Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

চুপি চুপি

( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



List of all Bengali Stories

চুপি চুপি
লেখিকা- শ্রীমতী কনা দত্ত ঘোষ, পিতা- স্বর্গীয় গোপাল চন্দ্র ঘোষ, শান্তিপুর, নদীয়া
( 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার'- ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## চুপি চুপি

লেখিকা- শ্রীমতী কনা দত্ত ঘোষ, পিতা- স্বর্গীয় গোপাল চন্দ্র ঘোষ, শান্তিপুর, নদীয়া

"উফ্ তুমি পারোও বটে মা!!" একরাশ বিরক্তি আর ক্ষোভ উগরে দেয় পৃথা। আহত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল উর্মি, সামলে নিলো নিজেকে। কি যে হয়েছে? আজকাল সবার সাথে টিকটিক করে সে। বর, মেয়ে উর্মি, কাজের লোক নীলিমা সবার সঙ্গে। শুধু কর্মস্থলে মোটামুটি মাথা ঠাণ্ডা ওর। একটি নামী কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সে। সত্যিই উর্মিও বুঝে পায় না কি হয়েছে ওর? বর নিরুপম ও আর আজকাল ওর মধ্যে সেই আগের মিষ্টি মেয়ে উর্মিমালা কে একদমই মিলাতে পারে না। এত নরম ব্যবহার, নরম স্বভাবের উর্মি কেমন করে যে এত পাল্টে গেল, ও নিজেই বোঝে না।

হিসাব মত মেয়ে পৃথা, বর নিরুপমকে নিয়ে উর্মির সংসারে অশান্তির একটুও ছায়া পড়াই উচিত নয়। তবুও কালো মেঘ উড়ে আসে। মন খারাপের বেদনা ছড়িয়ে পড়ে উর্মির মনে। আসলে পৃথার বড় হয়ে যাওয়াই এর কারণ মনে হয় উর্মির। বড্ড সংসার-সংসার করে পাগল ছিল যে উর্মি। বর, শাশুড়ি, শ্বশুর, কন্যা সবাইকে নিয়ে এক মায়া ডোরে বাঁধা ছিল সে। মাতৃসমা শাশুড়ির আর স্নেহময় শ্বশুরের বড্ড তাড়াতাড়ি ঘটে যাওয়া মৃত্যু দুটো বোধহয় তাকে খুব নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোরী পৃথাকে আরও আঁকড়ে ধরতে গিয়ে বুঝল দ্রুত বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়ে। তার নিজের জগৎ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে নিরুপমও নিজস্ব চাকরির জগতে ব্যস্ত। প্রেম একবারই সে করেছিল জীবনে। সেটা উর্মিমালারই সাথে। কেয়ারিং বটে, কিন্তু স্ত্রীর মনের একাকী বেদনাকে ছুঁতে পারে না সে। হয়তো বোঝার চেষ্টাও করে না। ফলে উর্মি একা, ক্রমশ আরও একা হয়ে পড়ছে। অথচ ওর মনের মধ্যে ভালোবাসা, মায়া, স্নেহ বুড়বুড়ি কাটে। তাই এই তীব্র একাকীত্ব বিলাসী মন থেকে সে আরও একটি সন্তান চেয়েছিল। বছর 40 বয়স ওর। মেডিক্যাল সাইন্স-এর কল্যাণে হয়তো আসা সম্ভব ছিল। কিন্তু নিরুপমের তীব্র অনীহা ওকে মনের দিক থেকে একা করে দিল। ভাল লাগে না একদম। বিকালে শখের বাগানে জল দিতে গিয়ে দূর আকাশের গায় উড়তে থাকা ঘুড়িটাকে দেখতে-দেখতে আবার তীব্র একাকীত্বের অসহায়তায় মন ভরে উঠলো উর্মির। হঠাৎ চোখ চলে গেল বিপরীত বাড়ির শুভর দিকে। ও শুভময়। উর্মির তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। প্রায় 17 বছর আগেকার কথা। 12 বছরের শুভময় প্রায়ই আসত তার কাছে পড়া বুঝে নিতে। টুকটুকে সুন্দর মা হারা ছেলেটিকে উর্মির ভালই লাগত। তারপর যা হয়। কবে যে কখন শুভ আসা বন্ধ করলো। এখন বছর তিরিশের যুবক শুভর সঙ্গে যখন দেখা হয়ে যায় শুভ কেমন এড়িয়ে যায়। শুভ জানালায় দাঁড়িয়ে কি করছে? একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল কেন? 40 পেরনো সত্ত্বেও উর্মির ত্বক এখনও যথেষ্ট তরুণ। দেহ টানটান। দেহবল্লরীতে অযথাই একটা হিল্লোল তুলে উর্মি সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল গান ভাজতে-ভাজতে। মনে একটা অকারণ খুশি দোলা দিয়ে গেল।

রাতে নিরুপম বাড়ি ফিরে খাওয়ার টেবিলে টের পায় এক অকারণ খুশি ঘিরে রয়েছে উর্মিকে। বেশি খোঁচাখুঁচি না করে সেও এই খুশির ওমে গা সে‌‌কে নেয়। পৃথাও মায়ের মন ভালো দেখে বেশ হাসিখুশি। রাতের বেলা বহুদিন পরে নিরুপম যেন সেই পুরনো উর্মিকে কিছুটা খুঁজে পায়। পরদিন উর্মি স্কুলে বেরোনোর সময় যখন ঝকঝকে, তকতকে হয়ে টোটোতে উঠতে যাবে শুভময় বাইক নিয়ে বের হল। উর্মিকে অপাঙ্গে দেখে নিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওর দৃষ্টি কিন্তু উর্মিরও চোখ এড়ালো না। তরুণী পদক্ষেপে উর্মি ছুটে-ছুটে বেড়ালো সারা স্কুল বাড়ি। অজানা কোন এক ভালো লাগায় ওর ফর্সা মুখ টসটস করছে। হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতে করতে শুভময় নামটায় কৌতূহলবশত ডিপিটা দেখতে গেলো উর্মি। হয়তো কখনো নাম্বারটা নিয়েছিল, থেকে গেছে। অনবধানে অবহেলায়। আজ সেই নাম্বারটাই উর্মির কৌতূহলের বস্তু। বিশাল এক গোলাপের ছবি দেওয়া ডিপিতে। মুচকি হাসি উর্মির ঠোঁটে।

কয়েক মাস কাটলো। উর্মি খেয়াল করেছে শুভময় প্রায়ই ওদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। ছাদে চোখাচোখি হয়ে গেলে অবশ্য মাথা নামিয়ে নেয়। উর্মির ভালো লাগে। চল্লিশে দাঁড়িয়ে এ কোন আবেশে মন ভরে যায়। ভালো লাগে সাজতে। যত্ন করে ঠোঁটে যখন লিপস্টিক লাগায় মনে হয় ঠোঁটের বাঁকে তিলটা যেন ওকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়। কেউ বলবে না 40 ছাড়িয়েছে। বড়জোর 34 বা 35। কালো-সাদা সিল্কের শাড়ীতে সাজানো দেহ যেন কারো জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। পৃথাও দেখে মায়ের রূপান্তর। ওর ও ভালোই লাগে। মা আজকাল খিটখিট কম করে। পৃথা কোন কিছু আবদার করলে অত আর আগের মতো "না না" করে না। সারা বাড়িতে যেন খুশির আমেজ। উর্মির বুকের তলায় ঢেউ। কবে বলবে শুভময় কথা। ও যে বসে আছে শুভময়ের জন্য। আচ্ছা শুভময় কিছু বললে উর্মি কি না করে দেবে? নাকি ওর মনের ভালোলাগাটুকু স্বীকার করে নেবে? কিন্তু এ যে পাপ। অবশ্য পাপ-পুণ্যর বিশেষ ধার উর্মি কোনদিনই ধারে না। বড় আবেগি আর ভালোবাসা প্রবণ মেয়ে ও। নিরুপমকে খুব ভালোবাসে। তবে মাঝে-মাঝে খোলা ব্যালকনিতে দাঁড়াতে সাধ যায় বৈকি। ঘরের মধ্যে মাঝে-মাঝে দম চাপা লাগে বড্ড। দুই পুরুষ্ট ঠোঁটের মাঝে সুতোর মতো রহস্যময় হাসি ঝোলে উর্মির।

সেদিন আড়াইটের সময় উর্মির শরীরটা হঠাৎ খারাপ লাগছিল। প্রিন্সিপালকে বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল। প্রিন্সিপাল ম্যাম ভীষণ কড়া। কিন্তু উর্মির কর্মদক্ষতাকে প্রশংসা করতে জানেন। তাই উর্মি যখন আর্লি লীভের অ্যাপ্লিকেশন দিল, না করেন নি। বাসে করে ফিরতে একঘণ্টা উপর লেগে গেল প্রায়। চারটের দিকে বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে উর্মি। আজ তো তাও তাড়াতাড়ি, নাহলে তো ছটার আগে বাড়িই ঢোকে না। জানে শুভময় এখন বাড়ি থাকবে না তাই বৃথাই ওর জানলার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে উর্মি চাবি দিয়ে দরজা খুলতে গেল। একি ! দরজা ভেতর থেকে আটকানো। ও হতভম্ব হয়ে হয়ে কলিংবেলটা টিপলো। কেউ সাড়াই দিল না। কেউ ফিরে এসেছে? পৃথা স্কুল থেকে, নাকি নিরুপম অফিস থেকে ফিরে এসেছে? ওদের শরীর ভালো আছে তো? উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায় অসুস্থ শরীর যেন ভেঙে পড়ছে উর্মির। আবারো দরজা ধাক্কা দিলো। বেল টিপলো উর্মি। দরজা খুলে গেল। ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল শুভময়। চুলগুলো এলোমেলো। সকালের ইন করে পরা দামি শার্টটার ক্রিজ ভাঙ্গা। যেন বড্ড তাড়াতাড়ি গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। উর্মিকে দেখে শুভময় দ্রুত চোরের মত বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। আর ওর পেছনে 'ও' কে দরজায় দাঁড়িয়ে? উর্মিরই আত্মজা, পৃথা। ঢলঢলে টি-শার্ট আর বারমুডা পরা। মাথার চুল এলোমেলো। ঘোরের মধ্যে থাকা দুটো চোখে একরাশ ঘৃণা, বিরক্তি আর হতাশা। একি হলো? নিজের জগৎ নিয়ে ডুবে থাকা পৃথা কখন এতো বড় হলো? কখন চোর ঢুকে পড়েছে উর্মির সাজানো বাগানে? নিজের মনের খুশিতে টইটম্বুর হতে গিয়ে এত অগোছালো উর্মি খেয়ালই করেনি বাগানের বেড়া ভেঙে গেছে। তস্কর উঁকি মারছে। "হে ভগবান" উর্মি ভেঙে পড়ল কান্নায় আর হতাশায়। ঠিক তখনই যেন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। চোখের নোনা জল আর বৃষ্টির জল এক হয়ে গেল।
( সমাপ্ত )


Next Story

List of all Bengali Stories


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717