Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

জিদ

( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    173    174    175    (176)     177   

জিদ
Writer - জেবুন্নেছা জেবু, সতীশ বাবু লেইন, চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## জিদ

Writer - জেবুন্নেছা জেবু, সতীশ বাবু লেইন, চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ

আমি পঁচিশ বছর বয়সী নীলা। আমরা চার বোন, দুই ভাই। আমি পরিবারের মেঝো মেয়ে। আমার আর রাজীবের বিয়েটা হয়েছিল আমাদের দুই জনের পছন্দে, ভালবেসে। আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে নূপুর, এখন চার বছর; আমাদের চোখের মনি।

আমার স্বামী রাজীবের স্বভাব-চরিত্র, ধার্মিকতা সবই খুব ভালো ও সৎ ছিল, কিন্তু সে আমার চেয়ে তার পরিবারের কথাকেই বেশী গুরুত্ব দিত। এ নিয়ে নিত্যই ঝগড়া হত, তারপর সে চাইতো আমিই তার রাগ ভাঙ্গাই; যা আমি কখনোই করতাম না।

আমাদের সমস্যাটা শুরু হয় আমার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকতা নিয়ে। থাকতাম বাবার বিল্ডিং-এর একটু দূরের বিল্ডিং এ, ভাড়া বাসায়। মেয়েকে বাবার বাড়ি রেখেই স্কুলে যেতাম।

সব সংসারেই টুকটাক সমস্যা থাকে। ওরকম আমাদের মধ্যেও ঝগড়া-ঝাটি হত। বিশেষ করে, তার ভাই-বোন সব সময়ই আমাকে হিংসে করতো, বলতো, ভাবিকে চাকরী করতে হবে কেন? ভাবি আজকাল আমাদের সাথে কথাই বলে না। এসব কান-কথা শুনে এসে ঝগড়া করতো রাজীব, আমিও রাগ করে বাবা-মা'র কাছে চলে যেতাম। সবাইকে কেঁদে-কেঁদে বোঝাতাম আর সবার সহানুভূতি নিতাম। তখন সবাই ওকে গাল মন্দ করতো, বড়-ছোট সবাই মিলে অপমান করতো, সে চুপচাপ থাকতো । পরে বাবার বাড়ি থেকে আনতে গেলে আমি গর্বের সাথে সবাইকে বলতাম, আমি ছাড়া একটা দিনও তার চলে না।

আমার কাছে মনে হত,আমি জিতে গেছি। উল্টো বড় গলা করে বলতাম, তোমার মতো লোকের সাথে সংসার করার কোনও ইচ্ছে নেই।

ডিভোর্স আমি কখনোই চাইনি, কিন্তু ওটা ছিল মুখের উপরের কথা। আসলে সব মানুষই কথায় জিততে চায়, হার মানতে চায় না। অথচ হার মানার মাঝেই রয়েছে জীবনের মূল জয়, তা আমার চেয়ে বেশী কেউ উপলব্ধি করে না এখন। বুঝতে পারছি হাড়ে-হাড়ে এখন। মূলত: সংসারে একটু সইতে হয়, বুঝতে হয়, সহ্য করতে হয়।

কথায় পরাজিত হওয়ার চাইতে বড় পরাজয় আমার কাছে আর কিছুই ছিল না। সেদিনও ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে-করতে দুজনেই খুব রাগে গর্জন করে মুখে যা আসছে বলে ফেলেছি। তুই-তোকারি, গালিগালাজ, অপমান কিচ্ছু বাদ যায়নি। এক সময় সে আমার গায়ে হাত তুলল। আমি বাপের বাড়ি চলে গেলাম। আর বরাবরের মতো এবারও নিজের দিকটা না বলে খালি ওর দোষই বলে বিচার চেয়ে সবাইকে ডাকলাম। বাবা পুলিশ দিয়ে ফোন করিয়ে ওকে ডেকে পাঠাল ...পরিবারের সবাই বলল, তোকে এমন ছেলের সাথে সংসার করার কোনও দরকার নাই। এভাবেই এক মাস গেলাম না, ওর পরিবার থেকে মুরুব্বিরা এসে বার-বার অনুরোধ করল, আমি যেন চলে যাই...

ভেতরে-ভেতরে আমিও চিন্তা করলাম, এবার একটা কঠিন শিক্ষা তো হল । বুঝিনি জীবনে যার সাথে সংসার করবো, সারা জীবন সুখে-দুঃখে থাকবো, তাকে ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হয়। পুলিশ দিয়ে হুমকি দিয়ে, পরিবারকে দিয়ে অপমান করিয়ে কখনো এক সাথে সুন্দর সংসার হয় না। আর সন্তানদের জীবনও তছনছ হয় মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে।

আমার মনের মধ্যে খুবই অনুতাপ হচ্ছিল। ও যেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, সেদিনই হাত জোড় করে আমার কাছে মাফও চেয়েছে।

কিছুদিন পর দুই পরিবার থেকে বিচার-সালিশ হল। সবার কাছে রাজীবই দোষী হল, সে মাফ চেয়ে নিলো। সবাই ওকে নানা কথা শোনালো, তারপর আবার সংসার শুরু করলাম। এবার ওর আবদার ছিল ও কাজের মেয়ে রাখবে তবুও শশুরবাড়ির পাশে থাকবে না। স্কুলের পাশে বাসা নিলো। কয়েক মাস ভালোই চলছিল, কিন্তু হুট করে ওর বোন আসে বেড়াতে, দুষ্টুমি করে বলল, ভাই তুমি কেন বাসা ভাড়া দিয়ে থাকবা? ভাবিদের নিজেদের বাড়ি আছে। শুনেছি সব ভাগ হয়ে গেছে, একটাতে তোমরা থাকলে বাসা ভাড়া লাগতো না।

এ সামান্য কথাটা নিয়ে আমাদের ঝগড়া বেধে গেল।আমি বললাম, আমাকে ওরা বিয়ে দেয়নি তোমার বোন জানে, সে খোঁচা দিয়ে কথা বলল কেন?

রাজীব বলল, কে কি বলল তার জন্যে কি আমি দায়ী?

আমি বললাম, হ্যাঁ তুমিই ওকে দিয়ে বলাইছো ...

ব্যস কাপড়চোপড় গুছিয়ে আমি বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলাম। কয়েকদিন হয়ে গেল, আমি অপেক্ষায় অথচ সে আসছে না আমাকে নিতে, ফোন করলাম... বলল তার অনেক জ্বর, রাজীব অসুস্থ শুনে আমি বাসায় যেতে চাইলে আমার পরিবার যেতে দিলো না, এভাবেই বেড়ে গেলো দূরত্ব। আর আমার বোনদের কথা ছিল, প্রয়োজন হলে তার বোনেরা নিতে আসবে। প্রেম করে বিয়েটা করে তুমি ভুল করেছো, নিজের সম্মান ধরে রাখো।

আমি খুবই চাচ্ছিলাম সে আসুক, বা ওর পক্ষ থেকে আত্মীয়-স্বজন এসে আমাকে অনুরোধ করে নিয়ে যাক। কিন্তু এবার কেউই আসল না। পনের দিন পর রাজীব আমাকে ফোন দিয়ে বলে নীলা তুমি কি আসবে মেয়েকে নিয়ে? আমি বললাম, তুমি এসে মাফ চেয়ে নিয়ে যাবে। রাজীব বলল, বার-বার এসব ভাল লাগে না। আমি আসবো না, এসব করে-করে তোমার অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। মেয়ে বড় হচ্ছে, এসব পরিবর্তন করা উচিত। তুমি তোমার পরিবার এর কথা শুনবে নাকি আমার?

আবারও তর্ক করে কল কেটে দিলাম। কয়েকদিন পর ওর কাছে উকিলের নোটিশ পাঠিয়ে দিলো আমার বাবা। আমি রাগের মাথায় কোর্টে গিয়েও রাজীবকে হেনস্থা করলাম। সে বার-বার আমাদের মেয়ে নূপুরের কথা বলছিলো। আমি ভরন-পোষণ বাবদ একটা বড় মাপের খরচ দাবি করলাম। আমি চাচ্ছিলাম তার যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। কিন্তু জিদ আমাকে অমানুষ করে তুলল, ওর কাছে ছোট হওয়া আমি মানতেই পারিনি। এখন বুঝতে পারছি, হয়তো এসব কারণেই আজকাল বিচ্ছেদগুলো বেশী হয়। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ও আমার সমস্ত দাবি মেনে নিলো। আমাদের মেয়েকেও আমি পেলাম, ভরণ-পোষণ, মাসিক খরচ সবই পেলাম, কিন্তু তাকে হারালাম। কত সহজে পর হওয়া যায় বুঝলাম। সামান্য কারণে আমি এমনটা কেন করেছি বুঝিনি। আমার মা-বাবার মৃত্যুর পর বুঝলাম আমি কতো বড় ভুল করেছি। আজ দুই বছর হয়ে গেলো ...সে মাঝে-মাঝেই ফোন করে । আমি অভিমান করে ফোন ধরতাম না, নূপুর তার বাবার সাথে কথা বলতো, ভিডিও কল করতো। হঠাৎ সেদিন নিউমার্কেটে রাজীবের সাথে স্মার্ট এক মহিলার সাথে দেখা। দেখেই বুকের ভেতরটা আমার হাহাকার করে উঠে। মনে হল, আমারই সাজানো সংসারে আজ আমার কোন অস্তিত্ব নেই। আমার নিজের গড়া, প্রতিটি ভালবাসায় মেশানো সাজানো জিনিসের উপর আমার কোন অধিকার নেই। রাজীব এখন অন্যের, আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কাজের বাহানা দিয়ে সরে গেলাম। খুবই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হচ্ছিল, রাজীব এত্তো তাড়াতাড়ি কেন বিয়েটা করলে? খুবই বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কেন একটু সময় নিলে না? এই দেখো আমি নীলা কত্তো বদলে গেছি, কতো বুঝতে শিখেছি। আমিই কথার তীরে মানসিকভাবে ওকে কতো কষ্ট দিয়েছি। এসব কথা আমার মা-বাবাকে কখনোই বলিনি। নিজের দোষের কথা গোপন রেখেছি উপরে থাকার জন্যে। এমনটা ভুল স্বামীরা ও করে। পরিবারের কথা শুনে নিজেরই প্রিয়জনকে ছেড়ে দেয়। আর জীবনকে নরক যন্ত্রণায় পরিণত করে। মাঝে মাঝে ভাবি আমার পরিবার যদি একটু নিজে থেকে আমাকে বুঝাতো,আমাকে প্রশ্রয় না দিতো, সংসার করার উপদেশ দিতো!! আমি যদি নিজের জিদ নিয়ে পড়ে না থাকতাম! একটু যদি ওর কাছে নত হতাম! তাহলে হয়তো আজ আমাকে এই দিন দেখতে হত না। আজ আমার ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব কেউ পাশে নেই; এই সময় কেউ পাশে থাকেও না। সবাই নিজেদের মতো নিজেদের নিয়েই আছে, ওদের সবার সংসার আছে, কিন্তু আমারই ছোট্ট ভুলে সব শেষ হয়ে গেছে। আমি তো রাজীবকে ভালবাসি, আমাদেরই নূপুরের কথা কেন ভাবিনি? তার দিকে তাকালেই আমার বুকটা এখন ফেটে যায়। আমাদের জিদগুলোই আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়, অসুখী করে।

সেদিন রাজীব ফোন করে বলে, তুমি কেমন আছো?

আমি ফোন ধরেই কাঁদছিলাম। সে বলল, সেদিন মার্কেটে তোমাকে দেখে বুঝলাম তুমি অনেক বদলে গেছো, অনেক শান্ত হয়ে গেছ। তোমার চোখ- মুখ কি যেন বলতে চেয়েছে।

আমি বললাম, তুমি এত্তো তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে কেন?

রাজীব হেসে বলল, আমি জানতাম তুমি এ কথা বলবে। করেছি তো কি হয়েছে। তুমি তো আর আসবে না, তাই করেছি।

কিছু সময় চুপচাপ। তারপর রাজীব বলল, শুনো আমাদের মেয়ে নূপুর আগেই বলে রেখেছে আমাকে, তুমি মার্কেটে যাবে। দেখতে চাইছিলাম তোমার কেমন লাগে? বিয়ে করিনি পাগলী, সে আমার মহিলা বস, অফিসের জিনিস কিনতে ইচ্ছে করে নিয়ে গিয়েছিলাম।

আমি সেদিন খুশিতে বলেই ফেললাম, রাজীব আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। আমাকে নিয়ে যাও pls...আবারও বিয়ে করবো তোমাকেই।

রাজীব হেসে বলল, চলে এসো তবে... নীলা তুমি সত্যি বদলে গেছো। মূলত, একতরফা কোনও কিছুই বেশী দিন ঠিকে না, জিদ ও অহংকার নিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না। ভালোবাসা কোন সাধারণ বিষয় নয়। সংসারে সুখী হতে হলে সঙ্গীকে বুঝতে হয়। কেউ কাউকে খুব বেশী ভালোবাসাটা দুর্বলতা নয়। নিজেকেই সেরা, এমনটা ভাবা উচিত নয়। এই ভুল গুলোর কারণেই ইদানীং পরিবার গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে অহরহ। মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে সংসারে সন্তানরা অসহায় ভাবে ভালোবাসা-হীন জীবনে ধুঁকে ধুঁকে বড় হয়ে উঠছে; অথচ ওরা নিরপরাধ শিশু।

রাজীব বলল নীলা, ৬০ /৭০ বছরের জীবন মাত্র পৃথিবীতে; কেন করি এতো জিদ অহংকার? ভালোবাসার সকল মসল্লা দিয়ে চলো একটা মাত্র জীবনকে সুখী করি।

নীলা: ভালোবাসার মসল্লা কি?

রাজীব: প্রশংসা করা, হাতে হাত রেখে পাশাপাশি চলা, এক অপরকে বুঝা, হেরে গিয়ে ভালোবাসার মানুষকে উঁচু রাখা, সবার কাছে প্রিয় মানুষটিকে বড় করা। ভালোবাসার মসল্লার অভাবে কিন্তু ভালোবাসা মরে যায়। নীলা, তুমি ভুল বুঝতে পেরেছ এর চেয়ে বড় কিছু হয় না। হয়তো অপেক্ষা অনেক কিছুরই বড় সমাধান।
( সমাপ্ত )


Next Story

All Bengali Stories    173    174    175    (176)     177   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717