Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বাঁধন

বাংলা গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    161    162    (163)     164    165   

বাঁধন
লেখিকা: অনুশ্রী মাইতি, হরিপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
( মার্চ, ২০২২-এর বিজয়ী গল্প)


## বাঁধন

#
অন্নপূর্ণা বড়ো দিদি, বয়স প্রায় ৫০বছর। এখন একটি হাসপাতালে ভালো বেতনের কাজ করে। নিজেকে একটা ভালো জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু সমাজের মানুষের কাছে তার জন্য থাকে অনেক প্রশ্ন, এরকম একদিন তার কাছে প্রশ্ন এল, "তুমি কার জন্য করছো এত কিছু? নিজের মেয়ে হলে না হয় দায় থাকে... বোনের জন্য কী দায় থাকে? সংসার করলে না, এই বয়সে এত বড়ো পাগলি বোনকে নিয়ে কী করবে?"

এই সমস্ত প্রশ্নের একটাই উত্তর দেয় সে, "কে বলছে আমার বোন পাগল? কে বলছে আমি ওর জন্য বিশাল কিছু করছি? আমি ওর দিদি তাই ওর প্রতি কিছু দায়িত্ব পালন করছি মাত্র... আমাদের জীবন আমাদেরকে বুঝে নিতে দাও..."

আর এই সব শুনে যখন তার ছোট বোন আরতি জিজ্ঞেস করে, "এই দিদি... দিদি... শোন না... বলছি, ওরা এভাবে তোকে বলছে কেন রে?"

দিদি চিৎকার করে বলে, "তুই চুপ করবি!!"

"বলছি যে... মানে... ওরা তোকে এইভাবে বলবে কেন?"

"একদম চুপ, আমি এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না।"

"আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আর বলবো না। বলছি,আমরা এখন বাড়ি যাব তো... বলছি ঐ দিকে যাব তো?"

"আমি কিছু জানি না, আমার আর ভালো লাগে না। তুই আমার হাত ধরে আয়।"

বাড়ি ফিরে অন্নপূর্ণা ব্যাগটা রেখে চুপ করে বসে পড়ে। তা দেখে আরতি বলে, "এই দিদি... দিদি... বলছি তুই চুপ করে বসে আছিস কেন রে? আমার তো খিদে পাচ্ছে... আমি কী করবো? আমি কী এই জামা-কাপড় পড়ে থাকবো? আর বলছিলাম, ঐ বোতলের জলটা কী খাব? না ফ্রিজ থেকে বের করবো?"

"আমি জানি না তুই কী করবি, তুই বুঝে নে। আমি আর পারছি না... তুই দাঁড়িয়ে থাকার হলে এখানে দাঁড়িয়ে থাক," এই বলে অন্নপূর্ণা রুমে চলে গেল, আর আরতি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অন্নপূর্ণা rest নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে, তার বোন আরতি ঠিক ঐ ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলে, "কে বুঝবে তোর এই অবস্থার কথা, বলতো? কেউ বুঝতে চায় না রে আমাদের..." এই বলে সে যখন আরতির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আরতি বলে ওঠে, "এই দিদি... বলছি যে, তোর কী হয়েছে রে?"

"তুই এখনো এখানে এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? পা ব্যথা করবে না?"

তখন আরতি রেগে গিয়ে মাথা নাড়াতে-নাড়াতে বলে, "এই তুই চুপ কর! আমার কিছু হচ্ছে না। তুই বল, তোর কী হয়েছে? আমার একদম ভালো লাগছে না বলছি!!"

"বা…বা..তুই আমায় বকছিস? যা, জামা-কাপড় change করে আয়, পড়তে বসবি বাবার কাছে। বাবাকে বেশি বিরক্ত করবি না। আর বলছি, ফ্রিজের জল খাবি না; ঐ বোতলের জল খাবি। আমি কিন্তু বার-বার বলবো না।"

"দাড়া-দাড়া, তুই এক সঙ্গে বলিস না তো... প্রথমে বললি জামা-কাপড় change করতে, তাই তো... কী রে?"

"হু..."

"তারপর বললি যেন ঐ বোতলের জল খেতে আর... পড়তে বসতে, তাই তো?"

"হু..."

"এবার বলে দে আমি কী খাব? কী এনেছিস আমার জন্য?"

"তুই আগে এই কাজগুলো কর।"

"এই দিদি, বলছি যে, তুই আর একবার বলে দে আমি কী কী করবো? কীভাবে করবো?"

"সত্যি বলছি আমি কিছু জানি না, এটা শেষ বার বলছি শুনে নে," এই বলে অন্নপূর্ণা প্রথম থেকে আবার বলতে শুরু করে, ও বোনকে সাহায্য করতে থাকে তার কাজগুলোয়। আর ভাবতে থাকে, "আমার অনুপস্থিতিতে আমার বোনের কী হবে? ও তো বয়সে বড়ো হলেও মানসিক দিক দিয়ে বাচ্চা। ওকে এই বিশ্বে বোঝার মতো যে কেউ নেই, সময় দেওয়ার মতোও কেউ নেই। প্রত্যেকটা মেয়ে তো মা হয়ে লড়াই করে তার সন্তানের জন্য, আমি নয় দিদি হয়ে লড়াই করলাম... সারাদিনের কাজের শেষে যতটুকু সময় পাব ওকে দেব। এই পৃথিবীতে আমরা এসেছি কিছু-না কিছু নিয়ে লড়াই করার জন্য। ওকে নিয়েই হয়তো আমার জীবনের লড়াই।"

এর পর অন্নপূর্ণা যখন আরতিকে খেতে দিল, সে খাবারটা মুখে তোলার আগে বলে, "তুই খেয়েছিস রে?"

"তোকে ভাবতে হবে না, তুই খেয়ে নে।"

"তুই বলবি তুই খেয়েছিস কি-না? নয়তো আমার সঙ্গে খাবি আয়।"

অন্নপূর্ণা মুচকি হেসে খেতে বসে। এইভাবে দিন কাটতো দুই বোনের। কিছুদিন পর অন্নপূর্ণা সঠিক সময় বাড়ি ফিরল না। আরতি তাকে ফোন করেও পেল না। তখন আরতি মাথা নাড়াতে থাকে আর ছটফট করতে থাকে। তখন সে তার বৃদ্ধ বাবাকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে যায় দরজা খুলে। প্রত্যেক বার রাস্তায় হেঁটেছে দিদির হাত ধরে, এইবার তার দিদি তার সঙ্গে নেই, তার হাতটা ধরার জন্যও কেউ নেই। বাড়ির বাইরে এসে সে মনে করতে থাকে তার দিদি তাকে কোন দিক দিয়ে নিয়ে যায়, এই ভাবে কিছু দূর যাওয়ার পর আর সে খুঁজে পেল না কোনও পথ। তখন মাথা নাড়াতে-নাড়াতে রাস্তার পাশে গাছের তলায় বসে পড়ল। তারপর সে ভাবে রাস্তাটা পেরিয়ে যাবে কিন্তু কয়েক পা এগিয়ে চলন্ত গাড়িগুলো দেখে পিছিয়ে এসে বসে পড়ে আগের জায়গায়, রাত হয়ে গেল। পরদিন সকাল হয়ে দুপুর হয়ে যায়, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত আরতি অসহায় মুখ নিয়ে ঐ গাছের তলায় বসে থাকে। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ায়। আরতি দেখে তার দিদি ঐ গাড়ি থেকে নেমে আসছে, মাথায় ব্যান্ডেজ। তা দেখে আরতি তার দিদির কাছে ছুটে যায়। ধীরে-ধীরে বিনিয়ে-বিনিয়ে বলে, "এই দিদি... দিদি, তুই কোথায় গিয়েছিলিস রে? তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না!! তুই কোথায় ছিলিস? তোর মাথায় কী হয়েছে?"

"তার আগে তুই বল, তুই একা-একা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিস কেন? তুই এত সাহস পেলি কোথা থেকে?" দিদির ধমকে আরতি কেঁদে বলে, "তোকে ছাড়া একদম ভালো লাগছিল না। খুব কষ্ট হচ্ছিল রে তুই বাড়ি ফিরিস নি বলে... তুই আমায় ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলি?"

"তুই বাড়ি চল, আর তোকে বাড়ির বাইরে বেরোতে দেব না একদম।"

"আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুই যা বলবি তাই করব। কিন্তু জানিস, কাল থেকে আমার খুব খিদে পেয়েছে, কেউ খেতে দেয় নি, কী খাব বলে দেয় নি, কেউ কিছু বলে দেয় নি।"

"তাই তো বলি মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোন। নিজের কাজগুলো নিজে করতে শিখ। আমি না থাকলে তোকে কে দেখবে?"

"শোন না... কেউ দেখবে না আমায়? আর আমি তো নিজের কাজ পারি না। তাই আমি চাই যেন তোর আগে আমি মরে যাই।"

"খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলছি... মার খাবি..."

"আমি কী মারা যেতে চাই নাকি? কিন্তু তুই না থাকলে কেউ আমায় দেখবে না, তাই বললাম।"

"বাড়ি চল।"

"শোন না আমার খুব খিদে পেয়েছে। খেতে দে না, তুই খেয়েছিস?"

এ কথা শুনে বোনের দিকে চেয়ে অন্নপূর্ণার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। তাই দেখে আরতি বলে, "তুই কাঁদছিস? আমারও কান্না পাচ্ছে। তুই কাঁদছিস কেন? আমার ভালো লাগছে না কিন্তু..."

তখন অন্নপূর্ণা চোখের জল মুছে আরতির হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, "ভয় করছে নাকি? বাড়ি চল। তোর দিদি যত দিন আছে তোর কোনও চিন্তা নেই। তোর দিদি তোর হাত ছাড়বে না। এই ভাবে তোর সঙ্গে আমার বাঁধন থাকবে।"
( সমাপ্ত)


All Bengali Stories    161    162    (163)     164    165   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717