-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
All Bengali Stories
158
159
160
161
(162)
◕
পিশাচতন্ত্র
লেখক - অনিন্দ্য রক্ষিত, নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর,উত্তর চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
( জানুয়ারি, ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)
##
পিশাচতন্ত্র
লেখক - অনিন্দ্য রক্ষিত, নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর,উত্তর চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
#
– আমিও আগে এসব কিছুই বিশ্বাস করতাম না, জানেন? কিন্তু গত বছর আমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটল… – বললেন মোহিত বাবু।
সায়ন মুখ টিপে একটু হাসল। বোঝাই যাচ্ছে, ভদ্রলোক এখন ওকে একটা গাঁজাখুরি গপ্পো শোনাবেন। প্রাথমিক পরিচয়ের পর সায়ন ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিল – আপনি কি এখানে আজই এসেছেন?
কিন্তু ভদ্রলোক সে-কথার জবাব না দিয়ে, উল্টে সায়নকে জিজ্ঞেস করেছিলেন – আপনি পিশাচে বিশ্বাস করেন?
লোকটার নিশ্চই মাথার গণ্ডগোল আছে – মনে মনে বলেছিল সায়ন। মুখে বলেছিল – না। ওসব ভূত-প্রেত, পিশাচ-ফিশাচে আমার বিশ্বাস নেই।
তখন সন্ধ্যে নামছিল। ওরা দুজনে বারান্দায়, দুটো বেতের চেয়ারে বসেছিল। কমে আসা আলোয়, সামনের উপত্যকা আর দূরের বরফের মুকুট পরা পাহাড়চূড়ার ছবিটা আস্তে-আস্তে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছিল। ঠাণ্ডাটাও সেই সঙ্গে বাড়ছিল। লাঞ্চ সেরেই বেরিয়ে পড়েছিল সায়ন। পাহাড়ের চড়াই উতরাই ভেঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে এসেছে। সেইজন্য ওর শরীরটা এতক্ষণ বেশ গরম ছিল। এবারে ও জ্যাকেটের জিপটা টেনে গলা পর্যন্ত তুলে দিল। জ্যাকেটের পেছনে ঝুলে থাকা হুডটা তুলে দিয়ে কান-মাথা ঢেকে নিল। মোহিত বাবু একটা কালো পশমের চাদরে মাথা আর কান ভালো করে ঢেকে বসেছিলেন। চাদরের ঘেরাটোপ থেকে ওনার ফ্যাকাশে মুখে ঘোলাটে চোখ, খাড়া নাক আর পাতলা, সাদাটে ঠোঁট জোড়া দেখা যাচ্ছিল।
এখানে আসার পর সায়ন আর কোনও গেস্টকে দেখতে পায় নি। পাহাড়ের কোলে বসানো, কাঠের তৈরি, ছোট্ট এই হোম-স্টে। এখানে মাত্র দুটো ঘর। একটা একতলায় আর অন্যটা দোতলায়। দুটোরই সামনে ছোট্ট এক ফালি করে বারান্দা। সায়ন দোতলার ঘরটা নিয়েছিল। লাঞ্চের পর যখন বেড়াতে বের হল, তখনও একতলার ঘরটা তালাবন্ধ দেখেছিল। ও ধরেই নিয়েছিল, আজকে এখানে ও একাই গেস্ট, কারণ এই অবেলায় আর কোনও ট্যুরিস্ট আসার সম্ভাবনা নেই। তাই, বেড়িয়ে ফেরার পর ওর ঘরের সামনের বারান্দায় পাতা চেয়ারে এই ভদ্রলোককে বসে থাকতে দেখে একটু অবাকই হয়েছিল। তারপরে ভেবেছিল, উনি নিশ্চই একতলার ঘরটাতে আছেন; হয়তো বেরিয়েছিলেন, তাই সায়নের সঙ্গে দেখা হয় নি। যাই হোক, পঞ্চাশ পেরোনো সেই ভদ্রলোক সায়নকে দেখে মৃদু হেসে বলেছিলেন – এখান থেকে সামনের ভিউ-টা অসাধারণ লাগে। তাই এখানে এসে বসেছিলাম। আশা করি আপনি বিরক্ত হচ্ছেন না। যদি বলেন তো উঠে যাই…
– আরে না, না!! উঠবেন কেন – হাসিমুখে বলেছিল উনত্রিশ বছরের সায়ন – ভালোই হল আপনাকে পেয়ে। আমি তো ভেবেছিলাম আজকে আমাকে একাই থাকতে হবে এই বাড়িটাতে – বলতে-বলতে নিজেও আর একটা চেয়ারে বসে পড়েছিল। দুই অসমবয়স্ক মানুষের আলাপ জমে উঠেছিল।
– সে এমন এক ভয়ঙ্কর ঘটনা – মোহিত বাবু বললেন – আমার মতো অবিশ্বাসী মানুষের ধ্যান-ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে সেই ঘটনাটা। সত্যি বলতে কি, আমাকেই আমূল বদলে দিয়েছে।
সায়ন দেখল, নিভে আসতে থাকা দিনের আলো ভদ্রলোকের চাদর-জড়ানো ফ্যাকাশে মুখটাকে কেমন যেন গা-ছমছমে আর রহস্যময় করে তুলেছে। সায়ন এসব বোগাস ব্যাপারে মোটেই বিশ্বাস করে না। ভূতের গপ্পো পড়ে না, হরর মুভিও দেখে না। এগুলো পড়া বা দেখা মানে নেহাতই সময় নষ্ট করা বলে ওর মনে হয়। কিন্তু আজকের এই নিস্তব্ধ পরিবেশে, সন্ধ্যে নামার মুখে এরকম একটা গপ্পো শুনতে বোধ হয় মন্দ লাগবে না। তারওপর, এখানে সন্ধ্যের পর থেকে আর কিছুই করার নেই। এখানে আসার পর থেকে নেট কানেকশনও পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই বাড়িটাতে আজ ওরা মাত্র দুজনই আছে, তাই সময় কাটানোর জন্যে ও মোহিত বাবুর গাঁজাখুরি গপ্পোটা শুনতে লাগল।
লাভা বাজার থেকে দশ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটাতে আজ সকালে এসে পৌঁছাবার পর চারদিকের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিল সায়ন। মাইলের পর মাইল বড়-বড় পাইন গাছের জঙ্গলে ঢাকা সবুজ পাহাড় আর সেগুলোর কোলে ছোট-ছোট রঙিন ছোপের মতো ছড়িয়ে আছে কয়েকটা গ্রাম। দূরে দেখা যাচ্ছে ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে বরফে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা। গত ছ'মাস ধরে সায়নদের অ্যাড এজেন্সিতে কাজের চাপ ছিল খুব বেশি। দিনের পনেরো-ষোল ঘণ্টা এজেন্সিতেই কাটাতে হয়েছে। এখন কাজের চাপ একটু কমতেই এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিল ও। কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে, নির্জন কোনও জায়গায় একদম একা কয়েকটা দিন কাটাতে খুব মন চাইছিল। তখন ওকে উত্তরবঙ্গের এই জায়গাটার আর এই হোম-স্টে-টার সন্ধান দিয়েছিল ওর সহকর্মী প্রদীপ্ত। সেদিনই ইন্টারনেটে তিন দিনের জন্যে বুক করে নিয়েছিল এই রুম-টা।
– ঘটনাটার সূত্রপাত গত বছর, এপ্রিলের এক সকালে – মোহিত বাবু বলতে শুরু করলেন – সেদিন সকালেও আমি যথারীতি আমাদের বাড়ির বারান্দায় বসে চা খেতে-খেতে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। বাগানে একটা চক্কর মেরে এসে আমার চেয়ারের পাশে থাবায় মুখ রেখে বসেছিল ডাকু; আমার পোষা ডবারম্যান পিন্শার। সাড়ে তিন বছর বয়স। এমনিতে ঠাণ্ডা মেজাজের কিন্তু চার্জ করার ওস্তাদ। হঠাৎ একটা পচা গন্ধ পেয়ে আর ডাকুকে উঠে দাঁড়াতে দেখে কাগজ থেকে মুখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম। লাল কৌপীন পরা, সারা গায়ে ছাই মাখা, কপালে তেল-সিঁদুর লেপা এক সাধু কখন যেন বাগানের গেট খুলে ঢুকে বারান্দার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাইয়ের ফাঁক দিয়ে সাধুর গায়ের কাঠকয়লার মতো কালো রঙ দেখা যাচ্ছিল। লিকলিকে শুকনো চেহারা। চোখদুটো টকটকে লাল। চূড়া বাঁধা খয়েরি রঙের জটার কয়েকটা বেণী বুকে পিঠে ঝুলছে। গলায়, ছোট-ছোট হাড়ের তৈরি দু-তিনটে মালা ঝুলছে আর দুই কানে দুলছে দুটো ছোট হাড়ের টুকরো। হাতে একটা সিঁদুর মাখানো মড়ার খুলি আর একটা হাড়। টের পেলাম পচা গন্ধটা এই সাধুটার গা থেকেই বেরোচ্ছে। আমার সামনে এসে সেই খুলিটার মাথায় হাড়টা কয়েকবার ঠুকে, বিড়বিড়িয়ে কী সব মন্ত্র-টন্ত্র পড়তে শুরু করল সেই সাধু। তারপর সেই হাড়টা আমার দিকে তাক করে বার কয়েক ঘুরিয়ে নিয়ে বলল – দে বেটা, পাঁচশ এক টাকা দে। চার দিন পরে অমাবস্যা, সেই রাতে করালীডাঙ্গার শ্মশানে গিয়ে পিশাচকে ভোগ চড়াব। ভোগের খরচ দে। এই ধরণের ভণ্ডগুলোকে আমি দু-চক্ষে দেখতে পারি না। মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা রোজগার করাই এগুলোর পেশা। তার ওপর, সবাইকে তুই-তোকারি করাটা এদের অভ্যেস। মেজাজটা গেল গরম হয়ে। বললাম – তুই কাকে ভোগ দিবি-না দিবি, তার খরচ আমি দিতে যাবো কেন রে? আর তুই আমাকে তুই-তোকারি করছিস কোন্ সাহসে? আমি আবার তোর কোন কালের ব্যাটা হলাম রে? যা, ভাগ এখান থেকে!
সাধুটা আমার ধমক খেয়ে ওর গনগনে লাল চোখ দুটো বড়-বড় করে আমার দিকে চেয়ে রোখ দেখিয়ে বলল – তোর ভালোর জন্যেই বলছি রে বেটা। আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিলে তোর বিপদ আছে। টাকাটা দে। আমার হাতে বেশি সময় নেই।
সাধুটার ঠ্যাঁটামো দেখে আর ওর ভয়-দেখানো কথাবার্তা শুনে আমার প্রচণ্ড রাগ হল। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বেশ চিৎকার করে বললাম – তুই কি ভেবেছিস, তোর এইসব ভয়-দেখানো কথা শুনিয়ে আমাকে ভয় পাইয়ে আমার থেকে টাকা হাসিল করতে পারবি? ব্যাটা ভণ্ড কোথাকার!! তোর বুজরুকি অন্য জায়গায় দেখা গে, যা! ভালোয়-ভালোয় এখান থেকে যাবি, না কি অন্য ব্যবস্থা করব?
আমার চিৎকার শুনে ডাকু দেখি শরীরটা টানটান করে দাঁড়িয়েছে। ওর গলা থেকে একটা চাপা গর্জন বেরিয়ে আসছে। আমি ডাকুর গলার চোক-চেইনটা টেনে ধরে রাখলাম। সাধুটা ডাকুর দিকে একবার দেখে, আমাকে এমন বিশ্রী একটা গালাগাল দিল যেটা শুনে আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। আমি চোক-চেইনটা হাত থেকে ছেড়ে দিয়ে ডাকুকে ওর দিকে লেলিয়ে দিলাম। ডাকু ছুটে গিয়ে এক লাফে সাধুটার বুকের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ডাকুর আচমকা হামলায় সাধুটা টাল সামলাতে না পেরে চিৎ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ডাকু ওর বুকের দু পাশে পা রেখে, মুখের কাছে মুখ রেখে দাঁড়িয়ে রইল। আমিও রাগ সামলাতে না পেরে সাধুটার কাছে ছুটে গিয়ে ওর পাঁজরে এক লাথি কষিয়ে বললাম – ব্যাটা বদমাইশ ভণ্ড কোথাকার! এবার দেখা দেখি তোর কত ক্ষমতা! আজ তোকে কুকুর দিয়ে খাওয়াব!
আমার চিৎকার শুনে ঘর থেকে আমার গিন্নি সোমা ছুটে এল। ব্যাপার দেখে চেঁচিয়ে আমাকে বলল – কী!! করছো-টা কি!! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? শিগগির ডাকুকে সরিয়ে নাও!
পথচলতি কয়েকজনও এই কাণ্ড দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। আমি ডাকুকে সাধুর বুকের ওপর থেকে সরালাম। সাধুটা উঠে দাঁড়াল। হাত থেকে ছিটকে যাওয়া খুলি আর হাড়টা কুড়িয়ে নিল। তারপর আমার দিকে ওর রক্তরাঙ্গা চোখ মেলে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে নিজের বুকে হাড়টা ঠুকে বলে উঠলো – আমাকে লাথি মারলি তুই! আমাকে অপমান করলি, মানে তুই পিশাচের অপমান করলি! এর ফল তোকে ভুগতে হবে। পিশাচ তোকে ছেড়ে দেবে না। পিশাচ তোর জীবন ছারখার করে দেবে!
আমি এক হাতে ডাকুর গলার চোক-চেইনটা ধরে অন্য হাত নেড়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম – যা যা:! তোর ওসব পিশাচ-ফিশাচের ভয় অন্য কাওকে দেখা গে যা! আর কোনোদিন যদি তোকে এ-বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি তো তোর কপালে অশেষ দুঃখ আছে বলে দিলাম!
সাধুটা বাগান পেরিয়ে গেটের বাইরে চলে গেল। তারপর সেই হাড় আর খুলিটা আমাদের বাড়ির চারদিকে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে কী সব মন্ত্র আওড়াতে শুরু করল। আমি ওর রঙ-তামাশায় আর মনোযোগ না দিয়ে আবার খবরের কাগজটা নিয়ে বসে পড়লাম। লোকটা চলে যাওয়ার পর সোমা আমাকে বলল – কী দরকার ছিল এরকম একটা বিশ্রী ঝামেলা করার? ক’টা টাকা ওকে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো?
আমি বললাম – কী বলছ তুমি! ও আমাকে যে বিশ্রী গালাগালটা দিল তারপরেও আমি ওকে ছেড়ে দেব বলতে চাও? ওকে আরও মারা উচিৎ ছিল! ভিক্ষে চাইতে হয় তো ভিখিরির মতো এসে চাইলেই পারত; পাঁচ-দশ টাকা দিতাম; পঞ্চাশই দিতাম না হয়। তা না, একেবারে পাঁচশ এক টাকা! টাকা গাছে ফলে আর কি! তাও আবার ভয় দেখিয়ে… যত্তোসব বুজরুকি!
সোমা বলল – এসব তান্ত্রিকরা কখন কার কীভাবে ক্ষতি করে তার কোনও ঠিক আছে? বাড়িতে একটা বাচ্চা আছে … তোমার এই বাড়াবাড়িগুলো আমার মোটেই ভালো লাগে না।
আমিও রেগে-মেগে বললাম – আমি তো তোমার মতো মনে কুসংস্কার পুষি না, তাই এই জাতের বদমাইশ ভণ্ডগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও বাসনা আমার নেই।
সোমা গজগজ করতে করতে ভেতরে চলে গেল। এই ঘটনার চার দিন পর...
Next Part
All Bengali Stories
158
159
160
161
(162)
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717