All Bengali Stories
124
125
126
127
128
129
130
(131)
132
133
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
দত্তক-কন্যা - পর্ব ৪
বাংলা গল্প
লেখিকা - ডাঃ অনামিকা সরকার, বাবা - রামনাথ নস্কর, রামকৃষ্ণ পল্লী, নরেন্দ্রপুর, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
অন্য পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
##
দত্তক-কন্যা - পর্ব ৪
ভোর তখন আনুমানিক চারটে হবে, আকাশে হালকা আলোর আভা দেখা দিয়েছে। ঘরের মধ্যে নাইট ল্যাম্পের আলোয় ছোট্ট একটা চিরকুট লিখল সৌমী, "আমি চলে যাচ্ছি বাবা। আমার জন্য আর তোমাদের লজ্জিত হতে হবে না। ভাইকে অনেক যত্ন করো, ও তোমাদের একমাত্র ছেলে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি পরের জন্মে যেন তোমাদের ছেলে হয়ে জন্মাতে পারি। জয়িতাকে আর তিন দিদিকে অনেক ভালোবাসা জানিও। আর তুমি আর মা আমার প্রণাম নিও।
- ইতি
তোমাদের মৃত মেয়ে
জবা
পুনশ্চ - আমার কাছে আর মাত্র কুড়ি হাজার টাকাই ছিল। আমার গত একমাসের খরচ বাবদ একটা চেক রেখে যাচ্ছি। টাকাটা তুলে নিও।
চেক আর চিরকুটটা টেবিলের উপরে রেখে পা টিপে-টিপে দরজা খুলে ও বাইরে বেরোল। সবাই তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। উঠোনে নেমে বাড়িটার দিকে একবার ঘুরে তাকাল সৌমী। তারপর আবার সামনে ফিরে ধীরে-ধীরে রাস্তার দিকে চলে গেল।
পরদিন সৌমী যখন লক্ষ্ণৌ স্টেশনে নামলো তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত শরীরটাকে টেনে অটো স্ট্যান্ডে গিয়ে একটা অটো রিজার্ভ করে ও নিজের পাড়ার গলির মুখে এসে নামলো। আর মাত্র তিন/চার মিনিট! গিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়বে পাপার কোলে। মামণির বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে থাকবে। আচ্ছা পাপা-মামণি আগের মতো ভালবাসবে তো? রাগ করে কথা বন্ধ করে দেবে না? না না, ওরা তেমন মানুষই না। পাপা নিশ্চয়ই বাজারে গিয়ে ওর প্রিয় পমফ্রেট মাছ নিয়ে আসবে। মামণি নিশ্চয়ই তক্ষুনি রাবড়ি বানাতে বসবে। উফ্ কতদিন খাওয়া হয়নি মামণির হাতের রান্না!
মনের আনন্দে ও এগিয়ে চলল। হঠাৎ দেখল উল্টো দিক থেকে নবীন চাচা এগিয়ে আসছেন। নবীন চাচা সৌমীর পাপার দোকানের কর্মচারী, অন্য মহল্লায় বাড়ি।
সৌমী একগাল হেসে বলল, "আঙ্কেল আপ?"
নবীন চাচার মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। গম্ভীর গলায় বললেন, "ইতনি দের কিঁউ কর্ দি বেটা? যাও জলদি ঘর যাও।"
কি ব্যাপার হল? নবীন চাচা কি বললেন? সিরিয়াস কিছু ঘটেছে কি? কিছু বুঝতে না পারলেও সৌমী হাঁটার গতিবেগ বাড়িয়ে দিলো। দূর থেকে দেখতে পেলো ওদের বাড়ির সামনে কয়েকজন লোকের জটলা। সৌমীর বুকটা অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো। কাছে এসে ও দেখল প্রতিবেশীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন বিষণ্ণ মুখে। "ক্যায়া হুয়া?" সৌমী কাঁপা-কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো।
রামিয়া আন্টি জলভরা চোখে বললেন, "পহেলে অন্দর যাও বেটা। অন্দর যা কে দেখো।"
সৌমী আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো। একতলার বাড়িটার বারান্দাতেও পরিচিত লোকজনের ভিড়। সবাই অদ্ভুতভাবে সৌমীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দু'পা এগোতেই বেডরুমের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন পাপা। সৌমীকে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন। ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন, "মা রে, সেই এলি, দু'দিন আগে আসতে পারলি না?"
সৌমীও দু'হাতে পাপাকে জড়িয়ে ধরল। ফিসফিস করে বলল, "কি হয়েছে পাপা?"
পাপা কিছু না বলে ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে নিয়ে গেলেন শোওয়ার ঘরে। খাটের উপরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন মামণি। গলা পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা। দুটি চোখের উপরে দুটি তুলসী পাতা। সারা শরীরে অজস্র রজনীগন্ধা আর সাদা স্থলপদ্মের মালা। বুকের উপর একটি গীতা। মুহূর্তের জন্য স্থাণুবৎ হয়ে গেল সৌমী। পর মুহূর্তেই "মামণি" বলে মায়ের বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো সে।"মামণি চোখ খোলো। চোখ খোলো মামণি। দেখো আমি ফিরে এসেছি। আর কক্ষনো তোমাদের ছেড়ে যাব না। আমাকে শাস্তি দাও মামণি, শাস্তি দাও।" আরও কত কি বলতে-বলতে নাগাড়ে কেঁদেই চলল সৌমী - তার কিছু কথা বোঝা গেল আর বেশিরভাগটাই দুর্বোধ্য। তিন চারজন মহিলা ও পাপা মিলে ওকে জোর করে টেনে তুলে নিয়ে এসে বসার ঘরের সোফার উপরে বসিয়ে দিলেন।
"কি করে হল পাপা?" কান্নায় ভেঙে পড়ে জিজ্ঞেস করলো সৌমী।
"জানিসই তো তোর মায়ের হার্টের প্রব্লেম। তুই চলে যাওয়ার পরে একেবারে ভেঙে পড়েছিল রে। চার/পাঁচদিন বিছানা ছেড়ে ওঠেনি, খাওয়া-দাওয়াও করেনি। শেষে চিন্তায় চিন্তায় ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে লক্ষ্ণৌয়ের সেরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। এক সপ্তাহ ICU-তে ছিল। তারপর একটু সুস্থ হলে জেনেরাল বেডে দেওয়া হয়। সারাক্ষণ তোর কথা বলতো - তুই কি করছিস, কি খাচ্ছিস, ভালো আছিস কি না এইসব। আমি মিছিমিছি বলতাম 'খুব ভালো আছে। এই তো গতকাল রাতে আমার সঙ্গে কথা হল।' সব বুঝতে পারতো। বলতো, 'তুমি মিথ্যে কথা বলছ।' এমনি ভাবে প্রায় কুড়ি দিন কাটল। শেষে গতকাল রাতে আর একটা ম্যাসিভ অ্যাটাক। আর ধরে রাখতে পারলাম না। আজ সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।" পাপা হাহাকার করে কেঁদে উঠলেন।
"আমাকে খবর দিলে না কেন পাপা?"
"কি করে খবর দেব মা। তুই তো ফোন-টোন কিছুই নিয়ে যাসনি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখিস নি।"
অপরাধীর মতো মাথা নীচু করে বসে রইলো সৌমী।
"রাম নাম সত্য হ্যায়," ধ্বনি দিয়ে মাধবীদেবীকে দাহ ঘরের সামনে শোয়ানো হল। শ্মশানের পুরোহিত এসে ভিড়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, "ইনকা বাচ্চে হ্যায়?"
রামিয়া আন্টি সৌমীকে ডাকলেন, "আও সাওমী।"
সৌমী ইতস্তত করতে লাগলো। পাপা এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে পুরোহিতের সামনে নিয়ে গেলেন। বললেন, "ইয়ে রহি।"
সৌমী আর এক মুহূর্তও ভাবল না। পুরোহিতের হাত থেকে গঙ্গাজল নিয়ে আচমন করলো। তারপর মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে মায়ের অক্ষয় স্বর্গবাস কামনা করলো। প্রজ্বলিত আগুন নিয়ে মায়ের মুখ স্পর্শ করলো। তারপর সকলের সাথে হাত লাগিয়ে মায়ের দেহ ট্রলিতে তুলে আস্তে করে ইলেকট্রিক চুল্লির দিকে ঠেলে দিল।
( সমাপ্ত )
Next Bangla Story
All Bengali Stories
124
125
126
127
128
129
130
(131)
132
133
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717