online bangla story, প্রতিবেশী, নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার- ২০২২

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

List of all Bengali Stories

◕ প্রতিবেশী
লেখিকা - সুলেখা রায়
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)

## প্রতিবেশী

লেখিকা - সুলেখা রায়

তখন গভীর রাত। কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙল দীপেনের, কিন্তু এত রাতে কে বেল বাজালো! তবে কি কারো কোনও বিপদ-আপদ হলো! নাকি চোর-ডাকাত! ভাবতে-ভাবতেই আবার বেল বাজলো। সঙ্গে দরজায় ঠকঠক শব্দ হল বারকয়। ঘুম চোখে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলো দীপেন। এবারে নাম ধরে ডাকল কেউ... দরজা ঠকঠক করে বললো, "দীপেন...বাড়ি আছো? দরজাটা খোলো তো বাবা!"

আরে! এ যে প্রতিবেশী বৃদ্ধ ভদ্রলোক ব্রজেনবাবুর কণ্ঠস্বর! বেশ উদ্বিগ্ন হয় দীপেন। দীপেনের প্রতিবেশী ব্রজেন্দ্র মোহন বোস মহাশয় অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ভীষণ মিশুকে স্বভাবের পরোপকারী মানুষ। বয়োজ্যেষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বরাবরই ফ্ল্যাটের সকলের ভালো-মন্দ বিষয়ে ডাক-খোঁজ রাখেন। অসুস্থতার কারণে তিনি আজকাল বাইরে বিশেষ বেরোন না। বহুতল ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলায় চারটি পরিবারের মধ্যে দীপেন ও ব্রজেনবাবুর পাশাপাশি বাস। দীপেনের মনে অজানা আশঙ্কা ক্রমশঃ দানা বাঁধছে। নিশ্চয় কোনও বিপদে পড়েছেন তিনি! নইলে এত রাতে!

তড়িঘড়ি দরজা খুললো দীপেন। "কি ব্যাপার মেসোমশাই? কোনও প্রবলেম হয়েছে? বেশ কিছুদিন আপনাকে দেখি না! কোথাও গিয়েছিলেন নাকি? "

"না বাবা, কোথায় আর যাবো! তোমরা ব্যস্ত মানুষ! বুড়োটার একটু খোঁজও রাখো না! প্রতিবেশী হিসেবে অন্ততঃ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখো বাবা! শরীর খারাপের কারণে এখন তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎও বিশেষ হয় না। "

দীপেনের বেশ লজ্জা বোধ হলো। মনে-মনে একটু বিরক্তও, যা ব্বাবা! এই রাত-বিরেতে ঘুম ভাঙ্গিয়ে মেসোমশাই কি শুরু করলেন! এইসব পরামর্শ না হয় অন্য সময় দিতে পারতেন! যত সব উটকো ঝামেলা! সকালে উঠেই আবার আমাকে অফিসে ছুটতে হবে! ঘুমের বারোটা বাজলে তো কাল সারাদিনটাই...!

"কি এত ভাবছো দীপেন? আমার কথায় দুঃখ পেলে না তো!"

"ন ন ন ন না মেসোমশাই, একে অপরের খোঁজ রাখাটা তো আমাদের সকলেরই কর্তব্য!"

"তা যাকগে বাবা, এত রাতে তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম... সেজন্য কিছু মনে করো না যেন! হ্যাঁ, যেটা বলতে এলাম... আমার একটা উপকার করতে হবে যে তোমাকে!"

"হ্যাঁ - হ্যাঁ, বলুন না মেসোমশাই কি করতে হবে? "

"জানোই তো বাবা, তোমার মাসীমা দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। একমাত্র মেয়ে, সেও বিদেশে! তাই একপ্রকার বিপদে পরেই এই অসময়ে তোমার কাছে..." কথা শেষ না হতেই দীপেন ব্যস্ত হয়ে বললো, "তবে কি মাসীমা খুব অসুস্থ! হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে? এম্বুলেন্সে খবর দেবো মেসোমশাই? আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, আমরা সবাই আছি তো!"

"না বাবা না, তেমন কিছু নয়! তোমাকে একটু পুলিশে খবর দিতে হবে..."

বেশ অবাক হলো দীপেন, "পুলিশে!! কেন মেসোমশাই? পুলিশে খবর দিতে হবে কেন? আপনার কিছু খোয়া গেছে নাকি? "

শুষ্ক হাসি হাসলেন ব্রজেনবাবু, "না বাবা দীপেন, আমার কিছু খোয়া যায়নি। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশে খবর দাও, নইলে তোমরাও অসুবিধেয় পড়বে। তোমার মাসিমা তো ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না! যদি পারো আমার মেয়ে-জামাইয়ের কাছেও খবর পাঠাবার ব্যবস্থা করো... কারণ, ঘণ্টা দুয়েক আগে আমি ইহলোক ত্যাগ করেছি! তোমার মাসিমা আমার দেহটা আগলে বসে রয়েছেন!"

ফ্ল্যাটের পেছনে আমড়া গাছটায় একটা প্যাঁচা ডেকে উঠলো।
( সমাপ্ত )