-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
All Bengali Stories
143
144
145
146
147
(148)
149
◕
মনের আকাশে মেঘ জমেছে
লেখক - রবিশঙ্কর তালধী, বাবা- শৈলেন তালধী, চন্ডিপুর, বরাঘুনি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
মাসিক গল্প প্রতিযোগিতা, ডিসেম্বর, ২০২১ এর সেরা গল্প
##
মনের আকাশে মেঘ জমেছে
লেখক - রবিশঙ্কর তালধী, বাবা- শৈলেন তালধী, চন্ডিপুর, বরাঘুনি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
#
টিং টং... টিং টং...
"উফ্... এই অসময়ে আবার কে এলো..." ঘুম-ঘুম পায়ে দরজা খুলতেই একরাশ চমক লাগলো মনের।
"কিরে একেবারে তো হাঁ হয়ে গেলি... কেমন দিলাম বল... জানতাম তো... তুই এখন নাক ডেকে নির্ঘাত দুপুরের ভাত ঘুম দিচ্ছিস...তাই আর ফোন না করেই সটান চলে এলাম..." এই বলে মনকে পাশ কাটিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো আকাশ।
সেই style... বেপরোয়া, বিন্দাস। কোনও মেয়েকেই খুব একটা পাত্তা দেয় না। দুনিয়া কি ভাবল, তাতে কোনও যায় আসে না... মাঝে-মাঝে আবার নিরুদ্দেশও হয়ে যায় কাউকে কিছু না জানিয়েই। মাঝে-মাঝে খুব রাগ হয় মনের। ভাবে, একটা কিছু করতেই হবে... সবসময় এতো কাঁদায় আকাশ... এবার মন এমন কিছু করবে যার জন্যে আকাশ কাঁদবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি, পারে না মন আকাশ কে কাঁদাতে। যতই হোক, আকাশ তো মনের best friend...আকাশের কষ্ট হলে যে মনেরও খুব কষ্ট হয়। তবে এটা ঠিক যে, আকাশের এই উড়নচণ্ডী -বাউণ্ডুলে স্বভাব, এলোমেলো - অগোছালো থাকা, পাগলের মত কথা বলা, এই সবই মনকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে।
চলতে থাকে মন আর আকাশের খুনসুটি মেশানো বন্ধুত্ব, বাড়তে থাকে ওদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু বলতে পারে না কেউ কাউকেই। এরই মধ্যে একদিন আকাশের জন্যে বিয়ের সম্বন্ধ দেখে আকাশের বাবা-মা। খুব পছন্দ হয় তাদের আকাশের জন্যে দেখা পাত্রী মেঘাকে। কিন্তু আকাশ বিয়ের বিষয়ে রাজি নয়। ও চায় না মেঘাকে বিয়ে করতে।
হঠাৎই একদিন আকাশের মা ফোন করে মনকে, আর বলে, "মন তুমি তো আকাশের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তুমি আকাশকে একটু বোঝাও please... মেঘা মেয়েটা খুব ভালো। আমাদের পরিবারের সাথে খুব ভালো মানাবে মেঘাকে । তুমি আকাশ কে একটু বোঝাও যে, ও যেন মেঘাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।"
কথাটা শুনে মনের চোখ ভিজে যায়। সে শুধু বলে, "হ্যাঁ কাকিমা, আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমি ঠিক আকাশকে বিয়ের জন্যে রাজি করে দেবো।"
তারপর মন আকাশকে ফোন করে আর বলে, সে আকাশের সাথে দেখা করতে চায়, সেদিনই বিকেলবেলা ওদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা, সেই গঙ্গার ধারে। বিকেল ৫ টা বাজে ঘড়িতে। পড়ন্ত সূর্যের রক্তিম আভায় চারিদিক মায়াময় হয়ে উঠেছে। আকাশ এলো সেই গাঢ় নীল শার্টটা পড়ে যেটাতে মনের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ওকে। এসেই বলল আকাশ, "কিরে পাগলি, এতো জরুরি তলব কেন?"
মন : আকাশ আজ একটা জিনিষ চাইবো, দিবি?
আকাশ : তোর আবার কি লাগবে? তুই তো কিছু চাস না! তবে আবার এখন বলিস না, তোর জন্যে boyfriend খুঁজে দিতে হবে, আমি কিন্তু পারবো না।
মন : উফ্ আকাশ! আমি মোটেও ওইসব চাইবো না। অন্য কিছু চাইবো। বল আগে, দিবি...
আকাশ : আরে বাবা... হ্যাঁ রে... দেবো। বল, কি চাস? তুই চাইবি আর আমি দেবো না, সেটা হয় কখনো?
মন : সত্যি দিবি? Promise কর।
আকাশ : সত্যি... সত্যি... সত্যি... তিন সত্যি করছি। এবার তো বল।
মন : আকাশ, কাকু কাকিমার পছন্দের মেঘাকে বিয়ে করে নে...
আকাশ রেগে বলল : তুই কি করে জানলি এসব?
মন : তুই আমাকে কথা দিয়েছিস আকাশ, আমার এই চাওয়াটা তুই পূরণ করবি...
আকাশ অভিমানী স্বরে বলল : তুই কি বলতে চাস আমি তোর কোনও ইচ্ছেই বুঝি না ?
আকাশের চোখ তখন মনের চোখে আটকে গেছে, হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে মনের মনে আসলে কি ইচ্ছা আছে। মনও বুঝতে পারছে এই দৃষ্টিতে তার সর্বনাশ নিশ্চিত। এই দৃষ্টির সামনে কিচ্ছু লুকানো যাবে না। খুব ইচ্ছে করছে মনের তলিয়ে যেতে ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে , ঢেউ-এর মতো আছড়ে পড়তে আকাশের বুকে, হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ওই মাতাল করা চোখে। বলে দিতে চাইছে, ও ভালোবাসে আকাশকে। কিন্তু তাহলে তো মন হেরে যাবে, রাখতে পারবে না সে আকাশের মা'কে দেওয়া কথাটা। মন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের কথার উত্তরে বলল : আমার এটাই চাওয়া আকাশ, Please তুই এই চাওয়াটা পূরণ কর... You promise me.
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আকাশ রাজী হল। আকাশের বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্যে সবাই খুশি। আকাশ পরিবার থেকে নিমন্ত্রণ পত্র এসেছে মনের কাছে।
#
14 th February
আকাশের বিয়ে
সকালেই ফোন করল আকাশ মনকে। বলল, "কিরে কখন আসবি আমার বিয়েতে? তোর তো কাল আসার কথা ছিল, এখনো আসিস নি কেন তুই?"
মন : যাবো এক্ষুনি, তুই ঠিক করে নিয়ম-বিধিগুলো পালন কর। আমি ঠিক পৌঁছে যাবো।
এরপর সন্ধ্যা নেমে গেল কিন্তু মন এলো না আকাশের বিয়েতে। আবার আকাশ ফোন করল আর বলল, "তুই কখন আসবি ? বিয়ে হয়ে গেলে?"
মন : না রে, একটু কাজ ছিল। তুই বিয়ে করতে যা, আমি মেঘার বাড়ি পৌঁছে যাবো তুই ঠিক করে নিয়ম মেনে বিয়েটা করতো আগে, এতো চিন্তা করিস না।
মন যায়নি মেঘার বাড়ি, যায়নি আকাশের বাড়িতেও। Mobile switch off করে দিয়েছে, আকাশ বারবার ফোন করেছে মনকে, কিন্তু যোগাযোগ করতে পারেনি। বিয়ের হাজারটা নিয়মের মধ্যে বেরোতে পারেনি বাড়ি থেকে, চিন্তা করেছে মনকে নিয়ে, কিন্তু বলতে পারেনি কাউকে। এইভাবেই কেটে গেছে ফুলশয্যার রাত পর্যন্ত। ফুলশয্যার পরের দিনই সকালে আকাশ বেরিয়ে গেছে মনের বাড়িতে ...আবার টিং টং...
মন দরজা খুলতেই আকাশ প্রশ্ন করল, "কি হয়েছে? তোর ফোন switch off করে রেখেছিস কেন? আসলি না কেন আমার বিয়ে তে?"
মন : আমার এই কদিন ধরে শরীর খুব খারাপ ছিল। তাই যেতে পারিনি তোর বিয়েতে, আর ফোনটাও switch off করে দিয়েছিলাম সেই জন্য।
আকাশ : তুই আমাকে মিথ্যে কথা বলছিস মন।
মন : না, আর এখন থেকে তুই আমার সাথে যোগাযোগ করার কোনও চেষ্টা করবি না, মেঘাকে নিয়েই ভালো থাকবি। আমার এতো খোঁজ খবর নেওয়ার দরকার নেই। আমি চাই না তোর সাথে কোনও সম্পর্ক রাখতে।
কথা গুলো বলে রীতিমত মন হাঁপাচ্ছে, চোখ-কান লাল হয়ে গেছে, বোধ হয় নিজেকে বেশি করেই শক্ত রাখতে চেয়েছে মন। কথাগুলো নির্বাক শ্রোতার মতো শুনে এক বুক অভিমান নিয়ে সঙ্গে-সঙ্গে মনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আকাশ। রাখেনি সে আর মনের খোঁজ, করেনি সে মনের সাথে কোনও যোগাযোগ।
#
এরপর কেটে গেছে সাতটা বছর। আকাশ বাবা হয়েছে। তার এখন যমজ সন্তান, প্রত্যুষ আর প্রত্যুষা।
15 th April
আকাশ ঘুরতে এসেছে মেঘা আর তার যমজ সন্তানদের নিয়ে তার সেই বহুদিনের পরিচিত মনের শহরে। প্রতিটা মুহূর্তে আজ মনকে খুব মনে পড়ছে, আকাশের ইচ্ছে করছে কথা বলতে মনের সাথে। মনের সাথে কাটানো সময়গুলো আজও স্মৃতিতে খুব স্পষ্ট। খুব কষ্ট হচ্ছে আকাশের, নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে আসছে তার। শহর ঘুরতে-ঘুরতে হঠাৎ এই সময় আকাশের চোখে পড়ে রাস্তার একপাশে বসে থাকা একটি মেয়ে, অগোছালো একটা ময়লা শাড়ী তার গায়ে, এলোমেলো চুল, কিন্তু মেয়েটার মুখটা খুব চেনা। আকাশ মনে করতে পারছিল না কোথায় দেখেছে সে মেয়েটাকে। হঠাৎ মেয়েটার চোখে চোখ পড়তেই আকাশের মনে পড়ে গেল বিয়ের আগে গঙ্গার ধারে মনের চোখে একদৃষ্টে তাকানোর কথা। সঙ্গে-সঙ্গে আকাশ চিনতে পারলো মেয়েটাকে। এই মেয়েটা তো তার খুব পরিচিত, তার best friend মন, যাকে সে সারাজীবন নিজের পাশে চেয়েছিল।
সঙ্গে-সঙ্গে আকাশ দৌড়ে গেল মনের কাছে। জিজ্ঞেস করল, "মন, এই মন, কি হয়েছে তোর? তুই এখানে কেন? এই অবস্থা তোর কি করে হল?"
কিন্তু কোনও উত্তর পেল না সে। মন তখন সম্পূর্ণ রূপে মানসিক ভারসাম্যহীন। মনের মুখে তখন শুধু একটাই কথা, "সে আসবে, ঠিক আসবে। আর এসে আমাকে অনেক ভালবাসবে..."
আকাশ কাঁদতে-কাঁদতে জড়িয়ে ধরলো মনকে। নিজেকে সামলাতে না পেরে জোর করে মনকে তুলে নিল নিজের গাড়িতে। মেঘা, আকাশ আর তাদের যমজ সন্তানদের সাথে মনও এলো আকাশের বাড়িতে। আকাশ চাইলো মনকে নিজের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করাতে, কিন্তু তার ইচ্ছেতে বাধা দিল মেঘা। সে আকাশকে বোঝাল সন্তানরা বড়ো হচ্ছে, তাই একটা পাগলিকে বাড়িতে রাখা ঠিক হবে না। আর তাছাড়াও পাগলি কখন কি করবে, কে তাকে সামলাবে? তাই পাগলিটাকে কোনও মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাই ঠিক হবে।
আকাশ মনে-মনে হাসল, বলল, "বেশ-বেশ। যে মেয়ের জন্য তুমি এই বাড়িতে এলে, সেই মেয়েটাকেই এখান থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছ?" কিন্তু মুখে কিছু না বলে আকাশ নিজের শহরেই ভালো মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিল মনকে। চলতে থাকলো মনের চিকিৎসা। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আকাশ যায় সেই মানসিক হাসপাতালে, ডাক্তারের সাথে কথা বলে। মনের সমস্ত খোঁজ খবর নেয়। অসুস্থ মনকে একবারও দেখতে পায় নিা ঠিকই, কিন্তু মানসিক হাসপাতালে যাওয়ার সময় এক বুক আশা নিয়ে যায়। ভাবে, আজ তার সাথে সুস্থ মনের দেখা হবে।
এইভাবে কেটে যায় আরও ছ'টা মাস। মন ধীরে-ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে মানসিক হাসপাতালে। আজ আকাশ আবার অনেক আশা নিয়ে যায় মানসিক হাসপাতালে মনকে দেখার জন্য। অবশেষে আজ আকাশের মনের সাথে দেখা হয়। লোহার জালের একদিকে দাঁড়িয়ে আছে মন , আর একদিকে আকাশ। আকাশ প্রশ্ন করে, "কি হয়েছিল মন তোর? কিভাবে হল এসব?"
মন : জানি না...
আকাশ : কে আসবে, কে তোকে ভালবাসবে বলছিলিস? বল..
মন : কেউ আসবে না কেউ আর আমাকে ভালবাসবে না।
আকাশ : কে বলেছে তোকে কেউ ভালবাসবে না? আমি তো আছি নাকি, তোর best friend. আমি তোকে ভালবাসবো। যাবি মন আমার সাথে আমার বাড়ি? আমি তোকে আমার কাছে রেখে দেবো।
মন আর কোনও কথা বলে না, তাকিয়ে থাকে চুপচাপ আকাশের চোখের দিকে। গড়িয়ে পড়তে থাকে মনের দুই গাল বেয়ে অশ্রু। কিছুক্ষণ পর মন আকাশকে বলে, "একটা প্রশ্ন করবো?"
আকাশ : হ্যাঁ কর।
মন : জানিস আকাশ যতদিন আমি পাগল হয়ে গিয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলাম আমাকে অনেক নরপশু ভোগ করেছে, কিন্তু আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ছিলাম বলে কিছু বুঝতে পারতাম না, বলতেও পারতাম না । কিন্তু এখন আমি সুস্থ, আর এই সময়ে যখন এই হাসপাতালের মধ্যে আমাকে নরপশুগুলো খুবলে খায়, নিজেদের যৌনাঙ্গের খিদে মেটায় তখন আমি বুঝতে পারি, আমার খুব কষ্ট হয়, যন্ত্রণায় মরে যাই। তুই কেন আমাকে সুস্থ করলি আকাশ? কেন আমাকে নিয়ে আসলি এই নরকে? আমি তো পাগল হয়ে গেলেও তোকে ভালোবেসেই ভালো ছিলাম! আমার তো সুস্থ হওয়ার দরকারই ছিল না, এ জীবনে যখন তুই-ই নেই আমার কাছে... তুই কি আমাকে পাগল হয়েও বাঁচতে দিবি না? আমি যাবো না আকাশ তোর সাথে তোর বাড়ি। এখন আমাকে তোর সাথে আর মানায় না। আমার ছায়া আমি আর তোর জীবনে ফেলতে দিতে পারবো না আকাশ। তুই চলে যা, তোর পরিবারকে নিয়ে তুই ভালো থাক। এখানে আর আসবি না কখনো। মনে রাখবি, এই মানসিক হাসপাতালে তোর মন থাকে না।"
এই বলে মন লোহার জালের ঘর থেকে দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল মানসিক হাসপাতালের ভিতরে , আর লোহার জালের উল্টো দিকে পাথরের মূর্তির মত অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আকাশ।
( সমাপ্ত )
Next Bangla Story
All Bengali Stories
143
144
145
146
147
(148)
149
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717