দুই নারীর জীবন, মাসিক গল্প প্রতিযোগিতা, বাংলা গল্প, Bangla online Story, Bangla Story

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

All Bengali Stories 151 152 153 154 (155) 156

◕ দুই নারীর জীবন
লেখক - রবিশঙ্কর তালধী, বরাঘুনি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ

## দুই নারীর জীবন

লেখক - রবিশঙ্কর তালধী, বরাঘুনি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ

#
উচ্চশিক্ষিত, আধুনিক-মনস্কা একটি মেয়ে নিজের কাজের জায়গায় দারুণ সফল ও বিবাহিত। স্বামীর সঙ্গে সুখী দাম্পত্যে জীবন কাটাচ্ছে প্রায় পাঁচ বছর কিন্তু নিঃসন্তান। কোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেতে পারে না শুভ্রমিতা। আত্মীয়-স্বজনের মাঝখানে ঢুকলেই কেমন একটা অস্বস্তি হয় তার। টের পায় ঘরের কোণে আড়ালে-আবডালে আলোচনা চলছে তাকে নিয়েই। একটা সময়ে শুভ্রমিতা মা হতে না পারার কারণে ডিপ্রেশনের শিকার হয়। শুভ্রমিতার স্বামী ব্যবসার কারণে তার স্ত্রীকে ঠিকমতো সময় দিতে পারে না। সব সময় বাড়ির বাইরে মিটিং ব্যবসার বিভিন্ন ব্যবসায়িক ডিলস করতেই ব্যস্ত থাকে, নিজের ও নিজের বাড়ির কথা ভাবার সময় থাকে না তার। এদিকে শুভ্রমিতা বাড়িতে একা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতে থাকে। সন্তান না হওয়ার দুঃখটা তাকে কুরে-কুরে খেতে থাকে। তার বাড়িতে প্রচুর ঐশ্বর্য থাকলেও শিশুর হাসির মতো প্রাণশক্তি থাকে না।

শহরের-ই এক কানা গলিতে থাকে চার সন্তানের মা ময়না। প্রতিদিন রাতে নেশাখোর স্বামী বাড়ি ফিরেই শুরু করে ময়নার উপর অকথ্য অত্যাচার। ভ্যান রিক্সা চালিয়ে যে-ক'টা টাকা পায় তাও মদ খেয়ে শেষ হয়ে যায় তার। সংসারে দু-বেলা পেট ভরার মত ভাত জোটে না তাদের। তাই চার সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য ময়নাকে ঝিয়ের কাজ করতে হয় শুভ্রমিতার বাড়ি। মাতাল স্বামী সেই ক'টা টাকা থেকেও রোজ রাত্রে লটারির টিকিট কেনার জন্য ভাগ বসায়। স্ত্রী দিতে না চাইলে শারীরিক অত্যাচারের সঙ্গে চলে যৌন নির্যাতন। আবার এখন ময়না সন্তান-সম্ভবা। নয় মাসের পেট নিয়ে শরীরটা নাড়াচাড়া করতেই তার যত সমস্যা। তার উপর আবার স্বামীর এত অত্যাচার, সহ্য হয় আর!

ময়না এখন শুভ্রমিতার বাড়িতে কাজ করতে যায় না। একদিন শুভ্রমিতা খোঁজ নিতে-নিতে ময়নার বাড়িতে আসে এবং সমস্ত পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে। ময়নাও তার রোজি জীবনযাপনের সমস্ত কথা তাকে খুলে বলে। সব শোনার পর শুভ্রমিতার চোখের জল চলে আসে। শুভ্রমিতা নিজেই অনেক ভেবে ময়নার কাছে প্রস্তাব রাখেন, সে টাকার বিনিময়ে তার আগত সন্তানটিকে নিতে চায়। ময়না প্রথমে সেই প্রস্তাবে হতবাক হয়ে গেলেও পরে তার বাকি সন্তান ও সংসারের কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়। শুভ্রমিতা ময়নাকে শর্ত দেয় যে, সে অর্থের বিনিময়ে ময়নার থেকে যে সন্তান নেবে সেই সন্তানের উপর ময়নার কোন অধিকার থাকবে না। সে শুধু সন্তানকে দেখতে পারবে, কিন্তু নিজেকে তার মা বলে কখনো দাবি করবে না। ময়না এই শর্তে খুব কষ্ট পায়, কিন্তু সে আগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়।

প্রসবের দিন রাতে ময়নার মাতাল স্বামী মদের নেশায় বেহুঁশ হয়ে ঘরে পড়ে থাকে। প্রসব বেদনায় ময়নার প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। খবর পেয়ে শুভ্রমিতা তার নিজের গাড়িতে করে ময়নাকে নামি হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখানেই রাত দুটো নাগাদ একটা সুন্দর ফুটফুটে পুতুল-পুতুল দেখতে মেয়ে হয়। জ্ঞান ফেরার পর ময়না ভেজা চোখে তার নিজের সন্তানের কপালে চুম্বন এঁকে শুভ্রমিতার কোলে তুলে দেয়।
( সমাপ্ত )