Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

পিশাচতন্ত্র- পর্ব ২

বাংলা গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    158    159    160    161    (162)    

পিশাচতন্ত্র - পর্ব ২
লেখক - অনিন্দ্য রক্ষিত, নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর,উত্তর চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
( জানুয়ারি, ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## পিশাচতন্ত্র - পর্ব ২

#
সেই সাধুর ব্যাপারটাও ততদিনে আমার মন থেকে উধাও হয়ে গেছে, সেদিন, বাগবাজারে, আমাদের এক সহকর্মীর নাতির অন্নপ্রাশনে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল। ওখান থেকে খেয়ে দেয়ে যখন শ্যামনগরে পৌঁছালাম, রাত তখন সোয়া-এগারোটা। আমাদের বাড়িটা স্টেশন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। স্টেশনের কাছে, গ্যারাজে আমার সাইকেলটা রাখা ছিল। জনহীন রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে আসতে এমনিতে আমার কোনও অসুবিধে হচ্ছিল না কারণ সেই পথ আমার কাছে নিজের হাতের তালুর মতো চেনা। কিন্তু অন্ধকারটা সেদিন বড় বেশি ছিল। সাইকেল চালাতে- চালাতে আকাশের দিকে মুখ তুলে চেয়ে দেখলাম চাঁদের দেখা নেই। মনে পড়ে গেল, ঐ ব্যাটা সাধুর হিসেব অনুযায়ী আজ অমাবস্যা।

পাড়ার রাস্তাটায় ঢুকেছি। এত রাতে রাস্তায় কোনও লোকজন নেই। আর কয়েকটা বাড়ির পরেই আমাদের বাড়ি। ঠিক তখনই খেয়াল করলাম, রাস্তার একটা জায়গা থেকে সরু ধোঁয়া উঠছে, খুব ঘন ধোঁয়া। ভেজা খড় বা নারকেলের ছোবড়া জ্বালালে যেমন হয়, অনেকটা সেরকম। সাইকেল থামালাম। এখানে ধোঁয়া কেন? প্রথমে ভাবলাম, কেউ হয়তো সিগারেট খেয়ে জ্বলন্ত টুকরোটা এখানে ফেলে গেছে। কিন্তু দেখলাম কোনও আগুন-টাগুন দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া সিগারেটের ধোঁয়া এত ঘন হয় না। তা হলে কি রাস্তার নিচের পাইপে কোনও গ্যাস জমেছে? সেটাই কি বেরিয়ে আসছে কোনও ফাটল দিয়ে? রাস্তার আলোটা হাত দশেক দূরে থাকায় তেমন স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না। রাত হয়ে যাওয়ায় আশেপাশের বাড়িগুলোর আলোও নিভে গেছিল। সাইকেলে বসেই যতটা সম্ভব ঝুঁকে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম।

ধোঁয়াটা ডাইনে-বাঁয়ে দোল খেতে-খেতে ওপরের দিকে উঠতে লাগল, তার আয়তনও বাড়তে থাকল। দেখতে-দেখতে সেটা একটা মানুষের শরীরের মতো হতে লাগল। মাথা, ঘাড়, কাঁধ সব স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। আমার তখন যাকে বলে, স্পেলবাউন্ড দশা। এমন দৃশ্য জীবনে দেখিনি। দেখলাম সেই ধোঁয়া-মূর্তিটার মাথার অংশে চোখ, নাক, মুখ ফুটে উঠছে! বীভৎস সে মুখ! তাকিয়ে থাকা যায় না! চোখের কোটর দুটোতে যেন আদ্যিকালের অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে। কিন্তু সেই অন্ধকারের ভেতর থেকেই সে আমাকে দেখছে! মুখটা হাঁ-করা। আর সেই হাঁ-এর ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে সুচের মতো অসংখ্য দাঁত।

#
বাইরে জমাট অন্ধকার। দূরের গ্রামগুলোতে এখন শুধু কিছু ছড়ানো ছেটানো আলোর বিন্দু দেখা যাচ্ছে। ঠিক যেন স্থির হয়ে থাকা জোনাকির আলো। আর বারান্দার আশেপাশে উড়ন্ত জোনাকিদের অস্থির আলো। ঝিঁঝিঁর ডানার একটানা আওয়াজ দুপুরেই শুনেছিল সায়ন। এখন সেই আওয়াজ আরও জোরালো হয়েছে। এই অঞ্চলে যে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে চোদ্দ ঘণ্টা পাওয়ার-কাট থাকে, সেটা সায়ন এই হোম-স্টের কেয়ারটেকার হরির কাছে দুপুরেই জেনেছে। এই বাড়িটাতে জেনারেটর বা ইনভার্টার নেই, সেটাও হরি জানিয়েছিল।

হরি, পাহাড়ি উপজাতির মানুষ। এরা সাধারণত নিজেদের মাতৃভাষা অথবা হিন্দিতে কথা বলে। একটু-আধটু বাংলাও বলতে পারে। একটা লন্ঠন জ্বেলে এনে টেবিলে রেখে, ভাঙ্গা-ভাঙ্গা বাংলা উচ্চারণে বলল – স্যার, এখোন কি একবার চা পিবেন? তা হোলে বানাইতে বোলি।

সায়ন বলল – না, এখন আর চা খাব না।

– ঠিক হ্যায়। সাড়ে-আটটায় আপনার রুমেই ডিনার দিবো – হরি বলল – স্যার, আজকের মেনু রুটি, চিকেন কসা অউর সালাদ – এরপর একটু থেমে হরি বলল – সন্ধ্যের পর বাইরে বেসি সোময় থাকবেন না স্যার। আপলোগ কলকত্তা কা আদমি, ঠন্ড্ লেগে যেতে পারে – হরি নিজের কাজে চলে গেল।

সায়ন লক্ষ করল মোহিতবাবুকে কিছু জিজ্ঞেস করা তো দূরের কথা, হরির ভাব দেখে মনে হল, ও ভদ্রলোককে দেখতেই পায় নি।

মোহিতবাবু বললেন – ও ঠিকই বলেছে। আপনার আপত্তি না থাকলে ঘরে গিয়ে বসা যেতে পারে।

সায়ন বলল – বেশ তো, আমার ঘরে বসা যাক। আপনি থাকাতে তাও একজন সঙ্গী পেলাম; নইলে তো একাই কাটাতে হতো সারা সন্ধ্যেটা।

মোহিতবাবু একটু হেসে সায়নের ঘরে ঢুকলেন। লন্ঠনটা ঘরের টেবিলে রেখে সায়ন মোহিতবাবুকে বলল – কিছু মনে করবেন না, আপনি কি ড্রিঙ্ক করেন?

– না – মোহিতবাবু জানালেন।

– আমি ড্রিঙ্ক করলে কি আপনার আপত্তি আছে?

– কিছুমাত্র না।

– থ্যাঙ্ক ইউ – সায়ন ব্যাগ থেকে হুইস্কির বোতল, কাঁচের গেলাস আর আলু-চিপসের প্যাকেট বের করল। বিছানার পাশের টেবিলে সেগুলো রেখে গেলাসে অনেকটা মদ ঢেলে অল্প জল মেশাল। চিপসের প্যাকেটটা ছিঁড়ে দুটো চিপস মুখে দিল। গেলাসে চুমুক মেরে একটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে খাটে বসল। মোহিতবাবু একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ওর মুখোমুখি বসলেন। সায়ন বলল – হ্যাঁ, তারপর বলুন, কী হয়েছিল?

– ওপরের দিকে উঠতে-উঠতে সেই ধোঁয়া-মূর্তিটা, সাইকেলে বসা-আমার মাথা ছাড়িয়ে আরও এক-দেড় হাত ওপরে উঠে গেল। তার চেহারাটাও তখন আমার চেয়ে অন্তত তিন গুণ বড় হয়ে উঠেছে! আর তার হাঁ-টা অস্বাভাবিক রকমের বড় হয়ে গিয়ে আমাকে যেন গিলতে এল! আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলাম! এমন ভয় এর আগে কখনও পাই নি, জানেন! প্রাণপণে সাইকেলের পেডালে চাপ দিয়ে বাড়িমুখো হলাম। কিন্তু সেই ধোঁয়া-মূর্তিটা আমার পেছনে-পেছনে তাড়া করে আসতে লাগল। বাড়ির গেটের কাছে পৌঁছে গেছি, এমন সময় ফীল করলাম আমার খুব শীত করছে ... কি একটা, খুব ঠাণ্ডা জিনিস যেন আমার শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। শরীরটা শিউরে উঠল! ঠিক তখনই, হা হা হা হা করে কে যেন হেসে উঠল। দেখি, গেটের পাশে দাঁড়িয়ে সেই ছাই-মাখা সাধুটা আমার দিকে চেয়ে হাসছে। ওর হাতের হাড়টা ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে যেন শূন্যে কোনও সঙ্কেত আঁকছে। আধো-অন্ধকারে ওর চোখদুটো বুনো জানোয়ারের মতো জ্বলছে! সোমা দরজা খুলেই আমার চোখ-মুখ দেখে জিজ্ঞেস করল – কী হয়েছে? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

– কেমন দেখাচ্ছে?

– কেমন যেন, ফ্যাকাশে ... যেন ভয় পেয়েছ...

– না, না, ও সব কিছু নয়। একটু টায়ার্ড লাগছে।

পরের দিন সকালে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে মিলি, এঁঠো বাসন-কোসন মাজতে বাড়ির পেছনের উঠানে পা রেখেই – ও মা গো! – বলে চিৎকার করে উঠল। সোমা তখন রান্নাঘরে ছিল আর আমি বেডরুমে। দুজনেই সেই চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি মিলি উঠানে বসে ঠকঠক কাঁপছে। এঁঠো বাসনগুলো মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ওর থেকে হাত দশেক তফাতে সিমেন্ট-বাঁধানো উঠানের মাঝখানে পড়ে রয়েছে ডাকু। গলার নলি-টা ছেঁড়া। ওর শরীরের অনেকটা অংশ যেন কোনও বুনো জানোয়ারে খেয়ে গেছে। উঠানের এদিক-ওদিকে জমাট বাঁধা রক্ত আর ডাকুর শরীরের ছেঁড়াখোঁড়া টুকরো ছড়িয়ে আছে।

– বাবা গো! – বলে চিৎকার করে উঠে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল সোমা।

দিশা, আমাদের একমাত্র মেয়ে, দিন-কয়েকের জন্যে বাপের বাড়িতে এসেছিল আমাদের একমাত্র নাতি তাতাইকে নিয়ে। চেঁচামেচি শুনে ওর বেডরুম থেকে ছুটে এসে ঐ ভয়ানক দৃশ্য দেখে বমি করতে শুরু করল।

– এসব ঘোর অমঙ্গলের সংকেত! – জ্ঞান ফেরার পর একটু সুস্থ হতেই সোমা বলল। ততক্ষণে আমি মিউনিসিপ্যালিটির অফিসে খবর দিয়েছি। ওরা লোক পাঠিয়ে ডাকুর বডিটা সরিয়ে উঠানটা ধুয়ে দিয়ে গেছে। বিছানায় আধশোয়া সোমা তখনও থেকে-থেকে কেঁপে উঠছে। দিশা ওর পাশে বসে কাঁদছে। তিন মাস বয়স থেকে ডাকু আমাদের পরিবারের সদস্য ছিল। দিশা আর তাতাইকে ভীষণ ভালোবাসত ও, সোমাকেও, আমাকে তো বটেই। আমার দিকে চেয়ে সোমা বলল – সব তোমার দোষ! সেদিন ঐ সাধুবাবাকে অপমান করেছিলে, ডাকুকে লেলিয়ে দিয়েছিলে, এগুলো তারই ফল। তোমার জন্যেই বেচারা ডাকুর এমন দশা হল – ফুঁপিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে সোমা বলতে লাগল – ডাকুটা এইভাবে চলে গেল... আমি ভাবতেও পারছি না... এরপর আরও ভয়ানক কী কী হবে কে জানে! আমার তো এখনও বুক কাঁপছে!

আমি চুপ করে রইলাম।

#
– ডাকুর এইরকম ভয়ঙ্কর মৃত্যুতে আপনার মনে কোনও কষ্ট হয় নি? – সায়ন জিজ্ঞেস করল।

মোহিতবাবু সায়নের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলে যেতে লাগলেন – তাতাই তখনও ঘুম থেকে ওঠে নি। দিশা নিজের ঘরে চলে গেল। তারপরেই ওর ঘর থেকে চিৎকার শোনা গেল – ও বাবা! ও মা! শিগগির এস! তাতাই কেমন যেন করছে!!

ওর ঘরে ঢুকে দেখলাম, দু' বছরের তাতাইয়ের শরীরটা ধনুকের মতো বেঁকে গেছে আর ওর মুখের কষ বেয়ে ফেনা বেরিয়ে আসছে। দিশা বলল – জ্বরে তাতাইয়ের গা পুড়ে যাচ্ছে! এ কী হল বাবা! আমার তাতাইয়ের হঠাৎ করে এরকম হল কেন? একটু আগেও তো দিব্যি ঘুমিয়ে ছিল – দিশা ডাক ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল। সোমা তাড়াতাড়ি ডক্টর বসুকে ফোন করতে গেল। কিন্তু ওনার ফোন লাগার আগেই তাতাই হঠাৎ করেই আবার আগের মতো হয়ে গেল। ওর গায়ে জ্বর নেই, মুখে ফেনাও নেই। বিছানায় শুয়ে সিলিঙের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগল – ওতা কে গো? ওতা কে গো?

দিশা ওকে জিজ্ঞেস করল – কোনটা কে? সিলিঙে কাকে দেখছিস তুই? ওটা তো ফ্যান।

ও বলল – না, ফ্যান না... ঐ যে, ঘুলে বেলাচ্ছে ... – আঙ্গুল তুলে সিলিঙের এদিক-ওদিকে দেখাতে লাগল আর বলতে লাগল – ঐ যে... ঐ যে... ওতা কে গো?

সিলিঙের দিকে দেখলাম, কিছুই নেই। দিশা কেঁদে উঠল। বলল – মা! তাতাই ভুল বকছে! শিগগির ডাক্তার-কাকাকে ফোন কর! ডক্টর বসু যখন এলেন তাতাই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বিছানায় বসে খেলা করছে। উনি তাতাইকে ভালো করে পরীক্ষা করে বললেন – সবকিছু তো নর্মালই আছে দেখছি। আপনারা যেমন বললেন তেমন কোনও লক্ষণও তো দেখছি না। স্ট্রেঞ্জ!

ডক্টর বসু বিদায় নেওয়ার পর সোমা বলল – ডাক্তার কিছু করতে পারবে না। এটা সাধারণ রোগব্যাধির ব্যাপার নয়। আমি তারিণী-কাকাকে ফোন করছি। একটা শান্তি-স্বস্ত্যয়ন করাতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।

আমি চুপ করে থেকে মত দিলাম। সোমা তখনই তারিণী-কাকাকে ফোন করে সব কিছু খুলে বলল। সব শুনে উনি বললেন যে, পুজো আর যজ্ঞের সমস্ত সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাড়িতে পৌঁছে যাবেন।
Next Part


All Bengali Stories    158    159    160    161    (162)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717