অবলম্বন, বাংলা গল্প, Bangla online Story, Bangla Story, ঢাকা, বাংলাদেশ

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------

All Bengali Stories 131 132 133 134 135 136 137 (138) 139 140 141 142

◕ অবলম্বন
বাংলা গল্প
লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, বাবা- হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর

## অবলম্বন

লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, বাবা- হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর
আজ অনেকগুলো দিন, অনেকগুলো মাস আর তিনটে বছর হয়ে গেল মা রে... তোর সঙ্গে এই ফোনে যা কথা আর তোকে দেখা... তুই মুখেই বলিস, 'বাবা কেমন আছো?' আর আমি তোকে হেসে উত্তর দেই, 'এই কেটে যাচ্ছে... বয়স হয়েছে, ভালো খারাপ নিয়েই চলতে হবে।'

জানিস মা, কিছু-কিছু কথা তোকে মুখ ফোটে বলতে পারি না, এই কথাগুলো বলে যাই মনে -মনে। জানিস মা, প্রথম-প্রথম খুব মনখারাপ হতো এটা ভেবে যে, তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে, আমাদের বয়সকালের একমাত্র অবলম্বন। তোর জীবনের কথা ভেবে, তোর ভবিষ্যৎ ভেবে আমার দিন কাটত। জানিস মা, সবার আগে মূল্য দিতাম তোর ইচ্ছাকে। তাই তোর ইচ্ছের জন্যই বিয়ে দিয়েছি বিদেশে থাকা তোর পছন্দের পাত্রের সঙ্গে। প্রথমে মন চাইছিল না এটা মেনে নিতে। তুই বিয়ে হয়ে চলে যাবি ঐ বহুদূরে, বছরের-পর বছর চলে যাবে তুই এই বৃদ্ধ বাবার কাছে আসতে পারবি না। তোকে আবদার করে বলতে পারব না, 'মা এক কাপ চা করে দে, একটু আমার সঙ্গে গল্প কর..."

আর এখন মন চাইলেও তোর সঙ্গে দেখা হয় না সামনে থেকে। জানিস মা, তুই যখন বাড়িতে থাকতিস তখন বলতে ইচ্ছে করতো, 'চল মা, কয়েক পা আমার সাথে হাঁটবি... চল, ঐ ছোট বেলার মতো।' তারপর মনে হতো, তোর কী ইচ্ছে করবে এই ধীর গতিতে পা ফেলা বাবার হাত ধরে হেঁটে যেতে! আবার যখন অসুস্থ হয়ে পড়তাম তখন তোর কথা খুব মনে হতো, কিন্তু তোকে কিছু বলতাম না, মনে হতো তোর ওপর চাপ দেওয়া উচিত নয় এখন থেকে। কারণ বুড়ো বয়সে তুই তো আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তোকে নিয়ে যেমন অনেক স্বপ্ন ছিল তেমনি ছিল তোর কাছ থেকে কিছু আশা। তা হয়তো আমার মতো প্রত্যেক বাবা-মা'র থাকে যখন তারা তাদের সন্তানদের একটু-একটু করে বড়ো করে তোলে। কিন্তু হয়তো ঐ আশা ধীরে-ধীরে ফিকে হয়ে যায় যখন ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মতো বাঁচতে শেখে। আর তখন ধীরে-ধীরে নিজেকে বোঝাতে হয়; একা এসেছি এই পৃথিবীতে, একাই যেতে হবে। সন্তানদের মানুষ করেছি ওরা আজ ভালো আছে, এই টুকু যথেষ্ট। এইভাবে এখন আমিও নিজেকে, আর তোর মা কে বোঝাই। একে অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। কিন্তু তবুও দিনের শেষে যখন একা থাকি, অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন খুব অসহায় বোধ হয়। মনে হয় এই বৃদ্ধ কালে কোন এক অবলম্বন প্রয়োজন।

জানিস মা, যখন সন্ধ্যায় পথ ধরে একা হেঁটে যাই,উল্টো দিকে প্রায় চোখে পড়ে একটা কৃষকের মেয়ে সাহায্য করছে তার বাবাকে। তারপর খুব সন্ধ্যা হলে তার বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বাড়ি ফিরে। এর থেকে সুন্দর মুহূর্ত একজন বাবার জীবনে কী হতে পারে... জানিস তো, এই বুড়ো বয়সে খুব লোভ হয়; আমি যদি ঐ কৃষক হতাম, চাকরিজীবী না হয়ে; তাহলে আমার মেয়ে নিশ্চয়ই এইভাবে আমার কাজে সাহায্য করতো, এইভাবে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বাড়ি ফিরতো। হয়তো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো, 'বাবা ঠিক আছো? কিছু খাবে? আমি কি তৈরি করে দেব?

জানিস মা, মনের এই কথাগুলো, ইচ্ছেগুলো বলিনি তোকে কোন দিন। কারণ তোর মনে হবে বাবা স্বার্থপরের মতো ভাবছে। তাই বলবোও না কোন দিন, শুধু মনে-মনে এইভাবে বিড়বিড় করে চলি। কিন্তু জানিস মা, তুই সুখে থাক ভাল থাক এটাই চাই, তবু এই বৃদ্ধ বয়সে তোর‌ ওপর নির্ভর করে বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, শীতের সকালে তোর হাতটা ধরে কুয়াশা ঘেরা পথে এগিয়ে যেতে। কারণ তোর যত‌ই আলাদা পরিচয় থাক না কেন, তুই তো আমাদের সন্তান, আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তাই যতই অক্ষম হয়ে আসছি শারীরিক দিক থেকে, মানসিক দিক থেকে তখন তোর কথা খুব মনে হয়। যখন কাউকে পাই না পাশে তখন খুব মনে হয় — আমার মেয়ে, আমার একমাত্র অবলম্বন যদি থাকত আমার কাছে!!
( সমাপ্ত )

অবলম্বন

স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর, ২০২১-এর একটি নির্বাচিত গল্প