Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

পুটি

( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------



All Bengali Stories    165    166    167    168    (169)     170   

পুটি
Writer - অনুশ্রী মাইতি, বাবা- হরিপদ মাইতি, হরিপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## পুটি
Writer - অনুশ্রী মাইতি, বাবা- হরিপদ মাইতি, হরিপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

আজ বহুদিন পর রাস্তার পাশ দিয়ে একের-পর এক 'কিরিং-কিরিং' শব্দ। পুটি চাল নিচ্ছে মাপ করে দুপুরে রান্নার জন্য। কিরিং- কিরিং শব্দ শুনে তার মনে হল জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি। তখন সে দেখে অবাক; আজ কতদিন পর একের-পর এক বাচ্চা স্কুল যাচ্ছে, কাঁধে ব্যাগ, স্কুলের ড্রেস পরে।

"কী ব্যাপার! সবাই স্কুল ড্রেস পরে কোথায় যাচ্ছে? স্কুলে নাকি?" এই বলে পুটি মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। শ্বশুরমশাই বলে ওঠে, "বাড়ির নতুন বৌ উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকে না।" এই শুনে পুটি বাড়ির ভিতরে চলে যায়। কিন্তু পুটির মন কী ঘরে থাকে! তার মনে-মনে কত প্রশ্ন, "সবাই বুঝি আজ স্কুলে যাচ্ছে, স্কুল বুঝি আবার খুললো?" এর পর জানলার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখে।_হ্যাঁ, সবাই দল বেঁধে স্কুলে যাচ্ছে এত দিন পর। তা দেখে তার মুখে হাসি ফুটলো। ও বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, "কতদিন পর স্কুল খুলেছে, আবার সেই স্কুলের মাঠ, ক্লাসরুম, দিদিমণিদের বকুনি, আদর, বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, বাড়ি-ফেরা। দিদিমণি যা পড়িয়েছেন তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে তর্ককরা... উঃ! কী আনন্দের দিন ছিল; তাই না।" পুটির মুখটা শুকনো হয়ে যায়। এমন সময় পিছন থেকে ডাক আসে, "বউমা ঐ জানলার দিকে কী দেখছো? উনুন কী জ্বলবে না? তোমার স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খাবে কী?"

পুটি মনে-মনে ভাবে, "দূর ভালো লাগে না। মাত্র বয়স আমার ষোলো, এই বয়সে শ্বশুরবাড়ি সামলাও,সংসার করো। কোথায় আশা ছিল দশম ক্লাসে উঠে মন দিয়ে দিদিমণিদের পড়া শুনবো, ভালো ফল করে উল্টোপাড়ার স্কুলে ভর্তি হয়ে আরও দুটো ক্লাস পড়বো। দূর!! এখন ভেবে আর কী করবো... সব এখন কোথায় চলে গেল। লক-ডাউন হল, মা-বাপ আর চাইলো না ঘরে বসিয়ে-বসিয়ে খাওয়াতে, তাই দূর করেদিল এখানে। বাপ কে বললাম আর একটু পড়তে দাও। কিন্তু কে কথা শোনে আমাদের... পাঠিয়ে দিল শ্বশুর বাড়ি..."

সেই সময় শাশুড়ি বলে ওঠে, "নতুন বউমা, কি-করছো কি? আজ কি ভাত হবে না?"

"হু, করছি..." এই বলে পুটি রান্না চাপায়, কিন্তু তার মনে ভাসতে থাকে 'কিরিং-কিরিং' শব্দ। তার মনে পড়ে যায় বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার কথা। সে মুখটা শুকনো করে বিড়বিড় করে বলে, "আমার যদি আজ বিয়ে না হতো, আমিও যেতাম স্কুলে আবার এই ভাবে সাইকেল চালিয়ে, দিদিমণিদের পড়া শুনতাম, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতো..."

"বউমা কি চুপচাপ বসে আছো? সংসারে কি আর কোনও কাজ-কর্ম নেই?"

"হু, যাচ্ছি..."

এরপর বিকেল গড়িয়ে আসে, পুকুর পাড়ে পুটি বাসন মাজতে বসেছে, দেখে বাচ্চারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে একসঙ্গে। পুটি তা দেখে ধড়পড় করে উঠে এসে হাঁপাতে-হাঁপাতে বলে, "এই শোন না, বলছি আবার কি আমাদের স্কুল খুলেছে রে? দিদিমণিরা পড়াচ্ছে? কবে পরীক্ষা রে?"

"হ্যাঁ দিদি সে তো আজ থেকে স্কুল খুলেছে, কিন্তু তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে, তুমি কি আর স্কুলে যেতে পারবে তুমি যে এত কিছু জানছো?"

"সে না যেতে পারি... তবে বলে তো যা, কি হচ্ছে? কি পড়াচ্ছে? তোদের দেখে যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমনি স্কুলের কথা শুনতে পেলে আরও আনন্দ হবে।"

"খুব খিদে পেয়েছে দিদি, বেশি কিছু বলতে পারব না। আজ সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে তাই খুব আনন্দ হচ্ছে।"

"কি পড়িয়েছে রে, দিদিমণিদের পড়া শুনেছিস?"

"আমি এত মন দিয়ে শুনি না দিদি, এখন গেলাম।"

"দূর বোকা ছেলে, মন দিয়ে দিদিমণিদের পড়া শুনবি, দেখবি কত কী জানতে পারবি।" এরপর পুটি কিছুক্ষণ চুপ করে বলে, "সত্যিই কী ভালোলাগছে আজ কত গুলো মাসের পর স্কুলের দরজা খুলেছে। আমার চোখে সেই পুরোনো দিনগুলো ভেসে উঠেছে। ইচ্ছে করছে সাইকেল চালিয়ে আমিও স্কুলে যাই। কিন্তু সে কী আর উপায় আছে? এখুনি ডাক আসবে 'বউমা', 'বউমা'। মা, বাপ কেন যে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিল? এখন আমিও তো পারতাম স্কুলে যেতে আবার। কী জানি,খুব কী মা-বাপের অন্ন ধ্বংস করছিলাম!! যাই হোক বাড়ির দিকে যাই, এখুনি ডাক আসবে..."

এই ভাবে পুটি দিনের-পর দিন তাদের 'কিরিং-কিরিং' শব্দ শুনত আর স্কুলে যাওয়া-আসা দেখত। ও তাদের দেখে মুচকি হেসে স্বস্তির শ্বাস নিত, যেন তার কত শান্তি। কিছুদিন পর পুটি তার বাপের বাড়ি যায়। ও যাওয়ার পথে দেখে তার কয়েকজন বান্ধবী স্কুলে যাচ্ছে। সে খুশি হয়ে তাদের কাছে গিয়ে বলে, "স্কুলে যাচ্ছিস তাই না, এখন দিদিমণিরা কী পড়াচ্ছে রে? দিদিমণিরা আমার কথা জিজ্ঞাসা করে?"

"হ্যাঁ করে, কিন্তু তুই ওসব জেনে কী করবি বল? তোর এখন বিয়ে হয়ে গেছে। তোর এখন জীবন তোর সংসার নিয়ে, স্কুলের কথা শুনলে তোর হয়তো খারাপ লাগবে।"

"না রে, খারাপ লাগবে না। বরং এখন মনটা ছটফট করে জানার জন্য। স্কুল এতদিন পর খুলছে, কী হচ্ছ, দিদিমণিরা কী পড়াচ্ছেন, তোদের কথা; সব মনে পড়ে।"

পুটি বাপের বাড়ি এসে চুপচাপ উঠোনে বসে থাকে। পিছন থেকে তার মা বলে, "কী হল, বাপের বাড়ি এসে চুপচাপ বসে কেন থাকিস? একটু তো পাড়া থেকে ঘুরে আসতে পারিস। পাঁচজনের সঙ্গে কথা ক‌ইলে মনটাও ভালো হয়,আবার তো সেই দুদিন পর শ্বশুর বাড়ি চলে যাবি।"

"মা একটা কথা ক‌ইবো, আমি কী তোমাদের খুব অন্নধ্বংস করছিলাম? তুমি আর বাপ কেন বিয়ে দিয়ে দিলে? আর তো কয়েক দিন রাখতে পারতে। আমিও দশম ক্লাসের পরীক্ষাটা দিতে পারতাম। ওদের মতো আর দুটো ক্লাস পড়তে পাড়তাম।"

"এ আবার কেমন ধারা কথা? এখন তোমার বিয়ে হয়েছে, এখন সংসার নিয়ে ভাববে। এখন আবার ঐ সব নিয়ে ভাবতে যাস কেন? গরিব জীবনে আর দু'ক্লাস পড়ে কী করতে পারতিস?"

"কিছু না হোক আমার ইচ্ছা পূরণ হতো।"

"ও থাক! দু'দিন পর দেখবি সংসারটা যখন ভালোবেসে ফেলবি ওসব আর মাথায় আসবে না। সংসার নিয়ে সুখে থাকবি।"

"হু, সে ছাড়া কী বাঁচার কোনও উপায় আছে! পিছনে, সামনে সব দিকে খাত। বিয়ে যখন দিয়েছো সংসার নিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু মনের মধ্যে ইচ্ছাটা থেকেই যাবে।"

"ওসব মনের মধ্যে রাখিস নে, সংসার কর।"

"তাহলে কী করবো? ঘুড়ির মতো কী আকাশে ইচ্ছেগুলো উড়িয়ে দেওয়া যায়? সে তো মনের মধ্যে এক কোণে থেকে যাবে।"

"ঠিক আছে, ঠিক আছে, কটা দিন যাক ওসব কথা ঠিকই ভুলে যাবি। এখন একটু ঘুরে আয়।"

দুইদিন পর পুটি আবার শ্বশুর বাড়ি ফিরে যায়। মনের এক কোণে ইচ্ছাটা ফেলে রেখে 'ইচ্ছা-পূরণ' না হ‌ওয়ার কষ্টটা মেনে নেয়। এরপর কিছু মাস কেটে যায়, পুটি মা হয়। এখন তার জীবন, সংসার আর সন্তান নিয়ে। এখন তাকে সবাই দেখে বলে, গিন্নি হয়েছে পুটি, সংসারটা ভালোই বুঝতে শিখেছে। কিন্তু সে এখনও 'কিরিং-কিরিং' সাইকেলের শব্দে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এখন তার কোলে থাকে তার ছোট্ট শিশু। ওকে 'কিরিং-কিরিং' শব্দ শুনিয়ে পুটি বলে, "শুনতে পাচ্ছিস,আমি ঠিক এই ভাবে 'কিরিং-কিরিং' শব্দ করে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। কিন্তু আমার ইচ্ছা সময়ের জালে অতীতে থেকে গেছে, বেছে নিতে হয়েছে সংসারকে। মেনে নিতে হয়েছে ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার কষ্ট। ভুলে থাকতে হচ্ছে নিজের ইচ্ছাকে। মেনে নিতে হয়েছে নিজের বর্তমানকে। কিন্তু তুই আমার মতো থামবি না আমার 'সোনা-মা'। এই ভাবে তুইও একদিন স্কুলে যাবি, কিন্তু তোকে আমি থামতে দেব না..."
( সমাপ্ত )


Next Bangla Story

All Bengali Stories    165    166    167    168    (169)     170   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717