Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

মাস্টারমশাই

স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর, ২০২১-এর একটি নির্বাচিত গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



All Bengali Stories    131    132    133    134    135    136    137    138    139    140    (141)     142   

মাস্টারমশাই
স্বরচিত ছোট গল্প প্রতিযোগিতা, নভেম্বর, ২০২১-এর একটি নির্বাচিত গল্প
লেখক - শুভজিৎ ঘরামী, মন্দির বাজার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ


## মাস্টারমশাই

লেখক - শুভজিৎ ঘরামী, মন্দির বাজার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ

সেইসব দিনগুলির কথা মনে পড়লে আজও মনটা যেন ভয়ে কেঁপে ওঠে। কত কষ্ট, কত যন্ত্রণাটাই পেতাম! স্কুলের ঘরটাতে ঢোকার আগে কত যে ভয় পেতাম তার হিসেব নেই, বারবার মনে হত দরজায় পা রাখার আগে পালিয়ে যাই। আর কেনই বা ভয় পাব না, তিনি যখন ক্লাসে ঢুকতেন, সারা হইহুল্লোর চেঁচামেচি করা ক্লাসটা এক নিমেষে যেন চুপ। দুরন্ত ছেলে রবি, অনাদি পর্যন্ত ভয়ে জড়সড়। তাঁর গলার আওয়াজ যেন সারা ঘরটাতে ভয়ের নিস্তব্ধতা সৃষ্টি করে। ঘরে ঢুকেই তিনি এক অজানা ভাষায় কী সব বলে যেতেন আর আমরা সবাই হাঁ করে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ঠিক অজানা ভাষা বললে হয়ত ভুল হবে, ভাষাটি হল ইংরেজি। যখন পাঠশালাতে আর স্কুলের বেঞ্চিতে বসে থাকি তখন শুধু এই বইটির সঙ্গে পরিচয়। বইটাতে কি লেখা আছে, না বুঝতে পারলেও এটা ঠিক বুঝতে পারতাম যে বইটির মধ্যে এ, বি, সি, ডি... ভরা আছে।

যেসব লাইন আমি পড়তে পারতাম না, যে-শব্দগুলো বলতে গেলে বার-দশেক গোঁয়াতে হত, সেই শব্দগুলো তিনি গড়গড়িয়ে বলে যেতেন। মনে হত যেন তিনি মাতৃভাষায় কথা বলছেন।

কত বছর পার হয়ে গেছে। এখন আর আমার মধ্যে কোনও ভয় নেই। এখন আমি ডাক্তার, হাসপাতালে বিনা পয়সায় গরীবদের সেবা করি। আমি যে হাসপাতালে থাকি সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। দূর-দূরান্তের মানুষ ঠিক সময়ে হাসপাতালে আসতে পারে না। কেউ যদিও বা আসে দেখা যায় তার সময় শেষ। আবার কেউ বা ঘরে বসেই...। তাই আমরা বিভিন্ন জায়গায় শিবির তৈরি করে সেখানকার রোগীদের বিনামূল্যে পরিষেবা দিয়ে আসি। গরীব মানুষগুলোর কাছে আমি যেন ভগবানের আসনে বসে গেলাম। কিন্তু আমি নিজেকে সাধারণ মানুষ মনে করতাম। আমার মধ্যে কোনও অহংকার বা গর্ব ছিল না। আমার নাম গোটা এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ল।

একদিন সামাজিক কাজকর্মের উপর একটা জায়গায় এক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভাতে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণও এল। শুধু আমন্ত্রণ নয়, প্রধান অতিথি হিসেবে সভাতে থাকতে হবে। সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে আমাকেই। যথা সময়ে চলে গেলাম সেখানে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলাম। অনেক বলার মধ্যে আমি মূলত জোর দিয়ে ছিলাম বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা'কে অবহেলা না করতে। যে বাবা- মা দ্বারা আমরা পৃথিবীর আলো দেখেছি সেই বাবা-মায়ের সেবা করাই আমাদের পরম কর্তব্য হওয়া উচিত। ওদেরকে শেষ বয়সে কখনই কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। এই নিয়ে আরও কিছু বললাম।

এমনি কিছুদিন পার হয়ে গেল। আমি আমার চেম্বারে বসে আছি। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে বলল যে, এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমি আসতে বললাম। দরজা দিয়ে ঢুকলেন মাথার চুল পাকা, কপালের চামড়াও কোঁচকানো, লাঠি হাতে এক বয়স্ক ভদ্রলোক। লোকটাকে আধা-চেনা মনে হলেও তাঁর কণ্ঠস্বর শোনামাত্র বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করে উঠল। ইনিই তো স্কুলের ইংরাজির শিক্ষক ছিলেন। অমন রাশভারী, কড়া মানুষটা আজ যেন নিজেই ভয়ে জড়সড় হয়ে আছেন। আমি তাঁকে প্রণাম করলাম। সেদিনের সেই সভাতে তিনি উপস্থিত ছিলেন, তাঁর ছেলেও ছিল। অবসর নেওয়ার পর তাঁর ছেলে বৌমা তাঁর দিকে একটুও নজর রাখেনি। সংসারে কোনও মতপ্রকাশের অধিকার তার ছিল না। শুধু খাওয়ার সময় ঘরের কোণে বসে দুমুঠো ভাতটুকুই জোটে কপালে। সম্মান দেওয়া তো দূরের কথা, ছেলে-বৌমা 'বাবা' বলে ডাকেও না। তিনি বললেন, সভায় আমার কথা শুনে তাঁর ছেলে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছে। এখন আর তাঁকে অবহেলা করে না। তাঁর ছাত্র যে একজন এত-বড় মানুষ হয়েছে একথা মনে করতেই মাস্টারমশাইয়ের চোখে জল চলে এল। এই জল গর্বের, এ জল খুশি আর আনন্দের। আরও কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর তিনি চলে যেতেই আমার মনটা যেন ব্যকুল হয়ে উঠল। পুরাতন সেইদিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। যখন ক্লাসে বসে থাকতাম, সে প্রথম বেঞ্চি হোক বা শেষে, কিংবা মাঝে বসে কোনও বন্ধুর আড়ালে, তিনি ক্লাসে ঢুকেই যেন আমাকে খুঁজতেন আর পড়া ধরতেন। ভয়ে ঢোক গিলে পড়া বলার চেষ্টা করতাম। না পারলে পিঠে সপাত করে পরে যেত দু-চার ঘা। মাঝে-মাঝে মনের মধ্যে খুব রাগ হতো, আমি ছাড়া কি আর ক্লাসে ছেলে নেই! শুধু আমাকেই কেন...। শেষে মাস্টার মশাই বলতেন, ভালো করে পড়াশোনা করো, বড়ো হও, মানুষের মতো মানুষ হও, এতগুলো ছেলে মেয়ের মধ্যে অন্তত একজন ভালো জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করো।

ভাবতে-ভাবতেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে এলো। দু-একফোঁটা জল চোখ বেয়ে নিচে গড়িয়েও গেল। কেন মাস্টার মশাই ক্লাসে ঢুকে সবার আগে আমাকে পড়া ধরতেন আজ বুঝলাম। সেইসব দিনের রাগ মনের মধ্যে আজ শুধু লজ্জাই দিয়ে গেল।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    131    132    133    134    135    136    137    138    139    140    (141)     142   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717