Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অলিম্পিকে শিহরণ

( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    167    168    169    170    (171)     172   

অলিম্পিকে শিহরণ
Writer - সৈকত সাহা, নবদ্বীপ, নদীয়া
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## অলিম্পিকে শিহরণ
Writer - সৈকত সাহা, নবদ্বীপ, নদীয়া

ডোপ টেস্টে ধরা পড়লেন ভারতীয় ম্প্রিন্টার দুর্গা মাহাতো। টিভিতে খবরটা দেখা মাত্রই চমকে উঠলো দুর্গা। সমস্ত আকাশ যেন আজ তার মাথায় ভেঙে পড়েছে। সদ্য অলিম্পিক সফর সেরে নিজের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে ফিরে এসেছিল দুর্গা। আজ তার মধ্যেই এই খবর। মাত্র কয়েকদিন আগে যে মেয়ে অলিম্পিকের ইতিহাসে মেয়েদের ৮০০ মিটার দৌড়ে প্রথমবার ভারতবর্ষকে সোনা এনে দিয়েছিল, যাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল সেদিন গোটা দেশ। দেশবিদেশ থেকে আসতে শুরু করেছিল শুভেচ্ছার বার্তা। টিভি থেকে খবরের কাগজ, সর্বত্রই ছিল একটাই কথা 'সোনার মেয়ে দুর্গা'। দুর্গার নিজের গ্রাম রসুলডাঙাতে সেদিন তো ছিল রীতিমতো উৎসব। ওর ফেসবুকের ইনবক্স ভরে উঠেছিল সেদিন শুভেচ্ছাবার্তায়। আর আজ টিভিতে ব্রেকিং নিউজ — 'অলিম্পিকে ভারতের কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবন করেছেন ভারতীয় মহিলা প্রিন্টার দুর্গা মাহাতো'। পরের দিন খবরের কাগজে হেডলাইন বেরলো — 'সোনার মেয়ের কেলেঙ্কারি অলিম্পিকে'। এসব দেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে দুর্গা।

ঘটনার সূত্রপাত বলতে গেলে দিন দশেক আগে। অলিম্পিকে পদক জেতার পর অলিম্পিক কমিটির তরফে অ্যাথলেটদের উপরে এক ডোপিং পরীক্ষা চালানো হয়। আর তারপরই রিপোর্টে উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আসলে অলিম্পিক গেমস বা বিশ্বের যে কোনও বড় স্পোর্টস ইভেন্টর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা হল ডোপ। নিজেদের পারফরম্যান্স বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের বহু অ্যাথলেটদের এই ডোপিংয়ের সাহায্য নিতে দেখা গিয়েছে। আর তাই তা রোখার জন্য ভীষণই তৎপর থাকে ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা) - এর মতো সংস্থাগুলি। আর তাদের তরফেই এই পরীক্ষা চালানো হয় দুর্গাদের উপর। গতকাল তার রিপোর্ট আসে। গোটা বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ভিড় আজ। তিরের মতো চারিদিক থেকে উঠে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। কেউ ওকে প্রশ্ন করছেন, 'কী মনে হচ্ছে আপনার, কেউ কি আপনাকে ফাঁসিয়েছে? আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?' এত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে একটা সময়ে আর পারে না দুর্গা। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। সবাইকে ও বলে, "আপনারা প্লিজ এবার আসুন, আমায় একটু একা থাকতে দিন।"

ইতিমধ্যে অলিম্পিক কমিটি ঘোষণা করেছে দুর্গাকে পদক ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে সাই (স্পোর্টস অথিরিট অফ ইন্ডিয়া) দুর্গাকে আগামী পাঁচবছরের জন্য নির্বাসিত করেছে সব রকমের ইভেন্ট থেকে। এসব খবর শোনার পর দুর্গা কার্যত নিজেকে ঘর-বন্দীকে করে ফেলে। কী-ই বা আর করার আছে আজ দুর্গার; যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজেকে ও নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছে ততক্ষণ অবধি রেহাই নেই এই অপমান, যন্ত্রণা থেকে। দুর্গা মন থেকে বিশ্বাস করে ও নির্দোষ; আজ অবধি ও কখনও অসৎ ভাবে কোনও প্রতিযোগিতা জেতেনি। এখনও অবধি যা অর্জন করেছে ও সব ওর নিজের পরিশ্রমে, দক্ষতায়। এই যে ও অলিম্পিক অবধি পৌঁছেছিল, এবং সেখান থেকে পদক নিয়ে এসেছিল, এর জন্য তো ওকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। ওদের মতো ঘরে, যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়; দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড় করতে মজুরের কাজ নিতে হয়, সেখানে এসব তো স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়। তবু ও নিজের স্বপ্নকে মরতে দেয়নি, একটু-একটু করে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছে।

এরপর একদিন আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষণ। দেশবাসীকে হতাশ করেনি দুর্গা মাহাতো। ৮০০ মিটারের হিটে দ্বিতীয় হয়ে ও পৌঁছে যায় ফাইনালে। এরপর সেই স্বপ্নের ফাইনাল। আর মোস্ট ফেভারিটকে মাত্র ০.০২ সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জয়। দেশের মাটিতে পা রাখার পর রাজকীয় সংবর্ধনা। সব গৌরবই তো আজ এক মুহূর্তে ম্লান হয়ে গিয়েছে একটা ঘটনায়। বুকের ভিতর কষ্টগুলো যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। তবে এতসবের মাঝেও সবসময় ও পাশে পেয়েছে গুরু দ্রোণাচার্যের মতো বিশ্বেশ্বর স্যারকে। উনি হলেন দুর্গার স্কুলের খেলার শিক্ষক। যিনি আজ আবার এই দুর্দিনে তার অর্জুনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। স্যার বলেছেন, 'তুই চিন্তা করিস না দুর্গা, নির্দোষ প্রমাণিত তুই হবিই। তোর জন্য আমি লড়বো, তোকে আমি হারতে দেব না।"

এরপর শুরু হয় নতুন এক লড়াই। নিজেকে নির্দোষ, সৎ প্রমাণের লড়াই। মাঠের লড়াই তো ও এতদিন লড়েই এসেছে। জীবনের লড়াইটাও এবার জিততে হবে। ভয় ও পাবে না। ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটাই লাইন, "ডর কে আগে জিত হ্যায়..."

দুর্গা জানে কেউ ভীষণ বড়ো ষড়যন্ত্র করেছে ওর সাথে। কারও একার পক্ষে একাজ করা সম্ভব নয়, হয়তো। অনেকের মাথা আছে এর পিছনে। তারা অনেকদিন ধরেই নিশ্চয়ই এই প্ল্যান করে রেখেছিল। স্পোর্টসের ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব একটা অনভিপ্রেত নয়। কিন্তু ও কীভাবে বুঝবে কারা অপরাধী আর তাদের পর্দাই-বা ফাঁস করবে কী করে? কুচক্রীদের জাল ভেদ করা তো এত সহজ কাজ নয়। এই লড়াইতে ওর পাশে ওর মা, বিশ্বেশ্বর স্যার আর ওর এক বন্ধু, প্রতুল ঘোষ, যিনি লালবাজারে গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত। শুরু হয় এক অভিযান, যার পরতে-পরতে রয়েছে ভয়, উৎকণ্ঠা, নানা বাধা। সব অতিক্রম করতে পারলে তবেই খুলবে এ চক্রান্তের জট। বিশ্বেশ্বর স্যার, দুর্গা আর ওর সেই বন্ধু প্রতুল মিলে এরপর তৈরি করে এক মোক্ষম প্ল্যান। পুরো কাজটাই হবে অত্যন্ত সন্তর্পণে আর ছদ্মবেশে। আর প্রয়োজন মতো ওর বন্ধু ওকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। তবে কোনও ভুল করলে চলবে না, একটু এদিক-ওদিক হলেই সমস্তটাই জলে। প্ল্যানে ঠিক হয় দুর্গা যে জায়গায় অনুশীলন করেছিল অলিম্পিকের আগে সেখানকার সমস্ত স্টাফ থেকে শুরু করে অনুশীলনকারী সবার ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খোঁজ নেবে ওরা। প্রত্যেকটা রুমের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হবে। ওরা যাবে পর্যবেক্ষক হিসাবে। অপারেশন শুরু হওয়ার পর প্রথম তিনটে দিন ওরা তেমন কোনও তথ্য জোগাড় করতে পারলো না। চতুর্থ দিন ওরা কিছু তথ্য পেলো। সেদিন ওখানকার এক কর্মী ওদের জানালো যে, এই স্পোর্টস অ্যাকাডেমির যিনি ডিরেক্টর তার সাথে নাকি কিসব নিয়ে দুর্গার @@আর এক সহ প্রতিযোগী রুমানার বচসা হয়ে গিয়েছে। ডিরেক্টর স্যার নাকি রুমানাকে হুমকি দিয়েছেন এই বলে যে, সে যদি ডিরেক্টর স্যারের প্রস্তাবে রাজী না হয় তাহলে স্যার ওই রুমানার কুকীর্তি সব ফাঁস করে দেবে। আর রুমানাও স্যারকে বলে যায়, সে যদি ফাঁসে তাহলে স্যারও ফাঁসবেন। আর তখন স্যারের এই সাধের অ্যাকাডেমিটিও গুটিয়ে যাবে। কিন্তু ওরা কী বিষয় নিয়ে কথা বলছিল তা ওই লোকটি বোঝেনি। সে আড়াল থেকে শুধু এটুকুই শুনেছে। এই রুমানাই কী তাহলে ডিরেক্টর স্যারের সাথে চক্রান্ত করে দুর্গাকে ফাঁসিয়েছে? কিন্তু কেন? দুর্গা তো ওর কোনও ক্ষতি করেনি। বরং রুমানাই এর-আগেও দুর্গাকে বিপদে ফেলেছে একাধিকবার। অনুশীলনের সময় জুতো পাল্টে দিয়ে, এমনকি ইচ্ছে করে মিথ্যে বলে দুর্গাকে ট্রেনারের কাছে বকুনি অবধি খাইয়েছিল। তবু দুর্গা বন্ধু মনে করে রুমানাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।

রুমানার কীসের এত যে রাগ ওর উপর তা দুর্গা বোঝে না; শুধু দুর্গা প্রতিটা পারফরম্যান্সে ওকে হারিয়ে এগিয়ে যায় বলে!! অ্যাকাডেমির সবাই দুর্গাকে মাথায় তুলে রাখতো বলে!! কিন্তু সে তো দুর্গার পরিশ্রমের ফসল, এটা কি রুমানা বোঝে না। শুধু প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে রুমানা এমনটা করেছে এটা মানতে চায় না দুর্গার মন। হয়তে দুর্গারই ভুল হচ্ছে। রুমানা তার এত বড়ো ক্ষতি করবে না। রহস্য এবার ঘনীভূত হচ্ছে ভালোই তা দুর্গা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে। আর এ রহস্যের বীজ যে কত গভীরে সেটাই খুঁজে বের করা হবে ওর প্রধান উদ্দেশ্য। এরপর আরও নানারকম তথ্য উঠে আসতে লাগলো সামনে, যেমন এই ডিরেক্টরের সাথে রুমানার নাকি একটা সম্পর্ক রয়েছে। এটা নিয়ে অ্যাকাডেমির অন্দরে নানারকম কানাঘুষো কথা এখন শোনা যাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে কেউই খুব একটা মুখ খুলতে রাজী নয়। এরই মাঝে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যায়। দুর্গাদের অ্যাকাডেমির খাবারের দায়িত্বে যিনি ছিলেন মানে দিলীপ বাবু, গতকাল রাতে তিনি নাকি গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছেন। অ্যাকাডেমি থেকে ফেরার পথে হাইওয়ের কাছে একটি মারতি গাড়ি তাকে চাপা দিয়েই বেরিয়ে যায়। এবং রহস্যজনক ব্যাপার হল তার জামার পকেট থেকে পাওয়া যায় একটি চিরকুট যাতে লেখা ছিল শুধু ইংরেজির একটা অ্যালফাবেট 'D'। কীসের জন্য এই 'D', কী-ই বা এর মানে, তা এখনও অবধি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ এবারে তদন্ত শুরু করেছে যদিও, কিন্তু এখনও অবধি কোনও হদিশ মেলেনি অপরাধীর। এবং সব থেকে বড়ো ব্যাপার হল গোটা অ্যাকাডেমিতে এই ঘটনা নিয়ে কোনোরকম আলোচনা করাও বারণ, ডিরেক্টর স্যার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। হঠাৎ করে দিলীপ বাবু কেন খুন হতে যাবেন তা ভেবে পায় না দুর্গা, বিশ্বেশ্বর স্যার ও প্রতুল। ওনার মৃত্যুর সাথে কি ডিরেক্টর স্যার জড়িত? কিন্তু ডিরেক্টর স্যার ওনাকে কেন মারবেন? তাহলে কী ডিরেক্টর স্যারই দুর্গাকে চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছেন? আর দিলীপ বাবু কোনোভাবে সেই তথ্য জেনে গিয়েছেন বলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেন। কিন্তু ডিরেক্টর স্যার দুর্গার সাথে কেন এটা করবেন? তার সাথে তো দুর্গার কোনও শত্রুতা নেই। কিছুই বুঝতে পারে না দুর্গা। ওর কেমন যেন দিশেহারা লাগে নিজেকে। কোথায় যে এই ঘটনার শেষ হবে তা কে জানে!

সপ্তাহের শেষে ঘটে যায় আর একটি রোমহর্ষক ঘটনা। অ্যাকাডেমির ম্যানেজিং কমিটির মেম্বার রণিত সোম খুন হয়ে যান। আর এবারে খুন অ্যাকাডেমির কাছেই। তবে এবারে গাড়ি চাপা নয়, পিছন থেকে গলায় চেইন পেঁচিয়ে খুন এবং আবারও জামার পকেট থেকে পাওয়া যায় একই ধরনের একটি চিরকুট। যাতে লেখা ছিল ইংরেজির অ্যালফাবেট 'R'। পরপর দুটো খুন হয়ে যাওয়ার নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় পুলিশ। উপরমহল থেকে চাপ আসতে শুরু করে। কিন্তু দুটো খুনের ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে খুনের তেমন কোনও চিহ্ন না পাওয়ায় পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও বেশী দূর এগোতে পারে না। তবে দুটি খুনের ঘটনার ক্ষেত্রেই খুনি যে একই ব্যক্তি তা সবাই বুঝতে পারে। দুর্গা, বিশ্বেশ্বর স্যার ও প্রতুল বুঝতে পারে মৃতেরা প্রত্যেকেই দুর্গার সঙ্গে হওয়া চক্রান্তের সাথে জড়িত। আর কোনোভাবে খুনিকে ব্ল্যাকমেল করার কারণেই এর খুন হয়ে যাচ্ছেন। এরপরে কি আরও খুন হওয়া বাকী? নাকি খুনি এবার ধরা পড়বে? এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাথায়।

যা আশঙ্কা ছিল সেটাই সত্যি এল এবারে। এবারে খুন স্বয়ং ডিরেক্টর স্যার উপেন্দ্ৰ মুখার্জী। এবারেও খুন হাইওয়ের পাশে। আর এবারে খুন পিছন থেকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে। এক্ষেত্রেও লাশের পকেট থেকে যায় একটি চিরকুট, যাতে ইংরাজির অ্যালফাবেট 'U' লেখা। এরপর গোটা ঘটনার দায়িত্বভার নেয় দুর্গার বন্ধু গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার প্রতুল। পুলিশ কিছু করে উঠতে পারছে না দেখে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে দায়িত্ব যায়। তদন্ত শুরু করেই প্রতুলের মাথায় যেটা আসে তা হল মৃত ব্যক্তির পকেটে পাওয়া চিরকুটে লেখা অ্যালফাবেট হল প্রত্যেক ব্যক্তির নামের আদ্যক্ষর। দুর্গার এখন আর কিছু ভালো লাগে না। ওর শুধু মনে হয় ও কি আদৌ নির্দোষ প্রমাণিত হবে? ধরা পড়বে তো আসল অপরাধী?

গোটা লালবাজারের গোয়েন্দা দপ্তর রাতদিন এক করে দেয় এই কেস সলভ করার জন্য। মৃত ব্যক্তিদের নামের প্রত্যেকটা আদ্যক্ষর সাজালে আসে, 'DRU', কিন্তু এর মানে কী? তা বুঝে উঠতে পারে না কেউ। হঠাৎ প্রতুলের মাথায় খেলে যায় সবটা। এর পরের অক্ষর হবে 'G'... তার মানে সবমিলিয়ে হল 'DRUG' এই সহজ ব্যাপারটা এতক্ষণ কারো মাথায় আসেনি। এর থেকে এটাও পরিষ্কার এরপরে আর একজন কেউ মারা যাবে যার নামের আদ্যক্ষর 'G' নাকি খুনির নামের প্রথম লেটার 'G'? এই বিষয়টা আবার যেন জট পাকিয়ে দেয় সব। হঠাৎই প্রতুলের মনে পড়ে যায় রুমানার কথা। কিন্তু রুমানার নাম তো শুরু 'R', তবে কি রুমানার আর কোনও নাম আছে? যে নামে ওর বন্ধু-বান্ধব ওকে ডাকে। তিলমাত্র দেরী না করে প্রতুল ফোন করে দুর্গাকে, "হ্যালো দুর্গা, আমি প্রতুল বলছি... শিগগির বল, রুমানার কি অন্য কোনও নাম আছে?"

দুর্গা অপর প্রান্ত থেকে বলে ওঠে, "হ্যাঁ, ওকে আমরা অ্যাকাডেমিতে 'গুল্লা' বলে ডাকতাম, কিন্তু কেন?"

একথা শোনামাত্রই সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় প্রতুলের কাছে। প্রতুল, "পরে তোকে সব বলছি," বলে ফোনটা রাখে। তার মানে গুল্লার 'G'...ফোর্স নিয়ে প্রতুল পৌঁছে যায় রুমানা ওরফে গুল্লার বাড়িতে। পুলিশ দেখে ভূত দেখার চমকে ওঠে রুমানা। প্রতুল বলে, "চলুন ম্যাডাম, অনেক খেলা দেখিয়েছেন, আপনার জন্য একটা নির্দোষ মেয়ের জীবনটা শেষ হয়ে যেতে বসেছে..."

প্রথমে সবটা অস্বীকার করলেও পরে অফিসারদের জেরায় সব কবুল করে রুমানা। স্বীকার করে দুর্গার জন্য তার অলিম্পিকের টিকিট মেলেনি, তাই সে এই জঘন্য কাজ করেছে। কারণ একমাত্র কোয়ালিফায়ার হিসাবে দুর্গাই সুযোগ পায় তার অসাধারণ রেকর্ডের জন্য। রুপো জয়ী রুমানার ছাড়পত্র মেলে না অলিম্পিকের জন্য। তাই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সে ঠিক করে দুর্গাকে ফাঁসাবে। তারপর সে মোক্ষম প্ল্যান করে। ডিরেক্টর স্যার রুমানার প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট ছিলেন, তাই রমানা স্যারকে প্রস্তাব দিয়েছিল দুর্গাকে ফাঁসালেই তবে সে স্যারকে বিয়ে করবে। প্রথমটায় রাজী না হলেও, পরে স্যার রাজী হয়ে যায়। আর ম্যানেজিং কমিটির মেম্বার রণিত সোম, ও খাবারের দায়িত্বে থাকা দিলীপ বাবুকে মোটা টাকা অঙ্কের পারিশ্রমিকে দেওয়ার লোভ দেখালে তারাও রাজী হয়। এরপর দিলীপ বাবু দুর্গার খাবারের সাথে ড্রাগ মিশিয়ে দেয়। ঘুণাক্ষরেও টের পায় না কেউ। শুধু এই চারজন জানে গোটা ঘটনা। তারপরের ঘটনা তো সবার জানা। এরপর স্যার যখন কাজ হাসিল হওয়ার পরে রুমানাকে তাড়াতাড়ি বিয়ের করার জন্য বলেন, তখন রুমানা বেঁকে বসে। সে বলে, এরকম কোনও কথাই হয়নি তাদের মধ্যে। ফলস্বরূপ শুরু হয় বচসা। স্যার রুমানাকে বলেন, সব ফাঁস করে দেবে ওর কীর্তি, তার কেরিয়ার শেষ করে দেবে। শুরু হয় ব্ল্যাকমেলিং। এরপর রুমানা ঠিক করে এদের কাউকেই বাঁচিয়ে রাখা ঠিক হবে না। তারপর শেষে একে-একে খুন করতে থাকে সবাইকে।

বিচারে রুমানার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ও 'সাই' তাকে আজীবনের জন্য নির্বাসিত করে। আজ সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হয় দুর্গা। অলিম্পিক কমিটি আবার পদক ফিরিয়ে দেয় দুর্গাকে। 'সাই' তুলে নেয় দুর্গাকে দেওয়া নির্বাসনের নিষেধাজ্ঞা। টিভি খবরে আজ আবার ব্রেকিং নিউজ—'সোনার মেয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন'। পরেরদিন কাগজে হেডলাইন বেরলো - "লড়াইয়ের আর এক নাম দুর্গা"।
( সমাপ্ত )


Next Story

All Bengali Stories    167    168    169    170    (171)     172   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717