চুলের গন্ধ, বাংলা গল্প, Bangla online Story, Bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

All Bengali Stories 131 132 133 134 135 136 137 138 139 (140) 141 142

◕ চুলের গন্ধ
স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর, ২০২১-এর একটি নির্বাচিত গল্প
লেখিকা - অনিন্দিতা মণ্ডল, বাবা- কিঙ্কর চন্দ্র মণ্ডল, কাঞ্চনপুর, বাঁকুড়া

## চুলের গন্ধ

লেখিকা - অনিন্দিতা মণ্ডল, বাবা- কিঙ্কর চন্দ্র মণ্ডল, কাঞ্চনপুর, বাঁকুড়া

আজ ২২ শে আষাঢ়; বাইরে কালো মেঘ— টিপুর মনও কালো করে ছেয়ে আছে যেন। খুব মনে পড়ছে টিপুর, তার মাকে। প্রতিদিনই আসে স্বপ্নে, কিন্তু আজ মা'র গন্ধে মন মাততে চাইছে আবার সেই ছোট্টবেলার মতো। "মা তোমার মনে পড়ে...শীতের রাতে তুমি উনুনের পাশে বসে রুটি করতে, আমি তোমার চাদরের তলে নিজেকে গুটিয়ে-সুটিয়ে রাখতাম। স্কুলের সবাইকে বলতাম, 'জানিস আমার মায়ের চুলের গন্ধে আমি ঘুমিয়ে যাই।' পাড়ার কলে লাইন দিয়ে জল আনতে যেতে চুল খুলে। তোমার চুলের গন্ধে-গন্ধে আমি বড় হলাম; তোমার টিপু..."
[বন্ধুদের কাছে টিপু হাসির পাত্র হয়ে উঠত]
মাকে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করে?

আজকেই কেন এত মনে পড়ছে? কতদিন হল মা নেই — সে চেয়েছিল মায়ের চুলের গন্ধ কৌটোতে ভরে রাখতে, কিন্তু পারেনি। টিপুর বিয়ে হল, এক ধনী পরিবারের মেয়ে, যামিনীর সাথে। এক বছরের মাথায় ঘরে এক পুত্ৰ সন্তান এলো। টিপু তার মায়ের কত গল্প, চুলের গন্ধের গল্প কত শুনিয়েছে তার ছেলেকে। যামিনী বলে, "এসব ন্যাকাপনা কথাবার্তা ছেলেকে শুনিও না... ও কি তোমার মত নাকি?"
[কি অদ্ভুত না!}

নিজের বলতে টিপু আর কাওকে পায় না। টিপুর ছেলেরও বিয়ে হয়ে গেছে। তিনতলা বাড়ি, চার-পাঁচটা কাজের লোক, কিন্তু সেই ঘরের এক কোনায়ও টিপুর জায়গা নেই। ষাট-এর গোরায় এসে টিপুর আজ তার মায়ের চুলের গন্ধ বড্ড মনে পড়ছে। কত একাকীত্বের রাত কাটিয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে, কত মা-বাবার অসহায়তা দিনের-পর দিন সে দেখে চলেছে, তার ছেলে-স্ত্রী কেউ তার কাছে আর আসে না। টিপু যেন সেই চুলের গন্ধেই বেঁচে আছে এতদিন। সেই চুলের গন্ধ তাকে শক্তি যোগায়, সেই চুলের গন্ধে টিপু সব কষ্ট ভুলে যায়।

বাইরে অঝোর বৃষ্টি, টিপুর স্বপ্নে সেই চুলের গন্ধ, "মা, তুমি এসেছ? এসো-না, আমার কাছে বসো..."

"হ্যাঁরে, আমি এতদিন তোর সাথেই তো আছি টিপু..."

"না তুমি থাকো না, যখন আমার মন খারাপ করে তখন তোমার ঐ চুলের গন্ধটা আমি পাই না। সবাই পাগল বলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে..."

"তুই তো আমার পাগলই রে, সেই ছোট্ট টিপু..."

স্বর্গ যেন টিপুর সেই একাকীত্বের বৃদ্ধাশ্রমে নেমে এসেছে। সবাই জলপট্টি দিচ্ছে, টিপুর চোখে জল, মুখে বিড়বিড় করে শুধু একটাই কথা, "আহ: সেই গন্ধ..."

"আজ তোকে নিতে এসেছি রে... চল আমরা আবার একসাথে থাকবো। তুই ঘুমাবি, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেব। তুই আঁচল ধরে পিছু-পিছু ঘুরবি, আমার চুলের গন্ধে ঘুমিয়ে পড়বি, তোকে রূপকথার গল্প শোনাবো...চল টিপু..."
[টিপুর মুখে অম্লান হাসি, বাকিদের চোখের অশ্রু বাইরের আষাঢ়ের বৃষ্টি-ফোঁটাগুলোকেও কেমন যেন দমিয়ে দিয়েছে।]

"চলো মা..."

সেই চুলের গন্ধে মিশে গেল টিপু, বৃষ্টিও সেই গন্ধের লোভ সামলাতে পারলো না। সবাই থমকে গেল হয়তো এই ভেবে যে, তাদেরও আজকের পর থেকে আর 'চুলের গন্ধ' শব্দটা শোনা হবে না।
( সমাপ্ত)