Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

দত্তক-কন্যা

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    124    125    126    127    128    129    130    (131)     132    133   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



দত্তক-কন্যা
বাংলা গল্প
লেখিকা - ডাঃ অনামিকা সরকার, বাবা - রামনাথ নস্কর, রামকৃষ্ণ পল্লী, নরেন্দ্রপুর, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প


অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   

## দত্তক-কন্যা
লেখিকা - ডাঃ অনামিকা সরকার, বাবা - রামনাথ নস্কর, রামকৃষ্ণ পল্লী, নরেন্দ্রপুর, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সকাল ন'টা বাজে। পাপা-মামণির বাড়ি ফিরতে অন্তত: এগারোটা বাজবে। সুতরাং কোনও তাড়া নেই। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবিটা বের করে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সৌমী । কাঁপা-কাঁপা হাতে চাবি ঘুরিয়ে আলমারিটা খুলে ফেললো। আলমারিটা মামণি-পাপার। ওর জামাকাপড় রাখার জন্য পাপা একটা আলাদা আলমারি কিনে দিয়েছেন। যদিও আগে বেশ কয়েকবার এই আলমারিটা খুলেছে সৌমী - কখনো মামণির অনুরোধে মামণির শাড়ি বের করে দিয়েছে, তো কখনো পাপার ব্লেজার। কিন্তু আজ একটু অন্যরকম, আজ ওদের অনুপস্থিতিতে আলমারিটা খুলতে সৌমীর মনের মধ্যে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে।

আলমারির পাল্লা দুটো খোলার পর ভিতরটা ভালো করে নিরীক্ষণ করতে থাকে ও। না, লকারের চাবিটা কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ভালো করে দেখতে থাকে। নাহ্, দেখা যাচ্ছে না। মামণির শাড়িগুলো বের করে ঝেড়ে-ঝেড়ে দেখতে থাকে। একে-একে খাটের উপর শাড়ির পাহাড় জমে গেল, পাপার জামা-প্যান্টগুলোও খাটের উপরে চলে এল, তবু লকারের চাবি পাওয়া গেল না। সবশেষে মামণির ব্লাউজ রাখার ব্যাগ দুটো ঢেলে খুঁজতে থাকে। টুপ করে ব্যাগের ভিতর থেকে পড়লো একটি চাবি। আঃ ! অবশেষে পাওয়া গেল...

ভয়ে ভয়ে আলমারির ভিতরের লকারটা খুললো সৌমী, জীবনে প্রথমবার। ছোট-ছোট বেশ কয়েকটি বাক্স রয়েছে। আস্তে করে সেগুলো খুললো সৌমী। ভিতরে মামণির সোনার গয়না। সাবধানে বন্ধ করে একপাশে সরিয়ে রাখলো। গয়নার বাক্সগুলোর নীচে একটা রংচটা পুরনো হলুদ রঙের ফাইল। গয়নার বাক্সগুলোকে না নড়িয়ে নীচ থেকে সাবধানে ফাইলটা টেনে বের করলো সৌমী। খাটের উপরে নিয়ে এসে ভিতরের কাগজগুলো দেখতে থাকে আর একটা-একটা করে সরিয়ে রাখতে থাকে। এগুলোর কোনোটাই নয়। অবশেষে সবার নীচে পাওয়া গেল একটি স্ট্যাম্প পেপার। চোখের সামনে মেলে ধরে লেখাগুলো গোগ্রাসে গিলতে থাকে সৌমী। সাদা স্ট্যাম্প পেপারের উপর কলম দিয়ে গোটা-গোটা হরফে কিছু লেখা ...
আমি মহাদেব জানা ও আমার স্ত্রী সবিতা জানা, সাং কালীতলা, ঘাটাল, পূর্ব মেদিনীপুর - সজ্ঞানে ও স্ব-ইচ্ছায় সন্তান প্রতিপালনে অক্ষম হইয়া আমাদের চতুর্থ কন্যা, দুইমাস বয়সী জবার সমস্ত দায়িত্ব মথুরাপুর, নবদ্বীপ, নদীয়া নিবাসী শ্রীযুক্ত কৃষ্ণমোহন দাশ ও তাহার স্ত্রী শ্রীমতী মাধবীলতা দাশকে দিতেছি। আজিকার পর হইতে জবার উপর আমাদের কোনোরূপ দাবী থাকিবে না। উপরোক্ত ব্যক্তি দুইজনই ইহার পিতামাতা হিসাবে গণ্য হইবেন।
-ইতি
শ্রী মহাদেব জানা
শ্রীমতী সবিতা জানা

স্ট্যাম্প পেপারের একধারে সাক্ষর করেছেন শ্রী কৃষ্ণমোহন দাশ ও শ্রীমতী মাধবীলতা দাশ। তার নীচে সাক্ষী, সমীর কুমার হালদারের সাক্ষর। তারিখ - ২০/০৪/১৯৯৬ ।

কাগজটির কোনোখানে ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষর খুঁজে পেলো না সৌমী। বয়ানটি বারবার পড়তে থাকে সে। অবশেষে কাগজটি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে খাটের উপর পড়ে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে।

কতক্ষণ এইভাবে কেঁদেছিল ও জানে না। হঠাৎই কাচের জানালায় দুমাদুম ধাক্কায় ও সম্বিত ফিরে পেলো। "সৌমী, সৌমী, দরজা খোল্। কি হয়েছে তোর?" পাপার গলা।

চমকে উঠে খাট থেকে নেমে ও গিয়ে বারান্দার গেটটা খুলে দিলো।

"কি রে ঘুমিয়ে পড়েছিলি নাকি? কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি।"

সৌমী আস্তে করে উত্তর দিলো, "এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে?"

"ডাক্তারবাবু একটা ইমার্জেন্সি কাজে আটকে পড়েছেন, তাই আজ বসেন নি। কিন্তু তোর চোখ দুটো এত লাল কেন মা?" মামণি বললেন।

সৌমী নিরুত্তর।

পাপা ততক্ষণে ওকে পাশ কাটিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে গেছেন। খাটের উপর রাশিকৃত জামাকাপড় আর কাগজপত্র দেখে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, "একি, এই ঘরটার এমন হাল কেন?" তার কণ্ঠস্বর অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল।

মামণি ছুটে এসে লণ্ডভণ্ড কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন, "এসব বের করেছিস কেন তুই?"

শান্ত গলায় মামণির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো সৌমী, "আমি কে মামণি?"

#
রাতের ট্রেন ছুটে চলেছে। স্লিপার ক্লাসের যাত্রীরা প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুম নেই কেবল সৌমীর চোখে। জানালার ধারে বসে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে ও। মাঝেমধ্যে আলোকিত স্টেশন ছুটে যাচ্ছে, আলোকিত শহরও পিছনে ছুটে চলেছে। সেসব দিকে হুঁশই নেই ওর। মনের মধ্যে তোলপাড় চলেছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই কি সুন্দর জীবন ছিল ওর। ২৪ বছরের ছটফটে প্রাণচঞ্চল তরুণী। লক্ষ্ণৌ য়ুনিভার্সিটি থেকে PhD করছে ও। সেখানেই ওর আলাপ হয় মৌবনীর সাথে। দুজনের সাবজেক্ট একই, একই প্রফেসরের অধীনে আছে। মৌবনী মেয়েটি বেশ হাসিখুশি, তার উপর বাঙালী। সুতরাং আলাপ বন্ধুত্বে গড়াতে বেশি সময় নিলো না। সৌমীরাও বাঙালী, তবে লক্ষ্ণৌ প্রবাসী। ও শুনেছে ওর জন্মের পরপরই ওর পাপা নবদ্বীপ ছেড়ে লক্ষ্ণৌতে চলে আসেন। এখানে পাপার একটি ছোটখাটো দোকান আছে, জামাকাপড়ের। সৌমী কখনোই নবদ্বীপের বাড়িতে যায়নি। তবে পাপা যান, দু'বছরে একবার করে। মামণিকে কখনোই সৌমী শ্বশুরবাড়ি কি বাপের বাড়ি যেতে দেখেনি। অবশ্য এই নিয়ে সৌমীর কখনো কোনও জিজ্ঞাস্য ছিলও না। ও নিজের পড়াশোনা নিয়েই মেতে ছিল।

আর মৌবনী মাত্র মাস দুই আগে লক্ষ্ণৌ য়ুনিভার্সিটিতে PhD করতে এসেছে। শহরেই একটি বাড়িভাড়া নিয়েছে। ওর অসুবিধার কারণে মৌবনীর মা-ও মেয়ের সঙ্গে লক্ষ্ণৌ চলে এসেছেন। মৌবনী একদিন সৌমীকে ওদের বাড়ি নেমন্তন্ন করলো। ওর মা বেশ ভালো, খুব কথা বলেন। সৌমীকে অনেক যত্ন করলেন। বললেন, "তোমরা তো বাঙালী, এখানে বাড়ি কিনে আছো। কিন্তু ওয়েস্ট বেঙ্গলের কোথায় বাড়ি তোমাদের?"

"নদীয়ার নবদ্বীপ।"

"তাই নাকি? আমার বাপের বাড়িও নবদ্বীপে। তা নবদ্বীপের কোথায়?"

"সেটা সঠিক বলতে পারবো না আন্টি। তবে শুনেছি মথুরাপুর বা এইরকম কোনও নাম হবে।"

"ওমা তাই? আমার বাপের বাড়িও নবদ্বীপের মথুরাপুরে। তোমার বাবার নাম কি?"

"কৃষ্ণমোহন দাশ।"

মৌবনীর মায়ের চোখ দুটি গোল গোল হয়ে গেল। "কৃষ্ণমোহন দাশ? তুমি আমাদের কেষ্টদার মেয়ে?"

"আপনি চেনেন আন্টি?"

"আরে ওতো আমার জেঠতুতো দাদা। বড়জেঠুর মেজো-ছেলে। শুনেছিলাম U.P. তে থাকে।"

সৌমীর মুখের হাসি চওড়া হল। বললো, "তাহলে আপনি আমার সত্যিকারের আন্টি?"

আন্টি সেকথার উত্তর না দিয়ে বললেন, "তোমাকে চিনবো কি করে বলো, দেখেছিলাম তো সেই দুমাস বয়সে। তারপর বৌদি সেই যে চলে গেল, আর কোনোদিন শ্বশুরবাড়ি আসেনি। আর আসবেই বা কি করে? সবসময় তো মনের মধ্যে ভয় কাজ করে না?"

"কিসের ভয় আন্টি?"

"এই কেউ যদি তোমাকে কিছু বলে দেয়!"

"বলে দেয়? কি বলে দেবে আন্টি?"

"এই ধরো তোমাকে ওরা কোথা থেকে কিনে আনলো, কেন কিনে আনলো - এইসব আর কি।"

সৌমীর মাথায় যেন হঠাৎ বজ্রাঘাত হল। থতমত খেয়ে ও বললো, "মানে? আপনি কি বলছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।"

"থাক ওসব কথা। তোমাকে আর বুঝতে হবে না।"

"না আন্টি, প্লিজ বলুন। কিনে আনলো মানে কি?"

"আচ্ছা বলছি, এত করে যখন বলছো। শোনো তবে, কেষ্টদা আর বৌদির বিয়ে হয়েছিল অনেক বছর, কিন্তু বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছিলো না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিল, ঠাকুর-থানে মানত করেছিল; তবু কোনও লাভ হয়নি। এভাবেই প্রায় ন'দশ বছর কেটে যায়। তারপর দাদার কলেজের কোন বন্ধুর মারফত যোগাযোগ করে মেদিনীপুর, না উত্তর ২৪ পরগনা, কোথা থেকে জানিনা, একটা মেয়ে বাচ্চা নিয়ে আসে, দুমাসের। সেই মেয়েটাই তুমি, বুঝলে?"

স্থানুবৎ বসে রইলো সৌমী। মুখ দিয়ে কথা বের করা তো দূরের ব্যাপার, ঠোঁট পর্যন্ত নাড়াতে পারলো না। শুধু ওর শরীরটা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আন্টি বলে চলেন, "এই দেখো, কথায়-কথায় সব বলে ফেললাম, এসব নিয়ে তুমি চিন্তা করো না সৌমী। বাবা-মাকেও কিছু জিজ্ঞাসা করো না, ওরা আমাকে খারাপ ভাববেন। তারচেয়ে যেমন পড়াশোনা করছিলে, তেমন করে যাও।"
Next Part


Next Bangla Story

All Bengali Stories    124    125    126    127    128    129    130    (131)     132    133   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717