একটি পাঁচশ টাকার নোট , বাংলা গল্প, Bangla online Story, Bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

All Bengali Stories 131 132 133 134 135 136 137 138 (139) 140 141 142

◕ একটি পাঁচশ টাকার নোট
স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর, ২০২১-এর একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, বাবা- হরিপদ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর

## একটি পাঁচশ টাকার নোট

লেখক - মুকুট রায়, বাবা- স্বর্গীয় কান্তিনাথ রায়, আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গ

"মেলা ফ্যাচ-ফ্যাচ করে বিরক্ত করিস না তো। তোকে পাঁচশ টাকা দিয়ে দিলে আড়াই হাজার টাকা দামের এই পাকা ইলিশ মাছটা খাব কি করে? " বাজারে মাছ কিনতে এসে গোপালের দিকে চেয়ে খগেনবাবু খেঁকিয়ে উঠলেন।

"দাও না বাবু, একটা পাঁচশ টাকা দিলেই আমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে বসতে পারব। এতদিন ধরে এত কষ্ট করেছি পড়াশোনা করার জন্য। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাতেই বসতে পারব না?" গোপাল শুকনো মুখে করুন ভাবে কাকুতি- মিনতি করতে লাগলো।

"তুই পরীক্ষাতে বসতে না পারলে আমার কিছু যায় আসে না?" নগেন বাবু বিরক্ত মুখে পাশ কাটিয়ে হন-হন করে এগিয়ে গেলেন। গোপাল হতাশ হয়ে সেইদিকে চেয়ে রইল।

আজকের মধ্যে এগজামিনেশন ফি'টা না দিতে পারলে সে সত্যিই পরীক্ষাতে বসতে পারবে না। বাবা যে টাকাটা যোগাড় করে দেবে তার উপায় ও নেই। আজ তিন দিন হল, ধূম জ্বরে বাবা বিছানা থেকে মাথাই তুলতেই পারছে না। না, আজকের মধ্যে টাকাটা তাকে জোগাড় করতেই হবে। খেয়াল হল সামনে একটা শুঁড়িখানা আছে। লোকের মুখে শুনেছে, মাতালদের নাকি 'দিল' বড় হয়। তবে শুঁড়িখানার দিকে যেতে তার ভয় লাগে। মদ খেয়ে মাতালগুলো এমন করে না... তবু সব ভয় কাটিয়ে তাকে আজ‌ যেতেই হবে। আজ সে মরিয়া।

"বাবু, একটা পাঁচশ টাকার নোট দাও না...পাঁচশ টাকার নোট না পেলে আমার পরীক্ষাটাই দেওয়া হবে না।" গোপাল কাঁচুমাচু মুখ করে শুঁড়িখানা থেকে বের হওয়া এক মাতালকে বলল।

"কে বাবা রসের নাগর? তুমি আমার সঙ্গে মদ খেলে তবেই আমি তোমাকে পাঁচশ টাকা দেব। যাবে নাকি আমার সঙ্গে?" গোপালের ঘাড়ে হাত দিয়ে শুড়িখানার ভিতরে নিয়ে যেতে উদ্যত হল মাতালটা। পা টলমল করছে, গা দিয়ে ভকভক করে মদের গন্ধ বের হচ্ছে। গোপালের গা গুলিয়ে কিরকম বমি পাচ্ছিল। সে কোনরকমে মাতালের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, "আমি মদ খাই না।"

"তবে কি আমার সঙ্গে মস্করা করছিস? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা..." বলেই একটা মদের বোতল দেওয়ালে ভেঙ্গে, ভাঙ্গা -বোতল নিয়ে গোপালকে তাড়া করল। প্রানের ভয়ে গোপাল গাড়ি-ঘোড়া চলার ব্যস্ত রাস্তা ধরে ছুটতে লাগলো। ছুটতে-ছুটতে একটা বড় ইটে হোঁচট খেয়ে রাস্তার উপরেই পড়ে গেল। ঠিক সেই সময়েই একটা বড় দামী গাড়ি ঘচাৎ করে তার সামনে এসেই ব্রেক করল। গাড়ি থেকে সুসজ্জিত পোষাক পরা এক পুরুষ মানুষ রাগী মুখে গালাগাল দিতে দিতে নেমে এল। পুরুষ মানুষটি গোপালকে মারতে উদ্যত হলে তার সঙ্গের ভদ্রমহিলা তাকে নিরস্ত করে গোপালকে জিজ্ঞেস করল সে এরকম ভাবে প্রানপনে কেন ছুটছিল? আর একটু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যেত।

মহিলার সহানুভূতিপূর্ণ কথা শুনে গোপালের চোখে জল এল। সে ভদ্রমহিলাকে সব কিছু খুলে বলল। জানালো একটি পাঁচশ টাকার নোটের জন্য কি ধরনের ঝুঁকি সে নিয়েছে। তার কথা শুনে ভদ্রমহিলা তাঁর সঙ্গীকে বললেন, একে একটি পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে দাও। কিন্তু তাঁর সঙ্গীটি গোপালের কথা বিশ্বাস করতে রাজি ছিল না। তখন তিনি বললেন যে, তাঁর অংশের টাকা থেকে পাঁচশ টাকা গোপালকে দিয়ে দিতে। ভদ্রমহিলার সঙ্গী যে তাঁর স্বামী ছিল, বাধ্য হয়ে একটি পাঁচশ টাকার নোট গোপালকে দিলেন। গোপাল টাকা পেয়ে ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল সে এই টাকা তাঁকে একদিন ফেরত দিয়ে দেবে। ভদ্রমহিলা হেসে বললেন, "তার কোন প্রয়োজন নেই..."

এই ঘটনার পর প্রায় দশবছর কেটে গেছে। ভদ্রমহিলার স্বামী তাঁকে ছেড়ে অন্য মহিলার সঙ্গে বসবাস করেন। ভদ্রমহিলা আর্থিক চরম দূর্দশার মধ্যে ফুটপাতে দিন কাটান। হঠাৎ শোনা গেল সরকার থেকে ফুটপাতবাসীদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিলি করতে স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন। ফুটপাতবাসীদের মধ্যে উৎসাহের আলোড়ন শুরু হয়ে গেল। ভদ্রমহিলা জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখানোর শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছিলেন।

হঠাৎ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভদ্রমহিলার সামনে এসেই থামল। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে প্রনাম করার পর বৃদ্ধা ঝাপসা চোখে দেখলেন সেদিনের সেই গোপাল। তার মুখেই শুনলেন সেদিনের সেই পাঁচশ টাকার নোট তার জীবন পরিবর্তন করে তাকে আজ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট করেছে। ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন, গোপাল কি তাঁকে পাঁচশ টাকা ফেরত দিতে এসেছে? তার উত্তরে গোপাল জানাল, সেদিন পাঁচশ টাকা দিয়ে ভদ্রমহিলা তাকে যে ভালোবাসা জানিয়েছিলেন তার বদলে সে ভদ্রমহিলাকে নতুন জীবন দিতে এসেছে। ভদ্রমহিলা এবার থেকে তার সঙ্গেই থাকবেন।
( সমাপ্ত )