ঐ দুটো চোখ, মাসিক গল্প প্রতিযোগিতা, বাংলা গল্প, Bangla online Story, Bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

All Bengali Stories 144 145 146 147 148 149 (150)

◕ ঐ দুটো চোখ
লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, হরিপুর, পূর্ব-মেদিনীপুর

## ঐ দুটো চোখ

লেখিকা - অনুশ্রী মাইতি, হরিপুর, পূর্ব-মেদিনীপুর

#
আজ অনেকগুলো দিন, অনেকগুলো বছর কেটে গেল। স্কুল লাইফ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই সব স্মৃতি আজ খুব মনে পড়ছে। স্কুলের শেষ দিন, সেইদিন যেন মনে হচ্ছিল জীবন থেকে বড়ো কিছু হারিয়ে ফেললাম। এতদিনের ক্লাস করে আসা ঐ রুমগুলো, ঐ মাঠ, টিচার সঙ্গে একটু মজা করে ক্লাস করা, সব আনন্দ, হাসি-ঠাট্টা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সব‌ই হয়তো শেষ। এমনকি সেইদিন স্কুল ছেড়ে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিলো বন্ধুদের সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে যাই। এরপর থেকে তো কেউ কাউকে পাব না আর এই ভাবে, যে যার মত লক্ষ্যে হবে ভিন্ন, যে যার পথেও হয়ে যাবে ভিন্ন। যে যার মত ছুটে চলবে অন্য দিশায়, মেতে উঠবে সেই পথে, ক'দিন আর মনে থাকবে এই স্কুলের শেষ দিনের কথাটা!!

ধীরে-ধীরে তাই হল আমরা অন্য পথে নিজের লক্ষ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আজ স্কুল থেকে ডেকেছে আমাদের কয়েকজনকে। স্কুলে এসে অনেক পুরনো কথা মনে পড়লো। যখন স্কুলে এসে ঐ ক্লাস রুম, মাঠ ও ছাতিম তলায় বসার সিটটি দেখলাম তখন মনে পড়ে গেল ঐ দুটো ভাসা-ভাসা চোখ। চোখ বন্ধ করে অনুভব করলাম ঐ শেষ দিন স্কুল ছাড়ার সময়কার অনুভূতিগুলি।

সেই দিন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আমরা খুব খুশি ছিলাম। কিন্তু সবার কষ্ট হচ্ছিল যে, আজ আমাদের স্কুলে শেষ দিন। কিন্তু এইসবের সঙ্গে আর একটা হতাশা এবং কষ্ট আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। মনটা অস্থির হয়ে পড়েছিল এটা ভেবে যে, আর ঐ দুটো চোখ দেখতে পাব না। এই অনুভূতিগুলোকে বার-বার উপেক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু তবুও বার-বার আমার চোখ দুটো ক্লাসরুমের এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো। আমি যখন দেখতে পেলাম না ঐ চোখ দুটো, তখন মন থেকে চুপ হয়ে যাই। বার-বার মনে হচ্ছিল ঐ মেয়েটা কোথায়, ও কী বাড়ি চলে গেল, স্কুল লাইফ তো শেষ, এবার কী করবে ও? আচ্ছা ও কত নম্বর পেল? ও খুশি তো ওর নম্বরে? এইসব ভাবছিলাম তখন। নিজের ফলাফল নিয়ে উল্লাস ধীরে -ধীরে ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। খুব অস্থির লাগছিল সেই সময়।

ঐ ভাসা-ভাসা চোখ দুটো যার, সেই মেয়েটা আর আমি এক ক্লাসে পড়লেও বিষয়গুলো ছিল ভিন্ন। একটা-দুটো ক্লাস একসঙ্গে করা, ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রায়ই ঐ দুটো চোখ সামনে চলে আসতো। ঐ দুটো চোখ সুন্দর কিনা জানি না, কিন্তু ছিল একটু আলাদা। ভাসা-ভাসা, চাহনি ছিল মিষ্টি ও শান্ত। ঐ চোখগুলো দেখতে ভালো লাগতো তা আজ বুঝতে পারলাম। সেইসময় এই সবকিছু ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু অস্থির হয়েছিলাম যখন স্কুল লাইফের শেষ দিন চলে আসে। সেইদিন কিছু অপেক্ষার পর হঠাৎ পেছন ঘুরতেই আমি ঐ দুটো চোখ আমার সামনে দেখতে পাই, আমি যাকে দেখার জন্য সামনের দিকে তাকিয়ে আছি সে আমার পেছনে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। আমার চোখে চোখ পড়ায় কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে মেয়েটি মাথা নিচু করে নিল, আমিও মাথাটা নিচু করে নিয়েছিলাম। কোনও দিন কথা বলার ইচ্ছে হয় নি, সেদিন মনে হল কিছু তো বলি; কিন্তু বলতে আর পারলাম না।

ধীরে-ধীরে সবাই বাড়ি চলে যেতে লাগলো। একটা সময় ঐ মেয়েটিও সাইকেল গড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছুটা যাওয়ার পর সে ঘুরে তাকিয়ে ছিল; আমিও স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এরপর একটা সময় মেয়েটি স্কুলের মেন-গেট থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর থেকে ঐ দুটো চোখ আর সামনে আসে নি। কিন্তু ঐ গল্প এখনও ফুটে আছে এই ক্লাস রুমে, ছাতিম তলা আর এই স্কুল জুড়ে। যা আমার মনেও ফুটে উঠেছে আজ। স্কুল লাইফ কবে শেষ হয়ে গেছে, আমার অনুভূতিগুলো ক্ষীণ হয়ে গেছে, কিন্তু ঐ গল্প ও অনুভূতিগুলোকে ধরে রেখেছে ঐ বারান্দা, এই রাস্তা আর এই স্কুল । অন্যভাবে বলতে গেলে, আমার স্কুল লাইফকে ধরে রেখেছে আমারই স্কুল। আর হয়তো দেখতে পাব না ঐ দুটো ভাসা-ভাসা চোখের, কিন্তু ঐ বারান্দায়, ছাতিম তলায় এখনও যেন দুটো চোখ ভাসছে।
( সমাপ্ত)