় ছেলে সমীরবাবুর সাথে আলাপ হল। কথায়-কথায় নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বললাম। তিনি আগ্রহ সহকারে বললেন, 'দিন না আপনার ছোট মেয়েটাকে, আমার এক বন্ধুর বাচ্চা-কাচ্চা হচ্ছে না, দশ-বারো বছর বিয়ে হয়ে গেছে, খুব আদর যত্নে রাখবে আপনার মেয়েটাকে।' কি ভেবে তাকে কথা দিয়ে বসলাম। সবিতাকে বোঝালাম , 'আমরা তো ঠিক ভাবে খাওয়া-পরা দিতে পারবো না, একটা মেয়ে অন্তত: বড়লোকের ঘরে আদর যত্নে মানুষ হোক।' তারাপীঠে গিয়ে মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিলাম। তারা অনেক টাকা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমরা একটা টাকাও নিই নি।" মহাদেববাবুর চোখের কোন্ চিকচিক করে উঠলো। জল সৌমীর চোখেও, বলল, "ছেলে হলে নিজেদের কাছে রেখে দিতে, তাইতো?" ঘরে তখন নিস্তব্ধতা। ক্ষণিকের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে মহাদেববাবু আবার বললেন, "তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাও মা। আমরা ওদের কথা দিয়েছিলাম, তোমার ওপর কোনও দাবি আমরা কখনো করবো না।"

সৌমী ধীরে-ধীরে বলল, "শুধু নিজেদের কথাই ভাবলে বাবা, আমার কি মন নেই, আমার কি ইচ্ছে করে না তোমাদের কাছে থাকতে?"

"তোকে কোথাও যেতি হবে না মা, তুই আমাদের কাছেই থাক," ধীরে-ধীরে কিন্তু স্পষ্ট উচ্চারণে কথাকটি বললেন সবিতাদেবী।

খানিক বাদে সবিতাদেবী উঠোনে বসে উনানে রুটি সেঁকছিলেন। পাশে পিঁড়িতে বসে সৌমী সুখ-দুঃখের গল্প করছিল; ওর লক্ষ্ণৌয়ের বাড়ির কথা, বাবা-মায়ের কথা, কলেজের কথা। এমন সময় একজন বছর কুড়ি বাইশের যুবক সাইকেল নিয়ে বাড়ি ঢুকল, ঢুকেই অবাক চোখে সৌমীর দিকে তাকাল, তারপর একটা চোখ মেরে সিটি বাজাতে-বাজাতে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। উঠোন থেকে সৌমী শুনতে পেল ঘরে গিয়ে সে বলছে, "মালটা কে রে? বেশ খাসা তো?"

জয়িতার গলা শোনা গেল, "এই আস্তে, শুনতে পাবে। আমাদের দিদি হয়।"

শুনতে পেয়েছিলেন মা সবিতাদেবীও। লজ্জিত গলায় বললেন, "কিছু মনে করিস নে জবা, ওটা ওরকমই। অমানুষ তৈরি হয়েছে।"

"ও কে মা?"

"তোর ভাই, জয়ন্ত।"

"ভাই!! এই যে বললে পুত্রসন্তান হয়নি?" অবাক হয়ে বলল সৌমী।

"অনেক পরে হয়েছে; পাঁচটা মেয়ের পরে। তোর বাবা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা আমাকে কম অপমান, কম মারধোর করেছে ছেলে বিয়োতে পারি নি বলে! তোর পরেও আর একটা মেয়ে হয়েছিল আমার, ওই জয়িতা। ওকেও দিয়ে দিতে চেয়েছিল, আমি দিতে দিই নি, অনেক কান্নাকাটি করেছিলুম। তারও দু'বছর পর জয়ন্ত জন্মায়।"

"তোমার তাহলে কতগুলো মেয়ে মা?"

"তোকে বাদ দিয়ে চার মেয়ে। বড়, মেজোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি, তাদের ছেলেপুলে হয়েছে। অবস্থা মোটামুটি ভালো, জামাইরাও ভালো। সেজো মেয়েটা জয়া, তোর থেকে এক বছরের বড়। পড়াশোনায় ভালো ছিল। বি.এড. করে বসে আছে। চাকরি বাকরি কিছু পায়নি। দীঘার একটা হোটেলে রিসেপশনিস্ট না কি বলে, সেই কাজ করে। জয়িতাও বি.এস.সি পড়ছে। কিন্তু ছেলেটা আমার মানুষ হল না।"

"কেন?"

"বেশি আদরে বাঁদর তৈরি হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই যেটা চেয়েছে, সেটা পেয়েছে তো, তাই তার চাহিদার শেষ নেই। উচ্চমাধ্যমিকে দুবার ফেল করে পড়াশোনাটাও ছেড়ে দিল। এখন যত বখাটে ছেলেদের সাথে মেশে আর দিনরাত আড্ডা মারে। বুড়ো বাবাটা খেটে সারা হচ্ছে, আর উনি শুধু খাচ্ছে-দাচ্ছে আর ফুর্তি মেরে বেড়াচ্ছে।"

সৌমী কিছু বলল না, শুধু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল।
Next Part


All Bengali Stories    124    125    126    127    128    129    130    (131)     132    133   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717