Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

হারানো স্মৃতি

বাংলা গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



All Bengali Stories    138    139    140    141    142    143    144    145    (146)     146   

হারানো স্মৃতি
লেখক - অনীশ দত্ত, বাবা – এন ডি দত্ত, তালপুকুর, ব্যারাকপুর, কলকাতা


## হারানো স্মৃতি

লেখক - অনীশ দত্ত, বাবা – এন ডি দত্ত, তালপুকুর, ব্যারাকপুর, কলকাতা

"ব্যাগে সব নিয়ে নিয়েছ?"

"হুম..."

"আর পড়ার বইয়ের এই বাক্সকে নিতে ভুলবে না।"

"না।"

"এখানে বাসন, ড্রেসিং টেবিলের সব জিনিসের দুটো বাক্স এখানে আছে সেগুলো তুলে নিও..."

"হ্যাঁ ... এখান থেকে বেরোতে পারলে বাঁচি, " কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকে ছেলেটা। একটা ক্লান্ত, মুচকি হাসি হাসে সে। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলে, " আমারও ব্যাগ, বই তৈরি, জামা কাপড় তৈরি। ওকে বলে দিয়েছি একসাথে বেরোচ্ছি। তারপর তুমি তোমার গন্তব্যে আর আমি হোস্টেলে।"

"ও না থাকলেই বা কি, আর থাকলেই বা কি? এই যে তোদের মুখ আর দেখব না, এই একটু শান্তি।"

"আমাকে নিয়ে বলছ কেন?"

"দ্যাখ, ও আমাকে এত অপমান, মারধর, গালিগালাজ, অপবাদ দিয়েছে যে আমার মাথাটা বিগড়েছে। তাই 'তোদের'-শব্দটা বেরিয়ে যায়। আর এমনিতেও কম জ্বালাসনি আমাকে তুই; বাবার ষোলো-ধারা।"

"জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে ও, তাই বলছে। ঠাণ্ডা হই", মনে-মনে ছেলেটি ভাবে, বলে, "শুরুর দিকে বদমাশি করেছি ঠিকই, কারোর অনুপ্রেরণায় ঠিক। তারপর অজান্তে অনেক ভুল হয়েছে..."

"খেসারত দিতে হবে না। রাগাস না।"

"তোমাকে খুব মিস করবো। কথা বলতে পারবো তো?"

"সেটা বলতে পারছি না। তবে কল বা মেসেজ করলে কথা অবশ্যই বলব, সময় বুঝে যদিও।"

"যাক! তোমার গলা শুনতে পাব এই অনেক।"

ঘড়িতে দেখে সময় হয়ে গেছে তাদের। চট করে নিজের সমস্ত জিনিস নিয়ে তৈরি ছেলেটা। বাড়িটা একদমই ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে। দুটো মিনি ট্রাকে সব জিনিস তুলে দেয় ছেলেটা।

"তুমি গাড়িতে বসো। তোমার হাতের ব্যাগটা নিয়ে আসছি", বলে দৌড়ে সেই হাতের ব্যাগটা নিয়ে আসে সে। গাড়িতে দিয়ে বলে, "রাস্তায় খেয়ে নিও। জল খেও। সাবধানে পৌঁছে যাবে, পারলে ফোন করে দেবে আমাকে।"

"তুইও সাবধানে থাকিস। ভালো থাকবি।"

"খুনসুটি আর ভালো মুহূর্ত মনে রাখব," গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিজের ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে ছেলেটা।

জিনিসপত্রের গাড়ি স্টার্ট করতে একটু সময় নিচ্ছিল। হাতের ব্যাগ থেকে রুমাল বার করতে গিয়ে দেখে একটা হলদে কাগজ। কাগজের ভাঁজ খুলে একটা বড়ো লেখা দেখতে পেয়ে পড়ে—
"প্রিয় মা (সৎটা মানায় না),
আশা করি তুমি পৌঁছে গেছো। কাগজটাকে এখন ফেলে দিও না, কষ্ট করে একটু পড়ে নাও। আসলে তুমি জীবনে এত কষ্ট করলে, লড়াই করলে, ধৈর্য সচরাচর কারোর অত থাকে না। তাই এবার আরেকটু ধৈর্য নিয়ে পড়ে নাও এটা।
সারাজীবনের একটা আক্ষেপ থেকে যাবে আমার যে, আমি তোমার আর মনে হয় না দেখা পাব। ঠাকুর করে যেন এটা দুঃস্বপ্নেও না হয়। আসলে তোমার মত মানুষ পৃথিবীতে খুব কম হয়, নগণ্য যাকে বলে। আর সে যদি হয় দ্বিতীয় মা; অতি নগণ্য। ভাবতেও লজ্জা আর ঘেন্নায় নিজের গলা কেটে ফেলতে ইচ্ছে করে যে, আমি এমন এক মা-বাবার সন্তান, যেখানে মা হচ্ছে হিংস্র পশুর আরেক নাম। আর বাবা, পাশবিক অসুর। 'কেউটের ছেলে কেউটে হয়,' রাগের চোটে ঠিকই বলেছিলে। কিন্তু মা! আমি বাজে না গো। আমি ওদের কথামত নোংরা না। ঠিকই আমার নজর, মন নোংরা করে দিয়েছিল। কিন্তু তুমি তো আমাকে শুদ্ধ করতে চেয়েছিল, করেও ফেলেছ, ভয়ভীতি হয়ে থাকা দুর্বল ছেলে আজ সাহসী হতে পেরেছে তোমার দৌলতে। আজ পড়াশোনা থেকে যতটুকু আদব - কায়দা রপ্ত করতে পেরেছি, সব তোমার জন্য। আমি আমাকে চিনতে পেরেছি তোমার জন্য। আমি বাজে না মা, ভুল বুঝবে না।
মাঝে মধ্যে খুব রাগ হত, এত বকতে আমাকে। তারপর বুঝতে পারি, ভালোর জন্য করতো। যে নিজের ছেলে ছেড়ে এসে ( পর লোকের ছলনার জন্য) অন্যের হাত ধরে পরের ছেলেকে তার আসন দেয়, সে ঈশ্বর। কিন্তু, আমি পারলাম না ধরতে সেই জায়গাটা। রাজার গদি রাজার হয়। তোমাকে মিথ্যে ছলনায় ৬ বছর ধরে অত্যাচার করেছিল ওটা, আমার বাবা। খেতে দেয়নি, পড়তে দেয়নি, প্রথম ৬ মাস আমিও আমার মা - বাবার কথায় নেচেছি। কিন্তু তারপর সত্যি জানতে পেরে পার্থক্য করতে পেরেছি, কে ভাল, কে অসুর। মা! তুমি আর ভাই আমার হৃদপিণ্ড; আজ খুলে যাচ্ছি। আমি তোমার ছেলে হতে পারলাম না, আমি যৌথ ভাবে হতে পারলাম না, আর উচিতও না। যার গদি তার শাসন। তাই অসুর সায়েস্তার জন্য আমি ঠিক করেছিলাম, আমি মুক্তির লড়াই লড়বো। নিজের নাম খারাপ করার চেষ্টা করব, যাতে আমার দিকে টান শিথিল হয় আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও যে, মুক্তিই বাঁচার পথ। ওর নোংরা রূপ তুমি দেখলে, আমিও দেখালাম। শুধুমাত্র যাতে তুমি বাঁচতে পারো। এই অসুর তোমার আগের সংসারে ঢুকে ধ্বংস করেছিল। এমনিতেও ওখানেও অত্যাচারিত হয়েছ। কিন্তু চল্লিশ পেরোনোর আগেই তিনটে ধাক্কা খেয়েছো; আগের সংসার, ছেলে আর এটা। তবে জানি এই পাপের বোঝা আমাকে বহন করতে হবে। দুঃখ থাকলো, মা বলার কেউ নেই। আশা থাকল, আমিও বলব, আমার মা মস্ত বড় অফিসার হয়েছে৷
অনিচ্ছাকৃত, সজ্ঞানে কোনও ভুল হলে ক্ষমা করো। আর বোঝা নিতে পারছি না, কিন্তু নিতে তো হবে। মজার দিনগুলো সব সময় মনে রাখব। ভালো থেকো। মাসি - মেসমশাইকে আমার প্রণাম জানিও। ভাইকে নিয়ে ভালো থেকো। জয়ী হয়ে ফিরবে। সাবধানে থেকো।
ইতি-
তোমার পাগল ছেলে.."

রুমাল দিয়ে মুখ বুঝে শুধু কাঁদতে থাকে মা। এত সুন্দর বলতে আর লিখতে শিখলো কবে? এত ভালোবাসতো তাকে? "দীর্ঘজীবী হোস বাবা। তুই আমার এক কোটি হয়ে থাকবি আর তোর ভাই আরেক কোটি।"

হঠাৎ কি মনে হল, জানলার বাইরে মুখ বার করে দেখল। চেয়েছিল, ছেলে থাকলে জড়িয়ে ধরে কাঁদত। অনিশ্চিত কালের বিদায় বেলায় আদর করত। কিন্তু দেখে, আক্ষেপের ধুলোয় ট্যাক্সিটা মেন রোডে উঠে কখন চলে গেছে।
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    138    139    140    141    142    143    144    145    (146)     146   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717